তার বংশ পরম্পরা হচ্ছে – আলী বিন আবু তালিব বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম বিন আব্দে মান্নাফ বিন কুসসী বিন কিলাব বিন মুরাবা বিন কাব বিন লুয়ী বিন গালীব বিন ফিহর বিন মালিক বিন নজর বিন কিনানা।
আবু তালিবের প্রকৃত নাম আব্দে মান্নাফ,আব্দুল মুত্তালিবের নাম শায়বা,হাশিমের নাম আমর,আব্দে মান্নাফের নাম মুগীরা আর কুসসীর নাম যায়েদ।
আলী (রাঃ) এর উপনাম আবুল হাসান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আবু তুরাব উপাধি দেন।
তার সম্মানিত জননীর নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ বিন হাশিম।
তিনিই প্রথম হাশিমী যুবক, যিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন আর হিজরত করেছেন।
তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের অন্যতম।
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচাতো ভাই আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা ফাতেমা (রাঃ) এর স্বামী।
তিনি উচু মাপের জ্ঞানী, প্রসিদ্ধ বীর,দৃষ্টান্তহীন ধর্মনিষ্ঠ সাধক ব্যক্তি,বিখ্যাত বক্তা এবং কুরআন শরীফ জমাকারী ও হাফেযে কুরআন। আবুল আসাদ দাইলী,আবু আব্দুর রহমান সালমী আর আব্দুর রহমান বিন আবু লায়লা তার কাছ থেকে কুরআন শরীফ শিক্ষা করেন।
তিনি বনু হাশিম গোত্রের প্রথম খলীফা।
প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীদের মধ্যে তিনি প্রাচীন। ইবনে আব্বাস,আনাস, যায়েদ বিন আরকাম, সালমান ফারসীসহ অনেক সাহাবী এ বিষয়ে একমত যে,তিনিই প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে কারো কারো ইজমাও রয়েছে।
আলীর বর্ণনা নকল করে আবু ইয়ালা বলেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হোন,আর আমি মঙ্গলবারে ইসলাম গ্রহণ করি।
মুসলমান হওয়ার সময় তার বয়স ছিল দশ বছর, কারো মতে নয় বছর, কারো মতে আট বছর, কারো মতে এরচেয়েও কম।
হাসান বিন যায়েদ বিন হাসান বলেছেন,“তিনি কখনোই মূর্তিপূজা করেননি।” (ইবনে সাদ)
নবী আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের সময় মানুষের আমানতগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে মক্কা শরীফে রেখে গিয়েছিলেন।
তিনি তাবুক ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাবুকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে মদীনায় শাসনকর্তা নিযুক্ত করে রণাঙ্গনে যাত্রা করেন। সকল যুদ্ধে তার বীরত্ব মানুষের মাঝে কিংবদন্তী হয়ে রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক যুদ্ধে তার হাতে পতাকা তুলে দেন আর তাঁকে সেনাপতি মনোনীত করেন।
সাঈদ বিন মুসায়্যাব বলেছেন,“উহুদ যুদ্ধে তার শরীরে ষোলটি আঘাত লেগেছিলো।”
ইমাম বুখারী আর মুসলিম বিভিন্নভাবে প্রমাণ করেছেন যে,খায়বর যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে পতাকা তুলে দেন, আর তাঁকে সেনাপতি মনোনীত করেন। খায়বর তার হাতেই বিজিত হয়।
তিনি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে তিনি শিরণাস্ত্র পরার কারণে তার মাথার কেশরাজি বাতাশে উড়ত। তার পদযুগল ছিল বেঁটে। ভারী পেট,প্রলম্ববিত শ্বেত দাড়ি আর মাথার মধ্যবর্তী পেছন দিকের কেশগুচ্ছের রঙ ছিল গোর্ধম বর্ণের। গোটা শরীরে ছিল পশমের সমাহার।
জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেছেন,“খায়বর যুদ্ধে তিনি দুর্গের দরজা কাঁধে তুলে নেন, আর এ পথেই মুসলমানগণ দুর্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। খায়বর হস্তগত হওয়ার পর তিনি দরজাটি যেখানে নিক্ষেপ করেন, পরবর্তীতে সেখান থেকে দরজাটি স্থানান্তর করার জন্য চল্লিশজন লোকের শক্তির প্রয়োজন হয়েছিলো।” (ইবনে আসাকির)
মাগাযী গ্রন্থে ইবনে ইসহাক আর আবু রাফে থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,“আলী (রাঃ) খায়বর যুদ্ধে দূর্গের দরজা হাতে নিয়ে তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যুদ্ধ জয়ের পর দরজাটি দূরে নিক্ষেপ করেন। যুদ্ধ শেষে আমরা আটজন মিলেও তা ঊঠাতে পারিনি।”
ইমাম বুখারী আদব গ্রন্থে সহল বিন সাদ থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আলী নিজের আবু তুরাব নামটি খুবই পছন্দ করতেন। কেউ তাঁকে এ নামে ডাকলে তিনি খুশি হতেন। হবেন না-ই বা কেন,এ নাম তো তার সর্দার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদত্ত। একদিন তিনি হযরত ফাতেমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে মসজিদে এসে শুয়ে পড়ায় তার শরীরে মাটি লেগে যায়। এমন সময় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে আসলেন আর তার শরীরের মাটি ঝরিয়ে দিয়ে বললেন,“হে আবু তুরাব (অর্থাৎ, মৃত্তিকার বাবা), উঠো।”
তিনি নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে ৫৮৬টি হাদীস বর্ণনা করেন। আর তার কাছ থেকে তার তিন পুত্র হাসান,হুসাইন,মুহাম্মাদ বিন হানফীয়া,ইবনে মাসউদ,ইবনে উমর,ইবনে আব্বাস, ইবনে যুবায়ের,আবু মূসা আশআরী,যায়েদ বিন আকরাম,আবু সাঈদ,জাবের বিন আব্দুল্লাহ,আবু উমামা, আবু হুরায়রা প্রমুখ সাহাবা আর তাবেঈন হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আলী (রা.) এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন,“আলী (রাঃ) এর ফযীলত সম্পর্কিত যতগুলো হাদীস রয়েছে, এর চেয়ে অদিক হাদীস অন্য সাহাবীদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি।” (হাকিম)
বুখারী ও মুসলিমে সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস কর্তৃক বর্ণিত হয়েছেঃ তাবুক যুদ্ধে যাত্রার প্রক্কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীকে মদীনায় অবস্থান করার নির্দেশ দিলে তিনি বললেন,“ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), এখানে শিশু ও নারীদের সাথে কি আপনি আমাকে রেখে যেতে চান ?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও যে, মূসা (আঃ) যেমন হারূন (আঃ) কে রেখে গিয়েছিলেন, আমিও তোমাকে তেমনি রেখে যেতে চাই ? পার্থক্য শুধু আমার পর আর কোন নবী আসবেন না।” আহমাদ,বাযযার প্রমুখ বিভিন্ন সাহাবী থেকে এ বর্ণনাটি বর্ণিত করেছেন।
বুখারী ও মুসলিমে সহল বিন সাদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছেঃ খায়বর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“আগামীকাল সকালে এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা তুলে দেয়া হবে, যার হাতে খায়বর বিজিত হবে, এবং আল্লাহ ও তার রসূল তাঁকে ভালোবাসেন আর তিনিও আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসেন।” এ পরম সৌভাগ্য কার প্রতি অর্পিত হয় তা দেখার জন্য সাহাবাগন সারা রাত অপেক্ষায় প্রহর গুনেন। সকালে সকল সাহাবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হলেন। সকলের আশা, এ সওগাত যেন আমার ভাগ্যে আসবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,“আলী কোথায় ?” লোকেরা বললেন,“চোখ ব্যাথা করায় তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“এক্ষুনি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো।” তিনি এলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চোখে মুখের লালা লাগিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ভালো হয়ে গেলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীকে পতাকা দিলেন। তাবারানী বিভিন্ন সাহাবীর থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
