আল মুনতাসির বিল্লাহ মুহাম্মাদ আবু জাফর (অথবা আবু আব্দুল্লাহ) বিন মুতাওয়াক্কিল বিন মুতাসিম বিন হারুন রশীদ জায়শা নামের রোমান বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি সুদৰ্শন,প্রতাপান্বিত,জ্ঞানী,সৎ কাজের অনুরাগী,জুলুম নিঃশেষকারী আর আলী পরিবারের প্রতি দয়ার্দ্র ছিলেন। ইমাম হুসাইনের কবর শরীফ যিয়ারতের অনুমতি দেন আর তার বংশধরদের কাছে ফিদকের বাগান হস্তান্তর করেন।
মুনতাসির তার পিতা নিহত হওয়ার পর ২৪৭ হিজরীর শাওয়াল মাসে খিলাফতের তখতে আরোহণ করে সর্বপ্রথম নিজের দুই ভাই মুতায আর মুঈদকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন – যাদেরকে মুতাওয়াক্কিল উত্তরাধিকার মনোনীত করেছিলেন।
প্রজাবৃন্দের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফ ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে জনগণ তার প্ৰতাপের প্রতি ঝুকে পড়ে। তিনি উঁচু মাপের ধৈর্যশীল।
তার চয়নকৃত বাণীর মধ্যে এটি একটি – ক্ষমার স্বাদ শাস্তি প্রদানের স্বাদের চেয়ে বেশী মিষ্টি,ভদ্র লোকদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ এক লজ্জাকর কাজ।
খিলাফতের মসনদে সমাসীন হয়ে তুর্কীদের সমালোচনা করেন,তাদের প্রতি খলীফা মুতাওয়াক্কিলকে হত্যার দোষ চাপিয়ে দেন আর এ কারণে তাদের শাস্তি দেন। ফলে তুর্কীরা হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ তিনি ধৈর্যশীল, সাহসী ও জ্ঞানী।
অবশেষে তারা মুনতাসিরের চিকিৎসকের কাছে ত্রিশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঘুষ পাঠায়। চিকিৎসক খলীফার ঔষধে বিষ মাখিয়ে দেয়, এতে তার মৃত্যু হয়। কেউ কেউ বলেন,ভুলক্রমে বিষ মিশ্ৰিত ঔষধ সেবনের ফলে চিকিৎসক নিজেই পরলোকগমন করে। কেউ কেউ বলেন,অন্তিম মুহুর্তে খলীফা মুনতাসির বলেন,“হে আমার মা, দ্বীন-দুনিয়া উভয় জগৎ আমার শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার বাবার ইন্তেকালের কারণ আমি নিজেই।” মুনতাসির ২৪৮ হিজরীর রবিউল আখির মাসের ৫ তারিখে ২৪ বছর বয়সে প্রায় ছয় মাস খিলাফত পরিচালনা করে ইন্তেকাল করেন।
কথিত আছে,একদিন মুনতাসির খেলাধুলার জন্য বসে আছেন। তার বাবার খাযানা থেকে একটি কাপেট সেই মজলিসে পাঠানো হয়। কার্পেটের মাঝে এক আরোহীর চিত্র অঙ্কিত ছিল। আরোহীটি মুকুট পরিহিত ছিলো, এর আশেপাশে ফার্সী ভাষায় কিছু লিখা ছিল। মুনতাসির ফার্সী ভাষায় পারদর্শী একজনকে ডেকে এর ভাবাৰ্থ জানানোর জন্য বললেন। সে একবার পড়ে চুপ হয়ে গেলো। তিনি আবার বললেন,“এর ভাবাৰ্থ কি ?” সে বললো,“এর কোন অর্থ নেই।” তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন। সে বললো,“লিখা আছে – আমি শিরওয়া বিন কিসারা বিন হরমুয। আমি নিজ পিতাকে হত্যা করেছি। কিন্তু ছয় মাসের বেশী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাইনি।” এ কথা শুনে স্বর্ণ খচিত থাকার পরও তিনি কার্পেটটি জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
লাতায়িফুল মাআরিফ গ্রন্থে সালাবী লিখেছেনঃ মুনতাসির খিলাফতপ্রাপ্ত হয়ে প্রকৃত খলীফায় পরিণত হোন। কারণ তার বাবা-দাদাসহ পাচজন সকলেই খলীফা ছিলেন। মুনতাসিরের ভাই মুতায আর মুতামাদও প্রকৃত খলীফা ছিলেন। আমি (গ্রন্থকার) বলছি, মুসতাসিমও এমন খলীফা ছিলেন, যাকে তাতাররা শহীদ করে দেয়। তার বাবা-দাদাসহ পূর্বপুরুষও খলীফা ছিলেন।
সালাবী বলেন,“কিসারা বংশে যে বাদশাহ খালেস, তিনি হলেন শিরওয়া। তিনি নিজ পিতাকে হত্যা করেন আর ছয় মাসের বেশী জীবিত ছিলেন না। বনু আব্বাসের মধ্যে খালেস খলীফা মুনতাসির,তিনিও নিজ পিতাকে হত্যা করেন আর ছয় মাসের বেশী জীবিত ছিলেন না।”