আমীন মুহাম্মাদ আবু আব্দুল্লাহ

আমীন মুহাম্মাদ আবু আব্দুল্লাহ বিন রশীদ পিতার জীবদ্দশায় উত্তরাধিকার মনোনীত হয়েছিলেন। ফলে পিতার মৃত্যুর পর তিনি খিলাফতে তখ্‌তে আরোহণ করেন।

তিনি ছিলেন সুদর্শন,নির্ভীক ও টগবগে যুবক। কথিত আছে,তিনি একবার নিজ হাতে বাঘ হত্যা করেন। তিনি বক্তা, বাগ্মী,সাহিত্যিক ও মর্যাদাবান। তবে তিনি অপব্যয়ী,দুর্বল মতামত ও বোকা ছিলেন,খিলাফতের যোগ্য ছিলেন না।

খলীফা হওয়ার আগের দিন মনসুর প্রাসাদ সংলগ্ন পোলো খেলার মাঠ তৈরির নির্দেশ দেন। ১৯৪ হিজরীতে নিজ ভাই কাসেম, যাকে তার পর উত্তরাধিকার মনোনীত করা হয়েছিলো তাকে সরিয়ে দেয়ার কারণে মামুনের সাথে তার মনোমানিল্যতার সৃষ্টি হয়।

কথিত আছে,ফজল বিন রবীআ ভাবল মামুন খলীফা হলে আমার শপথ অক্ষুন্ন থাকবে না। ফলে সে আমীনকে উত্তেজিত করে মামুনকে উত্তরাধিকারের পথ থেকে অপসারণ করে মূসা বিন আসীনকে উত্তরাধিকার মনোনীত করে নেয়। সংবাদ পেয়ে মামুন আমীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর আমীন দূত মারফত মামুনকে জানালেন – তোমার পরিবর্তে আমার ছেলে মূসাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেছি, মূসার পর তুমি উত্তরাধিকার। মূসার নাম নাতেক বিলহক রাখা হয়েছে। মামুন এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন আর দূতকে কাছে বসিয়ে শরাব পান করান। রাজকীয় অনুকম্পায় প্রভাবিত হয়ে দূত মামুনের হাতে বাইয়াত দিয়ে রাজধানীতে ফিরে গিয়ে মামুনকে নিয়মিত সেখানকার সংবাদ জানিয়ে দিতো।

দূত ফিরে এসে মামুনের আদেশ প্রত্যাখ্যান করার সংবাদ দিলে আমীন শপথনামা থেকে তার নাম সরিয়ে দেন,যা হারুন রশীদ কাবা শরীফে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। আমীন তা নিয়ে এসে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। ফলে উভয় পক্ষে শক্রতার জের বৃদ্ধি পায়।

আমীনকে অনেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এ কথা বুঝিয়েছেন আর হাযেম বিন খুজাইমা আমীনকে বলেছেন, “আমিরুল মুমিনীন, যে আপনার সামনে মিথ্যা বলে সে কল্যাণ বয়ে আনে না, আর সে সত্য বলে সে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করে না। আপনি বাইআত থেকে (মামুনকে) বঞ্চিত করবেন না, তাহলে জনগণ আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। লোকদের সাথে শপথ ভঙ্গ করবেন না, তবে তারা আপনার সাথে শপথ ভঙ্গ করবে। মনে রাখবেন,আপত্তি উত্থাপনকারীদের প্রতি জনতা হিংসা করে আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।” কিন্তু আমীন কারো কথাই শুনলেন না। লোকদের উপঢৌকন দিয়ে নিজের পক্ষে নিয়ে মূসার বাইআত করিয়ে নিলেন। সে সময় মূসা দুধের শিশু।

মামুন নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নিজেকে ইমামুল মুমিনীন দাবী করেন আর এ নামটি লিখতে শুরু করেন। এদিকে ১৯৫ হিজরীতে আমীন আলী বিন ঈসা বিন মাহানকে জবল,হামদান,নিহাওন্দ,কম আর আসফান শহরে পাঠান। শহরগুলো মামুনের বৃত্তি হিসেবে প্রাপ্য ছিল। আলী বিন ঈসা জমাদিউল আখের মাসের মাঝামাঝিতে চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে যাত্রা করলো। মামুনকে বন্দী করে আনার জন্য আলী রুপার একটি হাতকড়া সাথে নিয়েছিল। তাদের প্রতিহত করার জন্য মামুন চার হাজারের কিছু কম সৈন্য দিয়ে তাহের বিন হুসাইনকে পাঠান। তাহের জয়লাভ করে। আলী বিন ঈসা যুদ্ধে নিহত হয় আর তার সৈন্যরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তাহের আলী বিন ঈসার মাথা কেটে মামুনের নিকট পাঠায়। মামুন নির্দেশ দিলেন, এ কাটা মাথা খুরাসানের পথে পথে নিয়ে ফের আর জনতাকে বলো তারা যেন মামুনকে খলীফা হিসেবে মেনে নেয়।