সহীহ মুসলিম শরীফে সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ
نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ
“আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের আর তোমাদের পুত্রদের …” (সূরাহ আলি-ইমরান, ৩ :৬১)
এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী,ফাতেমা,হাসান আর হুসাইনকে ডেকে তাঁদের জন্য এ দোয়া করলেন – “হে আল্লাহ, এরা আমার পরিবার।”
তিরমিযী শরীফে আবু সারীহা আর যায়েদ বিন আরকাম কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু।”
আহমাদ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আর তাবারানী বিভিন্ন সাহাবীদের থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিছু বর্ণনাকারী হাদীসের এ অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন –“হে আল্লাহ, যে আলীকে ভালোবাসবে, আপনি তাকে ভালোবাসুন; আর যে আলীর বিদ্বেষাচরণ করবে, আপনিও তার সাথে তাই করুন।”
আবু তোফায়েল থেকে আহমাদ বর্ণনা করেছেনঃ আলী (রাঃ) জাবার ময়দানে লোকদের সমবেত করে বললেন,“আমি আপনাদের কাছে কসম করে জিজ্ঞেস করতে চাই,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গদীরে খম-এ আমার ব্যাপারে কি বলেছিলেন ?” ত্রিশজন লোক দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে,“আমাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন -আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ, যে আলীকে ভালোবাসবে, আপনি তাকে ভালোবাসুন, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করবে, আপনিও তার সাথে শত্রুতা করুন।
বুরায়দা থেকে তিরমিযী আর হাকেম বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আমাকে চারজনের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমাকে জানানো হয়েছে যে, সে চারজনকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।” লোকেরা বললো,“ইয়া রাসূলুল্লাহ, তাদের নাম বলুন।” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“আলী,আবু যর,মিকদাদ আর সালমান ফারসী।”
হাবশী বিন জানাদা থেকে তিরমিযী,নাসায়ী আর ইবনে মাজা বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আলী আমার আর আমি আলীর।”
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে তিরমীযী বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলে আলী কাঁদতে কাঁদতে এসে বললেন,“ইয়া রাসূলাল্লাহ, সকল সাহাবী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন,কিন্তু আমি বাকী রয়েছি।” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে তুমি আমার ভাই।”
সহীহ মুসলিম শরীফে আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্নিত হয়েছে,“সেই প্রতিপালকের কসম,যিনি ফসল ফলান আর প্রাণের জন্ম দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে শপথ করেছেন – মুমিনরা তোমাকে ভালোবাসবে,আর মুনাফিকরা শত্রুতা করবে।
আবু সাইদ (রাঃ) থেকে তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, “আমরা মুনাফিকদের আলীর শত্রুতা দ্বারা চিহ্নিত করি।”
আলী থেকে তিরমিযী ও হাকিম বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি জ্ঞানের নগর,আর আলী সে নগরের দরজা।” হাদীসটি হাসান; ইবনে জাওযী,নববী প্রমুখ একে মওজু বলেছেন; আমার (জালালুদ্দিন সুয়্যুতির) দীর্ঘ গবেষণায় যা সম্পূর্ণ ভুল।
আলী (রাঃ) থেকে হাকিম বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইয়ামানে পাঠাতে চাইলে আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাকে ইয়ামানে পাঠাতে চাইছেন,আমি তো বয়সে তরুণ এবং লেনদেন করতে জানি না।” এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে হাত রেখে বললেন,“হে আল্লাহ, এ রসনা সংযত করে দিন।” আল্লাহর কসম,এরপর থেকে লেনদেন করতে আমার কোন সংশয় হয়নি।
আলী (রাঃ) থেকে ইবনে সাদ বর্ণনা করেছেনঃ আমি এতো অধিক হাদীস বর্ণনা কিভাবে করলাম লোকেরা তা জানোতে চাইলে আমি বললাম,“আমি কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব ভালো করে বুঝিয়ে আমাকে উত্তর দিতেন। আর আমি চুপ করে থাকলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বলতেন।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে,উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন,“আলী আমাদের মধ্যে উত্তম বিচারক।”
ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, “আমরা পরস্পরে এ আলাপ করতাম যে, আলী মদিনা শরীফে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞানের অধিকারী।”
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ইবনে সাদ বর্ণনা করেছেন,“আলীর কোন মাসয়ালা নির্ভরযোগ্য সূত্র জানা গেলে সে মাসয়ালা নিয়ে যাচাই করার প্রয়োজন নেই।”
সাঈদ বিন মুসায়্যাব (রাঃ) বলেছেন,“আলী যে বিচার করতেন না তা যেন করতে না হয়, সে জন্য উমর আল্লহর কাছে দুয়া করতেন।”
সাঈদ বিন মুসায়্যাব বলেছেন,“যা কিছু জানার আমাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিবে -মদীনা শরীফে আলী ছাড়া এ কথা কেউ বলার সাহস পেতেন না।”
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,“মদীনায় আলীর চেয়ে অধিক উত্তরাধিকারের আইন ও ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞানের অধিকারী আর কেউ ছিলেন না।”
আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে,“সুন্নত সম্পর্কে আলীর জ্ঞান ছিল সবচেয়ে বেশী।”
মাসরুক বলেছেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের জ্ঞান উমর,আলী,ইবনে মাসউদ আর আব্দুল্লাহর কাছে এসে শেষ হয়েছে।”
আব্দুল্লাহ বিন আয়স বিন রাবীয়া বলেছেন,“আলীর জ্ঞানের পরিপক্বতা,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটাত্মীয়তা,ইসলামের প্রথমিক যুগের মুসলমান,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামাতা,হাদীস থেকে নির্গত শরীয়তের আইন,যুদ্ধের ময়দানে অসীম সাহসীকতা আর দানশীলতার কারণে উত্তম।”
আওসাত গ্রন্থে তাবারানী দুর্বল সূত্রে জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সকল মানুষ বিভিন্ন বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা,আর আমি ও আলী একই বৃক্ষের।”
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে তাবারানী আর ইবনে আবী হাতিম বর্ণনা করেছেনঃ কুরআন শরীফে উল্লিখিত – يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا শব্দগুলো নিয়ে চিন্তা করা দরকার যে, আলী আমীর আর সম্ভ্রান্ত। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফের কয়েক জায়গায় সাহাবীদের প্রতি নিজের ক্রোধের বিবরণ দিয়েছেন, কিন্তু প্রত্যেক স্থানে আলীর কল্যাণের বিবরণ বিধৃত হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,“কুরআন শরীফে আলীর শানে যতটুকু নাযিল হয়েছে,ততটুকু কারো শানে হয়নি।”
ইবনে আব্বাস থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,“আলীর শানে তিনশো আয়াত নাযিল হয়েছে।”
উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে তাবারানী বর্ণনা করেছেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাগের সময় আলী ছাড়া তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কথা বলার সাহস কারো ছিল না।”
