ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া আবু খালিদ আল উমুয়ী ২৫ অথবা ২৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
স্থুল শরীরের অধিকারী ইয়াযিদের গোটা শরীরে পশম ছিল। তার মা মাইসুন বিনতে বহদে কালবীয়া। তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন,আর তার রেওয়ায়েতগুলো (বর্ণনাগুলো) তার ছেলে খালিদ আর আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান বর্ণনা করেছেন।
তিনি আগে থেকেই উত্তরাধিকার নিযুক্ত হয়েছিলেন আর লোকদের বাধ্য করে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেছেন,“ইয়াযিদ আগেই উত্তরাধিকার মনোনীত হওয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত এ প্রথা অব্যাহত থাকবে, নতুবা পরামর্শ সাপেক্ষে মুসলমানগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই থাকতেন।”
ইবনে সিরীন (রহঃ) বলেছেনঃ মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে আমর বিন হাযাম বললেনঃ আমি আপনাকে আল্লাহর ভয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্য থেকে কাকে খলীফা মনোনীত করতে চাইছেন ?” মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন,“তোমার উপদেশে আমি কৃতজ্ঞ। বর্তমানে অনেকের অনেক ছেলে রয়েছে,তাদের মধ্যে আমার ছেলে বেশী হকদার। এজন্য তাকে উত্তরাধিকার বানাতে চাইছি।”
আতীয়া বিন কায়েস বলেছেনঃ একদিন মুয়াবিয়া (রাঃ) খুতবার সময় বললেন,“হে আল্লাহ, যদি ইয়াযিদকে তার মর্যাদার কারণে উত্তরাধিকার মনোনীত করি, তবে আপনি তাকে সাহায্য ও রক্ষা করুন। আর যদি দয়ার্দ্র পিতা হিসেবে করে থাকি এবং যদি সে খিলাফতের যোগ্য না হয়, তাহলে সে যেন মসনদে আরোহণের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে।”
মুয়াবিয়ার ইন্তেকালের পর সিরিয়াবাসী ইয়াযিদের কাছে বাইয়াত দেয়। এরপর তিনি মদীনাবাসীর বাইয়াত গ্রহণের ফরমান জারি করলে ইমাম হুসাইন (রাঃ) আর ইবনে যুবায়ের (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করে সে রাতেই তারা মক্কা শরীফে চলে যান। ইবনে যুবায়ের (রাঃ) ইয়াযিদকে বাইয়াত দেননি আর নিজের জন্যও বাইয়াত করাতে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে কুফাবাসী মুয়াবিয়ার আমল থেকেই বলে রেখেছিলো আর তারা ইমাম হুসাইনকে বাইয়াত দিতে প্রস্তুত ছিল। তবে তিনি কোনো সময়েই রাজী হননি। যখন ইয়াযিদ বাইয়াত করিয়ে নিলো, তখন প্রথমে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার চেষ্টা করেন। এরপর কুফা যাওয়ার ইচ্ছা করেন; ইবনে যুবায়ের তাঁকে এ পরামর্শই দেন,কিন্তু ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে নিষেধ করেন। ইবনে উমর (রাঃ) বের হতে নিষেধ করে বললেন,“আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাত দুটির মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দিয়েছিলেন,কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। আপনি তো রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলিজা। আপনি আখিরাতকে কবুল করুন,দুনিয়া আপনার জন্য নয়।” ইমাম হুসাইন (রা.) নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় ইবনে উমর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন,গলায় জড়িয়ে ধরে অবশেষে বিদায় দেন।
ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন,“ইমাম হুসাইন (রাঃ) আমার নিষেধ উপেক্ষা করে যাত্রা করলেন,ফলে তার পিতা আর ভাইয়ের মতোই পরীক্ষিত কুফাবাসীর কাছে তাঁকে একই পরিণাম ভোগ করতে হয়।”
