﷽
সফরে সালাত
আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। কিসে বান্দার সুবিধা হবে, সেদিকে তিনি সদা সজাগ দৃষ্টি রাখেন। বান্দার বদ আমলের কারণে বা বান্দাকে পরীক্ষা করার কারণে, বান্দার উপর মাঝেমধ্যে বিপদাপদ নেমে আসে। এটাও তাঁর রহমতেরই ভিন্ন রূপ।
মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরোতে হয়। দূরে যেতে হয়। সফর করতে হয়। দৌড়াদৌড়িতে থাকতে হয়। কাজের চাপ থাকে। থাকা-খাওয়ার ঠিক-ঠিকানা থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা আপন হেকমতে, মুসাফিরের জন্যে সালাতে বিশেষ ছাড়মূলক সুযোগ রেখেছেন। ইয়া‘লা বিন উমাইয়া রা.থেকে বর্ণিত,
قُلْتُ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضي الله عنه
আমি উমার রা.-কে বললাম,
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا
সালাত কসর করলে তোমাদের কোনও গুনাহ নেই, যদি তোমরা আশঙ্কা কর, কাফেররা তোমাদেরকে বিপন্ন করবে (নিসা ১০১)।
فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ. فَقَالَ: عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ،
এখন তো লোকেরা নিরাপদ হয়ে গেছে। উমার বললেন, তুমি যে বিষয়ে বিস্মিত হয়েছ, আমিও তা নিয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম।
فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ
আল্লাহর রাসূলকে আমি (উমার) প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে। তিনি বলেছিলেন,
صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ، فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ
এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সাদাকা করেছেন (অনুগ্রহ করেছেন)। তোমরা আল্লাহর সাদাকাকে (দানকে) গ্রহণ করে নাও (মুসলিম ৬৮৬)।
অনেকে না জেনে পুরো চার রাকাতই পড়ে ফেলে। আবার কেউ কেউ অতি তাকওয়া দেখিয়ে চার রাকাত পড়ে নেয়। এটা নিতান্তই আল্লাহর অবাধ্যতা। গুনাহের কাজ। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সফরে কসর (সালাত সংক্ষেপ) করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। বান্দার কর্তব্য এই নেয়ামতকে সাগ্রহে গ্রহণ করে নেয়া। দুনিয়ার একজন বড় মানুষ কিছু হাদিয়া দিলে, গ্রহণ না করাটা বেয়াদবি! আল্লাহ তা‘আলার হাদিয়া গ্রহণ না করা কেমন হবে?
নবীজি (ﷺ) নিজেও সফরে বের হলে সালাতকে কসর করতেন। চার রাকাতবিশিষ্ট সালাতকে অর্ধেক করে দুই রাকাত পড়তেন,
أنَّ النَّبيَّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ صلَّى الظُّهرَ بالمدينةِ أربعًا، وصلَّى العصرَ بذي الحُلَيْفةِ رَكْعتينِ،
নবীজি (ﷺ) মদীনায় যোহর চার রাকাত আদায় করেছেন। যিল হুলাইফ (নামক স্থানে) আসরকে দুই রাকাত পড়েছেন (আনাস রা, ১৫৪৭)।
যুল হুলাইফা জায়গাটা মদীনা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নবীজি (ﷺ) মক্কার দিকে রওয়ানা দিয়েছিলেন। নবীজি (ﷺ) সফরের শুরু থেকেই কসর করা শুরু করেছিলেন। ইবনে উমার বলেছেন,
صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَكَانَ ্রلاَ يَزِيدُ فِي السَّفَرِ عَلَى رَكْعَتَيْنِগ্ধ، وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ كَذَلِكَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
আমি আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে থেকেছি। তিনি সফরে (চার রাকাতবিশিষ্ট সালাতে) দুই রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। আমি আবু বকর, উমার ও ওসমান রা.-এর সাথেও সফর করেছি। তারাও এমনই করতেন (বুখারি ১১০২)।
সফরে গেলে বোঝা যায়, সালাত কসর করার গুরুত্ব কতটুকু। কী যে ভাল লাগে! এটা যে সত্যি সত্যি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অপূর্ব ‘সাদাকা’ তখন বোঝা যায়। আমাদের দয়ালু রব কত মহান, আমাদের প্রতি কতটা যত্নবান, তার প্রমাণ এক কসর সালাত।
এই নেয়ামত গ্রহণ করে আমি মূলত নিজেকেই সম্মানিত করি। অতি বুযুর্গি করে পুরো চার রাকাত পড়া, আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অবহেলা করার শামিল। আমি সর্বাবস্থায় আমার দয়ালু রবের হুকুম মেনে চলব। এই নিঃশর্ত মেনে চলার মাঝেই আমার যাবতীয় কল্যাণ নিহিত।