যখন পরাজয়ের সংবাদ নিয়ে দূত এলো, আমীন তখন মাছ শিকারে ব্যস্ত। তিনি দূতকে ধমক দিয়ে বললেন, “কমবখত, এ পুকুর থেকে দুটি মাছ ধরার সুযোগ তো দিবে। কারণ কাওসার দুটি পেয়েছে, আর আমি একটাও না।” এদিকে আমীনের ছিল এ অবস্থা,আর ওদিকে মামুন খিলাফতের তখত কব্জা করেন।

আব্দুল্লাহ বিন সালিহ জারমী বলেছেনঃ যুদ্ধে আলী বিন ঈসা নিহত হওয়ায় বাগদাদে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তখন আমীনের চোখ খুললো। মামুনকে বাইআত থেকে পৃথক করায় লজ্জিত হলেন। সভাসদদের ধোঁকা তার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলো। একদিকে ভাতা না দেয়ায় সৈনিকদের মাঝে গোলমাল লেগে যায়, অন্যদিকে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, এর সাথে যুক্ত হয় আমীনের খেলাধুলার নেশা ও চরম মূর্খতা। ফলে তার সৌভাগ্যের পতন হয়। আর মামুন আহলে হারামাইন শরীফাইন আর অধিকাংশ ইরাকীর বাইআত করানোর কারণে তার সৌভাগ্যের বাতায়ন অবারিত হতে থাকে। ইরাকসহ প্রভৃতি শহর-নগর হাতছাড়া হওয়ায় আমীনের অবস্থা আরো সংকটময় হয়। সৈন্যদের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। কোষাগার শূন্য হয়ে যায়। জনতার উপর মুসীবত চেপে বসে। সংঘাত ও সংঘর্ষে শহর বিজন বনে পরিণত হয়। ভবনগুলো কামানের গোলায় ভেঙে পড়ে। বাগদাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নগর ছেড়ে পালিয়ে যায়। কবিগণ এ দৃশ্য দেখে রচনা করেন দীর্ঘ শোক গাঁথা।

এক কবি লিখেছেনঃ আমি চোখের অশ্রু দিয়ে রক্তাক্ত বাগদাদ দেখেছি,যখন আনন্দ স্নান হয়েছে, হিংসুকদের দৃষ্টি পড়েছে আর কামানের গোলায় বাগদাদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

পনেরো দিন বাগদাদ অবরুদ্ধ ছিল। অধিকাংশ বনূ আব্বাস আর রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ মামুনের দলে এসে যোগ দেয়। তারা বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর জন্য আমীনের সাথে লড়াই করে। অবশেষে ১৯৮ হিজরীতে তাহের বিন হুসাইন তরবারীর জোরে বাগদাদে প্রবেশ করে আমীন,তার মা আর তার পরিবারকে শাহী প্রাসাদ থেক তাড়িয়ে দিয়ে আল-মানসুর শহরে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তিনি তার সেনাবাহিনী ও গোলাম-ভৃত্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সেখানে তার সবচেয়ে বড় দুর্দশা ছিল খাবার-দাবারের, তার কাছে কোন খাদ্যদ্রব্য ছিল না।