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা তাবারানী করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আলীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়াই ইবাদত।” এর সূত্রগুলো হাসান।
আওসাত গ্রান্থে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে তাবারানী বর্ণনা করেছেন, “আলীর মধ্যে ১৮টি বিরল বৈশিষ্ট্য ছিল,যা অন্য সাহাবীদের মাঝে ছিল না।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন যে,উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন,“আলীর তিন গুণাবলীর একটি গুণও যদি আমার মধ্যে থাকতো, তবে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।” লোকেরা জিজ্ঞেস করলো,“সেই গুণগুলো কি ?” তিনি বললেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কন্যা ফাতিমাকে আলীর সাথে বিয়ে দিয়েছেন,তাঁদের দুইজনকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে রেখেছেন – মসজিদে তারা যা করবেন সবই বৈধ, আর খায়বর যুদ্ধে পতাকা প্রাপ্তি।”
সাদ থেকে বাযযার বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে বললেন,“এ মসজিদে তুমি আর আমি ছাড়া কারো জন্য এমন কাজ করা বৈধ নয়, যে কাজ করলে দেহের পবিত্রতার জন্য গোসল ফরয।”
আলী (রাঃ) থেকে আহমদ আর আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বর যুদ্ধে থুথু লাগিয়ে দেয়ার পর থেকে আমার চোখে আর কোন দিন ব্যথা করেনি।”
সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে আবু ইয়ালা আর বাযযার বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যে আলীকে কষ্ট দিবে, সে যেন আমাকেই কষ্ট দিলো।”
উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে তাবারানী বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যে আলীকে ভালোবাসবে, সে আমাকেও ভালোবাসলো; আর যে আমাকে ভালোবাসবে, সে যেন আল্লাহকেও ভালোবাসলো। আর যে আলীর শত্রুতা করবে, সে আমারও (শত্রুতা) করবে; আর যে আমার দুশমনী করবে, সে যেন আল্লাহর দুশমনী করলো।”
উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে আহমাদ বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে আলীকে কষ্ট দিবে সে যেন আমাকে কষ্ট দিলো।”
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে আহমদ আর হাকিম বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে বললেন,“তোমরা কুরআন সংরক্ষনের ব্যাপারে যত্নবান হও,আল্লহ তাআলার পক্ষ হতে কুরআন নাযিল হওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে যত্নবান ছিলাম।”
আলী (রাঃ) থেকে বাযযার, আবু ইয়ালা আর হাকিম বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডেকে বললেন,“তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা (আঃ) এর মতো। ইহুদীরা তার বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ করেছিলো যে,তারা তার পবিত্র মাকে পর্যন্ত অপবাদ দিতে ছাড়েনি; আর খ্রিষ্টানরা তাঁকে অতিরিক্ত ভালোবাসা দিতে গিয়ে তিনি যা নন, তাও তাঁকে বানিয়ে ছেড়েছেন। মনে রেখো,মানুষকে দুটি বিষয় ধ্বংস করে দেয়, এক – তিনি যা নন তা ভেবে ভালোবাসা, এবং দুই – এ ধরনের বিপ্লব, যাতে খারাপ ভাবতে ভাবতে তার ব্যাপারে অপবাদ লাগিয়ে দেওয়া।”
তাবারানী আওসাত আর সগীর গ্রন্থে উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “কুরআনের সাথে আলী রয়েছে, আর আলীর সাথে কুরআন রয়েছে। তারা উভয়ে আমার কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর পুনরায় হাউজে কাওসারে এসে মিলিত হবে।”
আম্মার বিন ইয়াসার থেকে আহমাদ ও হাকেম সহীহ সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে বললেন,“দুইজন সবচেয়ে নিকৃষ্ট, এক – সামুদ বংশের ওই ব্যক্তি, যে সালেহ (আঃ) এর উটনীর পায়ের গোড়ালী কেটে দিয়েছিলো, এবং দুই – যে তোমার মাথায় অসির আঘাত করবে আর রক্তে তোমার দাড়ি ভিজে যাবে।”
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে হাকিম বর্ণনা করেছেনঃ কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আলীর ব্যাপারে অভিযোগ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে এক ভাষণ প্রদান করেন,এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,“আলীর ব্যাপারে কখনোই কোন অভিযোগ করবে না।”
চৌদ্দতম পরিচ্ছেদ
ইবনে সাদ বলেছেনঃ উসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের দ্বিতীয় দিন মদীনায় তালহা (রাঃ) আর যুবায়ের (রাঃ) ছাড়া সকল সাহাবা সন্তুষ্টচিত্তে আলীর বাইআত গ্রহণ করেন। তারা দুইজন প্রকাশ্যে বাইআত নিলেও সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় গিয়ে আয়েশা (রাঃ) কে বিষয়টি অবহিত করে তাঁকে নিয়ে বসরায় এসে উসমানের রক্তের প্রতিশোধ দাবী করেন। সংবাদ পেয়ে আলী (রাঃ) ইরাক যান। এখানেই জঙ্গে জামালের মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হয়। এতে তালহা (রাঃ) আর যুবায়ের (রাঃ) শহীদ হোন। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের তেরো হাজার প্রাণ কেড়ে নেয়। ৩২ হিজরীর জমাদিউল আখির মাসে এ ঘটনা ঘটে।
আলী (রাঃ) বসরায় পনেরো দিন অবস্থানের পর কুফায় গেলে মুয়াবিয়া (রাঃ) কুফা আক্রমন করেন। খবর পেয়ে আলী সামনে অগ্রসর হোন। ৩৭ হিজরীর সফর মাসে কয়েক দিন স্থায়ী হয় এ অসম লড়াই। অবশেষে সিরিয়াবাসী কুরআন শরীফ উঁচু করে শান্তির আহবান জানালে উভয় পক্ষ সন্ধির জন্য সংলাপে বসে। মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে আমর বিন আস (রাঃ) আর আলীর পক্ষ থেকে মূসা আশআরী (রাঃ) দীর্ঘ আলোচনার পর এ মর্মে একটি প্রতিশ্রুতি পত্র প্রস্তুত করেন যে,“আগামী বছর আরযা অঞ্চলে এসে উম্মতের সংশোধনের জন্য আলোচনা হবে।”এরপর সকলেই নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করেন।
আলী (রাঃ) কুফা ফিরে এলে খারিজী সম্প্রদায়ের লোকেরা পৃথক হয়ে আলীর খিলাফতকে অস্বীকার করে এবং لاحكم الا الله অর্থাৎ,আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম চলবে না – এ শ্লোগান দিয়ে যুদ্ধের জন্য বাহরুরা অঞ্চলে সমবেত হয়। আলী (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) কে বুঝানোর জন্য তাদের কাছে পাঠালে তাদের অনেকেই ফিরে আসে। আর বাকী খারিজীরা নাহরুয়ানে পালিয়ে যায়। সেখানে তারা পথিকদের সম্পদ লুটপাট করতে শুরু করলো। আলী (রাঃ) সেখানে গিয়ে তাদেরকে হত্যা করেন। সেখানে যাআল সাদিয়াও নিহত হয়। এসব ৩৮ হিজরীর ঘটনা।
গত বছরের কথা অনুযায়ী ৩৮ হিজরীর শাবান মাসে সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ), ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ আরযা অঞ্চলে সংলাপ শোনার জন্য সমবেত হোন। এ সংলাপে আমর বিন আস (রাঃ) আবু মূসা আশআরী (রাঃ) কে পরাজিত করেন। প্রথমে আবু মূসা আশয়ারী তার বক্তৃতায় আলীকে বরখাস্ত করেন, আর আবু মূসা আশয়ারী হযরত মুয়াবিয়ার বিবরণ দিয়ে তার জন্য খিলাফতের বাইয়াত প্রদান করেন। সংলাপের প্রেক্ষিতে খিলাফতে আলীর অবস্থানের বার্তা নিয়ে লোকেরা তার কাছে গেলে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন,“আমার খিলাফত আর মুয়াবিয়ার আনুগত্য ?”
