﷽
সুন্নাতে ঊষা
কেয়ামত যতই কাছিয়ে আসছে, সমাজের রাতের ঘুম ততই পেছাচ্ছে, অবধারিতভাবে পরদিন ঘুম থেকে জাগাও পেছাচ্ছে। অফিসে যাওয়ার তাকিদ না থাকলে দুপুরের আগেও এই সমাজ জাগতো কি না সন্দেহ। পরদিন চাকুরিতে যাওয়ার দায় না থাকলে শেষরাত পর্যন্তও ‘পাপ’ অব্যাহত থাকতো!
নবীজি সা.-এর অভ্যেস ছিল অতি ভোরে উঠে যাওয়া। তার দিন শুরুই হতো ফজরের আগে। তাহাজ্জুদ ছিল তার নতুন দিনের প্রথম ‘আমল’। দ্বিতীয় কাজ ফজরের সালাত। তারপর যিকির ও অন্য ইবাদত। তারপর ‘কাজকর্ম ও রুজিরুটির’ চিন্তা।
এটা যে শুধু নবীজির সুন্নাত তাই নয়, আল্লাহর অঘোষিত বিধানও বটে। তিনি দিনকে আলোকিত করে দিয়েছেন, কাজ করার সুবিধার্থে। রাতকে আঁধার করে দিয়েছেন, প্রশান্তিময় ঘুমের সুবিধার্থে:
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا (১০) وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
আমি রাতকে বানিয়েছি আবরণ, আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার ক্ষেত্র (নাবা: ১০-১১)।
নবীজি আমাদেরকে সকালে ওঠার প্রতি তাকিদও দিয়ে গেছেন:
للَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সকালের মাঝে বরকত দান করুন (তিরমিযী)।
নবীজি সকালের সময়ে বরকত দানের দু‘আ করে গেছেন। তার দু‘আ অবশ্যই কবুল হয়েছে। আর এটা প্রমাণিত সত্য, অতি ভোরে কোনও কাজ শুরু করলে, দেখা যায় নয়টার আগেই কাজটা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এটা নববী দু‘আরই ফসল। নবীজি কোনও অভিযান প্রেরণ করলে, ভোরেই পাঠাতেন।
উপরোক্ত হাদীসের রাবীর নাম হলো ‘সাখার গামেদী’ রা.। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তার অভ্যেস ছিল সকাল সকাল ব্যবসা শুরু করা। আল্লাহ তার ব্যবসায় অনেক বরকত দান করেছিলেন।
وَكَانَ صَخْرٌ رَجُلاً تَاجِرًا، فَكَانَ يَبْعَثُ تِجَارَتَهُ فِي أَوَّلِ النَّهَارِ، فَأَثْرَى وَكَثُرَ مَالُهُ
তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসা শুরু করতেন ভোরে ভোরে। ফলে তিনি প্রাচুর্যের অধিকারী হয়েছিলেন, তার সহায়-সম্পদও অনেক বেড়ে গিয়েছিল (ইবনে মাজাহ-তিরমিযী)।
আর একটু ভাবলেও বিষয়টা ধরা পড়ে, ভোরে ভোরে জেগে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। প্রাকৃতিক। অন্যান্য জীবজন্তুও ভোরে জেগে যায়। শুধু মানুষ উঠতে দেরী করে! আমরা একটু চেষ্টা করলেই ‘সুন্নাতে’ অভ্যস্ত হতে পারি। আল্লাহ ও তার নবীর আদর্শকে ধারন করতে পারি।