১৪তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – যানবাহনের সুন্নাহ – শায়খ আতিক উল্লাহ


যানবাহনের সুন্নাহ

জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমরা এখানে সেখানে যাই। যানবাহনে চড়ি। কাছের গন্তব্যে যাই। দূরে কোথাও যাই। সাইকেলে। মোটর সাইকেলে। রিকশায়। বাসে। কারে। ট্রেনে। বিমানে। নৌকায়।
একজন মুমিনের অন্তরে সব সময় আল্লাহ বিরজমান থাকবেন। মুমিন বান্দার কলব আল্লাহর যিকিরে তাজা থাকবে। তার জিহ্বা রাবের স্মরণে সজীব থাকবে। নবীজি সা. আমাদেরকে শিখিয়েছেন, কিভাবে আল্লাহর যিকির করতে হয়। তিনি শিখিয়ে গেছেন, আমরা যেন সব সময় আল্লাহকে স্মরণে রাখি। সর্বাবস্থায় প্রিয় রবের কথা মনে রাখি। নবীজি বাহনে চড়ে কোথাও গেলে, কিছু দু‘আ পড়তেন। নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন।

আমি একবার দেখেছি, আলি (রা.)-এর জন্যে বাহন আনা হল। তিনি পাদানিতে পা রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ (بِسْمِ الله) পড়লেন। সওয়ার হওয়ার পর সোজা হয়ে বসে আলহামদুলিল্লাহ (الحَمْدُ لله) বললেন। তারপর পড়লেন,
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি এই বাহনকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। অন্যথায় একে বশীভূত করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে (যুখরূফ ১৩-১৪)।
তারপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন। তিনবার আল্লাহু আকবার পড়লেন। তারপর পড়লেন,
سُبْحَانَكَ إِنِّي قَدْ ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ
আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ পাপরাশি ক্ষমা করতে পারবে না।
তারপর তিনি হেসে দিলেন। আমি (অবাক হয়ে) বললাম,
-আমীরাল মুমিনীন! হাসলেন যে?
-আমি যে আমল করেছি, সেটা করার পর নবীজিকেও হাসতে দেখেছি। তাই আমিও হেসেছি। তোমার মতো আমিও বিস্মিত হয়ে নবীজিকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কেন হেসেছেন? তিনি বলেছেন,
-তোমার রব তার বান্দার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যান, যখন সে পড়ে,
رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرُكَ
হে আমার রব, আমার পাপরাশি ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া অন্য কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
(তিরমিযি। আলি বিন রবী‘আ রহ.)

ছোট ছোট দু‘আ। বড় বড় অর্থ। বিভিন্ন কাজের শুরুতে মাঝে ও শেষের মাসনুন আমলগুলোর অনেক উপকারিতা।
ক. আল্লাহর যিকির হয়।
খ. আল্লাহর দরবারে দু‘আ করা হয়।
গ. নবীজির সুন্নাত আদায় করা হয়।
ঘ. অন্তরে নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
সহজ একটা আমল, উপকার অনেক। লিফটে, চলন্ত সিঁড়িতে, ছাদের বা উঠোনের আনন্দদোলনায় দোল খেতে গিয়েও আমলটা করতে পারি। মনে অন্য রকমের শক্তি তৈরী হবে ইনশাআল্লাহ।