بسم الله الرحمن الرحيم
দ্বিতীয় কথা এই যে, আমাদের যিন্দেগী যেন তাকাল্লুফের যিন্দেগী না হয়। এই মুহূর্তে কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। তাই পরিচিত একটি শব্দ বললাম। যিন্দেগী তাকাল্লুফের হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
আলমারউ ইয়াকীছূ আলা নাফছিহী’ অনুসারে আমার মনে হয়, আমাদের অনেকের যিন্দেগী তাকাল্লুফের যিন্দেগী ও কৃত্রিমতার জীবন। কথাটি একটু কঠিন। তাকাল্লুফ ও কৃত্রিমতার এক অর্থ তো প্রসিদ্ধ, এখানে একটু ভিন্ন অর্থে বলেছি। তাই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলা প্রয়োজন।
তাকাল্লুফের যে অর্থ আমরা সকলেই বুঝি, যেমন : আমাকে খেতে বলা হল। আমার খিদেও আছে তবুও বললাম, না, খাব না। তবে ভাব এমন যে, আবার বললে বা পীড়াপীড়ি করলে বসে যাব।
কিংবা কোনো মেহমান এল, ভালো ইন্তেযাম করার ইচ্ছা নেই, তবু লজ্জায় পড়ে করা হল। এ কারণে ইন্তেযাম করাকেও আমরা তাকাল্লুফ বলে থাকি।
তেমনি কোনো উস্তাদের সামনে আছি, আমার যাওয়া দরকার, কিন্তু উস্তাদ কিছু বলছেন না। তাই যেতে পারছি না। আবার উস্তাযওবা কিভাবে যেতে বলেন; তালিবে ইলম যদি মনে করে যে, আমাকে উঠিয়ে দিল। তাই তারও সংকোচ হচ্ছে। মোটকথা, এখন উস্তাদের কাছে তালিবে ইলমের থাকার প্রয়োজন নেই, কিন্তু দু’পক্ষের কেউ সংকোচ কাটাতে পারছে না তাই ছাত্রও বসে আছে, উস্তাদও কিছু বলছেন না। আমরা সাধারণত এসব বিষয়কেই তাকাল্লুফ বলে থাকি।
তাকাল্লুফ বা কৃত্রিমতার আরো সূক্ষ্ম ও ব্যাপক অর্থ আছে। ঐ অর্থের তাকাল্লুফ যদি আমরা ত্যাগ করতে না পারি, তাহলে আমাদের মাঝে সিদ্ক হাসিল হবে না। তাকাল্লুফ যত বেশি হবে, সিদ্ক হবে তত কম। সিদকের বিপরীত শুধু ‘কিযব’ নয়, তাকাল্লুফও।
এই সূক্ষ্ম তাকাল্লুফের পরিচয় সংক্ষেপেও বলা যেত, কিন্তু আমার কাছে সুন্দর বাক্য নেই, যা দিয়ে বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যায়। খুঁজলে হয়তো ‘জামে-মানে’ কোনো ইবারত পাওয়া যাবে, কিন্তু আপাতত বিষয়টি ফলাফল দ্বারা বোঝার চেষ্টা করতে পারি।
মনে করুন, কেউ আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করল-আর এখন তো মাশাআল্লাহ, প্রশংসাকারীর কোনো অভাব নেই-আমি এই প্রশংসা শুনে লজ্জিত হলাম না, চিন্তা করলাম না যে, আমি কোথায় আর মানুষের ধারণা কোথায়! এই বিচার ও মুহাসাবার প্রয়োজনও মনে করলাম না; বরং সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম যে, মানুষ তো আমাকে ভালো বলে, আমার প্রতিষ্ঠানকে ভালো বলে। এই যে বাস্তবতার বিচার না করা, মানুষের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া এটাও তাকাল্লুফ। এটা ‘রিয়ায়ে খফী’। শিরক যেমন দুই প্রকার : জলি ও খফী। তেমনি রিয়াও দুই প্রকার : জলী ও খফী। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য। রিয়ায়ে জলী তো আমরা বুঝি, লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করা। আর এখন যে তাকাল্লুফের কথা বললাম, তা হল রিয়ায়ে খফী বা সূক্ষ্ম রিয়া।
মানুষের দুটি হলত : মাআন্নাস ও মাআল্লাহ।
মাআন্নাস অর্থ ঐ অবস্থা যা সাধারণ জনতার সামনে রয়েছে। আর মাআল্লাহ অর্থ যা সবার সামনে নেই, যেমন আমার অন্তরের হালত, আমার একান্ত জীবনের অবস্থা। এটা শুধু আল্লাহ তাআলাই জানেন। কিংবা অন্য কেউ জানলেও আম জনতার জানা নেই যেমন কারো সাথে কোনো মন্দ আচরণ করা হল, স্ত্রীর উপর জুলুম করা হল, হকদারদের হক নষ্ট করা হল, লেনদেনে খেয়ানত করা হল ইত্যাদি। যাদের সাথে তা ঘটেছে তারা জানে কিংবা হয়ত শুধু আল্লাহই জানেন, সাধারণ মানুষের সামনে তা নেই। এখন আল্লাহ তাআলা যে মেহেরবানী করে আমার দোষত্রুটি গোপন করেছেন এর শোকর গোযারি করি এবং জীবনের ঐ দিকগুলোও ইসলাহ ও সংশোধনের চেষ্টা করি তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু আল্লাহ গোপন রেখেছেন বলে আমি যদি উদাসীন হয়ে যাই এবং আল্লাহর এই দয়া ও মেহেরবানীর অপব্যবহার করি, জীবনের যে অংশ সাধারণ মানুষের সামনে শুধু তা-ই কোনো রকম কেতাদুরস্ত রেখে সন্তুষ্ট হই, তাহলে বোঝা যাবে, আমার মাঝে রিয়ায়ে খফি আছে এবং আমার যিন্দেগী তাকাল্লুফের যিন্দেগী। আমার রোগ শুধু এই নয় যে, ইসলাহে বাতেন ও ভিতরের সংশোধনের প্রতি আমার মনোযোগ নেই; বরং আমার এই অমনোযোগিতা অন্য অনেক মরণ-ব্যধির উপসর্গ। তা হচ্ছে আমার ইখলাস খুবই নাকিস ও দুর্বল, আমি যে মনে করি, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহর রেযামন্দি, আমার এই ধারণাকে আমি বিচার করে দেখিনি। বাস্তব অবস্থা এই যে, আল্লাহর রেযামন্দিকে আমি যিন্দেগীর মাকসাদ বানাইনি। এ কারণেই যখন জীবনের বহিরঙ্গ বা মাআন্নাস ওয়ালা অংশকে পরিপাটি দেখি, বা পরিপাটি রাখতে পারি তখন আমার মাঝে তৃপ্তি এসে যায়। সত্যিই যদি আমার জীবনের উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর রেযামন্দি তাহলে মানুষের কাছে ভালো হতে পারলেই কেন আমি সন্তুষ্ট? আমাকে তো আমার মাওলা ও মনিবকে রাজি-খুশি করতে হবে। আর তা তো সম্ভব নয় যদি আমার ভিতরের হালত আমার জীবনের অন্দরমহল পবিত্র ও কলুষমুক্ত না হয়। এরপরও কেন এ বিষয়ে আমার এত অবহেলা?