আবদুর রহমান বিন বালহাম আল মুরাদী,বারাক বিন আব্দুল্লাহ তামিমী আর উমর বিন বাকের তামিমী – এ তিনজন খারেজী আলী (রাঃ), মুয়াবিয়া (রাঃ) আর আমর বিন আস (রাঃ) কে হত্যা করে বিবদমান পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য একমত হয়। আব্দুর রহমান হযরত আলীকে,বারাক হযরত মুয়াবিয়াকে আর উমর হযরত আমর বিন আসকে ১১ অথবা ১৭ রমযানের রাতে সকলকে শহীদ করার প্রতিশুতি ব্যক্ত করলো। কথা মোতাবেক তারা তাদের তিন শহরে যাত্রা করলো। আব্দুর রহমান কুফায় পৌছে অন্যান্য খারেজীদের কাছে তার আসার উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত করে।
প্রতিদিনের মত আলী প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে তার পুত্র হাসানকে বললেন,“আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছি, আর তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে অভিযোগ করেছি যে,আপনার উম্মত আমাকে কষ্ট দিচ্ছে আর আমার সাথে বিবাদ ও বিতন্ডায় লিপ্ত রয়েছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,“আল্লাহর কাছে বদদুয়া করো।” আমি দুয়া করলাম,“হে আল্লাহ, এ লোকদের ভালো লোকে পরিবর্তন করে দিন।”
তিনি বিবরণ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ইবনে নাবাহ মুয়াজ্জিন এসে নামাজের জন্য ‘সালাত’ ‘সালাত’ বলে আওয়াজ দিলে আলী বাড়ির সকলকে নামাযের জন্য জাগিয়ে দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। আগে থেকেই পথে ওঁত পেতে ছিল ঘাতক আব্দুর রহমান। সুযোগ বুঝে আলী (রাঃ) এর চেহারা বরাবর তলোয়ার চালিয়ে দেয়। চারদিক থেকে লোক দৌড়ে এসে ঘাতককে ধরে ফেলে। আলী গুরুতর আহত অবস্থায় জুমা পর্যন্ত এক সপ্তাহ জীবিত ছিলেন। তিনি শনিবার রাতে ইন্তেকাল করেন।
হাসান,হুসাইন আর আব্দুল্লাহ বিন জাফর তাঁকে গোসল দেন। হাসান জানাযার নামায পড়ান আর কুফায় দারুল ইমারতে তাঁকে রাতের বেলায় সমাহিত করা হয়।
কাফন-দাফন শেষে আব্দুর রহমান বিন বালহামের হাত-পা কেটে একটি বড় পাত্রে নিক্ষেপ করা হয় আর আগুন দিয়ে তাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত যা উল্লেখ করা হলো, তা ইবনে সাদ কর্তৃক তালখীস গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবীদের আলোচনার সময় তোমরা নীরব থাকবে। তিনি বলেছেন,সাহাবীদের হত্যা করার অপরাধ জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মুসতাদরাক গ্রন্থে আল্লামা সুদ্দী কর্তৃক বর্ণিতঃ আব্দুর রহমান বিন বালহাম খারেজী সম্প্রদায়ের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। পরিশেষে উভয়ের মধ্যে বিয়ের সময় মোহর হিসেবে নির্ধারিত হয় তিন হাজার দিরহাম আর আলীর হত্যা।
আবু বকর বিন আয়স বলেছেন, “কুফার দারুল ইমারতে আলী (রা.) কে দাফন করার কারণ হচ্ছে, খারেজীরা যেন তার অমর্যাদা করতে না পারে।”
শরীক বলেছেন,“হাসান লাশ স্থানান্তর করে মদীনায় নিয়ে যান।”
মুহাম্মাদ বিন হাবীব বর্ণনা করেছেন,“সর্বপ্রথম আলীর সমাধিস্থ লাশ স্থানান্তর করা হয়।”
সাঈদ বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,শহীদ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পার্শ্বে সমাহিত করার জন্য উটে করে আলীর লাশ নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হয়। পথিমধ্যে লাশ বহনকারী উটটি হারিয়ে যায় আর অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উটের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। কারো মতে,অনুসন্ধানে উটটি যে শহরে পাওয়া যায়, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
আলীর বয়স নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী তার বয়স ছিল – ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৯৭ অথবা ৯৮ বছর। তার ১৯ জন দাসী-বাঁদী ছিল।
বিভিন্ন ঘটনাবলী
সাঈদ বিন মানসুর (রহঃ) স্বরচিত সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আলী (রাঃ) বলেছেন, “ঐ আল্লাহর কসম, যিনি আমার দুশমনদের আমার কাছে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করার তৌফিক দিয়েছেন। মুয়াবিয়া হিজড়ার মিরাস সম্পর্কে আমার কাছে জানোতে চেয়েছিলেন; আমি লিখেছিলাম – তাদের লজ্জাস্থানের আকৃতির উপর উত্তরাধিকারের আইন প্রযোজ্য হবে।” শাবী থেকে হাশেম এ ধরনের বর্ণনাই বর্ণিত করেছেন।
হাসান (রাঃ) থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ আলী (রাঃ) বসরা যাবার প্রাক্কালে ইবনুল কাওয়া আর কায়েস বিন উবাদ (রাঃ) আলীকে বললেন,বলুন,আপনি উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার কর্ণধার হয়ে লোকদের হত্যা করতে চলেছেন ? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেছেন, তার পর আপনি খলীফা হবেন ? এ কাজের জন্য আপনার চেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্থ আর কে রয়েছেন ? এমন কথা কি আপনি রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে শুনেছেন ?