মুহাম্মাদ বিন রাশেদ বলেছেনঃ ইবরাহীম বিন মাহদী আমার কাছে বলেছেন,আল-মানসুর শহরে আমি আমীনের সাথে ছিলাম। এক রাতে তিনি আমাকে ডেকে বললেন,“দেখো কি চমৎকার রাত। চাঁদের জোছনা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। চাঁদের আলো পানিতে পড়ে কি বিমোহিতকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ সুন্দর পরিবেশে শরাব পানের অনুষ্ঠান দারুণ মানাবে।” আমি বললাম,“আপনার যেমন অভিরুচি।” শরাব পানের মজলিস বসলো। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য আমীন যউফ নামক এক বাঁদিকে তলব করলেন। বাঁদির গান শুনে আমীন বললেন,“আল্লাহ তোমার উপর অভিশাপ বর্ষণ করুন। তুমি চলে যাও।” বাঁদির যাওয়ার পথে কাঁচের একটি মূল্যবান গ্লাস তার পায়ের আঘাতে পড়ে ভেঙে গেলে আমীন বললেন,“ইবরাহীম, দেখো তো কি হল। আল্লাহর কসম, আমার মনে হচ্ছে আমার সময় সমাগত প্রায়।” আমি বললাম,“আল্লাহ তাআলা আপনার আয়ু বৃদ্ধি করুন। আপনার সাম্রাজ্য অটুট থাকবে।” আমি এ কথা বলেছি এমন সময় দজলা নদীর দিক থেকে এ আওয়াজ ভেসে এলো – “যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলে তা পূর্ণ হয়েছে।” আমীন এ কথা শুনে বিষণ্ন ও বিবৰ্ণ হয়ে পড়েন। এর এক/দুই দিন পর তিনি বন্দী হোন। তাকে এক স্থানে আটকে রাখা হয়। কিছু অনারব লোক সেখানে এসে তলোয়ার দিয়ে একটি আঘাত করে। তিনি পড়ে গেলে তারা মাথা কেটে তাহেরের কাছে নিয়ে গেলো,তাহের তার কাটা মাথা এক বাগানের দেয়ালে বুলিয়ে দিয়ে এ ঘোষণা করলো – এটা আমীনের বিচ্ছিন্ন মাথা। তার দেহটি পাহাড় চূড়ায় ফেলে রাখা হয়েছে।

এরপর তাহের এ মাথা,চাদর,ছড়ি আর খেজুরের পাতার জায়নামায মামুনের কাছে পাঠিয়ে দেয়। নিজের ভাই নিহত হওয়ায় মামুন দারুণ মর্মাহত হোন। তিনি ভেবেছিলেন আমীনকে জীবিত তার কাছে পাঠানো হবে আর তা মতামতের উপর ভিত্তি করে তার উপর শাস্তির দণ্ড প্রয়োগ করা হবে। এ অপরাধের প্রতিশোধ হিসেবে মামুন তাহেরকে নির্বাসিত করেন আর তাহের সেখানেই মারা যায়। এর মধ্য দিয়ে আমীনের একটি কথার প্রতিফলন ঘটে। একবার আমীন তাহেরকে লিখেছিলেন,“হে তাহের, যে লোকটি আজ পর্যন্ত আমার প্রাপ্য কুক্ষিগত করে রেখেছে আর আমার উপর অত্যাচার করছে তার শাস্তি সর্বদা তলোয়ার। ফলে তুমিও তার অপেক্ষায় থাকো।”

কথিত আছে,আমীন চারদিক থেকে খেলোয়াড়দের সংগ্রহ করেন। তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেন। তিনি বন্য প্রাণী ও বিভিন্ন ধরনের পাখি পুষতেন। নিজ পরিবার ও সভাসদদের থেকে পর্দা করতেন এবং তাদের আমর্যাদা করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করেন, মণিমুক্তা ও মূল্যবান সম্পদ অপচয় করেন, খেলাধুলার জন্য অনেক ভবন নির্মাণ করেন। এক গায়ককে সুন্দর একটি সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য এক নৌকা ভর্তি স্বর্ণ পুরস্কার দেন। পাঁচটি প্রাণী – বাঘ,হাতি,সাপ,ঘোড়া আর ঈগল পাখি শিকারের জন্য পাঁচটি জাহাজ তৈরি করেছিলেন।

আমীন নিহত হলে আমীনের পক্ষ অবলম্বনকারী কবি তাঈমী মামুনের কাছে এসে তার প্রশংসা করলো। কিন্তু তিনি তার প্রতি মোটেও ভ্রূক্ষেপ করলেন না। ফজল বিন সাহল তার ব্যাপারে সুপরিশে কিছুটা নমনীয় হলে মামুন তাঈমীর দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন,“তাঈমী, তোমার কবিতা এখন কেমন হবে, যখন একজন বাদশাহ তার ভাইয়ের সাথে হিংসা করছে।” তাঈমী তখন এ কবিতা আবৃত্তি করলো – “মামুন আব্দুল্লাহর প্রতি অত্যাচার আর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তিনি বিজয় অর্জন করেছেন। সেই প্রতিশ্রুতি – যা তার পিতা তাদের করিয়েছিলেন। এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার ভাই কাজ করেনি।” এটা শুনে মামুন তার অপরাধ ক্ষমা করে পঞ্চাশ হাজার দিরহাম পুরস্কার দিলেন।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন,“আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তার কাছে আমার একান্ত আশা, তিনি আমীনকে শুধু এ কারণে ক্ষমা করে দিবেন যে,ইসমাঈল বিন উলীয়া তার কাছে এলে তিনি খুবই কঠোর ভাষায় তাকে বললেন – ‘হারামজাদা, তুই কুরআন শরীফকে মাখলুক বানিয়েছিস!’ ”