জাবের বিন আব্দুল্লাহ,আবু সাঈদ আর আবু ওয়াকেদী আল লাইসীও ইমাম হুসাইনকে নিষেধ করেন,কিন্তু তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে ইরাক গমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। যাত্রার প্রক্কালে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন,“আমার মন বলছে,বিবি-বাচ্চাদের সামনে উসমান গনী (রাঃ) এর মতো আপনাকেও শহীদ করে দেবে।” এরপর তিনি নিজেই কেঁদে ফেললেন আর বললেন,“আপনি ইবনে যুবায়েরের চক্ষুযুগল শীতল করেছেন।” এরপর তিনি ইবনে যুবায়ের (রাঃ) কে বললেন,“তুমি যা চাইছো, তা-ই হতে চলেছে। ইমাম হুসাইন (রাঃ) যাত্রা করছেন। আর তুমিও হিজায ছেড়ে যাত্রা করছো।” এরপর তিনি এ কবিতাটি আবৃত্তি করলেন,“হে উড়ন্ত প্রাণী, শূণ্য চারণভূমির যেখানে খুশি চড়বে, যেখানে খুশি ডিম দিবে।”
ইরাকবাসীর দূত আর পত্রসম্বলিত আহবানের প্রেক্ষিতে ইমাম হোসাইন (রাঃ) যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখে পরিবার-পরিজন যাঁদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল মক্কা থেকে ইরাক গমন করেন। এদিকে ইয়াযিদ ইরাক শাসনকর্তা উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে ইমাম হুসাইনের সাথে যুদ্ধ করার লিখিত আদেশ দেন আর আমর বিন সাদ বিন আবী ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইনের গতিপথ রুদ্ধ করতে চার হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। কুফাবাসী নিজেদের পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী আলী (রাঃ) প্রমুখদের সাথে যেমন আচরণ করেছিলো,তেমনি ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে একা ফেলে তারা চলে যায়। ইয়াযিদ বাহিনী বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে ইমাম হুসাইন (রাঃ) সন্ধি,প্রত্যাবর্তন অথবা ইয়াযিদের কাছে যাওয়া – এ তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন। অথচ তারা সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করে আর ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে শহীদ করে তার মাথা মুবারাক এক ট্রেতে করে ইবনে যিয়াদের সামনে পেশ করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর হত্যাকারী ইবনে যিয়াদ আর ইয়াযিদের প্রতি অভিশাপ বর্ষন করুন।
ইমাম হুসাইন (রাঃ) ইয়াওমে আশুরায় শাহাদাত বরণ করেন। তার শহীদ হওয়ার ঘটনাটি অনেক দীর্ঘ আর খুবই বেদনাদায়ক। তার সাথে পরিবারের ষোলজন শহীদ হোন। তিনি শহীদ হওয়ার মুহুর্তে সাতদিন পর্যন্ত দুনিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, সূর্যের রং বিকৃত হয়ে যায়, তারকারাজি ভেঙে ভেঙে নিচে পতিত হয়, সেদিন সূর্যগ্রহণ লেগেছিলো আর ছয় মাস পর্যন্ত আকাশের এক কোণে সর্বদা একটি লাল রেখা উদ্ভাসিত ছিল,যা এ মর্মান্তিক ঘটনার পূর্বে আর কোনদিন দেখা যায়নি।
এ বর্ণনাটিও বর্ণিত রয়েছে যে,সেদিন বাইতুল মুকাদ্দাসের যে পাথর উঠানো হয়েছে, তার নিচ দিয়েই রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। বিরোধী শিবিরে সেদিনের হর্ষ কেন যেন বিষাদে পরিণত হয়েছিলো। তাদের যবেহকৃত উটের গোশত আগুনের মতো জ্বলছিলো, পাকানোর সময় তা কয়লার মতো কালো হয়ে যায় আর এর স্বাদ আলকাম বৃক্ষের মতো তিক্ত হয়। এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শানে কটুক্তি করায় আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে তারা নিক্ষেপ করে তার চোখ দুটো নষ্ট করে দেন।
সালাবী আব্দুল মালিক বিন উমায়ের আল লাইসী থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আমি এ প্রাসাদে (কুফার প্রশাসনিক ভবন) হুসাইন বিন আলীর ছিন্ন মাথা উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের সামনে ঢালের উপর প্রতিস্থাপিত অবস্থায় দেখেছি। এর কিছুদিন পর এ প্রাসাদেই উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাটা মাথা মুখতার বিন আবু উবায়েদের সামনে দেখেছি। এরপর মুখতার বিন আবু উবায়েদের মাথা মুসয়াব বিন যুবায়েরের সামনে,আবার এর কিছুদিন পর মুসয়াব বিন যুবায়েরের বিচ্ছিন্ন মাথা আব্দুল মালিকের সামনে রাখা অবস্থায় দেখেছি। আমি এ ঘটনা আব্দুল মালিকের কাছে বিবৃত করলে তিনি এ প্রাসাদকে অমঙ্গলজনক ভেবে তা বর্জন করেন।
