১২তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – সকাল সন্ধ্যার সুরক্ষা – শায়খ আতিক উল্লাহ


সকাল সন্ধ্যার সুরক্ষা

বর্তমানে মানুষ মনের শান্তির জন্যে কত কিছু করে। ধ্যান করে। মেডিটেশন করে। যোগসাধনা করে। নিজের নিরাপত্তার জন্যে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নবীজি সা.-ও নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্যে বিভিন্ন আমল করতেন। দু‘আ পড়তেন। দু‘আগুলোর কথা হত অত্যন্ত অর্থপূর্ণ। দু‘আবাক্যগুলোর শব্দে শব্দে ছত্রে ছত্রে বিনয় নম্রতা ঝরে পড়ত। প্রকাশ পেত আল্লাহ তা‘আলার একত্ব। মহত্ব।

সন্ধ্যা নামলে নবীজি পড়তেন:
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ
আমরা সন্ধ্যায় উপণীত হয়েছি। সমস্ত ক্ষমতাও আল্লাহর কুক্ষিগত হয়েছে। প্রমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই। তার কোনও শরীক নেই। রাজত্ব তার। প্রশংসাও তার। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আমার প্রতিপালক, আমি আপনার কাছে এ-রাতের সমস্ত কল্যাণ প্রার্থনা করছি। রাতের পরে যত কল্যাণ আছে, তাও কামনা করছি। এই রাতের সমস্ত অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাতের পরে আসা সমস্ত অকল্যাণ থেকেও মুক্তি কামনা করছি। আমি অলসতা থেকে, কষ্টকর বার্ধক্য থেকে পানাহ চাচ্ছি। জাহান্নামের আযাব ও কবরের আযাব থেকেও পানাহ চাচ্ছি।

ভোর হলেও নবীজি দু‘আটা পড়তেন। শুরুতে বলতেন:
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ
আমরা সকালে উপনীত হয়েছি। সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহ কুক্ষিগত হয়েছে।
(আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.। মুসলিম)

এগুলো নিছক কিছু কথা নয়। আল্লাহর তাওহীদের স্বীকারোক্তি। আসমান যমীনের স্রষ্টা একমাত্র তিনিই, এর স্বীকারোক্তি। নিজেকে কী অসহায় বানিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ চাইতেন পেয়ারা নবীজি!

নবীজি এই দু‘আয় অনেক কিছু চেয়েছেন,
ক. দিনরাতের সম্ভাব্য সমস্ত কল্যাণ কামনা করেছেন। সমস্ত অকল্যাণ থেকে মুক্তি চেয়েছেন। দিনরাতের কল্যাণ ও অকল্যাণই নয় শুধু, ভবিষ্যতের কথাও বলতে ভোলেননি।
খ. শুধু তাই নয়, দুনিয়া ছাড়িয়ে আখেরাতে মুক্তির প্রার্থনাও পাশাপাশিও করেছেন।
গ. কবরের বিপদ থেকে পানাহ চেয়েছেন। .
মাত্র কয়েক লাইনে এতকিছু চাওয়া পাওয়ার সম্মিলন করা নবীজির পক্ষেই সম্ভব। নবীজি এমন দু‘আ কেন করতেন? তাকে আল্লাহ তা‘আলা এমনিতেই রক্ষা করবেন। দুনিয়াতে কবরে ও আখেরাতে? তিনি মূলত পড়তেন আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যে। পাশাপাশি উম্মতকে আমলটা শিক্ষা দেয়ার জন্যে। আমরা চাইলেই সকাল সন্ধ্যা দু‘আটা পড়ে নিতে পারি। ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)-এর সাথে দু‘আটা পড়লে, ইনশাআল্লাহ, সব ধরনের বিপদাপদ বালা-মুসীবত থেকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রক্ষা করবেন। কবর আযাব থেকে, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?