আবু আব্দুল মালিক বিন মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান বিন হাকাম হলেন উমাইয়্যা বংশের সর্বশেষ খলীফা। তিনি জদ বিন দিরহামের সহচর হওয়ার কারণে তাকে জদী বলেও ডাকা হতো।
তার হিমার বা গাধা উপাধির দুটি কারণ রয়েছে –
এক,তার ঘোড়ার পিঠে গদি লাগানোই থাকতো,দুশমনদের সাথে লড়াই করার জন্য তিনি কখনই তা খুলতেন না। যুদ্ধের জন্য তিনি অবিরাম যাত্রা করতেন। সমর গ্লানি তার সংকল্পকে স্নান করতে পারতো না। তিনি যুদ্ধের কষ্টগুলো ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতেন। এ জন্য আরব বিশ্বে এ কথা প্রসিদ্ধ ছিল যে, অমুক ব্যক্তি লড়াই করার ক্ষেত্রে গাধার চেয়েও বেশী নীরবে আক্রমণ করেন – এ কারণে তিনি হিমার বা গাধা উপাধিতে ভূষিত হোন;
দুই,আরবের প্রথা ছিল, প্রত্যেক শতাব্দীর শেষ বাদশাহকে হিমার বলা হতো। উমাইয়্যা বংশের খিলাফত এক শতাব্দীর নিকটবতী হওয়ার কারণে তাকে হিমার বলা হতো।
মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ ৭২ হিজরীতে জারীরা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জারীরা শাসন করতেন। তার মা দাসী।
তিনি খিলাফত লাভের পূর্বে বড় বড় শহর,নগর ও জনপদের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ১০৫ হিজরীতে কাওনিয়া দখল করেন। তিনি শত্রু পক্ষকে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে সাহসিকতা,কঠোরতা আর সচেতনতা প্রদর্শনের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ।
ওলীদ নিহত হওয়ার সময় তিনি আর্মেনিয়া ছিলেন। সেখানে ওলীদের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তিনি তার প্রতি অনুগত মুসলমানদের বাইআত করান। এরপর ইয়াযিদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি তার কোষাগার উন্মুক্ত করে দেন। এরপর ইবরাহীমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাকে পরাজিত করে নিজের বাইআত করান আর ১২৭ হিজরীর সফর মাসের মাঝামাঝিতে নিজের জন্য খিলাফতের তখত পাকাপোক্ত করেন।
খলীফা হওয়ার পর তিনি সর্বপ্রথম কবর থেকে ইয়াযিদের লাশ উত্তোলন করেন আর ওলীদকে হত্যার অপরাধে তার লাশটি শূলে বুলিয়ে রাখেন। এরপর চতুর্দিক থেকে শক্ৰদের আক্ৰমণ আসতে থাকে। ১৩২ হিজরী পর্যন্ত এ অবস্থাই বিদ্যমান ছিল। এরপর বনূ আব্বাসীয়া গোত্র তার উপর আক্রমণ করে। আব্দুল্লাহ বিন আলী সাফ্ফাহ’র চাচা আব্বাসীয়া বংশের সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন। মৌসুলের নিকটবর্তী উভয় পক্ষের লড়াইয়ে আব্দুল্লাহ তাকে পরাজিত করেন। মারওয়ান সিরিয়ায় পালিয়ে গেলে আব্দুল্লাহ তার পশ্চাৎধাবন করেন। অবশেষে তিনি মিসরে পালিয়ে গেলে আব্দুল্লাহর ভাই সালিহ এর সাথে বসীর অঞ্চলে লড়াই হয় আর ১৩২ হিজরীর যিলহাজ মাসে সালিহ তাকে হত্যা করেন।
তার শাসনামলে সাদী আল-কাবীর,মালিক বিন দিনার আল-যাহাদ,আসেম বিন আবু নুজুদ আল-মকরী,ইয়াযিদী বিন আবু হাবীব,শায়বা বিন নাসাহ আল-মাকরী,মুহাম্মদ বিন মিনকাদার,আবু জাফর,ইয়াযিদ বিন কাকা আল-মাকরী,আল-মাদানী আবু আইয়ূব সাখতিয়ানী,আবুল যানাদ,হাম্মাম বিন মানবাহ,ওয়াসেল বিন আতা প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন।
মুহাম্মাদ বিন সালিহ থেকে সূলী বর্ণনা করেছেনঃ মারওয়ানকে হত্যা করে তার ছিন্ন মাথা আব্দুল্লাহ বিন আলীর কাছে পাঠানো হলে তিনি তা এক জায়গায় রাখতে বললেন। তার কাটা মাথা এক স্থানে রাখা হলে একটি বিড়াল এসে জিহ্বা টেনে বের করে তা চাবাতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে আব্দুল্লাহ বিন আলী বললেন, “এ শিক্ষাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।”