কবরের আযাব হক। কবরের আযাবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা আকীদার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ইলমুল গাইবের প্রতি বিশ্বাসের অংশ। এই বিশ্বাসেরই দাবি হল, কবরের আযাবের ভয়ে তটস্থ থাকা। কবরের আযাব থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া। সময় থাকতেই কবরের আযাব থেকে বাঁচার নানামুখী ব্যবস্থা নিতে শুরু করা।
পেয়ারা নবীজি সা. আমাদের আদেশ দিয়ে গেছেন, আমরা যেন কবরের আযাব থেকে পানাহ চাই,
عوذوا باللهِ من عذابِ القبرِ، عوذوا باللهِ من عذابِ النارِ، عوذوا باللهِ من فتنةِ المسيحِ الدَّجَّالِ،عوذوا باللهِ من فتنةِ المحيا والمماتِ
কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। জাহান্নামের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ (আশ্রয়) চাও (আবু হুরায়রা রা। মুসলিম ৫৮৮)।
১: ফিতনা মানে পরীক্ষা। আযাব। শাস্তি। জন্ম-মৃত্যু আমার জন্য ফিতনাস্বরূপ। বেঁচে থাকলে আমরা নানা গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ি। মৃত্যুকালেও আমি যদি ঈমানের সাথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে না পারি, সেটা আমার জন্য বিরাট ফিতনা।
২: কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, দাজ্জাল অনেক বড় ফিতনা। আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া এই ফিতনা থেকে বাঁচা অসম্ভব।
নবীজি আমাদের এসব ফিতনা থেকে বাঁচাতে চেয়েছেন। বাঁচার কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছেন,
يؤتى الرجلُ في قبرِه، فتؤتى رجلاه، فتقولُ: ليس لكم على ما قبلي سبيلٌ؛ كان يقرأ علي سورةَ الملكِ . ثم يؤتى من قِبلِ صدرِه، أو قال بطنِه فيقولُ: ليس لكم على ما قبلي سبيلٌ، كان أوعى في سورةِ الملكِ . ثم يؤتى من قبلِ رأسِه، فيقولُ: ليس لكم على ما قبلي سبيلٌ، كان يقرأ بي سورةَ الملكِ، فهي المانعةُ، تمنعُ عذابَ القبرِ، وهي في التوراةِ سورةُ الملكِ، من قرأها في ليلةٍ فقد أكثرَ وأطيبَ .
১: একজন লোককে কবরে রাখা হবে। তার দুই পায়ের দিকে আযাবের ফিরিশতা আসবে। দুই পা তখন বলবে, আমার দিক দিয়ে তোমরা কাছে ঘেঁষতে পারবে না। তিনি আমার জন্য নিয়মিত সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন।
২: তারপর আযাবের ফিরিশতা বুকের পাশ দিয়ে কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবে। বুক বলবে, আমার পাশ দিয়ে প্রবেশপথ নেই। মানুষটা আমার জন্য নিয়মিত সূরা মুলক তিলাওয়াত করত।
৩: তারপর আযাবের ফিরিশতা মাথার দিকে আসবে। মাথা বলবে, আমার কাছ দিয়ে তার কাছে আসার উপায় নেই। মানুষটা আমার জন্য নিয়মিত সূরা মুলক তিলাওয়াত করত।
৪: সূরা মুলক কবরের আযাবকে রোধ করে। তাওরাতেও সূরা মুলক ছিল। যে ব্যক্তি রাতে এই সূরা পড়বে, সে (কবরের আযাব থেকে বাঁচার জন্য) যথেষ্ট চেষ্টা করল (ইবনে মাসউদ রা। হাকেম)।
আল্লাহর রাসূল নিয়মিত রাতে সূরা মুলক পড়তেন। নবীজির কবরের আযাবকে ভয় করার কোনও দরকার ছিল? তিনি জান্নাতী। তারপরও কেন সূরা মুলকের আমল করতেন?
ক: উম্মতকে শেখানোর জন্য।
খ: আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য। শুকয়িরা আদায়ের জন্য,
كَانَ لا يَنامُ حتى يقرأَ الم تَنْزِيلُ السَّجْدَةُ، وتَبارَكَ الذي بيدِهِ الملكُ
আল্লাহর রাসূল সূরা আলিফলামমিম সাজদা ও সূরা মুলক পড়া ছাড়া ঘুমুতেন না (জাবের বিন আবদুল্লাহ রা। তিরমিযী ৩৪০৪)।
গ: নবীজি শুধু নিজেই পড়তেন না, সাহাবায়ে কেরামকে সূরাটা পড়ার প্রতিও উদ্বুদ্ধ করতেন,
إنَّ سورةً منَ القرآنِ ثلاثونَ آيةً شفعَت لرجلٍ حتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهيَ سورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ
কুরআনের ত্রিশ আয়াত সম্বলিত একটি সূরা, তিলাওয়াতকারী পরিপূর্ণ ক্ষমা লাভ করা পর্যন্ত আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে যেতে থাকবে। সেটা হল সূরা মুলক (আবু হুরায়রা রা। তিরমিযী ২৮৯১)।
কিছুকথাঃ
১: আখেরাতের অন্তহীন সফরে প্রথম ঘাঁটি ‘কবর’। সূরা মুলক আমাকে কবর থেকে আগলাতে শুরু করবে। আমাকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পাইয়ে দিয়ে, তবে ক্ষান্ত হবে।
২: কতক্ষণই বা লাগবে সূরাটা পড়তে, তিন মিনিট? সারাদিন দুনিয়ার জীবনকে সুরক্ষার জন্য ব্যয় করি। তিনটা মিনিট আখেরাতের সুরক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারব না?
৩: সূরাটা পড়লে, ক্ষমা পাব। প্রতি দশ নেকি করে পাব। ঘুমের আগে যিকির হল। কুরআন তিলাওয়াতের ফজীলতও হাসিল হল। একসাথে কত কিছু।
৪: কুরআন কারীম আল্লাহর কালাম। শক্ত রজ্জু। এই উম্মাহর মুক্তির সোপান। আমি কুরআনকে আঁকড়ে ধরলে, কুরআন বিপদে আমার পাশে দাঁড়াবে। সূরা মুলকও দুর্দিনে আমার ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। কঠিন সেই দিনে আমাকে মুক্তির বন্দরে পৌঁছে দেবে। মাত্র তিন মিনিট?