শী‘আদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ইয়ামানের সানআ শহরের জনৈক ইয়াহুদী আলেম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। যে উসমান রা. এর খেলাফত কালে ইসলাম গ্রহণ করে। আসলে ইসলাম গ্রহণ দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা। সে মদীনায় কিছু দিন উক্ত উদ্দেশ্যে কাজ করে। এরপর বসরা ও সিরিয়ায় যায়। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পেরে অবশেষে মিসর গমন করে। এবং সেখানে তার কিছু সাহায্যকারী পেয়ে যায়। সে এবং তার সহযোগীরাই তৃতীয় খলীফা উসমানকে রা. হজ্জের মওসুমে মদীনা খালী অবস্থায় শহীদ করে এবং তাদের তলোয়ারের মুখেই উম্মতের ঐক্যের স্বার্থে আলী রা. কে বাধ্য হয়ে খেলাফতের মসনদে বসতে হয় এবং জঙ্গে সিফ্ফীনে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা এবং তার অনেক ভক্ত ষড়যন্ত্রমূলক আলী রা. এর দলভুক্ত ছিল। তাদেরকে “শী‘আনে আলী” সংক্ষেপে শী‘আ বলা হয়। এক সময় উক্ত আব্দুল্লাহ দলের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচার করতে থাকে, এরপর সে তার মিশনে আরো মজবুতভাবে কাজ করতে থাকে।
শী‘আরা প্রথমতঃ তিনটি দলে বিভক্ত ১.তাফযীলিয়া শী‘আ ২. সাবাইয়্যা শী‘আ ৩. চরমপন্থি শী‘আ।
তাফযীলিয়া শী‘আঃ এরা আলীকে রা. আবুবকর রা. ও উমর রা. এর উপর ফযীলত দিয়ে থাকেন।
সবাইয়্যা শী‘আঃ এরা হযরত সালমান ফারসি রা., আবূ জর গিফারী রা., মেকদাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াছির প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অন্য সকল সাহাবী থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, এমনকি তাঁদেরকে মুনাফিক এবং কাফের পর্যন্ত বলে। (কিতাবুর রওযা)
চরমপন্থি শী‘আঃ এদের ২৪ টি উপদল ছিল, তাদের মধ্যে একটির নাম ইমামিয়া বা ইসনা আশারা গ্রুপ, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় দল বা ভয়ংকর দল।
ইমামিয়াদের দলের মধ্যে প্রসিদ্ধ ৩টি গ্রুপ ১. ইছনা আশারিয়া, ২.ইসমাঈলিয়া, ৩. যায়দিয়া।
ইছনা আশারিয়া বা ইমামিয়াদের আক্বিদা হলো যেঃ– আল্লাহ তা‘আলা যেমন তার বান্দাদের হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূলদের মনোনীত করেছেন ঠিক তেমনি নবীর ওয়াফাতের পর থেকে বান্দার পথ প্রদর্শনের জন্য ইমাম মনোনীত করা শুরু করেছেন, আর তাদের আক্বীদা অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত বার জন ইমাম আসবে।
ইমাম সম্বন্ধে শী‘আদের আক্বীদা-বিশ্বাসঃ
১. ইমামগণ নবীর ন্যায় আল্লাহর পথ থেকে মনোনীত হন। (উসুলে কাফী ২/২৫-২৬)
২. শী‘আদের বক্তব্য হল কুরআন মাজীদে ইমামত ও ইমামগণের বর্ণনা ছিল যা পরবর্তিতে মুছে ফেলা হয়েছে। (উসুলে কাফীঃ-২/২৭৭)
৩. ইমামগণ পয়গম্বরগণের মতই আল্লাহর প্রমাণ। (উসুলে কাফীঃ-১/২৫০)
৪. ইমামগন পয়গাম্বরগণের মতই নিষ্পাপ। (উসুলে কাফীঃ-১/২৮৭)
৫. ইমামগণের মর্তবা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সমান এবং অন্য সকল পয়গম্বরের ঊর্ধ্বে। (উসুলে কাফীঃ-৩/১০)
৬. ইমামগণ যা ইচ্ছা অথবা হারাম ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখেন। (উসূলে কাফী ২/৩২৬)
৭. ইমাম ব্যতীত দুনিয়া কায়েম থাকতে পারে না। (প্রাগুক্ত পৃ ২৫৩)
৮. ইমামগণের অতীত ও ভবিষ্যৎ জ্ঞান অর্জিত থাকে। (উসূলে কাফী ১/৩৬৬)
৯. ইমামগণের জন্য কুরআন হাদীস ছাড়াও জ্ঞানের অন্যান্য অত্যাশ্চর্য সূত্র রয়েছে। (উসূলে কাফী ১/৩৪৫-৪৬)
১০. ইমামগণের এমন জ্ঞানে আছে যা ফেরেশতা ও নবীগণেরও নেই। (উসূলে কাফী ১/৩৭০)
১১. প্রত্যেক জুম‘আর রাত্রিতে ইমামগণের মেরাজ হয়। তারা আরশ পর্যন্ত পৌঁছেন। (উসূলে কাফী ১/৩৭২)
১২. ইমামগণের প্রতি, প্রতি বছরের শবে কদরে আল্লাহর পথ থেকে এক কিতাব নাযিল হয় যা ফেরেশতা ও রূহ নিয়ে আসেন। (উসূলে কাফী ১/৩৬৬)
১৩. ইমামগণ তদের মৃত্যুর সময়ও জানেন এবং তাদের মৃত্যু তাদের ইচ্ছাধীন থাকে। (উসূলে কাফী ১/৩৮৭)
১৪. ইমামগণের সামনেও মানুষের দিবা রাত্রির আমল পেশ করা হয়। (উসূলে কাফী ৩১৯)
১৫. ইমামগণ কিয়ামতের দিন সমসাময়িক লোকদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন। (উসূলে কাফী ১/২৮০)
১৬. ইমামগণের আনুগত্য করা ফরয । (উসূলে কাফী ১/২৬৩)
১৭. ইমামগণের ইমামত নবুওয়াত ও রিসালাত স্বীকার করা এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা নাজাতের জন্য শর্ত। (উসূলে কাফী ১/২৫৫)
১৮.ইমামত, ইমামগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তা প্রচারের আদেশ সকল পয়গম্বর ও আসমানী গ্রন্থের মাধ্যমে এসেছে। (উসূলে কাফী ২/৩১৯)
১৯. ইমামগণ দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক এবং তার যাকে ইচ্ছা দান করেন ও যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (উসূলে কাফী ২/১৬৯)
২০. ইমামগণ মানুষকে জান্নাতে ও দোযখে প্রেরণকারী। (উসূলে কাফী ১/২৮০)
২১. যে ইমামগণকে না মানে সে কাফের।
২২. জান্নাতে যাওয়া না যাওয়া ইমামগণের মান্যকরা না করার উপর নির্ভরশীল।
সাহাবা বিদ্বেষ সংক্রান্ত আকীদাঃ
১.তারা তিন খলীফা তথা আবূ বকর, উমর ও উসমান রাযি. কে কাফের ও জাহান্নামী মনে করে। (উসূলে কাফী ২/২৮৯)
২. শিয়াদের কথিত ব্যাখ্যা অনুসারে যারা আলী রাযি. এর ইমামত মানে না তাদেরকে তারা জাহান্নামী মনে করে। এভাবে তারা সব সাহাবিকে এবং সমস্ত মুসলমানকে কাফের সাব্যস্ত করেছে। (উসূলে কাফী ২/৩৯৪)
৩. তাদের ধারণা হলো প্রতিশ্রুত মাহদি আত্মপ্রকাশ করার পর হযরত আয়িশা রাযি. কে জীবিত করে যিনার শাস্তি দিবেন। (ইরানী ইনকিলাব)
৪. তাদের ধারণা হলো সাহাবায়ে কেরাম প্রায় সকলেই বিশেষত খলীফাত্রয় কাফের, ধর্মত্যাগী, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ঘাতক, জাহান্নামী অভিশপ্ত । (উসূলে কাফী ২/৩৯৮)
৫. তাদের ধারণা হলো অন্তর্হিত ইমাম যখন আত্মপ্রকাশ করবেন তখন আবূ বকর ও উমর রাযি.কে কবর থেকে বের করে হাজারবার শুলিতে চড়াবেন। (হকুকুল ইয়াকিন)
৬. তাদের ধারণা হলো হযরত আয়িশা ও হাফসা রাযি. মুনাফিক ছিলেন। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিষ দিয়ে খতম করেছেন। (হায়াতুল কূবূল পৃ. ৮৭০)
কুরআন বিকৃতির আকীদাঃ
১.তাদের ধারণা হলো পাক পঞ্চতন তথা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী,ফাতেমা,হাসান,হুসাইন রাযি. এবং তাদের সকল ইমামদের নাম কুরআনে ছিলো। এগুলো কুরআন থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। (উসূলে কাফী ২/২৮৩)
২.কুরআনের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ যেখানে হযরত আলীর খেলাফতের বয়ান আছে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। (ইরানী ইনকিলাব)
৩. তাদের মনগড়া দাবি হলো কুরআন বিকৃতি সম্বন্ধে নাকি হযরত আলী রাযি.ও বলে গেছেন। (অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।)
৪. তাদের ধারণা হলো আসল কুরআন ১২তম ইমামের নিকট রয়েছে যিনি মেঘের মধ্যে আছেন। কিয়ামতের পূর্বে আসল কুরআন নিয়ে তিনি অবতরণ করবেন। (উসূলে কাফী ১/৩৩২)
উপর্যুক্ত ইমাম, কুরআন ও সাহাবাদের সম্পর্কে শীয়াদের ভ্রান্ত আকীদার মধ্য থেকে প্রত্যেকটি আকীদা এমন যে, কেউ যদি এর মধ্য থেকে একটি আকীদাও দিলে স্থান দেয় তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া তাদের আরো এমন অনেক ফাসেদ আকীদা রয়েছে যা ঈমানের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই সকল মুসলিমদের উচিত এ ধরণের বাতিল আকীদা থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।