আত তয়েলিল্লাহ আবু বকর আবদুল করীম বিন মতি ‘হাযার’ নামক বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ৪৩ বছর বয়সে খিলাফতের তখতে আরোহণ করেন। খিলাফত লাভের পর দিন খিলাফতের চাদর উড়ে ফৌজ পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি অশ্বারোহণে বের হোন। সেদিনই সবক্তগীনকে শাহী পোশাক আর ঝারল প্রদান করা হয় আর নাসরুদ্দৌলা উপাধি দেওয়া হয়।
কিছুদিন পর আযযুদ্দৌলা আর সবক্তগীন মাঝে বিবাদের সৃষ্টি হয়। সবক্তগীন তুর্কীদের সাথে নিয়ে তার সাথে মরণপণ লড়াই এ অবতীর্ণ হয়।
৩৬৩ হিজরিতে হারামাইন শরিফাইনে আল-মুযযাল উবায়দীর নামে খুৎবা পাঠ করা হয়।
৩৬৪ হিজরিতে সবক্তগীনকে প্রতিহত করার জন্য আযদুদ্দৌলা আযযুদ্দৌলার সাহায্যার্থে বাগদাদে আসে। আযদুদ্দৌলার কাছে বাগদাদ নগরী পছন্দ হওয়ায় তিনি বাগদাদে নিজের বলয় প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন, তিনি ফৌজদের উপঢৌকন দিয়ে হাত করেন। তারা আযযুদ্দৌলার উপর চড়াও হয়। আযযুদ্দৌলা দরজা লাগিয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আযদুদ্দৌলা তায়ে-এর রাজ্যগুলোতে এ বার্তা পাঠিয়ে দিলো যে, আযদুদ্দৌলা সাম্রাজ্যের নতুন নায়েব নিযুক্ত হয়েছেন। এজন্য তায়ে আর আযদুদ্দৌলা উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এতে আযদুদ্দৌলার জয় হওয়ায় খুৎবা থেকে তায়ে এর নাম উঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০ শে জামাদিউল আখির থেকে ৩৬৪ হিজরির ১০ ই রজব পর্যন্ত কোথাও কোন খুৎবায় তার নাম পড়া হয় নি। এ বছর রাফেযিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। মিসর, শাম, ইরাক আর পশ্চিমাঞ্চলে তারা এতোই শক্তিশালী হয় যে, তারা তারাবীহ’র নামায বন্ধ করে দেয়।
৩৬৫ হিজরিতে রুকনদ্দৌলা বিন বূয়া তার পদানত রাজ্যগুলো তিন সন্তানের মধ্যে বণ্টন করে দেন। পারস্য ও কারমান আযদুদ্দৌলাকে, রায় আর ইস্পাহান মুঈদদ্দৌলাকে আর হামদান ও দিনুর ফখরুদ্দৌলাকে দেওয়া হয়। এ বছর রজব মাসে আযযুদ্দৌলার বাসভবনে ইজলাস বসে। সেখানে কাযীউল কুযযাত বিন মারুফ উপস্থিত ছিলেন। তিনি নির্দেশ করেন যে, আযযুদ্দৌলাকে অনুরোধ করা হচ্ছে তিনি এ মজলিসে এসে নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করুন কিভাবে বিচারকার্য সম্পাদন হচ্ছে।