মাসউদী বলেছেন,“আমার সময় পর্যন্ত আলী বিন আবু তালিব,ইমাম হাসান আর আমীন ছাড়া কোন হাশেমী খলীফা হাশেমী নারীর পেট থেকে জন্মগ্রহণ করে খিলাফতের তখতে বসেননি। আমীনের মা হলেন যাবীদা বিনতে জাফর বিন আবু জাফর মানসুর, তার আসল নাম উম্মুল আযীয,লকব হচ্ছে যাবীদা।”

ইসহাক মওসূলী বলেছেন,“আমীনের কিছু বৈশিষ্ট্য এমন ছিল, যা অন্যান্য খলীফার মধ্যে ছিল না। তিনি খুবই সুন্দর,দানশীল,মা বাবা উভয় দিক দিয়ে সম্মানিত,সুযোগ্য সাহিত্যিক আর উচ্চাঙ্গের কবি। কিন্তু আফসোস, খেলাধুলা তাকে গ্রাস করে। তিনি তদানীন্তন যুগের দানশীল ছিলেন, কিন্তু খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে দারুণ কৃপণ ছিলেন।”

আবুল হাসান আহমর বলেছেন,“আমি যদি কখনো কোন কবিতা দলিল দেওয়ার সময় ব্যাকরণ ভুলে যেতাম, তখন আমীন আমাকে সেই কবিতাটি পড়ে শোনাতেন। আমি বাদশাহর ছেলেদের মধ্যে আমীন আর মামুনের চেয়ে বেশী মেধাবী আর কাউকে দেখিনি।”

১৯৮ হিজরীর মুহাররম মাসে ২৭ বছর বয়সে আমীন নিহত হোন।

তার খিলাফতকালে যেসব ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – ইসমাঈল বিন উলীয়া, গিন্দর, শফীক,আবু মুআবিয়া জরীর,ঐতিহাসিক সুদুসী,আব্দুল্লাহ বিন কাসির,কবি আবু নাওয়াস,ইমাম মালিক (রহঃ) এর ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন ওহাব,দরশে মাকরী,কাঈ প্রমুখ।

আলী বিন মুহাম্মাদ,নওফেল প্রমুখ বলেছেন,“সাফফাহ, মানসুর,মাহদী,হাদী,রশীদ মিম্বরে দাঁড়িয়ে কেউ নিজেদের গুণাবলী প্রকাশ করতেন না। কিন্তু আমীন খলীফা হওয়ার পর মিম্বরে দাঁড়িয়ে নিজের গুণাবলী জাহির করতেন। তিনি চিঠির শুরুটা এভাবে লিখতেন – আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ আমীন আমিরুল মুমিনীনের পক্ষে থেকে।”

আসকারী বর্ণনা করেছেনঃ তার কবিতাগুলো ছিল পবিত্র। তিনি যখন শুনলেন মামুন তাকে দোষিয়েছে আর আমীনের চেয়ে নিজেকে শ্ৰেষ্ঠ বলেছে, তখন তিনি একটি কবিতা রচনা করেন। যাতে নিজের শ্ৰেষ্ঠত্ব আর মামুন যে মায়ের পেট থেকে প্রসবিত হয়েছেন সে মায়ের কারণে অমর্যাদার বিষয়টি বিধৃত রয়েছে। গ্রন্থকারের দৃষ্টিতে এ কবিতার গুণগত মান উচ্চাঙ্গের,তার ভাই আর তার পিতার কবিতার চেয়ে হাজার গুণে শ্ৰেষ্ঠ ও পবিত্রতম।

তাহের বিজয় অর্জন করলে আমীন খিলাফতের আশা-ভরসা ছেড়ে দিয়ে এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন – “হে প্ৰাণ, সত্যকে মেনে নাও। আল্লাহর হুকুম থেকে সরে আসার কোন পথ নেই। যারা সরে আসবে, তারা ভুলের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে।”