সালামা থেকে তিরমিযী বর্ণনা করেছেনঃ আমি উম্মে সালমা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে কাঁদতে দেখে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,“আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথা ও দাড়ি ধুলায় ধূসরিত দেখে বললাম – আমি আল্লাহর রাসূলের এ কি অবস্থা দেখছি ?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“আমি এ মুহূর্তে শহীদ হুসাইনকে দেখে ফিরছি।”
‘দায়ায়েল’গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বায়হাকী বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দুপুরের সময় স্বপ্নে দেখলাম,তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধূলাময় অবস্থায় হেঁটে চলছেন। তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতে এক বোতল রক্ত। আমি বললাম,“আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান। ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আপনার হাতে এটা কি ?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“এগুলো হুসাইন আর তার সাথীদের রক্ত। আমি আজ সারাদিন এগুলো সঞ্চয় করেছি।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন,“সে দিনটি হুসাইনের শাহাদাতের দিন ছিল।”
আবু নুয়াইম দালায়েল গ্রন্থে উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ আমি হুসাইনের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য প্রাণিকুলের বিলাপ শুনেছি।
সাআলাবা স্বরচিত আমালী গ্রন্থে লিখেছেন যে,জনাব কালবী বলেছেনঃ আমি কারবালার প্রান্তে আরবের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম,“আপনি কি পশুদের বিলাপ শুনেছেন ?” তিনি বললেন,“তুমি এ ব্যাপারে যাকেই জিজ্ঞেস করবে তিনিই বলবেন – শুনেছি।” আমি বললাম,“আপনি নিজের কানে শুনেছেন কি ?” তিনি বললেন,“আমি এ কবিতা শুনেছি (অর্থ) – “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চেহারার উপর হাত সঞ্চালন করেছেন, তার গন্ডদেশ দীপ্তি ছড়াতো, তার পিতামাতা কুরাইশদের অভিজাত গোত্রের সন্তান, তার দাদা সকল দাদা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম।”
ইবনে যিয়াদ ইমাম হোসাইন (রাঃ) সহ তার সাথীদের শহীদ করে তাদের ছিন্ন মাথাগুলো ইয়াযিদদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ইয়াযিদ প্রাথমিক অবস্থায় এ মর্মান্তিক ঘটনায় আনন্দিত হয়,কিন্তু মুসলমানগণ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় আর এ কাজকে ঘৃণ্য বলে অভিহিত করায় সে অনুতপ্ত হয়।
আবু ইয়ালা মুসনাদ গ্রন্থে দুর্বল সূত্রে আবু উবায়দের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,“আমার উম্মত সর্বদা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কিন্তু বনূ উমাইয়্যার ইয়াযিদ নামক এক ব্যক্তি ইনসাফের পথে বাধা সৃষ্টি করবে।”
রুয়ানী মুসনাদ গ্রন্থে আবুদ দারদাহ থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি,“যে প্রথম আমার সুন্নতের মধ্যে পরিবর্তন করবে, সে বনূ উমাইয়্যার ইয়াযিদ।”
নওফেল বিন আবুল ফারাত বলেছেনঃ একদিন আমি খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীযের কাছে বসেছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে ইয়াযিদের বিষয় এসে গেলে এক ব্যক্তি ‘আমিরুল মুমিনীন ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া’ বলে তার নাম নিলে খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বললেন,“তুমি একে আমিরুল মুমেনীন বলছো ?” এ বলে তিনি এ অপরাধের জন্য তাকে বিশটি বেত্রাঘাতের আদেশ দিলেন।