এ বছর আযদুদ্দৌলা আর আযযুদ্দৌলার মধ্যে লড়াই হয়। এতে আযযুদ্দৌলার এক তুর্কি গোলাম বন্দী হয়। এজন্য তিনি দারুন মর্মবেদনায় ভোগেন। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন, শোকের কবিতা আবৃত্তি করেন, বাইরে বের হওয়া ছেড়ে দেন। কান্না ছাড়া আর কোন কাজ তার ছিল না। এমনকি ইজলাসও বর্জন করেন। গোলামকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আযদুদ্দৌলার কাছে বার্তা পাঠালেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। অবশেষে আযযুদ্দৌলা বন্দী গোলামের পরিবর্তে দুজন বাঁদি পাঠান। এদের মধ্যে একজনকে এক লাখ দিনারে কেনা হয়েছিলো। যাওয়ার সময় তিনি দুতকে বলে দেন যে, “আযদুদ্দৌলা বন্দী গোলামের পরিবর্তে যা চাইবে, সাথে সাথে রাজি হয়ে যাবে। এতে আমার অনুমতি রইলো, যদি আমাকে দুনিয়াও ছেড়ে দিতে হয়।” পরিশেষে আযদুদ্দৌলা গোলামকে ফিরিয়ে দেন।
এ বছর কুফায় আযযুদ্দৌলার নামের পরিবর্তে আযদুদ্দৌলার নামে খুৎবা পাঠ করা হয়। এ বছর মিসরের শাসনকর্তা আলমুযালিদ্বীনিল্লাহ উবায়দী ইন্তেকাল করেন। তার স্থানে তার পুত্র আযীয নিযুক্ত হোন।
৩৬৬ হিজরিতে উমাইয়া বংশীয় স্পেনের বাদশাহ আল মুসতানসির বিল্লাহ আল হাকিম বিন নাসিরুদ্দীনিল্লাহ ইন্তেকাল করেন। তার শূন্য আসনে তদীয় পুত্র লুমুঈদ বিল্লাহ হিশাম সমাসীন হোন।
৩৬৭ হিজরিতে আবার আযযুদ্দৌলা আর আযদুদ্দৌলার মধ্যে যুদ্ধ হয়। আযদুদ্দৌলা জয় লাভ করেন। আযদুদ্দৌলা বন্দী হলে তাকে হত্যা করা হয়। খলীফা আযদুদ্দৌলাকে শাহী পোশাক, জওহরের তাজ আর স্বর্ণের মালা নিজ হাতে তার গলায় পড়িয়ে দেন। সাথে প্রদান করা হয় তলোয়ার আর স্বর্ণ ও রৌপ্যের দুটো পতাকা। যা ওলী এ আহাদদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। আজ পর্যন্ত আযদুদ্দৌলা ছাড়া এভাবে আর কাউকে খলীফা কতৃক রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করা হয়নি। এছাড়াও তার জন্য উত্তরাধিকারের একটি প্রতিশ্রুতিপত্র প্রণয়ন করা হয়। যা হাযেরীনে মজলিসের সামনে পড়ে শোনানো হয়। এটা শুনে উপস্থিত জনতা কিঙ্করতব্বমিমুর হয়ে পড়ে। কারন আজ পর্যন্ত ওলী-এ-আহাদ বা উত্তরাধিকার সম্পর্কে এ রেওয়াজ চলে আসছিলো যে, খলীফার পুত্র বা তার নিকটাত্মীয়রাই ওলী-এ-আহাদ হবে। এ প্রতিশ্রুতিপত্র আযদুদ্দৌলার হাতে প্রদানের সময় খলীফা বললেন, “এটা আমার প্রতিশ্রুতি, এ অনুযায়ী কাজ করবে।”
৩৬৮ হিজরিতে খলীফার পক্ষ থেকে এ ফরমান জারি করা হয় যে, সকাল, সন্ধ্যা ও ঈশার সময় আযদুদ্দৌলার বাসভবনে ডংকা বাজানো হবে আর মিম্বরে দাঁড়িয়ে খতীবগণ খুৎবার মাধ্যমে তার নাম পাঠ করবে।
ইবনে জাওযী বলেনঃ এটা এমন এক বিষয়, যা ইতিপূর্বে কখনোই দেয়া হয়নি। ওলী-এ-আহাদরাও ডংকা বাজানোর অনুমতি পেলেন না। একবার মাযাদ্দৌলা মদিনাতু সালামে ডংকা বাজানোর অনুমতি প্রার্থনা করলে খলীফা মতি তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাখ্যান করেন। অথচ আযদুদ্দৌলাকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়। আর এভাবেই খিলাফতের বন্ধন আস্তে আস্তে কমজোর আর দুর্বল হতে থাকে।