সূলী বলেছেনঃ আমীন নিজের কাতেব দিয়ে লিখিয়ে তাহেরের কাছে এ চিঠিটি পাঠান – “আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ আমীন আমিরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে তাহের বিন হুসাইনের প্রতি আসসালামু আলাইকুম। এরপর, আমি ও আমার ভাইয়ের মধ্যবর্তীতে এসে যে দাঁড়িয়েছে লোকেরা তাকে স্পষ্টভাবে চেনে। ভাগ্যে যা লিখা রয়েছে তাই হবে। তবে আমি চাই তুমি আমার উপর থেকে পরওয়ানা উঠিয়ে নাও, যাতে আমি আমার ভাইয়ের কাছে যেতে পারি। যদি সে আমার সম্মান করে তবে সে তার যোগ্য। আর যদি হত্যা করে তবে এটাই তার পুঁজি। বীরত্ব বীরত্বকে কর্তন করে। আর তলোয়ার তলোয়ারকে,যদি আমাকে কোন বন্য প্রাণী টুকরো টুকরো করে তাহলে তা হবে কোন ক্ষুধার্থ কুকুর টুকরো টুকরো করার চেয়ে উত্তম।” কিন্তু তাহের তা প্ৰত্যাখ্যান করলো।

ইসমাঈল বিন আবু মুহাম্মাদ ইয়াযিদী বলেছেনঃ আমার বাবা অনেক বার আমীন আর মামুনের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন,আমি তাদের দুইজনকে খুবই মিষ্টভাষী ও বাকপটু হিসেবে পেয়েছি। বনূ উমাইয়ার খলীফাদের ছেলেরা বাগ্মীতা অর্জনের জন্য বাদয়ূর কাছে যেতো। এরপরও বনূ আব্বাস ভাষাসাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বেশী অগ্রগামী।

সূলী বলেছেনঃ আমি আমীনকে একটি ছাড়া আর কোন হাদীস বর্ণনা করতে দেখিনি।

মুগীরা বিন মুহাম্মাদ বলেছেনঃ একবার হুসাইন বিন যহাকের কাছে বনু হাশিমের একটি দল বসেছিলো। এ দলে মুতাওয়াককীলের ছেলেরাও ছিলেন। এক ব্যক্তি হুসাইন বিন যহাককে জিজ্ঞেস করলো,“আমীন কেমন সাহিত্যিক ?” হুসাইন বললেন,“খুব উঁচু মাপের।” আবার প্রশ্ন করা হলো,“ফিকাহ (আইন) শাস্ত্ৰে তার অবস্থান ?” তিনি বললেন, “মামুন তার চেয়ে বড় ফিকাহবিদ।” বলা হলো,“আর হাদীসে ?” তিনি বললেন,“আমি তার মুখ থেকে মাত্র একটি হাদীস শুনেছি। তার এক গোলাম হাজ্জে গিয়ে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমীন বললেন,আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন – ‘যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মারা যাবে, কিয়ামতের দিন তাকে লাব্বাইক বলতে বলতে উপস্থিত করানো হবে।’ ”

সাআলাবী লিতইফীল মাআরিফ গ্রন্থে লিখেছেন যে,আবুল আইনা বলেছেন,যাবীদা তার খোঁপার চুল ছেড়ে দিলে চুলের ভাঁজে ভাঁজে খলীফা আর উত্তরাধিকার দেখা যেতো। কারণ মানসুর তার দাদা,সাফফাহ দাদার ভাই,মাহদী চাচা, রশীদ স্বামী,আমীন সন্তান,মামুন এবং মুতাসিম সতিনের ছেলে,মুতাওয়াককিলও সতিনের ছেলে। আর উত্তরাধিকারের দৃষ্টান্ত যদি দেয়া হয়, তাহলে বনু উমাইয়ার আতীকা বিনতে ইয়াযিদ বিন মুআবিয়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ ইয়াযিদ তার পিতা,মুআবিয়া (রাঃ) দাদা,মুআবিয়া বিন ইয়াযিদ তার ভাই, মারওয়ান বিন হাকাম তার শ্বশুর, আব্দুল মালিক তার স্বামী,ওলীদ তার ছেলে হিশাম তার পৌত্র,সুলায়মান তার সতিনের ছেলে আর ইয়াযিদ ও ইবরাহীম তার সতিনের পৌত্র।