আলী (রাঃ) বললেন, তুমি ভুল বলেছো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে কোন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন। আমি সর্বপ্রথম তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যায়িত করেছি। যদি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতেন, তবে রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে আবু বকর আর উমরকে দাঁড়াতে দিবো কেন ? আমার সাথে কেউ না থাকলেও আমি তাঁদেরকে হত্যা করে ফেলতাম। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ নিহত হননি আবার সহসা ইন্তেকালও করেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমুর্ষু অবস্থায় কয়েকদিন জীবিত ছিলেন, তখন নামাযের সময় আবু বকরকে ইমামতি করার নির্দেশ দেন। আয়েশা (রাঃ) এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পর আমরা চিন্তা করলাম,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনের জন্য কাকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বকরকে নামাযের ইমাম মনোনীত করেছিলেন,আর নামায হলো দ্বীনের শিকড়; অতএব আমরা তার হাতে বাইয়াত করলাম। সঠিক কথা হচ্ছে,তিনি খিলাফতের যোগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন বলে তাঁকে আর তার খিলাফতকে নিয়ে কোন মতবিরোধ হয় নি, কেউ কাউকে কষ্ট দেয়নি আর তার খিলাফতের প্রতি কেউ অসন্তুষ্টও ছিল না। এজন্য আমি তার অনুগত্য করেছি, তার সৈন্যদের সাথে মিলে কাফরদের সাথে প্রাণ খুলে যুদ্ধ করেছি।
মৃত্যুর সময় তিনি উমরকে খলীফা মনোনীত করে যাওয়ায় আমরা তার সাথেও আবু বকরের মতোই আচরণ করেছি।
উমরের মৃত্যুর প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সাথে আমার নিকটাত্মীয়তা,ইসলামে আমার প্রাচীনত্ব,আমার আমল ইত্যাদি গুণাবলীর বিষয় চিন্তা করে আমি ভাবলাম,অবশ্যই হযরত উমর তার পর আমার খিলাফত প্রাপ্তির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। কিন্তু সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য খলীফা মনোনীত করতে না পারলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় উমর খলীফা নির্বাচন না করেই ইন্তেকাল করেন।
এরপর (একজন খলীফা) নির্বাচনের জন্য কুরাইশ গোত্রের ছয়জন ব্যক্তির উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়,তাদের মধ্যে আমি ছিলাম অন্যতম। একজনকে মনোনীত করার জন্য আমরা ছয়জন সমবেত হলে আমি ভাবলাম,এরা আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। আলোচনার এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) আমাদের সকলের কাছ থেকে এ শপথ নিলেন যে, আমাদের মধ্য থেকে যাঁকে খলীফা মনোনীত করা হবে, আমরা তার আনুগত্য করবো। এরপর আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) উসমান বিন আফফান (রাঃ) এর হাত ধরে বাইয়াত দেন। তখন আমি চিন্তা করলাম,আমার বাইয়াত আমার আনুগত্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে, আর আমার কাছ থেকে অন্যের আনুগত্যের জন্য শপথ নেয়া হয়েছে। অতএব আমরা সবাই উসমানের হাতে বাইয়াত দেই। আমি আবু বকর আর উমরের মতোই উসমানের সাথে কাজ করেছি।
উসমানের শাহাদাতের পর ভাবলাম,খিলাফতের জন্য নামায পড়ানোর নির্দেশ দানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দুইজনের ব্যাপারে আমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আর তাঁদের পর যাঁর জন্য আমার কাছ থেকে শপথ নেয়া হয়েছিলো তারা আজ গত হয়েছেন। এ চিন্তা করে আমি বাইয়াত নিতে শুরু করেছি। আমার কাছে হারামাইন শরীফাইনবাসী (মক্কা ও মদীনাবাসী) আর ঐ দুই শহরবাসী (বসরা ও কুফাবাসী -অনুবাদক) বাইয়াত করেন। এ অবস্থায় খিলাফতে একজন (মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রাঃ -অনুবাদক) আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন,যিনি রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকটাত্মীয়তা,ইলম,ইসলাম গ্রহণের প্রাচীনত্ব কোনো দিক দিয়েই আমার সমকক্ষ নন। প্রত্যেক দিক থেকে আমি তার চেয়ে বেশী খিলাফতের হকদার।
দালায়েল গ্রন্থে জাফর বিন মুহাম্মাদ থেকে আবু নুয়াঈম বর্ণনা করেছেনঃ একদিন আলীর সমীপে একটি বিচার প্রার্থনা করা হয়। তিনি অভিযোগ শোনার জন্য দেয়ালের নিচে বসে পড়লে এক ব্যক্তি বললো,“দেওয়ালটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি বললেন,“তুমি নিজের কাজ করো। আমাকে আল্লাহ তাআলা হিফাজত করবেন।” বিচারের রায় ঘোষণা করে তিনি স্থান ত্যাগ করলে দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে।
তৌরিয়াত গ্রন্থে জাফর বিন মুহাম্মাদ তার পিতার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেনঃ এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,“আপনি অধিকাংশ ভাষণে বলেছেন – হে আল্লাহ, আমাকে খুলাফায়ে রাশেদীন আল-মাহদিয়ীনদের মতো গ্রহণযোগ্যতা দান করুন; খোলাফায়ে রাশেদীন কারা ?” আলীর চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো। তিনি বললেন,“আমার বন্ধু আবু বকর আর উমর হলেন ইমামুল মাহদী আর শায়খুল ইসলাম। রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর তারা কুরাইশদের পথপ্রদর্শক। যারা তাদের আনুগত্য করেছে, তারা হিদায়াত ও পরিত্রাণ পেয়েছে; আর যারা তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলেছে, তারা আল্লাহর সৈনিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।”
হজর আল মাদরী থেকে আব্দুর রাজ্জাক বর্ণনা করেছেনঃ একদিন আলী আমাকে বললেন,“কেউ যদি আমার প্রতি অভিশাপ দেওয়ার জন্য তোমাকে নির্দেশ দেয়, তাহলে তুমি কি করবে ?” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এমনটা কি হতে পারে ?” তিনি বললেন,“হ্যাঁ, এমনও হবে!” আমি বললাম,“তাহলে এ অবস্থায় আমি কি করবো ?” তিনি বললেন,“তুমি অভিশাপ দিবে আর আমাকে ছেড়ে যাবে না।”
বর্ণনাকারী বলেছেন,“কয়েক বছর পর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাই ইয়ামানের শাসনকর্তা মুহাম্মাদ হযরত আলীর প্রতি অভিশাপ করার নির্দেশ দিলে আমি বললাম,‘ইয়ামানের শাসনকর্তা আলীর উপর অভিশাপ করার আদেশ দিয়েছেন, অতএব আপনারাও অভিশাপ করুন।’ কিন্তু একজন ছাড়া কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেনি।”