৩৬৯ হিজরিতে মিসরের ওলী আযীযের দূত বাগদাদে আসে আর তয়ে’র কাছে আযদুদ্দৌলা আবেদন করে যে, তার লকবের সাথে তাজুল মিল্লাত লকবতি বৃদ্ধি করে তার খিলআত নবায়ন করা হোক। তার আবেদন গৃহীত হয়। তয়ে তখতে উপবেশন করেন। তার আশেপাশে একশো লোক তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সামনে রাখা হয় উসমান গনী (রাঃ) এর নিজ হাতে লিখিত পবিত্র কুরআন শরীফ। কাঁধে চাদর শরীফ, হাতে লাঠি আর গলায় ঝোলানো হয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবহৃত তলোয়ার। আযদুদ্দৌলা কতৃক প্রেরিত পর্দাটি টানানো হয়, যাতে লোকেরা আযদুদ্দৌলার পূর্বে তয়েকে দেখতে না পায়। তুর্কি আর দায়লামী বংশীয় লোকেরা বিনা অস্ত্রে দণ্ডায়মান থাকে। দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাগণ ও সভাসদবৃন্দ। এরপর আযদুদ্দৌলাকে আহবান করা হয়। তার আগমন মুহূর্তে পর্দা সরে যায়।
তিনি খলিফার খিদমতে যমীন চুম্বন করেন আর সামরিক অফিসার বৃন্দ ও অগণন ফৌজ দেখে ঘাবড়ে যান। তয়ে বললেন, “সংশয় সংকোচ করো না। আল্লাহ’র শান কি তোমার দৃষ্টিগোচর হয় না ?” আযদুদ্দৌলা বললেন, “নিশ্চয়ই আপনি ইহধামে আল্লাহ’র খলীফা।” এরপর তিনি ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকেন আর সাত বার জমিন চুম্বন করেন। তয়ে বললেন, “সামনে এসো।” তিনি এগিয়ে যান আর পদচুম্বন করেন। তয়ে তাকে আসনে বসার নির্দেশ দেন। কিন্তু খলীফার সামনে চেয়ারে বসা তার সাহসে কুলায় না। তিনি বারবার বলার পরও তিনি বসলেন না। অবশেষে তিনি কসম করলে তিনি আসনে চুম্বনপূর্বক উপবেশন করলেন। এরপর তিনি তাকে বললেন, “আল্লাহ কাজ করার জন্য যতো লোক আমাকে দিয়েছেন, আর আমার অধীনে যতগুলো রাজ্য রয়েছে, এগুলো দেখভালের জন্য আমি তোমাকে মনোনীত করছি। তুমি তা গ্রহণ করো।” আযদুদ্দৌলা বললেন, “আমার মওলা আমিরুল মুমিনীনের আনুগত্য করার জন্য আল্লাহ আমাকে তাওফিক দান করুন আর এতে তিনি আমাকে সহায়তা দান করুন, আমি তা গ্রহণ করছি।” এরপর খলীফা তাকে শাহী পোশাক পড়িয়ে দিলেন।
(গ্রন্থকার) বলেনঃ একটু লক্ষ্য করে দেখুন, খলীফা তয়ে কিভাবে খিলাফতের কাজকে দুর্বল করে ফেলেছেন। এ খলীফার যুগে খিলাফতের কাজ যতটুকু ক্ষীণ আর শক্তিহীন হয়ে পড়ে, তা আর কোন খলীফার যুগে হয়নি। আর সে সময় সাম্রাজ্যের নায়েব আযদুদ্দৌলার যতটুকু শক্তি ছিল, কোন সময় কোন নায়েবের এতটুকু শক্তি কখনোই ছিল না। আমার যুগে অবস্থা এমন চরমে গিয়ে পৌঁছে যে, খলীফা