১১তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – ভালবাসি আমি তোমাকে – শায়খ আতিক উল্লাহ


ভালবাসি আমি তোমাকে

চারপাশে প্রিয় মানুষের উপস্থিতি থাকলে, নিশ্চিন্তে কাজ করা যায়। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পরিবেশটা অনুকূল হলে সময়-শ্রম-মেধার অপচয় রোধ করা যায়। অহেতুক ঝামেলা বাঁধে না।
নবীজি সা. চাইতেন সমাজে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। সবার মধ্যে মিলমিশ থাকুক। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি অটুট থাকুক। নবীজি বারবার বলতেন, একজন আরেকজনকে আল্লাহর জন্যে ভালবাসতে।

(এক)
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ، يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ

সাত প্রকারের মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা কেয়ামতের দিন ছায়া দান করবেন।
এদের মধ্যে এক প্রকার হল:
وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ
দু’জন ব্যক্তি, আল্লাহর জন্যে একে অপরকে ভালবাসে, আল্লাহর ভালবাসার খাতিরে দু’জনে একত্রিত হয়। আল্লাহর ভালবাসার তাকিদেই দু’জনে বিচ্ছিন্ন হয় (বুখারী ৬২৯)।

(দুই)
নবীজি শুধু এটুকুতেই ক্ষান্ত হননি, তিনি তার সামাজিক সৌহার্দ্য ‘কার্যক্রম’ কিভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার চমৎকার রূপরেখাও বাতলে গেছেন। আমাদের নবীজির প্রধান একটা বৈশিষ্ট্য হল, তিনি ‘তত্ত্ব’ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করতেন না। তত্ত্বের প্রায়োগিক দিকটাতেও সযত্ন নজর রাখতেন। নিজেই করে দেখাতেন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন। ভাইয়ে-ভাইয়ের মাঝে কিভাবে ভালবাসার বন্ধন তৈরি হবে?
إِذَا أَحَبَّ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَلْيُخْبِرْهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ
কোনও ভাইকে ভাল লাগলে, তাকে জানিয়ে দেয়া:
-আমি আপনাকে ভালবাসি! (আবু দাউদ)।
লজ্জার কিছু নেই। সংকোচ কিসের। তাকে আমার ভাল লাগে। এই ভাল লাগাটা আল্লাহরই জন্যে। তাহলে এটা ইবাদত। এটা সুন্নাত। আবার তাকে ভালবাসার কথা বলাও সুন্নাত। সুন্নাত আদায়ে পিছিয়ে থাকব কেন? জড়সড় হব কেন? পিছিয়ে থাকব কেন?

(তিন)
এক সাহাবী নবীজির দরবারে বসা ছিলেন। পাশ দিয়ে আরেক সাহাবী হেঁটে গেলেন। উপবিষ্ট সাহাবী বললেন:
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এই মানুষটাকে ভালবাসি!
-তুমি তাকে ভালবাসার কথা জানিয়েছ?
-জ্বি না!
-যাও, তাকে (ভালবাসা) জানিয়ে আস!
সাহাবীটি দৌড়ে গেলেন। তার পছন্দের মানুষটাকে গিয়ে ধরলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন:
-( إِنِّي أُحِبُّكَ فِي اللَّهِ) আমি আপনাকে আল্লাহর জন্যে ভালবাসি!
-(দু‘আ করি), আপনি আমাকে যার জন্যে ভালবাসেন, তিনিও আপনাকে ভালবাসুন!
(আবু দাউদ ৫১২৫)।

আমার সবকিছু কার জন্যে? আল্লাহর জন্যে। আমি একজন মুসলিম ভাইকে আল্লাহর জন্যেই ভালবাসব। পছন্দ করব। এই একটা সুন্নাতের বদৌলতে সমাজ, ঘর, রাষ্ট্রের চিত্র বদলে যেতে পারে। শুধু কি পার্থিব লাভ? আখেরাতেও এর বিরাট প্রতিদান পাওয়া যাবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সুখী দেখতে চেয়েছেন। সুখের ফর্মুলাও দিয়ে গেছেন। আমরা প্রয়োগ করব কি না, সেটা আমাদের যিম্মা! আজ পরীক্ষামূলক সুন্নাতটা আদায় করেদেখতে পারি!