খুশু-খুযু সলাতের প্রাণ। খুশু-খুযু মানে গভীর মনোযোগ বা অনুধ্যান। আমাদের উচিত, এমনভাবে সলাত আদায় করা, যাতে খুশু-খুযুতে ব্যঘাত না ঘটে। নবীজির মতো খুশু-খুযু আর কার হতে পারে? তারপরও নবীজি নিজে সুতরা ব্যবহার করতেন। উম্মতের নামায যেন নির্বিঘœ আর নিরুপদ্রব হয়, এজন্য তিনি নামাযীর আগে দিয়ে কাউকে হাঁটাচলা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন। সামনে হাঁটাহাঁটি করলে, মুসল্লির মনোযাগে ব্যঘাত ঘটতে পারে। তা ছাড়া নামাযের আলাদা একটা সম্মান আছে। নামাযীর আশেপাশে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করা দরকার। যে কোনও ইবাদতের জন্যই পরিবেশ লাগে। গভীর রাতে নিরব সময়ের নামায আর কোলাহলময় সময়ের নামায গুণ ও মানে অবশ্যই তফাৎ থাকবে।
সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগে ঘাটতি আসবে। কেরাত থেকে মন ছুটে যাবে। সামনে দিয়ে কে হেঁটে যাচ্ছে, তা জানার জন্য কৌতূহলি মন আকুলিবিকুলি করে উঠবে। মনকে জোর করে বশে রাখলেও, নামায আর আগের মতো ছেদহীন হবে না। হয়তো এসব দিক খেয়াল করেই নবীজি সা. বলে গেছেন,
لو يَعْلَمُ المارُّ بيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي ماذا عليه، لَكانَ أنْ يَقِفَ أرْبَعِينَ خَيْرًا له مِن أنْ يَمُرَّ بيْنَ يَدَيْهِ
একজন নামাযীর সামনে দিয়ে (ইচ্ছাকৃতভাবে) হেঁটে যাওয়ার ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে জানতে পারলে, চল্লিশ দিন (মাস বা বছর) দাঁড়িয়ে থাকত। তবুও মুসল্লির সামনে দিয়ে হেঁটে যেত না (আবু জুহাইম রা. বুখারী ৫১০)।
.
নবীজি উম্মতের সলাতকে সুন্দর ও নিমগ্ন করে তুলতে, অত্যন্ত চমৎকার এক সুন্নত উপহার দিয়ে গেছেন। উম্মতকে সামনে ‘সুতরা’ দিয়ে নামায আদায় করতে বলে গেছেন। সুতরা মানে আবরণ বা অন্তরায়। সিজদা দেয়ার স্থান ঘেঁষে লাঠি বা দ-সদৃশ কিছু একটা পুঁতে দেয়া। সুতরার মাধ্যমে মোটাদাগে কয়েকটি উপকার,
ক: মুসল্লী মনোযোগ দিয়ে সলাত আদায় করতে পারবে।
খ: অন্য মুসল্লী নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে।
নবীজি নামাযীর আগে দিয়ে হাঁটত নিষেধ করে ক্ষান্ত হননি। সুতরার সুন্নাত জারি করে সমাধানও দিয়ে গেছেন। মুসল্লী ও চলাচলকারী উভয়ের স্বার্থ রক্ষিত হল। নবীজি বলেছেন,
إذا صلّى أحدُكم فليصلِّ إلى سُترةٍ وليدنُ منها
তোমরা সামনে ‘সুতরা’ রেখে, তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে নামায পড়বে (আবু সায়ীদ খুদরি রা. আবু দাউদ ৬৯৭)।
গ: সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দিবে না,
ولا يدَعْ أحدًا يمُرُّ بينَ يدَيْهِ
সামনে দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না (আবু সায়ীদ রা. ইবনে হিব্বান ২৩৭২)।
ঘ: সামনে কিছু একটা রাখতেই হবে,
اسْتتِروا في صلاتكُم ولو بسهمٍ
তোমরা সলাত আদায়ের সময়, অন্তত সামনে একটা তীর রেখে হলেও আড়াল সৃষ্টি করো (রবী বিন সাবুরাহ। জামে‘ সগীর ৯৬২)।
ঙ: সামনে দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না। নামাযীর সামনে দিয়ে কেউ গেলে, তাক শয়তান আখ্যায়িত করা হয়েছে,
لا يقطعُ الشيطانُ عليه صلاتَه
শয়তান যেন তার সলাতে ব্যাঘাত না ঘটায় (সাহল বিন হাসমাহ। আবু দাউদ ৬৯৫)।
.
সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সুতরার সুন্নাত পালন করতেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন,
‘‘এক জুমার দিন আবু সাঈদ খুদরীকে দেখলাম সামনে সুতরা রেখে নামায পড়ছেন। একজন যুবক সামনে দিয়ে যেতে উদ্যত হলে, আবু সাঈদ তাকে ধাক্কা দিয়ে হটিয়ে দিলেন। যুবকটি এদিক-সেদিক তাকিয়ে আর কোনও পথ না দেখে, আবার আগের জায়গা দিয়ে অতিক্রম করতে গেল। আবু সাঈদ এবার যুবকের বুকে আগের চেয়েও জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। যুবকটি রেগেমেগে আবু সাঈদকে গালমন্দ করে, গভর্নর মারওয়ান বিন হাকামের কাছে গিয়ে নালিশ করল। নামাজ শেষ করে আবু সাঈদও মারওয়ানের দরবারে হাজির হলেন। মারওয়ান বিস্তারিত ঘটনা জানতে চাইলেন। আবু সাঈদ রা. বললেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি’’,
إذا صَلّى أحَدُكُمْ إلى شيءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النّاسِ فأرادَ أحَدٌ أنْ يَجْتازَ بيْنَ يَدَيْهِ، فَلْيَدْفَعْهُ فإنْ أبى فَلْيُقاتِلْهُ فإنَّما هو شيطانٌ.
সামনে সুতরা রেখে নামায পড়ার সময়, সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করতে চাইলে, তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দেবে। মানতে না চাইলে অপেক্ষাকৃত জোরে ধাক্কা দেবে। কারণ এই লোক মানুষ হলেও স্বভাবে সাক্ষাত শয়তান (বুখারী ৫০৯)।
ক: ওলামায়ে কেরামের মতে ধাক্কা দেয়াটা ওয়াজিব বা আবশ্যক কিছু নয়। কোনওভাবে বাধা সৃষ্টি করলেই হবে।
খ: সবচেয়ে ভালো হয়, কাউকে আসতে দেখলে সামনের দিকে লম্বালম্বি হাত বাড়িয়ে দেবে। তাহলেই আশা করি কাজ হয়ে যাবে।
.
নবীজির বিভিন্ন সময়ের নামায খেয়াল করলেও দেখা যায়, তিনি সযতেœ সুতরা ব্যবহার করতেন,
أنَّ النبيَّ صَلّى اللهُ عليه وسلَّمَ كانَ يُرْكَزُ له الحَرْبَةُ فيُصَلِّي إلَيْها.
নবীজির সামনে বর্শা পুঁতে রাখা হত। তিনি সেটাকে সুতরা বানিয়ে নামায আদায় করতেন (আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা.। বুখারী ৪৯৮)।
আরেক হাদীসে আছে
أنَّ النبيَّ ﷺ كانَ تُرْكَزُ الحَرْبَةُ قُدّامَهُ يَومَ الفِطْرِ والنَّحْرِ، ثُمَّ يُصَلِّي
ঈদুল ফিতর ও আযহার দিন নবীজির সামনে বর্শা পুঁতে রাখা হত। নবীজি সুতরা সামনে রেখে ঈদের নামায পড়াতেন (বুখারী ৯৭২)।
.
সফরে এলেও সুতরা ব্যবহার করতেন। উন্মুক্ত প্রান্তরে সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাওয়ার আশংকা না থাকলেও সুতরা ব্যাবহার করতেন,
رَأَيْتُ رَسولَ اللَّهِ ﷺ بالأبْطَحِ، فَجاءَهُ بلالٌ فَآذَنَهُ بالصَّلاةِ ثُمَّ خَرَجَ بلالٌ بالعَنَزَةِ حتّى رَكَزَها بيْنَ يَدَيْ رَسولِ اللَّهِ ﷺ بالأبْطَحِ، وأَقامَ الصَّلاةَ.
আল্লাহর রাসূল সা.-কে মক্কার বাইরে ‘আবতাহ’ নামক স্থানে দেখতে পেলাম। বেলাল এসে নবীজিকে নামাযের সময় হওয়ার সংবাদ দেয়ার পর, একটা লম্বা লাঠি নবীজির সামনে পুঁতে দিল। নবীজি লাঠিটাকে সুতরা বানিয়ে নামায পড়ালেন (আবু জুহাইফা রা.। বুখারী ৬৩৩)।
.
মসজিদের খুঁটি, মসজিদের দেয়ালও সুতরা। সাহাবায়ে কেরাম একাকী নামায পড়ার সময়, মসজিদে নববীর খুঁটিকে সুতরা বানাতেন,
كانَ المُؤَذِّنُ إذا أذَّنَ قامَ ناسٌ مِن أصْحابِ النبيِّ ﷺ يَبْتَدِرُونَ السَّوارِيَ، حتّى يَخْرُجَ النبيُّ ﷺ وهُمْ كَذلكَ، يُصَلُّونَ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ المَغْرِبِ، ولَمْ يَكُنْ بيْنَ الأذانِ والإِقامَةِ شيءٌ.
মুয়াজ্জিন আযান দিলে, কিছু সাহাবী দ্রুত মসজিদের খুঁটিসমূহের দিকে চলে যেতেন। মাগরিবের আগে, নবীজি হুজরা থেকে বের হতে হতে তারা দুই রাকাত হালকা নামায পড়ে নিতেন। মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে খুব বেশি সময় থাকত না (আনাস বিন মালিক রা.। বুখারি ৬২৫)।
.
সুতরা মুসল্লীর কতটুকু সামনে থাকবে? বেশি দূরে দিলে, জায়গা না থাকলে, চলাচলে মানুষের কষ্ট হতে পারে। সিজদার জায়গা ঘেঁষে সুতরা দেয়া সুন্নাত,
كانَ بيْنَ مُصَلّى رَسولِ اللَّهِ ﷺ وبيْنَ الجِدارِ مَمَرُّ الشّاةِ.
আল্লাহর রাসূলের মুসাল্লা (নামাযের স্থান। এখানে উদ্দেশ্য সিজদার স্থান) ও দেয়ালের মাঝে একটি ছাগল পরিমাণ জায়গা খালি থাকত (সাহল বিন সা‘দ রা.। বুখারী ৪৯৬)।
নবীজি দেয়ালের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াতেন। সিজদার স্থানের সামান্য আগে সুতরা দিতেন। সুতরার সামনে থেকে দেয়াল পর্যন্ত কিছু জায়গা খালি থাকত। সাহাবায়ে কেরাম ওখান দিয়ে প্রয়োজনে এপাশ-ওপাশ যেতে পারতেন। সুতরার ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরী,
১: সুতরা যতটা সম্ভব কাছাকাছি পোঁতা। নবীজির উক্তি (وَلْيَدْنُ مِنها) মুসল্লী যেন সুতরার কাছকাছি দাঁড়ায়।
২: সুতরার সামনে লোক চলাচল করতে পারে পরিমাণ জায়গা খালি রাখা। পা থেকে সুতরা তিনগজ বা সামান্য দূরত্বে হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইবনে উমার রা. নবীজির সুন্নাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতে চাইতেন,
أنَّ عَبْدَ اللَّهِ بنَ عُمَرَ، كانَ إذا دَخَلَ الكَعْبَةَ مَشى قِبَلَ وجْهِهِ حِينَ يَدْخُلُ، وجَعَلَ البابَ قِبَلَ ظَهْرِهِ، فَمَشى حتّى يَكونَ بيْنَهُ وبيْنَ الجِدارِ الذي قِبَلَ وجْهِهِ قَرِيبًا مِن ثَلاثَةِ أذْرُعٍ، صَلّى يَتَوَخّى المَكانَ الذي أخْبَرَهُ به بلالٌ، أنَّ النبيَّ ﷺ صَلّى فِيهِ، قالَ: وليسَ على أحَدِنا بَأْسٌ إنْ صَلّى في أيِّ نَواحِي البَيْتِ شاءَ.
আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. কা‘বায় প্রবেশ করে, দরজা পেছনে রেখে, সামনের দেয়াল থেকে তিনগজ দূরত্বে নামাযে দাঁড়াতেন। তিনি বেলালের কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলেন, নবীজি কা‘বার অভ্যন্তরে কোথায় দাঁড়িয়ে নামায পড়েছেন। তিনিও হুবহু সেই স্থানে নামযে দাঁড়িয়েছেন। তবে ইবনে উমারের মতে, কা‘বার যে কোনও স্থানে (যে কোনও দিকে মুখ করে) নামায পড়তে পারবে (বুখারী ৫০৬)।
৩: কেউ সুতরা না নিয়ে নামায পড়লে, তার তিনগজ সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে কোনও গুনাহ হবে না।
৪: একাকী নামায পড়লে সুতরা দিবে। জামাতে নামায পড়লে, ইমামের সামনে রাখা সুতরাই পুরো জামাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে,
أَقْبَلْتُ راكِبًا على حِمارٍ أتانٍ، وأَنا يَومَئذٍ قدْ ناهَزْتُ الِاحْتِلامَ، ورَسولُ اللَّهِ ﷺ يُصَلِّي بالنّاسِ بمِنًى إلى غيرِ جِدارٍ، فَمَرَرْتُ بيْنَ يَدَيْ بَعْضِ الصَّفِّ فَنَزَلْتُ، وأَرْسَلْتُ الأتانَ تَرْتَعُ، ودَخَلْتُ في الصَّفِّ، فَلَمْ يُنْكِرْ ذلكَ عَلَيَّ أحَدٌ
নবীজি তখন মিনাপ্রান্তরে। দেয়াল বা অন্য কিছুর সুতরা ছাড়াই নামায পড়াচ্ছিলেন। আমি তখন বয়ঃপ্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। আমি উটনির পিঠে সওয়ার হয়ে কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, উটনিকে চরে ঘাসপাতা খেতে দিলাম। কেউ কিছু বললেন না (ইবনে আব্বাস রা. বুখারী ৪৯৩)।
ক: ইমাম সুতরা ছাড়াও নামায পড়াতে পারবেন। জামাত চলাকালে প্রয়োজনে অন্য মুসল্লীদের সামনে হাঁটা যাবে। ইমামের সুতরাই মুক্তাদির সুতরা বলে বিবেচিত হবে।
খ: ছোটবেলা ইলম শিখে, বড়বেলায় আমলা করা যাবে।
৫: সুতরা দেয়ার মত কিছু না পেলে?
إذا صلّى أحدُكم فليجعلْ تِلقاءَ وجهِه شيئًا، فإن لم يجدْ فليَنصِبْ عصاه، فإن لم يكن معه عصا فليَخُطَّ خطًّا ولا يضرُّه من مرَّ بين يدَيه
তোমরা সলাত আদায় করার সময় সামনে কিছু রাখবে। কিছু না পেলে, নিজের লাঠি পুঁতে রাখবে। সাথে লাঠি না থাকলে, একটা ‘দাগ’ টেনে রাখবে। রেখার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে কোনও ক্ষতি নেই (আবু হুরায়রা রা. আবু দাউদ ৬৮৯)।
৬: সুতরার উচ্চতা কেমন হবে?
إذا وضَعَ أحَدُكُمْ بيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ فَلْيُصَلِّ، ولا يُبالِ مَن مَرَّ وراءَ ذلكَ.
জিনদ-ের মতো কিছু সামনে রেখে নামায পড়লে, তোমাদের সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেও কানও সমস্যা নেই (তলহা বিন ওবাইদুল্লাহ রা. মুসলিম ৪৯৯)।
ক: উটের পিঠে বসার জন্য জিন লাগানো হয়। জিনের শেষাংশে আরোহী হেলান দেয়ার সুবিধার্থে একটা দ- বা কাষ্ঠফলক থাকে।
খ: জিনদ-ের উচ্চতা কখনো কম কখনো বেশি হয়। সাধারণত বাহুর হাড় পরিমাণ হয়। বাহুর হাড় একগজের দুই তৃতীয়াংশ। মোটামুটি একগজ উচ্চতার হলেই হবে।
খ: সুতরা তীর বা বর্শার মতো চিকনও হতে পারবে। দেয়াল, খুঁটি বা গাছের মতো পুরুও হতে পারবে।
৭: সুতরা দেয়ার হুকুম কী? মুসল্লিকে সুতরা দিতেই হবে? সুতরা দেয়া স্বাভাবিক অবস্থায় মুস্তাহাব। কেউ কেউ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন। আবার কেউ ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিবও বলেছেন। মানুষ চলাচলপূর্ণ স্থানে নামাযে দাঁড়ালে, সুতরা দেয়া ওয়াজিব।
৮: ফরয, সুন্নত সব নামাযেই সুতরা দেবে।
৯: এক হাদীসে আছে,
فإنَّه يَقْطَعُ صَلاتَهُ الحِمارُ، والْمَرْأَةُ، والْكَلْبُ الأسْوَدُ
গাধা, নারী, কালোকুকুর সামনে দিয়ে গেলে, নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে (আবু যার গিফারী রা.। মুসলিম ৫১০)।
১০: এসব সামনে দিয়ে গেলে কি নামায ভেঙে যাবে? জি¦ না। ভাঙবে না। হাদীসে আছে, নবীজি রাতে নামায পড়ার সময় আম্মাজান আয়েশা রা. তার আগে দিয়ে শুয়ে থাকতেন।
.