আমার যিন্দেগী রিয়ার যিন্দেগী। আমি সূক্ষ্ম রিয়া বা খফী রিয়ার শিকার। আমার জীবনটা কৃত্রিমতার জীবন।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের তাকাল্লুফ ছেয়ে আছে।
মনে করুন, আপনার উস্তাদ আপনার আদব-আখলাক নিয়ে চিন্তা করেন। তারাক্কী হচ্ছে কি হচ্ছে না, ভাবেন। আপনি হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে কিছু হালাত শোনালেন। হুজুর আশ্বস্ত হলেন। সাথে সাথে আপনিও আশ্বস্ত হয়ে গেলেন! পরের টুকুর জন্য আর চিন্তা করলেন না। হুজুরের দুআ দরকার ছিল। তিনি ইতমিনান হয়ে দুআ করেছেন। এটা ভালো। কিন্তু এর পরের কাজ, অর্থাৎ হুজুর যে রেযামন্দি প্রকাশ করেছেন এটা তো আমাকে ধরে রাখতে হবে। হুজুর আমার অর্ধেক হালত জেনেছেন, অর্ধেক জানেননি বা জানাইনি। এটা তো আমাকে সংশোধন করতে হবে। আমার ঐ অবস্থাটা তো আল্লাহ জানেন। এ নিয়ে আমার যদি মাথাব্যাথা না থাকে, কোনোভাবে হুজুরকে সন্তুষ্ট করেই যদি আমিও সন্তুষ্ট হয়ে যাই, আল্লাহর সামনে আমি পরিষ্কার হয়েছি কি না-এ বিষয়ের কোনো মুহাসাবা, মুরাকাবা না থাকে তাহলে বলুন, এটা রিয়া ও তাকাল্লুফ এবং অভিনয় ও কৃত্রিমতা না হলে আর কী হবে?
আমি সংক্ষেপে বলতে পারিনি। তবুও আশা করি, বিষয়টি কিছু হলেও পরিষ্কার হয়েছে।
অনেক বছর আগে যখন হযরত মাওলানা মুফতী শফী রাহ. দারুল উলূম করাচীতে সাপ্তাহিক ইসলাহী মজলিসে আলোচনা করতেন, যা পরে ‘দিল কি দুনইয়া’ নামে সংকলিত হয়েছে এবং বাংলায়ও অনুবাদ হয়েছে, তখন হযরত বলেছিলেন, ‘দ্বীনের প্রকাশ্য কিছু আমল তো আমরা ধরে রেখেছি। যেমন, নামায পড়া, মসজিদে আসা, লেবাস-পোশাক, দাড়ি-টুপি ইত্যাদি। কিন্তু আমার অনেক সময় ভয় হয়, এই যাহেরী আমল কি আসলে আল্লাহর জন্য, না আমার মাকাম ও মানসাবের দাবি পূরণের জন্য। আমি একজন তালিবে ইলম ও মৌলভী, এই মাকাম ও মানসাবের কিছু দাবি আছে, কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। মনে করুন, আমার যে মাকাম ও মানসাব তার একটি দাবি হল দাড়ি রাখা। কারণ দাড়ি রাখা ছাড়া মিম্বরে-মিহরাবে বসা যাবে না। অন্তত আমাদের দেশে তা সম্ভব নয়। তো এই যাহেরী আমলগুলো যে আমি করে যাচ্ছি, একটু চিন্তা করা দরকার যে, মিহরাব-মিম্বরের কিংবা দরসের মসনদ বা তালিবে ইলমীর জন্য জরুরি বলে করছি, না আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য, তাঁর রেযামন্দী হাসিলের জন্য করছি? তো হযরত রাহ. বলেন, এই বিষয়ে আমার সন্দেহ হয়, আশঙ্কা জাগে। কারণ আমার এই মানসাবের যেমন যাহেরি কিছু দাবি আছে, বাতেনী কিছু তাকাযাও তো রয়েছে। দেখা যায়, যাহেরী তাকাযা পূরণে মাশাআল্লাহ আমাদের কোনো ত্রুটি নেই। কখনো শায-নাদের এর বিপরীত হলেও সাধারণভাবে এ অধঃপতনের যুগেও যাহেরীটার মধ্যে আমাদের ত্রুটি কম। কিন্তু বাতেনী বিষয়ে, আদব-আখলাক, যিকির-আযকার এবং কলবী হালতের বিষয়ে এককথায় সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালের জীবন সম্পর্কে আমরা অনেক পিছনে। এই জীবন সম্পর্কে কোনো মুহাসাবা-মুরাকাবা নেই, ইসলাহের কোনো ফিকিরই নেই। জীবনের যাহেরী অংশের দুরস্তি যদি আল্লাহর জন্য হত তাহলে বাতেনী অংশ নিয়েও তো ফিকির থাকত। কিন্তু এ বিষয়ে তো আমি উদাসীন।
