﷽
ইস্তেনসার
সুন্নত তরীকায় জীবন যাপন করার কথা মনে হলে, একটা ভুল চিন্তা কখনো কখনো মাথায় উদয় হয়: যেসব হাদীসে ফিকহী মাসায়েলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো বোধ হয় সুন্নত নয়, সুন্নত হলো, তিন তাসবীহ, দু‘আ-দুরূদ, যিকির-আযকার করা।
আমরা যেসব হাদীসকে আহকামের হাদীস মনে করি, সেগুলো সুন্নতের হাদীসও বটে। অর্থাৎ কারো কারো মনে হতে পারে, সুন্নত হলো কিছু আমলের নাম, আর বিধানগুলো হলো ‘হাদীস’। বস্তুত বিধানটাও একটা সুন্নত। ওটা পালন করে আমি মূলত একটা সুন্নতই আদায় করলাম!
শয়তান ও মানুষের দ্বন্দ্ব সবসময়ের। এটা কেয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে। শয়তান মানুষকে গোমরাহ করার শপথ করেই মাঠে নেমেছে:
لأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلاَّ قَلِيلاً
আমি সামান্যসংখ্যক ছাড়া তার (আদমের) বংশধরদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেবো (ইসরা ৬২)।
মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান মানুষের অতি সন্নিকটে এসে পড়ে। তার যুদ্ধ পুরোদমে শুরু করে। নানা কৌশলে। কখনো নামাযের প্রতি উদাসীন করে, কখনো দুঃস্বপ্ন দেখিয়ে! এজন্য নবীজি আমাদেরকে কিছু আমল শিখিয়ে গেছেন, আমরা যেন ঘুমের ঘোরেও শয়তানের ‘কুকর্ম’ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এমন একটা সুন্নত হলো:
-ইস্তেনসার!
إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهِ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلَى خَيَاشِيمِهِ
তোমরা ঘুম থেকে জাগলে, তিনবার ইস্তেনসার করবে। কারন শয়তান নাসারন্ধ্রে রাতযাপন করে! (মুসলিম)
ইস্তেনসার: পানি ছিটানো! এখানে অর্থ হবে, নাক থেকে পানি ঝাড়া!
রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, দুঃস্বপ্ন দেখলে, ঘুম না এলে, ইস্তেনসার করা। এটা সুন্নাত। যদি ঘুম ভেঙে যাওয়া বা ঘুম না আসাটা শয়তানের কুপ্রভাবের কারণে হয়, ইস্তেনসারের মাধ্যমে শয়তান দূর হবে। ঠিক একই কাজ ওজুর মধ্যেও করা হয়।
নাক থেকে পানি ঝাড়ার আগে তো নাকে পানি দিতে হবে! জ্বি, আগে নাকে পানি দিবে। এই পানি দেয়াকে বলা হয় ‘ইস্তেনশাক’: নাক দিয়ে পানি টানা! এই টেনে নেয়া পানিকে ঝেড়ে ফেলাকেই ‘ইস্তেনসার’ বলা হয়।
আমরা নুরানীতে ওজুর মাসয়ালা পড়ার সময় কোরাস করে বলি: নাকে পানি দেয়া! এটাই ইস্তেনশাক! তবে এখানে ছোট্ট একটা আপত্তি তোলা যেতে পারে: নাকে পানি দেয়া যদি বলি, তাহলে ইস্তেনশাকের অর্থটা ঠিক আদায় হয় না। এবং হাদীসের মূল চাহিদারও কাছাকাছি পৌঁছা যায় না। এখানে বলা দরকর:
-নাকে পানি টানা!
দেয়া আর টানার মধ্যে পার্থক্য কী?
-বিরাট পার্থক্য! নাকে পানি দিলে, নাসারন্ধ্রের গোড়া পর্যন্ত পানি যায় না! কিছু জায়গা পানি ছাড়া থেকে যায়! নাকও পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না।
আমরা যদি হাতের ‘কোষে’ পানি নিয়ে, আস্তে করে নাক ডুবিয়ে পানি টানি, তাহলে পানিটা একদম নাসারন্ধ্রের মূল পর্যন্ত পৌঁছে! ‘ইস্তেনশাক’ শব্দের ওপর পুরোপুরি আমল হয়। কারণ শব্দটার মধ্যেই ‘চাওয়া’ বা তলব বা টানার একটা ভাব আছে। প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা যদি, হাতের কোষে পানি নিয়ে, নাকে ছিদ্রে ঠেসে দিলাম, পানি ঢকুল কি ঢুকল না, এরপর আঙুল দিয়ে নাক পরিষ্কার করলাম, এতে ইস্তেনশাক হয় না।
আমরা দরসে প্রশ্ন করেছিলাম:
-তাহলে হুযুর! এভাবে করতে গেলে তো পানি সুড়ুৎ করে মাথায় উঠে যাবে!
-আরে ‘হোঙ্গুলের চা অগল’! তোরে এত জোরে ‘হানি’ টাইনবেল্লাই কইসে কনে? তুই টাইনবি আস্তে করি! তোরে কইসিনি তুই নাক দি হানির লগে কুস্তি খেল! বেশি বুঝস কিল্লাই! (মুসলিম শরীফের দরস থেকে)!
(রাব্বে কারীম তাঁকে (মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ রহ.) জান্নাত নসীব করুন)
তারমানে হাদীস অনুযায়ী প্রথমে হালকা চালে ইস্তেনশাক করতে হবে, পরে ইস্তেনসার করতে হবে। ইস্তেনশাক হবে ডানহাত দিয়ে। ইস্তেনসার হবে বামহাত দিয়ে। ইস্তেনসারে হাত লাগাতে হবে কেন? নাক দিয়ে ফুঃ দিলেই তো সব বেরিয়ে আসবে! তারপরও নাকে বামহাতের আঙুল দিয়ে নাকের ভেতরটা একটু সড়গড় করে দিতে হবে। এটাই সুন্নাত!
তাহলে হুযুর! মাঝরাতে উঠে এভাবে নাকে পানি দিয়ে, শয়তান তাড়াতে গেলে, শয়তানের সাথে সাথে ঘুমওতো পালিয়ে যাবে!
-আগে পরীক্ষা করে দেখ! ঘুম পালায় না থাকে! আর এটা তো সব সময় করতে হবে না! এই সুন্নতটা মূলত ঘুম থেকে ওঠার পর, তাহাজ্জুদ বা ফজরের ওজুর সময় করা হয়ে থাকে! মাঝরাত্তিরে তো খুব একটা করা হয় না। কিন্তু সুন্নাত পালনের উদ্দেশ্যে হলেও, মাঝেমধ্যে আমলটা করা উচিত!