তার নাম ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিক আবুল আব্বাস।
শাবী বলেছেন,“ওয়ালীদকে তার পিতামাতা খুবই আদর-যত্নে লালিত পালিত করার কারণে তিনি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হোন।”
রুহ বিন যানবাহ বলেছেন,“আমি একদিন আব্দুল মালিকের কাছে গিয়ে তাকে খুবই চিন্তিত দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলাম।” সে বললো,“কাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করবো এ চিন্তা আমাকে কাতর করে দিয়েছে।” আমি ওয়ালীদের নাম প্রস্তাব করলে সে বললো,“সে তো অশিক্ষিত।” আমাদের কথাগুলো শুনতে পেয়ে ওয়ালীদ বিজ্ঞ পন্ডিতদের কাছে সেদিন থেকে লাগাতার ছয় মাস শিক্ষা অর্জন করেও কোনো জ্ঞান সঞ্চয় করতে পারেনি। আব্দুল মালিক বলতো,“এ বেচারা (ওয়ালীদ) খিলাফতের দন্ড ধারণে অক্ষম।”
আবুয যানাদ বলেছেনঃ ওয়ালীদের আরবী ভাষায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি দেখা যায়। সে একবার মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে মদীনাবাসীকে এভাবে সম্বোধন করছিলো – يا اهل المدينة
আবু ইকরামা যাবী বলেছেনঃ একবার সে মিম্বরে দাঁড়িয়ে এভাবে তিলাওয়াত করলো – يا ليتها كانت القا ضية সেদিন মিম্বারের পাশে উমর বিন আব্দুল আযীয আর সুলাইমান বিন আব্দুল মালিকের মতো মনীষীরা বসেছিলেন। অবশেষে সুলাইমান বললেন,“দারুণ পড়েছেন!”
ওয়ালীদ ছিল পরাক্রমশালী আর উৎপীড়ক। আবু নায়ায়েম হালীয়া গ্রন্থে ইবনে শওযবের বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ উমর বিন আব্দুল আযীয বলেছেন,“ওয়ালীদ সিরিয়ায়,হাজ্জাজ ইরাকে,উসমান বিন জাবারাহ হিজাযে আর কুররা বিন শারীক মিসরে – আল্লাহর কসম,গোটা পৃথিবী অত্যাচারের কালো আবরণে ছেয়ে গেছে।”
ইবনে আবী হাতিম স্বরচিত তাফসীর গ্রন্থে ইবরাহীম যারআর বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ ইবরাহীম বলেছেন, “ওয়ালীদ আমাকে বললেন – খলীফাদের কোনো হিসাব নিকাশ হবে কি ?” আমি বললান,আপনি, না দাউদ (আঃ) – কে বেশী মর্যাদাশীল ? আল্লাহ তাআলা দাউদ (আঃ) কে খিলাফত আর নবুওয়াত উভয়ই দান করেছিলেন। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে –
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা করেছি, অতএব,তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। …..” (সূরাহ সাদ, ৩৮ : ২৬)
এরপরও ওয়ালীদ ভয় করেছে, জিহাদ করেছে। নিজ খিলাফতকালে অনেক জটিল ফতোয়া সংকলন করিয়েছে। এতিমদের খতনা করাতো আর শিক্ষা দীক্ষার ব্যবস্থা করতো। প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবক আর অন্ধদের জন্য পথপ্রদর্শক নিয়োগ করেছিলো। সে মসজিদে নববী পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করে। সে মুফতী আর ভিক্ষুকদের ভাতা দিতো।
ইবনে আবী আইলা বলেছেন,“আল্লাহ তাআলা ওয়ালিদের প্রতি করুণা করুন। ওয়ালীদের শাসনামলে ভারতবর্ষ আর স্পেন হস্তগত হয়। তিনি দামেশকের মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আর বাইতুল মুকাদ্দাসের ভিক্ষুকদের চান্দীর পেয়ালা দান করেন।”
ওয়ালীদকে আব্দুল মালিক ৮৬ হিজরীর শাওয়াল মাসে উত্তরাধিকার মনোনীত করে।
৮৭ হিজরীতে তিনি দামেশকের জামে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং মসজিদে নববী পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন। এ বছর বীকন্দ বুখারা,সরওয়ানিয়া,মাতুমুরা,কামীম আর বাহিতুল ফুরসান প্রভৃতি শহর যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত হয়। একই বছর উমর বিন আব্দুল আযীয (সে সময় তিনি মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন) হাজ্জ করেন আর কুরবানীর দিন ভুল করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের ফলে দারুণ মর্মাহত হোন।
৮৮ হিজরীতে জরসুমা আর তাওয়ানা; ৮৯ হিজরীতে জারীরা,মুতারাকা আর মৌরাকা; ৯১ হিজরীতে নসফ, কাশ, শআরবান,মাদায়েন,বাহরে আযার বায়জানো; ৯২ হিজরীতে গোটা স্পেন,আরমাবিল শহর, কাতারবুন; ৯৩ হিজরীতে দেবল,দাবাজা,বায়বা,খারেজম,সমরকন্দ,সাদ; ৯৪ হিজরীতে কাবুল, ফারগানা,শাশ,সান্দারাহ; ৯৫ হিজরীতে মুকান,মদীনাতুল বাবা; ৯৬ হিজরীতে তাউ হস্তগত হয়, এ বছর জমাদিউল আখির মাসের মাঝামাঝিতে ওয়ালীদ ইন্তেকাল করেন।
যাহাবী বলেছেন,“ওয়ালীদের যুগে জিহাদ অব্যাহত ছিল আর উমর ফারুকের যুগের মতো আইনশাস্ত্রের প্রভূত উন্নতি হয়।”
উমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেছেন,“কবরে নামানোর সময় ওয়ালিদকে কাফনের মধ্য থেকে মাটিতে পা মারতে দেখেছি।”
ওয়ালীদ বলেছেন,“আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে লূত সম্প্রদায়ের উল্লেখ না করলে অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হয় তা আমার খেয়াল থাকতো না।”
ওয়ালীদের শাসনামলে যেসব প্রসিদ্ধ ওলামা ইন্তেকাল করেছেন তারা হলেন – উতবা বিন আব্দুস সালামা, মুকাদ্দাস বিন মাআদি করব,আব্দ বিন বশরুল মাযনী, আবদুল্লাহ বিন আবী আওনী আবুল আলীয়া, জাবের বিন যায়েদ, আনাস বিন মালিক,সহল বিন সাদ,সায়েব বিন ইয়াযিদ,সায়েব ইবনে খালাত,খাবীব বিন আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের,বিলাল বিন আবী দারদা,সাইদ বিন মুসায়্যাব,আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান,আবু বকর বিন আব্দুর রহমান,সাঈদ বিন যুবায়ের – যাকে হাজ্জাজ শহীদ করেছে,ইবরাহীম নাখয়ী,মুতাররফ, ইবরাহীম বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ,কবি উজাজ প্রমুখ।