৭২তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – ইবনি লী বাইতান – শায়খ আতিক উল্লাহ


ইবনি লী বাইতান

আমার জন্যে একটি ঘর নির্মাণ করুন। কোথায়? জান্নাতে! আবার কোথায়! কথাটা আসিয়া (আ.)-এর। তিনি রাব্বে কারীমের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন। এটা তো জান্নাতে ঘর নির্মাণের কথা! জান্নাতে আল্লাহ আমাদের জন্যে ঘর নির্মাণ করবেন। এজন্য আমাদের করণীয়? দুনিয়াতে আল্লাহর জন্যে ঘর নির্মাণ করা!

মদীনায় এসেই নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমেই একটা মসজিদ নির্মাণ করেছেন। কুবাপল্লীর মসজিদ। বোঝা গেলো, ইসলামি সমাজ গঠনে, মসজিদ নির্মাণের গুরুত্ব অপরিসীম! রাষ্ট্র গঠনের আগে মসজিদ নির্মাণ।

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সেরা স্থান কোনটি? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান কোনটি? কুইজের উত্তর একটা হাদীসে আছে:
أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا
মসজিদ হলো আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় স্থান। বাজার আল্লাহর সবচেয়ে অপ্রিয় স্থান (মুসলিম)।

আমরা দুনিয়াতে মসজিদ বানালে, প্রতিদানে কী মিলবে? উত্তরটা নবীজির কাছ থেকেই শুনি:
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ، بَنَى اللهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ
আল্লাহর জন্যে মসজিদ বানালে, আল্লাহও তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর বানাবেন (মুসলিম)।

প্রথম শুনলে মনে হবে, এ-আর এমন কি, জান্নাতে একটা ঘর বানাবেন? আখেরাতে একটা ঘর থাকার কতো যে, গুরুত্ব, সেটা ফুটপাতে রাত কাটানো মানুষগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। আমার নামায-রোজা কবুল হলো কি না, তার তো নিশ্চয়তা ে নই, কিন্তু একটা মসজিদ নির্মান করলে, জান্নাতে একটা আবাসন নিশ্চিত!

প্রশ্ন জাগে, আমি গরীব মানুষ! এত টাকা কোথায় পাবো? সমাধান নবীজি নিজেই দিয়ে গেছেন:
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ، أَوْ أَصْغَرَ، بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
যে পাখির বাসার মতো বা তার চেয়েও ছোট একটা মসজিদ বানালো, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটা ঘর বানাবেন! (ইবনে মাজা)!

পাখির বাসার মতো মসজিদও হয়? এমন পিচ্চি মসজিদে নামায কে পড়বে? মানুষ না পাখি? তাহলে বোঝা গেলো, গোটা মসজিদ একাই বানাতে হবে এমন নয়। মসজিদের নির্মাণকাজে ‘টুটাফাটা’ অংশগ্রহণ করলেই হবে। আমি যদি অল্প কিছু টাকা দিয়েও শরীক হই, আমি গোটা মসজিদ নির্মানকাজের ‘প্রতিদান’ পেয়ে যাবো।

এজন্য বড়লোক হওয়ার প্রয়োজন নেই। পথের ফকিরও মসজিদ নির্মাণে শরীক হতে পারে। কয়েকটা টাকার বিনিময়ে, সেও হয়ে যেতে পারে, জান্নাতে বিশাল আলীশান প্রাসাদের সন্তুষ্ট মালিক!

পথের ধারে কোথাও নতুন মসজিদ নির্মান হতে দেখলেই, পকেটে হাত দেয়ার অভ্যেস করে ফেলা যায়। হাদীসটা মনে রেখে, আজ থেকেই আমরা জান্নাতে ‘কনস্ট্রাকশন ফার্ম’ খুলে বসতে পারি। একবার দান করবো, নতুন একটা সাইট ওপেন হয়ে যাবে। দুনিয়াতে একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানী দাঁড় করাতে কতো কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়! আর জান্নাতে?
স্রেফ পকেটের সামান্য টাকা ব্যয় করেই, বিলাসবহুল প্রাসাদের মালিক বনে যেতে পারি। রিহ্যাব সদস্য হতে হবে না। এলাকার মাস্তানদের বখশিশ-বখেড়া দিতে হবে না। রাজউক থেকে প্ল্যান পাস করিয়ে নেয়ার ঝামেলা নেই। সয়েল টেস্টের মাথাব্যথা নেই। বায়না-রেজিস্ট্রি-নামজারির ঝক্কি নেই।

আল্লাহর ঘরনির্মাণে শরীক হলাম, সাথে সাথে জান্নাতে একটা ‘অভ্রংলিহ-অভ্রভেদী-হাইরাইজ-আকাশছোঁয়া-গগনচুম্বী’ প্রাসাদের মালিক হয়ে গেলাম!