স্বয়ং নায়েবকে মাসের শুরুতে নতুন মাসের শুভেচ্ছা জানাতে আসতেন। অধিকাংশ সময় নায়েব পরামর্শ সভায় বা ইজলাসে মধ্যমণি হয়ে বসতো। এরপর সভাকক্ষে খলীফা আসলে নায়েব তার আসন থেকে নেমে আসতো আর আবার দুজনে একই স্থানে গিয়ে উপবেশন করতো। খলীফা সাধারণ প্রজার মতো সভাকক্ষ ত্যাগ করতেন আর তার নায়েব পূর্বের মতোই বসে থাকতো। কারো জন্য কোন যবনিকার ব্যবস্থা ছিল না। একদিন এক ব্যক্তি আমার কাছে বর্ণনা করলেন, সাম্রাজ্যের ডেপুটি সুলতান কোন যুদ্ধে গেলে খলীফা প্রহরী পরিবেষ্টিত হয়ে তাকে সঙ্গ দিতেন। সকল বীরত্ব, সাহসিকতা এবং সম্মান ও মর্যাদার সবতুকুই ছিল নায়েবের প্রাপ্য। খলীফা ছিলেন সরদারের মতো, যিনি নায়েবের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন।
৩৭০ হিজরিতে আযদুদ্দৌলা হামদান থেকে বাগদাদ এলে তয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাগদাদ থেকে বাইরে আসেন, যা আজ পর্যন্ত আর কখনোই হয়নি। কোন খলীফা কাউকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বের হোননি। তয়ে’র যুগে আযদুদ্দৌলা তয়ের কাছে দূত পাঠাতেন, আর খলীফা দূতের আগমনে দাঁড়িয়ে যেতেন।
৩৭৬ হিজরিতে আযদুদ্দৌলার ইন্তেকাল হলে তার জায়গায় তার পুত্র সিমসামুদ্দৌলাকে শামসুল মিল্লাত লকব দিয়ে নিয়োগ করা হয় আর খলীফা তাকে সাতটি খিলআত, একটি মুকুট আর দুটো পতাকা প্রদান করেন।
৩৭৩ হিজরিতে আযদুদ্দৌলার ভাই মুঈদুদ্দৌলার মৃত্যু হয়।
৩৭৫ হিজরিতে সিমসামুদ্দৌলা বাগদাদের আশেপাশে উৎপন্ন কাপড় শিল্পের উপর করারোপের ইচ্ছা করেন। এ করের পরিমাণ ছিল বার্ষিক দশ লাখ দিরহাম। বিষয়টি জানোতে পেয়ে জনতার দল মানসুর জামে মসজিদে সমবেত হয়ে এখানে জুমআর নামায পড়তে না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সিমসাবুদ্দৌলা তার ইচ্ছা প্রত্যাহার করলে পরিস্থিত শান্ত হয়।
৩৭৭ হিজরিতে সিমসামুদ্দৌলার উপর তার ভাই শরফুদ্দৌলা আক্রমণ করে। সিমসামুদ্দৌলা পরাজিত হয়। শরফুদ্দৌলা ভাইয়ের চোখ উপড়ে ফেলে। সকল ফৌজ শরফুদ্দৌলার পতাকা তলে সমবেত হয়। এরপর শরফুদ্দৌলা বাগদাদে প্রবেশের সময় তয়ে তাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। তিনি তাকে ডেপুটি সুলতান নিয়োগ করেন আর একটু মুকুট পড়িয়ে দেন। এরপর একটি আহাদনামা লিখে শরফুদ্দৌলার সামনে পাঠ করা হয়। সে সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
৩৭৮ হিজরিতে শরফুদ্দৌলা মামুনের মতো সৈন্যদের ব্যবহৃত শস্যাগার নির্মাণ করেন। এ বছর বাগদাদে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে অনেক লোকের মৃত্যু হয়। বসরায় প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। অবিরাম লু হাওয়া বইতে থাকে। অন্ধকার নেমে আসে। দজলা নদীর তোড়ে যমীন প্লাবিত হয়। অনেক জাহাজ ডুবে যায়।