তাবারানী আওসাত গ্রন্থে আর আবু সাঈদ দালায়েল গ্রন্থে যাযান থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আলীর একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এক ব্যক্তি তাঁকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিলে তিনি বললেন,“তুমি অসত্য বললে তোমাকে বদদুয়া করবো।” সে বললো,“করুন।” তিনি তার জন্য বদদুয়া করলেন,ফলে লোকটি স্থানচ্যুত হওয়ার আগেই অন্ধ হয়ে যায়।
যারিয়েন বিন জায়েশ বলেছেনঃ এক ভ্রমণে দুইজন লোক খাবার খেতে বসে। একজনের নিকট পাঁচটি আর অপর জনের কাছে ছিল তিনটি রুটি। এমন সময় সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে। তারা আগন্তুককেও নিজেদের সাথে শরীক করে নেয়। তারা তিনজন মিলে আটটি রুটি ভাগাভাগি করে খায়। আহার্য গ্রহণ শেষে আগন্তুক বিদায়ের প্রাক্কালে আট দিরহাম দিয়ে বললো,“আমি যা খেয়েছি, এটা তার প্রতিদান।” তারা দুইজন এ আট দিরহাম ভাগাভাগির ক্ষেত্রে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। পাঁচ রুটিওয়ালার বক্তব্য হলো,“আমি পাঁচ দিরহাম নিবো, আর তোমাকে দিবো তিন দিরহাম।” আর তিন রুটিওয়ালা বললো, “আট দিরহাম সমান করে ভাগ করতে হবে।” অবশেষে এ ঘটনা খলীফার দরবার পর্যন্ত পৌছায়।
আলী (রাঃ) তিন রুটিওয়ালাকে বললেন,“সে যা দিতে চায়, তুমি তা-ই গ্রহণ করো। কারণ তোমার রুটির পরিমাণ কম ছিলো।” সে বললো,“আল্লাহ’র কসম,আমার প্রাপ্য যথাযথভাবে বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আমি মানবো না।” আলী বললেন,“যদি বলি, তুমি পাবে এক দিরহাম,আর সে পাবে অবশিষ্ট সাত দিরহাম, তাহলে কি মানবে ?” সে বললো, “সুবহান-আল্লাহ! এটা কি করে হতে পারে ? আমাকে বুঝিয়ে দিন, আমি মেনে নিবো।” আলী বললেন,“আটটি রুটি তিনজনে খেয়েছে। সমানভাগে আট কে তিন ভাগে ভাগ করা যায় না। এজন্য আট কে তিন দিয়ে গুন করলে আটটি রুটির চব্বিশটি টুকরো হবে। এটা বলা মুশকিল যে,কে কয় টুকরো খেয়েছে। এ কারণে ধরে নিতে হবে, সকলে সমান খেয়েছে। তোমার তিনটি রুটির নয়টি টুকরোর মধ্যে তুমি খেয়েছো আট টুকরো,বাকী থাকে এক টুকরো। আর সে তার পাঁচটি রুটির পনেরোটি টুকরোর মধ্যে আট টুকরো খেলে অবশিষ্ট থাকে সাত টুকরো। আগন্তুক ব্যক্তি তোমার এক টুকরো আর তার সাত টুকরো রুটি খেয়েছে। তাই তুমি পাবে এক দিরহাম,আর সে পাবে সাত দিরহাম।” এবার লোকটি বললো,“এবার মেনে নিলাম।”
ইবনে আবি শায়বা মুসান্নিফ গ্রন্থে আতা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ দুজন লোক একজনের চুরির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ায় আলী (রাঃ) বিষয়টি তদন্ত করে বললেন,“আমি মিথ্যা সাক্ষীর কঠোর শাস্তি দিয়ে থাকি।” এরপর তিনি সাক্ষীদ্বয়ের খোঁজ নিয়ে জানোতে পারলেন, তারা আগেই পালিয়ে গিয়েছে। ফলে তিনি চোরকে ছেড়ে দিলেন।
আলীর বরাত দিয়ে মুসান্নিফ গ্রন্থে আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললো,“অমুক ব্যক্তি স্বপ্নে আমার মায়ের সাথে যিনা করেছে, (এজন্য আমি অমুক ব্যক্তির বিচার কামনা করছি – অনুবাদক)।” আলী (রাঃ) বললেন,“সেই ব্যক্তিকে রোদে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তার ছায়াকে প্রহার করো।”
জাফার বিন মুহাম্মাদের পিতার বরাত দিয়ে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ আলীর আংটিতে নকশা করা এ কথাগুলো লেখা ছিল –
نعم القادر الله
আমর বিন উসমান বিন আফফান বলেছেনঃ তার মোহরে লিখা ছিল –
الملك لله
মাদায়েনী বলেনঃ আলী (রাঃ) কুফা গমনের প্রাক্কালে আরবের জনৈক গভর্নর বললেন,“ইয়া আমিরুল মুমিনীন, আপনি খিলাফতের পদকে আলোকিত করেছেন, খিলাফত আপনাকে আলোকিত করেনি। মসনদ আপনার পদপ্রার্থী ছিল।”
মাজমা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছেঃ তিনি বাইতুল মালের সম্পদ দান করে নামায পড়তে যাওয়ার কারণে বাইতুল মাল আল্লহর কাছে সাক্ষ্য দিবে, তিনি মুসলমানদের সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখতেন না।
আমালীয়া গ্রন্থে আবুল কাসিম যাজাজী লিখেছেন যে, আবুল আসওয়াদ দুয়ালী বলেছেনঃ একদিন আমি আলীকে চিন্তামগ্ন দেখে কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন,“আমি শুনেছি তোমাদের শহরে ভাষা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এজন্য শব্দপতন রোধকল্পে আরবী সাহিত্যে ভাষা ব্যবহারের নীতিরীতি প্রণয়নের কথা ভাবছি।” আমি বললাম,“এমনটা করলে আমাদের প্রতি দারুন করুণা করা হবে,আমরা স্থায়ীভাবে প্রাণ ফিরে পাবো আর আপনার পরও এ রীতি অটুট থাকবে।” তিনদিন পর আমি পুনরায় উপস্থিত হলে তিনি আমার সামনে এক ফালি কাগজ তুলে ধরলেন। এতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমের পর লেখা ছিল – “বাক্য তিন প্রকার – ইসম, ফিল আর হরফ। ইসম বলা হয়,যে তার মুসাম্মার খবর বহন করে ; ফিল বলা হয়, যে স্বীয় মুসাম্মার হরকত দেয়; আর বর্ণিত দুই গুণ শূন্যকে হরফ বলে।” আমি লিখাগুলো মনোযগসহ পড়ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন,“এ ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বিষয়টি তুমি আরেকটু সম্প্রসারিত করতে পারো।” অতঃপর তিনি বললেন,“আশিয়া তিন প্রকার – যাহের,মাযহার আর তৃতীয়টি যাহেরও না মাযহারও না।” আবুল আসওয়াদ বলেন,“ ان-ان-ليت-لعل-كان এ হরুফে নাসেবাগুলো লিখে কয়েকদিন পর দিয়ে তার সামনে পেশ করলাম। তিনি বললেন,‘ لكن এটাও হরফে নাসেবা,কেন এখানে তার উল্লেখ করোনি ?’ আমি বললাম,‘আমি এ শব্দকে হরুফে নাসেবা মনে করি না।’ তিনি বললেন,‘না, এটাও হরুফে নাসেবা,এ শব্দটিও এগুলোর অন্তর্ভুক্ত করে নাও।’ ”
রাবিয়া বিন নাজাদ থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন যে,আলী বলেছেন,“লোক সকল, তোমরা মৌমাছির মতো হয়ে যাও। সে অতিশয় ক্ষুদ্রতম পক্ষীর মতো আকৃতির হলেও সে কিন্তু পক্ষী নয়। সে জানে না তার মধ্যে কত গুনের সমাহার রয়েছে। হে জনমন্ডলী, তোমরা লোকদের সাথে মৌখিক ও আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করো, কারণ কিয়ামতের দিন এর প্রতিদান পাওয়া যাবে, আর দুনিয়ায় যে যাকে ভালোবাসবে, তার সাথে উত্থিত হবে।” তিনি আরো বলেছেন,“আমল কবুল হওয়ার জন্য বেশী বেশী চেষ্টা করো, আর তাকওয়া ছাড়া আমল কবুল হয় না।”
ইয়াহয়া বিন জাআদা বলেছেন যে,আলী বিন আবু তালিব বলেছেন,“হে কুরআন বহনকারীগণ, কুরআনের উপর আমল করো। যে কুরআনের উপর আমল করবে, সে-ই আলেম। ইলম অনুযায়ী আমল করবে। অচিরেই এমন লোকের জন্ম হবে, যে ইলম অর্জন করবে,কিন্তু তার ইলম গলা থেকে বের হবে না। তার অভ্যন্তররূপ বাইরের দৃশ্যের বিপরীত হবে। তার আমল তার ইলমের বিপরীত হবে। দলবদ্ধভাবে বসে নিজেরা গর্ব করবে – এ ধরনের লোকদের আমল আল্লাহর কাছে গিয়ে পৌছবে না।” তিনি বলেছেন, “বলদের কাজ আকর্ষণীয়,সুন্দর অভ্যাস হলো অনন্য বন্ধু, বিবেক হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সহচর,শিষ্ঠাচার হলো উত্তরাধিকার আর ভীরুতা গর্ব ও অহংকারের চেয়েও জঘন্য।”
