আল্লাহ এক। তার কোনও শরীক নেই। আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব। একমাত্র উপাস্য। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করার নাম ‘তাওহীদ’। তাওহীদ মানে আমার সবকিছু একমাত্র আল্লাহর। প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহর তাওহীদ প্রকাশ করা ঈমানের দাবি। পেয়ারা নবীজি সা. দিনে-রাতে অসংখ্যবার, নানা উপলক্ষে, নানা ভঙ্গিতে আকীদায়ে তাওহীদ (তাওহীদের আকীদা) প্রকাশ করতেন।
আকীদায়ে তাওহীদ পোষণ ও প্রকাশ করার জন্যই নবীকে পাঠানো হয়েছে। নবীর উপর ওহী নাযিল করা হয়েছে,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
আমি আপনার পূর্বে এমন কোনও রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনও মাবূদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করুন (আম্বিয়া ২৫)।
এজন্যই আমরা দেখি, নবীজি সকাল-সন্ধ্যায় যত দু‘আ পড়তেন, সেগুলোতে প্রধানত তাওহীদের কথাই থাকে। আমাদেরও আকীদায়ে তাওহীদ শুধু দিলে দিলে পোষণ করলেই হবে না, প্রকাশও করতে হবে। এটাই নবীজি সা.-এর সুন্নাত। আমার চিন্তা-ভাবনায় তাওহীদ থাকবে। আমার কথাবার্তায় তাওহীদ থাকবে। আমার আচরণ-উচ্চারণে তাওহীদ থাকবে। সর্বোপরি দিনের শুরু ও শেষেও তাওহীদ থাকবে। আবু আইয়াশ রা. বর্ণনা করেছেন,
مَن قال إذا أصبحَ:
যে ব্যক্তি সকালে বলবে,
لا إِلهَ إلا اللهُ وحدَه لا شرِيكَ لهُ، له المُلكُ، وله الحمدُ، وهو على كلِّ شيءٍ قديرٌ
এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও উপাস্য নেই। তাঁর কোনও শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনিই সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
كان له عِدلُ رقبةٍ من ولدِ إسماعيلَ، وكُتبِ له عشرُ حسناتٍ، وحُطَّ عنه عشرُ سيئاتٍ، ورُفِعَ له عشرُ درجاتٍ، وكان في حِرزٍ من الشيطانِ حتى يُمسِي، فإن قالَها إذا أمْسَى كان له مِثلُ ذلكَ حتى يُصبِحَ .
সে ব্যক্তি ইসমাঈল বংশীয় গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তার জন্য দশটি হাসানাহ (নেক) লেখা হবে। তার আমলনামা থেকে দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তার দশটি দারাজাত (মর্যাদাপূর্ণ স্তর) বুলন্দ করা হবে। সে ব্যক্তি সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের যাবতীয় কুচক্র থেকে ‘সুরক্ষায়’ থাকবে। যদি দু‘আটা সন্ধ্যায় আবার পড়ে, সকালের মতো সওয়াব লাভ করবে। সকাল পর্যন্ত সুরক্ষায় থাকবে (আবূ দাউদ ৫০৭৭)।
১: হাদীসটা এখানে শেষ হলেও, কিতাবে অতিরিক্ত একটি চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ যোগ করা আছে,
قال حمَّادٌ: فرأَى رجٌل رسولَ اللهِ فيما يَرَى النائِمُ . فقال: يا رسولَ اللهِ . إنَّ أبا عَيَّاشٍ يُحدِّثُ عنك بِكذَا وكذَا؟ قال: صَدَقَ أبو عياشٍ .
হাদীসের বর্ণনাকারী বিশিষ্ট তাবেয়ী হাম্মাদ বললেন, একলোক আল্লাহর রাসূলকে স্বপ্নে দেখে বলল,
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু আইয়াশ আপনার নামে এমন এমন (উপরের হাদীসটা) বর্ণনা করছে!
নবীজি বললেন, আবূ আইয়াশ সত্য বলছে।
২: নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামকে যিকিরের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। ছোট ছোট যিকিরের বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় বড় সওয়াবের ঘোষণা দিতেন।
৩: দু‘আটা একসকাল বা একসন্ধ্যা পড়লে কিন্তু চলবে না। নিয়মিত পড়া আবশ্যক। একদিন পড়লাম তিনদিন ছেড়ে দিলাম, তাহলে ফজীলত লাভ হবে না। কঠিন কিছু তো নয়। ইচ্ছা হল পড়লাম, ইচ্ছা হল না ছেড়ে দিলাম, আল্লাহর যিকিরে এমন খামখেয়ালিপনা কেন হবে?
৪: ইসমাঈল বংশীয় গোলাম বলে, মহামূল্যবাণ বোঝানো হয়েছে। মানে অনেকটাকা সাদাকা করার সওয়াব মিলবে দু‘আটা পড়লে। পাশাপাশি একজন মানুষকে মুক্ত করার প্রতিদান তো আছেই।
৫: আল্লাহর যিকির দাসমুক্তি ও মুক্তহস্তে দান করার চেয়েও উত্তম আমল।
৬: ছোট্ট দু‘আটা যে পড়লে আমার সামনে অফুরন্ত প্রাপ্তির দুয়ার খুলে যাবে। সকাল-সন্ধ্যায় মাত্র একবার পড়েই কত কত লাভ।
৭: এত এত ফজীলত বলা হয়েছে, আমাদেরকে যিকিরে উদ্বুদ্ধ ও অভ্যস্ত করে তোলার জন্য। আর দু‘আটা যে সে দু‘আ নয়। কালিমায়ে তাওহীদ। তাওহীদের আকীদা পোষণ করার বান্দার শ্রেষ্ঠতম আমল। মানবজীবনের সেরা অর্জন। সকাল-বিকেল কালিমায়ে তাওহীদ উচ্চারণ করার ফজীলত অনেক,
مَن كان آخِرُ كلامِهِ لا إلهَ إلَّا اللهُ دخَل الجَنَّةَ.
যার সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মু‘আয বিন জাবাল রা। আবু দাউদ ৩১১৬)।
৮: বলা যায় না, আমি কখন মারা যাই। সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার প্রভাব বিদ্যমান থাকবে। সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত প্রভাব বিদ্যমান থাকবে।
৯: তার মানে আমি যদি দু‘আটা পড়ার পর দিনে বা রাতে মারা যাই, আমি কালিমায়ে তাওহীদের উপরই মারা গেলাম। শেষকথা কালিমা না হলেও, ফজীলতটা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
১০: আমি নিজের প্রচেষ্টায় শয়তানের চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকতে পারব? অসম্ভব। অথচ ছোট্ট দু‘আ সকালে ও সন্ধ্যায় চট করে পড়ে রাখলে, আগাম সুরক্ষা নিয়ে রাখা হয়ে যায়। শয়তান থেকে বাঁচার দুরূহ কাজ নিয়ে আমাকে তটস্থ থাকতে হয় না। সব দায়দায়িত্ব আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়ে ফুরফুরে থাকতে পারি।
১১: একটি দু‘আ আমাকে দিয়ে দিচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতে যাবতীয় সাফল্যের সুনিশ্চিত আশ্বাস।
১২: শয়তান নিয়ে ভাবনা? আর না, আর না!