৬৩ হিজরীতে মদীনাবাসীর বিদ্রোহের সংবাদ জেনে ইয়াযিদ বিশাল সৈন্য বাহিনী পাঠালো। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃতি বিজড়িত পবিত্র মদীনা নগরী ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে ইয়াযিদ মক্কা শরীফে ইবনে যুবায়েরকে অবরুদ্ধ করার জন্য সেনাবাহিনীকে পরবর্তী নির্দেশ দেন।
হাসান বসরী ইয়াযিদ বাহিনীর বর্বরতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন,সেদিন ইয়াযিদ বাহিনীর নির্যাতন থেকে মদীনাবাসীর একজনও পরিত্রাণ পায়নি। সহস্রাধিক সাহাবায়ে কেরাম শহীদ হোন। মদীনা শরীফ লুন্ঠিত হয়। হাজার হাজার তরুণী ধর্যিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,যে মদীনাবাসীকে ভীতসন্ত্রস্ত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রকম্পিত করে রাখবেন এবং আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা ও লোকেরা তাকে অভিশাপ দিবে। (মুসলিম)
ইয়াযিদ পাপাচারে নিমগ্ন হয়ে পড়ায় মদীনাবাসী তার বাইয়াত প্রত্যাখ্যান করেছিলো। ওয়াকেদী আব্দুল্লাহ বিন হানযালা আল গাসীল থেকে বর্ণনা করেছেন,আল্লাহর কসম, যতক্ষন পর্যন্ত আমি ইয়াযিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ হতেই থাকবে,এ আমার বিশ্বাস। আশ্চর্যের বিষয় হলো,সে সময় লোকেরা (শিয়ারা –অনুবাদক) মা,মেয়ে আর বোনদের বিয়ে করতো এবং তারা প্রকাশ্যে শরাব পান করতো,আর নামায ছেড়ে দিয়েছিলো।
যাহাবী (রহঃ) বলেছেনঃ মদীনাবাসীর সাথে এহেন আচরণ,মদ পান ইত্যাদি মন্দ কাজের সাথে জড়িত থাকার কারণে ইয়াযিদের প্রতি জনগন ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। এদিকে আল্লাহ তাআলা তার জীবনকে দীর্য করে দিলেন। সে ইবনে যুবায়ের (রাঃ) আর মক্কাবাসীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠালো। পথিমধ্যে সেনাপতি মারা গেলে তদস্থলে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ইয়াযিদ বাহিনীর সাথে ইবনে যুবায়েরের যুদ্ধ হয়। তারা ইবনে যুবায়েরকে অবরোধ করে আর অবরোধ চলাকালীন সময়ে ইয়াযীদ বাহিনী মিনযানিক থেকে আগুন ও পাথর নিক্ষেপ করে। ফলে আগুনের গোলায় কাবা শরীফের দেওয়াল,ছাদ আর ইসমাঈল (আঃ) এর নিকট ফিদয়া হিসেবে প্রেরিত সেই দুম্বার ঐতিহাসিক শিং যা আজ পর্যন্ত কাবার ছাদে লটকানো আছে – সব ভস্মীভূত হয়ে যায়। ৬৪ হিজরীর সফর মাসে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। লড়াইরত অবস্থায় তার মৃত্যু সংবাদ মক্কায় পৌছলে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) ঘোষণা দিয়ে বললেন,“হে সিরিয়াবাসী,তোমাদের পথভ্রষ্টকারী সেই লোকটির মৃত্যু হয়েছে।” এ কথা শুনে সৈন্যগণ চলে যায় আর লোকেরা তাদের পশ্চাদ্বাবন করে। অতঃপর ইবনে যুবায়ের (রাঃ) লোকদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেন আর খলীফা বলে নিজেকে ঘোষণা দেন।
ওদিকে সিরিয়াবাসীর মুয়াবিয়া বিন ইয়াযিদের আসক্তি ছিল। তার অনেক কবিতার চারণ মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
ইবনে আসাকির ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তোমরা আবু বকর আর উমরের নাম ঠিক রেখেছো। উসমান বিন আফফান (রাঃ) শহীদ হয়েছেন। মুয়াবিয়া তার ছেলে ইয়াযিদ,সাফাহ,সালাম,মানসুর,জাবের আর মাহদী হলেন বাদশাহ। অভিশপ্ত শাসনকর্তা সকলেই কাব বিন লুয়াইয়ের বংশধর।
যাহাবী বলেছেনঃ ইবনে উমরের এ বর্ণনাটি কয়েক কয়েক পদ্ধতিতে বর্ণিত। কিন্তু কেউ একে মারফু বলেননি।
ওয়াকেদী আবু জাফর আল বাকের থেকে বর্ণনা করেনঃ ইয়াযিদ সর্বপ্রথম কাবা শরীফকে রেশমী গিলাফে আচ্ছাদিত করে।
কারবালা ও মদীনার হত্যাযজ্ঞ ছাড়া ইয়াযিদের আমলে যেসব উলামা ইন্তেকাল করেছেন তারা হলেন – উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা, খালিদ বিন আরফাত,জরহদ আল আসলামী,জাবের বিন আতীক,বুরায়দা বিন হাসীব,মাসলামা বিন মুখাল্লাদ,আলকামা বিন কায়েস,মাসরুক,মাসুর বিন মুখরিমা প্রমুখ। আর মদীনার হত্যাযজ্ঞে তিনশত কুরাইশ মুহাজির আর আনসার শাহাদাত বরণ করেন।