দিলের অবস্থা যেমন জীবনের বাতেনী ও অপ্রকাশ্য অংশ তেমনি ব্যক্তিগত জীবনের যে অংশটি আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখেন না তা-ও বাতেনী অংশ। আমার সম্পর্কে যার সুধারণা নষ্ট হতে পারে এমন কারো সামনে হয়তো হচ্ছে না, কিন্তু তাদের দৃষ্টির আড়ালে তো গোনাহ হচ্ছে। এই হালতে বাতেনার মধ্যে দিলের গোনাহ যেমন আছে তেমনি লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপন গোনাহও রয়েছে। অন্তরের জগত এবং নিজস্ব গোপন জগত-এই দুই জগত সম্পর্কে আমরা কেন উদাসীন? আমরা যাহেরী দুরস্তি যদি আল্লাহর জন্য হত তাহলে তো বাতেনী দুরস্তির জন্য মুহাসাবা-মুরাকাবা করতাম। কিন্তু এ বিষয়ে উদাসীন। তাই এই সন্দেহ ও আশঙ্কা হয় যে, এই যাহেরী আমলগুলো আল্লাহর জন্য কি না?
মোটকথা আমাদের মুহাসাবা করতে হবে যে, আমাদের যিন্দেগী রিয়া ও তাকাল্লুফমুক্ত কি না। যতক্ষণ পর্যন্ত যিন্দেগী রিয়া ও তাকাল্লুফমুক্ত না করতে পারি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সাদেকীনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারব না, সিদক মাআল্লাহর গুণ হাসিল করতে পারব না।
আকাবিরে দেওবন্দের ইখলাস ও ইত্তেবায়ে সুন্নাতের কথা তো আমরা বেশি আলোচনা করে থাকি। তাঁদের তৃতীয় আরেকটি গুণ হল, আসসিদক মাআল্লাহ। আসসিদক মাআন্নাস তো বটেই। ১৪৩০ হিজরীর হজ্বের মওসুমে শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওলামা-মাশায়েখকে দাওয়াত করেছিলেন। শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর শাগরিদ তো তাই তিনিও উলামায়ে দেওবন্দের আশেক। এই মজলিসেও আকাবিরে দেওবন্দের বিভিন্ন হালত আলোচনা হচ্ছিল। হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী দা.বা.সহ অন্যরা হালত শুনাচ্ছিলেন, আর ইরাক-সিরিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশের উলামা-মাশায়েখ তা শুনে শুনে খুব লুতফ নিচ্ছিলেন।
তাঁদের ঐসব হালত শুনে একজন ইরাকী আলেম বারবার বলছিলেন, ‘আসসিদকু মাআল্লাহ, আসসিদকু মাআল্লাহ’। অর্থাৎ তাঁদের এই হালত ছিল আস সিদক মাআল্লাহর ফলাফল।
যদিও এই গুণটির আলোচনা কম হয় আর আমরা মনে করি, ইখলাস ও ইত্তেবায়ে সুন্নত বললে এটিও এসে যায়। আর তা বাস্তবও বটে। লাযেম-মালযুম, একটি ছাড়া অন্যটি পূর্ণ হয় না। তবে আলাদা আলাদা করে বললে বুঝতে সুবিধা হয়। এই সিদক ও আমানত, যা মুমিনের সর্বোত্তম গুণ, ততক্ষণ পর্যন্ত অর্জন করা সম্ভব নয় যতক্ষণ না যিন্দেগী রিয়া ও তাকাল্লুফমুক্ত হয়। সাথে সাথে যিন্দেগীকে জিদ্দিয়্যাতের যিন্দেগী বানাতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।