৩৭৯ হিজরিতে আযদুদ্দৌলা ইন্তেকাল করে আর তার ভাই আবু নসরকে নিজের স্থানে বসিয়ে দিয়ে যায়। তয়ে সমবেদনা জানানোর জন্য তার বাসভবনে যান, আবু নসর কয়েকবার তার খিদমতে জমিন চুম্বন করেন। এরপর সে তয়ে’র কাছে গেলে তিনি রাষ্ট্রের কর্মকর্তা বৃন্দের সামনে এমন সাতটি খিলআত প্রদান করেন, যার মধ্যে উন্নতমানের কালো উবা (আরব দেশের বিশেষ এক ধরণের পোশাক – অনুবাদক) আর কালো পাগড়ী, গলায় মালা ও হাতে কংকন পড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রহরীগণ তলোয়ার নিয়ে সামনে দিয়ে মার্চ করে। আবু নসর যমীন চুম্বন করে, আসনে উপবেশন করে। আহাদনামা পাঠ করা হয়। তয়ে তাকে ‘বাহাউদ্দৌলা যিয়াউল মিল্লাত’ উপাধি দেন।
৩৮১ হিজরিতে বাহাউদ্দৌলা তয়েকে বন্দী করে। এ ঘটনাটি এমন – তয়ে বাহাউদ্দৌলার এক প্রিয়জনকে বন্দী করেন। খলীফা ছায়াময় শীতল স্থানে উপবেশনরত। বাহাউদ্দৌলা যমীন চুম্বন করে চেয়ারে বসে। ঠিক এ মুহূর্তে বাহাউদ্দৌলার লোকেরা এসে পড়ে। তারা তয়েকে টেনে তখত থেকে নিচে নামিয়ে দেয় আর কাপড় দিয়ে বেঁধে প্রাসাদে পাঠিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। বাহাউদ্দৌলা তয়েকে লিখে জানালো যে, আপনি নিজের পদ থেকে সরে গিয়ে সে স্থানে আপনার ছেলে কাদেরবিল্লাহকে তখত প্রদান করুন। এ পত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দের স্বাক্ষর ছিল। এটা ২৮১ হিজরির ১৯ শাবানের ঘটনা। সে সময় কাদেরবিল্লাহ বাতীহা শহরে ছিলেন। তাকে ডেকে এনে তার হাতে বাইয়াত করা হয়। তয়ে তাদের বিল্লাহ’র কাছে অতি সমাদরের সাথেই থাকতেন।
তয়ে ৩৯৩ হিজরির ঈদুল ফিতরের শেষ রাতে নশ্বর জাহান ছেড়ে পরপারে পারি জমান। কাদের বিল্লাহ তার জানাযার নামাযের ইমামতি করেন। শরীফ রেযা তার শোকগাঁথা লিখতে গিয়ে বলেন, “তয়ে আবু তালিবের বংশধরের মধ্যে অধিক বক্র ছিলেন। তার শাসনামলে লোকদের মন থেকে ভয়ভীতি উঠে যায়। এমনকি কবিগণও তার সমালোচনামূলক শ্লোক রচনা করতো।”
তার যুগে যেসব ওলামা ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – হাফেয ইবনে সানা, ইবনে আদী, কাবির, নাহুবিদ সিরানী, আবু সোহেল, আবু বকর রারী হানাফী, ইবনে খালুয়া, ইমামুল লুগাত যহরী, দেওয়ানুল আদবের লেখক আবু ইবরাহীম ফারাবী, কবি রিফা, আবু যায়েদ আল উমুরী শাফী, দারকী, আবু বকর আবহারী শায়খুল মালিকী, ইমামুল হানাফিয়া আবুল লাইস সমরকন্দী, নাহুবিদ আবু আলী আল কারসী, ইবনে হাল্লাব মালিকী।