হারিস বলেছেনঃ এক ব্যক্তি আলীর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললো,“ভাগ্য কি ? আমাকে বুঝিয়ে বলুন।” তিনি বললেন,“এটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ,এ পথে চলো না।” সে আবার জানোতে চাইলো। তিনি বললেন, “এটা গভীর সমুদ্র,এতে সাঁতার দিয়ো না।” সে আবার প্রশ্ন করলো। তিনি বললেন,“এটা আল্লাহর এক গোপন রহস্য,যা তোমাদের থেকে আড়াল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করো না।” কিন্তু সে পুনরায় একই প্রশ্ন করলে তিনি বললেন,“হে প্রশ্নকারী, বলো তো, আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা তোমার, নাকি তার মর্জী মতো তোমাকে সৃষ্টি করেছেন ?” সে বললো,“তার।” তিনি বললেন,“তার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি তোমাকে ব্যবহার করেন (এটাই ভাগ্য – অনুবাদক)।”
তিনি আরো বলেছেন,“প্রত্যেক দুঃখ-কষ্টের একটি সীমা রয়েছে। কারো উপর দুঃখ আসলে তা নির্দিষ্ট সীমানা পর্যন্ত গড়াবে। এজন্য খেয়াল করা আবশ্যক যে,কোনো মুসিবত আসলে তাকে নিরসনের চেষ্টা না করা,এমন অবস্থায় তার মুসিবত তার সময়-সীমা অতিক্রম করবে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে এর অবসান হলে দুঃখ-কষ্ট বাড়বে।”
এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,“দানশীলতা কি ?” তিনি বললেন,“প্রার্থনা করার পূর্বে যা প্রদান করা হয়, তা হলো দানশীলতা। আর প্রার্থনার পর প্রদত্ত দানকে বলা হয় বখশিশ ও উপহার।”
এক ব্যক্তি আলীর সমালোচনা করে। আলীর কাছে সংবাদটি পৌছে যায়। একদিন সেই ব্যক্তি আলীর কাছে উপস্থিত হয়ে তার প্রশংসা করলে তিনি বললেন,“তুমি যা বলেছো, তা এমন নয়। তোমার অন্তরে যা আছে, আমি তার চেয়েও বেশী কিছু।”
তিনি বলেন,“আদেশ অমান্যকরনের শাস্তি হলো ইবাদতে অলসতা,জীবিকা নির্বাহের জন্য দৈনন্দিন খাদ্যে সংকীর্ণতা আর স্বাদে গন্ধে স্বল্পতা আসবে।”
আলী বিন রাবীয়া বলেছেন যে,এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন,“আল্লাহ আপনাকে আটল রাখুন।” কিন্তু সে মনে মনে তার শত্রুতা পোষণ করতো। তিনি বললেন,“আমি যেন তোমার বক্ষস্থলের উপর দৃঢ়পদ থাকতে পারি।”
শাবী বলেছেনঃ আবু বকর (রাঃ) কবিতা আবৃতি করতেন, উমর (রাঃ) কবি ছিলেন, উসমান (রাঃ) কাব্য রচনা করতেন, তবে আলী (রাঃ) এর কবিত্বের প্রতিভা ছিল সবচেয়ে বেশী প্রকার। নাবীত আশজায়ী থেকে বর্ণিত তার কাব্যগুলোর বঙ্গানুবাদ নিম্নে প্রদত্ত হলো –
“অন্তরে যখন নৈরাশ্যের সৃষ্টি হবে,বদান্যতা যখন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে,সমাজের কুসংস্কার যখন প্রাধান্য পাবে,উদ্যোমতা যখন বাধাগ্রস্ত হয় আর এগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায় হ্রাস পায়, তখন নিজেই নিজেকে বলবে,একদিন গ্রহণযোগ্য পথের সন্ধান মিলবেই; কারণ প্রতিটি ঘটনাবলীর শেষে সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জিত হয়।”
শাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছেঃ এক ব্যক্তি আলীকে নিজের কাছে বসানোর উপযুক্ত মনে না করায় তিনি এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন -“অজ্ঞ ও অশিক্ষিতদের সহচরত্ব গ্রহণ করবে না আর তাদের থেকে দূরে থাকবে, কারন তারা সুসভ্য ও জ্ঞানবান ব্যক্তিদের ধ্বংস করে ফেলে।”
মুবাররদ বলেছেনঃ আলীর তলোয়ারে তার স্বরচিত এ কবিতাটি খোদাই করে লেখা ছিল – “দুনিয়া লোভ ও লালসার মোড়কে মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, একে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে সে তোমাকে বিষন্ন করে তুলবে। পৃথিবীতে অনেক ঝগড়াটে লোক রয়েছে, পৃথিবী যাদেরকে কোন দিন ছেড়ে যাবে না। আর এমন হতদরিদ্র লোক রয়েছে, দুনিয়া যাদেরকে সংকীর্ণতায় ভরে দিয়েছে। আকল দ্বারা রিযিক অর্জিত হয় না, রিযিক না দিলেও রুজির সন্ধান দেয়া হয়। আর যদি রুজি পেশীশক্তি দ্বারা অর্জিত হতো, তাহলে পক্ষীকুল রুজি-রোজগার করে আকাশেই উড়তো।”
আরেক কবিতায় তিনি উল্লেখ করেন,“নিজের গোপন রহস্য কারো কাছে ফাঁস করতে নেই, কারণ প্রতিটি ভালো ইচ্ছার জন্য রয়েছে উচ্চাভিলাষ, আর আমি অনেক পথভ্রষ্টকে দেখেছি যারা চামড়া যথাযথ রাখে না।”
উকবা বিন আবী সবহা বর্ণনা করেছেনঃ ইবনে বালহাম কর্তৃক আলী (রাঃ) গুরুতর আহত হলে খবর পেয়ে হাসান (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে এলে তিনি বললেন,“বৎস, আটটি বিষয় খুব ভালো করে মনে রাখবে।” হাসান (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,“বিষয়গুলো কি ?” তিনি বললেন, “(১) তুমি সবচেয়ে বড় বিজ্ঞ, (২) তুমি সবচেয়ে বড় হতদরিদ্র, (৩) তুমি সবচেয়ে বেশী কঠোর, (৪) তুমি সবচেয়ে বেশী মর্যাদার অধিকারী।”
হাসান (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,“আর চারটি বিষয় কি ?” তিনি বললেন, “(১) নির্বোধ থেকে দূরে থাকবে, কারণ তার কাছ থেকে লাভের আসা করলে সে তোমার অনিষ্ট করবে, (২) মিথ্যা বর্জন করবে, কারণ মিথ্যা শত্রুকে মিত্রে আর মিত্রকে শত্রুতে পরিনত করে, (৩) কৃপণতা থেকে পালাবে, কারণ প্রয়োজনের সময় সে তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। (৪) অসৎ লোকদের থেকে বেঁচে থাকবে, কারণ সে তোমার সর্বস্ব বিক্রি করে দিবে।”
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ “আমাদের প্রতিপালক কখন থেকে আছেন” – এক ইহুদীর এ প্রশ্ন শুনে ক্রোধে আলীর চেহারা রক্তিম হয়ে যায়। তিনি বললেন,“আমাদের প্রতিপালক এমন সত্তা নন,যিনি পূর্বে ছিলেন না,অথচ আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি এমন এক পবিত্র সত্তা, যিনি সর্বদা বিরাজমান। তিনি অদৃশ্য ও নিরাকার। তার কোন শুরু নেই,শেষও নেই। সকল শেষ তার পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি সকল সমাপ্তির পরিসমাপ্তি।” এ কথা শুনে ইহুদী মুসলমান হয়ে যায়।