এই দুটি ছিল মূলকথা, যা আমি আলোচনা করব বলে শুরুতে বলেছিলাম।
সবশেষে একটি দরখাস্ত, তা এই যে, আমরা যেন সকাল-সন্ধ্যায় অন্যান্য অযিফা-আযকারের সাথে সালাত ও সালামকেও অন্তর্ভুক্ত করি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বেশি বেশি দরূদ পড়ি। এই সম্পর্কে এইটুকু সচেতনতা জরুরি যে, আমাদের দরূদই যেন সাধারণ মানুষের দরূদের মতো না হয়। তারা তো নামাযে দরূদ পড়ে কিংবা দুনিয়াবী বালা-মুসিবতের শিকার হলে দরূদ পড়ে। তারা না জানে দরূদের হাকীকত, না রাসূলের মাকাম ও মর্যাদা আর না তারা সচেতন তাঁর প্রতি ঈমানের দাবি সম্প©র্ক। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তো আমাদেরকে ইলমের সম্পদ দান করেছেন। সুতরাং আপনাদের জানা আছে, এই দরূদ বান্দাকে মাওলার নিকটবর্তী করে এবং রাসূলের নৈকট্য অর্জনের সৌভাগ্য দান করে।
সাথে সাথে দরূদ নফসেরও তরবিয়ত করে। আমরা যদি দরূদের হাকীকত নিয়ে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে, দরূদ একদিকে তাওহীদের বিশ্বাসকে পূর্ণতা দান করে অন্যদিকে বান্দাকে বিনয়-তাওয়াযু অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে।
আল্লাহ উম্মতকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত ও শান্তি প্রার্থনা করতে বলেছেন। হাদীসে স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উম্মতকে এই শিক্ষা দিয়েছেন। এতে বুঝা গেল, রহমত ও শান্তি লাভের জন্য তিনিও আল্লাহর মুখাপেক্ষী। রহমত ও শান্তি তাঁর নিজের হাতে নয়। অথচ তিনি হলেন সাইয়্যিদুল খালাইক ও ইমামুল মুরসালিন। অতএব এই রহমত ও শান্তি আল্লাহ ব্যাতীত কোনো সৃষ্টির হাতে নেই। তাই আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করা যাবে। পূর্ণ উপলব্ধির সাথে দরূদ পাঠ করা হলে আমাদের তাওহীদের আকীদা আরো দৃঢ় হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহ তাঁকে এত উঁচু মাকাম ও উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, যার কোনো তুলনা নেই। এত কিছুর পরও তিনি উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারা যেন তাঁর জন্য রহমত প্রার্থনা করে, তাঁর উপর দরূদ পড়ে। তিনি উম্মতের কাছে রহমতের দুআর আবেদন করছেন!!
এই তাওয়াজু, এই বিনয়ের কি কোনো তুলনা আছে?
তো আমরা যখন দরূদ পড়ব, তখন আমাদের মাঝেও বিনয় ও তাওয়াজু পয়দা হবে। আমাদের আকীদায়ে তাওহীদ কামিল ও পূর্ণাঙ্গ হবে। সর্বোপরি আল্লাহ ও রাসূলের নৈকট্য ও ভালবাসা অর্জিত হবে। এছাড়া দরূদের আরো অনেক ফায়েদা আছে। আলিমগণ পঞ্চাশটিরও বেশি ফায়েদা আলোচনা করেছেন।
সুতরাং আমরা দরূদের হাকীকত বুঝে রাতে-দিনে ও সকাল-সন্ধ্যায় বেশি বেশি দরূদ পাঠ করি, তাহলে আমরা কেয়ামতের ময়দানে তাঁর শাফায়াত পাব এবং আশা করি, জান্নাতুল ফেরদাউসে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
রজব ১৪৩২ . জুন ২০১১
মাসিক আলকাউসার