কিছু কথা:
১: অনেক সময় দেখা যায়, মসজিদে প্রবেশ করে, কোনও বাছ-বিচার ছাড়াই নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। একটু চিন্তা করা উচিত, আমি যেখানে দাঁড়াচ্ছি, অন্য মুসল্লীর কোনও সমস্যা হবে কি না। চেষ্টা করা মসজিদের খুঁটি সামনে রেখে দাঁড়াতে। সাহাবায়ে কেরাম তাই করতেন। খুঁটি ধরার জন্য তারা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতেন। তারমানে তারা সুতরাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। মসজিদে সুন্নত পড়ার জন্য, তারা মসজিদে নববীর খুঁটিকে সুতরা বানাতেন। সুতরা মানে শুধু সামনে কিছু একটা পুঁতে রাখাই নয়, মসজিদের দেয়াল বা স্তম্ভও সুতরা হতে পারে।
২: মাঝেমধ্যে দেখা যায়, পেছনের কাতারে জামাতের একেবারে শেষে এসে ‘মাসবুক’ হয়েছে। সামনের কাতারের মুসল্লীগণ সুন্নত পড়ে বেরোবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে এখনো মাসবুকের ছুটে যাওয়া রাকাত শেষ হয়নি। কেউ কেউ তখন এত ধীরে ধীরে নামায পড়েন, মনে হয় আজ আর তার নামায শেষ হবে না। লোকজন বিরক্ত হয়ে তাকে ডিঙ্গিয়ে চলে যেতে শুরু করে। কতক্ষণ অপেক্ষ করবে? পরিস্থিতি এমন হলে, মাসবুক ব্যক্তি নামাযকে একটু খাটো করাই উত্তম। মনে রুকু-সিজদার তাসবীহ কমিয়ে পড়া। তিনবারের স্থানে একবার পড়া। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ-দোয়ায়ে মাসুরা একদম অতি ধীরে না পড়া।
৩: মাঝেমধ্যে এমনও হয়, সামনের জন সুন্নত পড়ে বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু পেছনের মুসল্লী নফলের নিয়্যাত বেঁধে ফেলেছেন। পেছনের কাতারে থাকা মুসল্লীর খেয়াল রাখা উচিত, আমি নফলের নিয়্যাত বাঁধলে সামনে ব্যক্তি আটকা পড়ে যাবেন কি না। সরে দাঁড়ানো সম্ভব হলে তাই করা উত্তম।
৪: কেউ কেউ আছেন, সামনে কেউ তার নামায শেষ করার অপেক্ষায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে, তার নামাযের গতি ধীরতর হয়ে যায়। কখনো কখনো মনে হয়, তারা সামনের মানুষকে দাঁড় করিয়ে রাখতে আনন্দ পান। অথবা নিজেকে অতি মনোযোগী নামাযী প্রমাণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে দু’টি মারাত্মক গুনাহ হয়,
ক: রিয়া বা লোক দেখানো।
খ: ঈযায়ে মুসলিম। মুসলমানকে কষ্ট দেয়া।
গ: তাছাড়া নামাযরত থেকে ‘খারেজী’ বিষয় নিয়ে ভাবনার কারণে, নামাযও হালকা হয়ে যায়।
৫: বাড়িঘরে নামায পড়ার সময়ও, সামনে দিয়ে কারো হাঁটার সম্ভাবনা থাকলে, সামনে সুতরা রেখে দেয়া জরুরী।