দারাজ শুরাইহ কাজী থেকে বর্ণনা করেছেনঃ জঙ্গে সিফফিনের যাত্রার সময় আলীর বর্শাটি হারিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে কুফায় এসে এক ইহুদির হাতে হারিয়ে যাওয়া বর্শাটি দেখে তিনি বললেন,“এ বর্শাটি আমার। আমি এটি বিক্রি করিনি আর কাউকে দানও করিনি। তাহলে বর্শাটি তোমার হস্তগত হল কিভাবে ?” ইহুদী বললো,“এটি আমার, আর আমার হিফাজতেই আছে।” তিনি বললেন,“আমি বিচারপতির কাছে এর বিচার প্রার্থনা করবো।” এজন্য আলী বিচারপতি শুরাইহ এর কাছে গিয়ে বসলেন আর বললেন,“যদি আমার বিরোধী ইহুদী না হতো, তবে আমি তার মতোই আদালতে গিয়ে দাঁড়াতাম। আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি – আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের নিকৃষ্ট মনে করেন। অতএব তোমরাও তাদের জঘন্য মনে করবে।” বিচারপতি বললেন,“আপনার অভিযোগ কি ?” তিনি বিষয়টি বললেন, বিচারপতি আলী (রাঃ) কর্তৃক উত্থাপিত বিষয়টির প্রেক্ষিতে ইহুদীকে তার বক্তব্য তুলে ধরতে বললেন। ইহুদী পূর্বের কথাই পুনর্ব্যক্ত করলো। বিচারপতি বললেন,“আমিরুল মুমিনীন, আপনার সাক্ষী কে ?” তিনি নিজের গোলাম কীনবার আর পুত্র হাসানকে পেশ করলেন। বিচারপতি বললেন,“পিতার জন্য ছেলের সাক্ষ্য বৈধ নয়।” আলী (রাঃ) বললেন,“জান্নাতবাসীর সাক্ষ্যও কি অবৈধ ? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – হাসান আর হুসাইন জান্নাতী যুবকদের সর্দার।” এ পর্যন্ত ন্যায় বিচারের অনুপম দৃষ্টান্ত দেখে চিৎকার করে ইহুদী বলে উঠলো,“হে আমিরুল মুমিনীন, নিশ্চয়ই আপনি মুসলিম সমাজের সাম্রাজ্যের অধিপতি। এরপরও আপনি আমাকে বিচারকের কাছে এনেছেন। বিচার চলাকালে বিচারপতিকে সাধারণ জনগনের মতোই আপনার সাথে অভিন্ন আচরণ করতে দেখে আমি বিমোহিত। আপনার ইসলাম সত্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। এটা আপনার বর্শা। আমি মুসলমান হয়ে যাবো।”
কুরআনের তাফসীর
ইবনে সাদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে,আলী (রাঃ) বলেছেন,“আল্লাহ’র কসম, প্রতিটি আয়াতের শানে নুযুল (আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট),আয়াতটি কোথায় ও কার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে তা আমার জানা রয়েছে। আমার প্রতিপালক আমাকে প্রজ্ঞা আর ভাষা দান করেছেন।”
ইবনে সাদ প্রমুখ আবু তোফায়েলের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে,আলী (রাঃ) বলেছেন,“কুরআন শরীফ সম্পর্কে জানোতে চাইলে আমাকে জিজ্ঞেস করো। আমার অবগতির বাইরে এমন কোন আয়াত নেই। আমি বলতে পারবো যে, আয়াতটি রাতে না দিনে,ময়দানে না পাহাড়ে নাযিল হয়েছে।”
মুহাম্মদ বিন সিরীন থেকে ইবনে আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন,“রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পর আলী (রাঃ) আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর বাইয়াত প্রদানে বিলম্ব করায় আবু বকর সিদ্দীক তার কাছে গিয়ে বললেন,“তুমি কি আমার বাইয়াত সম্পর্কে সংশয়ের মধ্যে আছো ?” আলী বললেন,“না, তবে কুরআন শরীফকে জমা না করা পর্যন্ত নামায ছাড়া কোন সময় চাদর পড়বো না বলে কসম করেছি। কুরআন শরীফ যে ক্রমধারায় নাযিল হয়েছে, সে ধারাবাহিকতায় আপনি কুরআন শরীফের বিন্যাস করবেন বলে লোকদের ধারণা।”
বিজ্ঞচিত উক্তি ও বানী
“বেশী হুশিয়ারী খারাপ ধারণার জন্ম দেয়।” (ইবনে হাব্বান)
“ভালোবাসা দূরের মানুষকে কাছে টেনে নেয়, আর শত্রুতা আপনকে পর করে দেয়। হাত শরীরের সবচেয়ে নিকটবর্তী অঙ্গ, তবে হাতে পচন ধরলে তা কেটে শরীর থেকে পৃথক করে দিতে হয়।” (আবু নুয়াঈম)
“আমার পাঁচটি কথা মনে রাখবে –(১) মানুষকে গুনাহ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ভয় দেখাবে না, (২) আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে কোন প্রত্যাশা করবে না, (৩) অজানা বিষয়ে শিক্ষা লাভের জন্য লজ্জাবোধ করবে না, (৪) কোনো আলেম ব্যক্তি তার অজানা মাসয়ালা জেনে নিতে ইতস্তত করবে না, আর কেউ যদি অজ্ঞাত মাসয়ালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে – এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশী জানেন, (৫) ধৈর্য আর বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত হলো যথাক্রমে মাথা ও শরীরের অনুরূপ; যখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে, তখন বিশ্বাসের মধ্যে কমতি আসবে, আর মাথা চলে গেলে শরীরের কি মূল্য ?” (ইবনে মানসুর)
“ফকীহে কামেল (শরীয়তের আইন বিশেষজ্ঞ) তো সে-ই, যিনি লোকদের আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করেন না,লোকদের গুনাহ করার অবকাশ দেন না, আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে যান না এবং কুরআন শরীফের প্রতি লোকদের বিরক্তি জন্ম দেন না। যে জ্ঞানকে ভালোভাবে অনুধাবন করবে না, সে জ্ঞানের বাতায়ন উন্মোচিত করতে পারবে না; আর যে চিন্তার জগতে বিচরণ করে না, তার সামনে লেখাপড়ার তোরণ অবারিত হয় না।” (আবুস সারীস)
“সেই ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয়তম,যে আমাকে ঐ প্রশ্ন করবে যা আমার জানা নেই; আর সে প্রেক্ষিতে আমি বলবো – আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।” (ইবনে আসাকির)
“যে লোকদের সাথে ন্যায় ও সততাপুর্ণ আচরণ করতে চায়, সে যেন নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা অপরের জন্য ভালো মনে করে।” (ইবনে আসাকির)
“সাতটি বিষয় শয়তানের পক্ষ থেকে সৃষ্ট –(১) অত্যাধিক ক্রোধ, (২) বেশী বেশী হাঁচি দেওয়া, (৩) ঘনঘন হাই তোলা, (৪) অতিরিক্ত বমন করা, (৫) গ্রীস্মকালে নাক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ, (৬) অতিরিক্ত প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া, (৭) আল্লাহ তাআলাকে স্বরণের সময় নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়া।”
“ডালিমের ভেতরের দানার সাথে যুক্ত জালীটি খেয়ে ফেলবে, কারন তা পাকস্থলির জন্য শক্তিদায়ক।” (আবদুল্লাহ বিন আহমাদ)
“এমন যুগ আসবে, যখন গোলামের চেয়েও মুমিনের মর্যাদা কম হবে।” (সাদ ইবনে মানসুর)
“তুমি আলেমকে শোনাবে অথবা শুনবে -উভয়টি সমান।” (হাকিম,তারীখ)
আলী (রাঃ) এর খিলাফতকালে হুযাইফা বিন ইয়ামান,যুবায়ের বিন আওয়াম,তালহা,যায়েদ বিন সুহান,সালমান ফারফী,হিন্দ বিন আবু হালা,ওয়াইস ক্বারনী,জনাব বিন আল আরত,আম্মার বিন ইয়াসার,সহল বিন হানীফ,তামীম দারমী,খাওয়াত বিন জাবীর,শারজীল বিন আস—সমত,আবু মায়াসারা আল বদরী,সাওফান বিন উসাল,আমর বিন আবনাস,হিশাম বিন হাকীম,রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুক্তদাস আবু রাফে প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন।