ওলীদ বিন ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান বিন হাকাম আবুল আব্বাস ৯০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করে।
সে ছিলো ফাসিক। ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিকের মৃত্যুর সময় অল্পবয়স্ক হওয়ায় হিশাম খলীফা মনোনীত হোন। তবে হিশামের পর তাকে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করায় হিশামের ইন্তেকালের পর ১২৫ হিজরীর রবিউল আখির মাসে সে খিলাফতের তখতে আসীন হয়।
ওলীদ বিন ইয়াযিদ অসৎ, পাপাসক্ত আর মদ্যপ ছিল। পবিত্র কাবা গৃহের ছাদে বসে মদ পানের মানসে হজ্ব করার ইচ্ছা করে। পাপাচারের জন্য জনতা তাকে অবরুদ্ধ করে আর তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ১২৬ হিজরীর জমাদিউল আখির মাসে তাকে হত্যা করা হয়।
তাকে অবরোধের সময় সে জনতার উদ্দেশ্যে বলে,“আমি কি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিনি ? আমি তো তোমাদের উপর কঠোরতা করিনি। আমি কি দরিদ্রের কল্যাণ করিনি ? তবে কেন আমার প্রতি এ অত্যাচার ?” জনতা জবাব দিলো,“আপনি সবই করেছেন। কিন্তু আপনাকে হত্যা করার কারণ হলো, আপনি মদ্যপায়ী আর আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন আপনি তা হালাল বলে অনুমোদন দিয়েছেন।”
তাকে হত্যা করার পর তার ছিন্ন মাথা ইয়াযিদ বিন ওলীদ বিন আব্দুল মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ইয়াযিদ বিন ওলীদ বিন আব্দুল মালিক তার কাটা মাথা বর্শায় ঝুলিয়ে রাখেন। তা দেখে ওলীদ বিন ইয়াযিদের ভাই সুলায়মান বলেন,“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,এ লোকটি খুবই বেশরম,মদখোর আর ব্যভিচারী। সে আমার সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে চাইতো।”
মাআফী জারীরী বলেছেন,“আমি ওলীদের কিছু জীবন বৃত্তান্ত আর তার কবিতা সংগ্রহ করেছি – যা অবিশ্বাস,পাপাচার আর ব্যভিচারে ভরা।”
যাহাবী বলেছেন,ওলীদের অবিশ্বাস আর ধর্মচ্যুতির বিষয়টি বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়নি। তবে সে মদ পান করতো আর সমকামিতায় প্রসিদ্ধ ছিল। এজন্য জনতা বিদ্রোহ করে আর তাকে হত্যা করে। একদিন মাহদীর সামনে এক ব্যক্তি ওলীদকে ধর্মচ্যুত হিসেবে অভিহিত করলে মাহদী ধমক দিয়ে বললেন,আল্লাহ তাআলা কোন ধর্মচ্যুত ব্যক্তিকে কোনোদিন খিলাফতের মর্যাদা দান করেন না।
মারওয়ান বিন আবু হাফজ বলেছেন,“ওলীদ ছিল উঁচু মাপের একজন কবি।”
আবুল যানাদ বলেছেন,“যুহরী সবসময় হিশামের কাছে ওলীদের দোষ-ত্রুটিগুলো তুলে ধরে ওলীদকে উত্তরাধিকার মনোনীত না করার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু হিশাম তার উপদেশ গ্রহণ করেননি। যুহরী ওলীদের খিলাফতপ্রাপ্তির পূর্বেই ইন্তেকাল করেন,নতুবা ওলীদ খলীফা হওয়ার পর তাকে অত্যাচার করতো।”
যহাক বিন উসমান বলেছেন,“হিশাম ওলীদের উত্তরাধিকারের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিজ পুত্রকে উত্তরাধিকার মনোনীত করতে চাইলে ওলীদ এ কবিতাটি লিখে হিশামের কাছে পাঠালো –‘আপনি আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেননি,যদি তা করেন তবে তার প্রতিদান পাবেন। আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, আপনি আমার অভিভাবকত্বের অধিকার ছিনিয়ে নিতে চান। আপনি সচেতন হলে এমনটা করতেন না। আপনি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে এ কাজ করেছেন। আফসোস,আপনি তাদেরই একজন, যারা আমার দোষ-ত্রুটির অনুসন্ধান করে ইতোপূর্বে ইন্তেকাল করেছেন।’ ”
হাম্মাদ এক বর্ণনায় বলেছেনঃ একদিন ওলীদের কাছে দুইজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এসে বললো,“আমরা নক্ষত্রসূচী দেখে জেনেছি, আপনি আরো সাত বছর জীবিত থাকবেন।” হাম্মাদ বলেন,আমি মনে মনে বললাম,ওলীদকে ধোঁকা দিতে পারলে ভালোই হবে। আমি বললাম,“এরা দুইজন অসত্য প্রলাপ বকছে। আমি জ্যোতির্বিদ্যায় তাদের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ। আমি নক্ষত্রসূচি দেখে জেনেছি,আপনি আরো চল্লিশ বছর বেঁচে থাকবেন।” এ কথা শুনে ওলীদ মাথা নীচু করলো আর বললো,“তাদের কথায় আমি বিমর্ষ হইনি আর তোমার বক্তব্যেও উদ্বেলিত হইনি। আল্লাহর কসম,আমি জীবন প্রিয় মানুষের মত সম্পদ সঞ্চয় করতে চাই। আর ব্যয় করতে চাই অন্তিম জীবনে উপনীত হয়ে যারা ব্যয় করে তাদের মতো।”
মুসনাদে আহমদের এক হাদীসে রয়েছে,এ উম্মতের মধ্যে ওলীদ নামে এক জনের আবির্ভাব হবে,যে এ উম্মতের উপর ফিরাউনের চেয়েও অধিক কঠোরতা অবলম্বন করবে।
মাসালিক গ্রন্থে ফাযলুল্লাহ বলেছেন,“ওলীদ বিন ইয়াযিদ হলো অত্যাচারী,উদ্ধত,পথভ্রষ্ট,মিথ্যা শপথকারী,তৎকালীন যুগের ফিরাউন,যুগশ্রেষ্ঠ মন্দ মানব,কিয়ামতের দিন স্বজাতিকে জাহান্নামের পথ প্রদর্শনকারী,কুরআন শরীফ নিক্ষেপকারী,পাপী আর দুশ্চরিত্রবান।”
সাঈদ বিন সুলায়েম বলেছেন যে,ইবনে মুআবিয়া ওলীদকে বললেন,“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার ছাড়া কুরাইশদের আর সম্মানিত ব্যক্তিদের ছাড়া মারওয়ান পরিবারকে মর্যাদা দিতে চেয়েছেন।” এ কথা শুনে ওলীদ বললো,“তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আত্মীয়দের আমার উপর মর্যাদা দিতে চাও ?” তিনি বললেন,“আমি এটাকেই সঠিক জ্ঞান করি।” এরপর তিনি এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন – “আমি দুশমনদের সামনেও সত্য কথা বলতে চাই। আমি ওলীদের অভিজাত সেনাদের দেখেছি, যারা রাষ্ট্রের কাজে খুবই অলস।”