ইয়াযিদ আবু খালিদ বিন ওলীদ বিন আব্দুল মালিক সৈন্যদের ভাতা কমিয়ে দেওয়ায় তাকে নাকেস (অঙ্গহীন বা অসম্পূর্ণ) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। চাচাত ভাই ওলীদকে হত্যা করে তিনি খিলাফতের তখত অধিকার করেন।
ইয়াযিদের মা হলেন ফরান্দ বিনতে ফিরোজ,ফিরোজের মা হলেন শিরাওয়া বিন কিসরার মেয়ে,শিরাওয়ার মা হলেন খাকান বাদশাহর মেয়ে,আর ফিরোজের নানী হলেন কায়সারের মেয়ে। এ জন্য তিনি গর্ব করে এ কবিতাটি আবৃত্তি করতেন,“আমি কিসরার নাতি,মারওয়ানের ছেলে, আর আমার নানা কায়সার ও খাকান।”
সালাবী বলেছেন,“ইয়াযিদের দাদা আর নানা উভয় দিক দিক থেকে শাহজাদা ছিলেন।”
ওলীদের হত্যাকান্ডের পর তিনি এক ভাষণে বলেন,“আল্লাহর কসম,আমি গর্বিত ও উদ্ধত হয়ে আপনাদের সামনে আসিনি। দুনিয়ার মোহ আর সাম্রাজ্যের লোভ আমার নেই। আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি করুণা না করলে আমি গুনাহগার হবো। আমি আপনাদের আল্লাহ তাআলার কিতাব আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের প্রতি আহবান করছি। যখন হালালকে হারামকারীদের আর বিদআতের রক্ষকদের আবির্ভাব হয়েছে, তখন হিদায়াতের নিশান পুরনো হয়ে পড়েছে আর আল্লাহভীরুদের দীপ্তি নির্বাপিত হয়েছে। সমাজের এ চিত্র দেখে আমি আজ ভীতসন্ত্রস্ত। অন্তরের কঠোরতা আর চরিত্রের তিমিরাচ্ছন্নতা দূর করুন। আমি আপনাদের সঠিক ও সোজা পথে ফিরিয়ে নিতে চাই। আমি এ বিষয়ে ইসতেখারা করেছি। আমি আমার আত্মীয় আর বন্ধুদের বলবো,আল্লাহ তাআলা পৃথিবী আর তার বান্দাদের ভ্রষ্টাচার থেকে নিরাপদ রাখবেন। আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন শক্তি নেই। জনতা, আমি আপনাদের একটি ইট বা একটি পাথরও অর্থহীন হতে দিবো না – এ মানসিকতা নিয়েই আমি আপনাদের নেতা হয়েছি। সংগৃহীত রাজস্ব সংশ্লিষ্ট শহর-নগরেই ব্যয় করবো,যাতে আপনারা সমানভাবে উপকৃত হতে পারেন। যদি এ শর্তে আপনার আমকে বাইআত দেন, তবে আমি আপনাদের, আর আপনাদের সেবা করা আমার জন্য ফরয, আর এ শর্ত থেকে সরে দাঁড়ালে আমার কোনো বাইআত নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমার চেয়ে কোন যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তি থাকলে আপনারা তাকে বাইআত দিন। আর আমি আপনাদের আগে তাকে বাইআত করবো আর তার আনুগত্য করবো। আমি আল্লাহর কাছে আমার আর আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
উসমান বিন আবুল আতিকা বলেছেন,“ইয়াযিদ হলেন প্রথম খলীফা, যিনি অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ঈদগাহে যান। তার খিলাফুতকালে দুর্গের দরজা থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত অস্ত্র সজ্জিত অশ্বারোহীর দল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো।”
আবু উসমান লাইসী কর্তৃক বর্ণিতঃ বনু উমাইয়্যাদের উদ্দেশ্যে ইয়াযিদ বললেন,“তোমরা গান-বাজনা বর্জন করো। গান মানুষের লজ্জা কমিয়ে দেয়,মনের কামনা বাড়িয়ে দেয়,মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে ফেলে,সুরা পানের প্রবল ইচ্ছা জাগিয়ে দেয় আর যিনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। কারণ গান যিনার অগ্রস্তম্ভ। পারপক্ষে নারীর কণ্ঠে গান শ্রবণ থেকে বিরত থাকো।”
ইবনে আব্দুল হাকিম বলেছেনঃ আমি ইমাম শাফীকে বলতে শুনেছি,“খলীফা হওয়ার পর ইয়াযিদ কাদিরীয়া বিশ্বাসের প্রতি মানুষদের আহবান করেন।”
তিনি বেশী দিন খিলাফত পরিচালনা করেননি। খিলাফত লাভের বর্ষেই জিলহাজ্জ মাসের সাত তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছয় মাস খিলাফত পরিচালনা করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৫ অথবা ৪৬ বছর। কথিত আছে যে,তিনি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন।