﷽
প্রাণোবন্ধুর বাড়ি
বর্তমান হলো গতির যুগ। বেগের যুগ। বেগের ধাক্কায় আবেগ হারিয়ে যেতে বসেছে। সবকিছুর পেছনে স্বার্থ কাজ করে। প্রয়োজন কাজ করে। লেনদেন কাজ করে। আদান-প্রদানের তাকিদ কাজ করে। প্রাপ্তিচিন্তা ছাড়া আমরা একপাও নড়তে রজি নই।
বন্ধুর বাড়িতে কোনও প্রয়োজন ছাড়াই বেড়াতে গেলাম, কেমন হয় ব্যাপারটা? চমৎকার মিষ্টি একটা অভিজ্ঞতা নয় কি? বিকেলে ছাদে বসে গল্প করলাম। পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরলাম। দুপুরে খেয়েদেয়ে একটুখানি গড়িয়ে নিয়ে সাইকেল নিয়ে গ্রামের বাজারের পানে ছুটলাম!
অনেক দিন হলো ‘দোস’-এর সাথে দেখা নেই। কথা নেই। যোগাযোগ নেই। সেই কোথায় শহরের শেষমাথার এক কানাগলিতে তার মেসবাড়ি। এক বৃহস্পতিবার অফিস থেকে আর বাসায় গেলাম না, অলিগলি-তস্যগলি পাড়ি দিয়ে চুপিচুপি সেই মেসে হাজির:
-হুয়াহ!
-কিরে তুইইই! স্বপ্ন দেখছি না তো! ভয় পাইয়ে দিয়েছিস! একটু জানিয়ে আসবি না!
যদি বলি এর পুরোটাই সুন্নাত! বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি! ঠিক আছে হাতেনাতে প্রমাণ হাজির। এক হাদীসে কুদসিতে আছে:
وَجَبَتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ وَالْمُتَجَالِسِينَ فِيَّ وَالْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ وَالْمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ
= আমার ভালোবাসা আবশ্যক হয়ে গেছে:
ক: আমার জন্যেই যারা একে অপরকে ভালোবাসে।
খ: আমার জন্যেই যারা একে অপরের সাথে ওঠাবসা করে।
গ: আমার জন্যেই যারা একে অপরের কাছে বেড়াতে যায়।
ঘ: আমার জন্যেই যারা একে অপরের জন্যে খরচ করে (মুয়াজ বিন জাবাল রা. আহমাদ)।
বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি, পুরো সময়টাই আমি ইবাদতের মধ্যে আছি। জ্যামে আটকে আছি, আমলনামায় সওয়াব লেখা হচ্ছেই হচ্ছে। একে-ওকে বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করছি, সওয়াব হয়েই চলেছে। আর কিছু লাগে!
আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় নবীজি মিষ্টি একটা গল্পও শুনিয়েছেন:
এক দেশে এক লোক ছিল। তার এক ভাই বাস করতে ভিনগাঁয়ে। ভাইকে দেখতে রওয়ানা দিল। আল্লাহ তা‘আলা (করলেন কী, ভাইবৎসল ভালো মানুষটার) পথের ধারে একজন ফেরেশতাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। লোকটা পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ফিরিশতা শুধালেন:
-কই যাচ্ছ গো!
-ওই যে গ্রাম দেখা যায়, সেখানে আমার এক ভাই (বন্ধু) থাকে, তার কাছে যাচ্ছি!
-তার কাছে কি কোনও পাওনা চাইতে যাচ্ছ?
-না না, তা হবে কেন! আমি তাকে আল্লাহর জন্যে ভালোবাসি, সেজন্যেই তাকে দেখতে যাচ্ছি!
-শোন হে (ভালো মানুষেরপো!) আমি আল্লাহর একজন ফেরেশতা। তোমার জন্যেই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
-কেন?
-আল্লাহ তোমাকে একটা কথা বলতে বলেছেন!
-কী কথা? ক্কী কী কথা?
-তুমি যেমন করে তোমার ভাইকে (নিঃস্বার্থভাবে) ভালোবেসেছ, আল্লাহও তোমাকে ভালোবেসেছেন!
(আবু হুরাইরা রা.। মুসলিম। ভাবতরজমা)।
সুন্নতটা এতই সুন্দর! কী আর বলবো!
-তবে!
-তবে কী?
-তবে হলো, আল্লাহর ভালোবাসায় তো বন্ধুর মেসে ড্যাং ড্যাং করে গেলাম। কিন্তু হিপ পকেটে একটা নিরীহদর্শন ষাটজিবি পেনড্রাইভও নিয়ে গেলাম। মনের গহীনে ক্ষীইইইণ একটা ইচ্ছা: ওর মেসে তো আনলিমিটেড নেট কানেকশন আছে, রাতটা ভালোই জমবে! মৌজ-মাস্তি করে দেখেও আসবো, সাথে করে নিয়েও আসবো!
= তাহলে কিন্তু খবর আছে! খেয়াল করলে হয়তো দেখা যেতেও পারে: বন্ধুর মেসের গলির মুখেই জাহান্নামের দারোয়ান ‘মালিক’ ইয়াব্বড় গদা হাতে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে: আয় এদিকে আয়!
-আঁই কিচ্চি?
-আল্লাহ তোকে বলতে বলেছে, তিনি তোর প্রতি ভীষণ নারাজ!