আল মুকতাদী বি আমরিল্লাহ আবুল কাসিম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন কায়িম বি আমরিল্লাহ গর্ভে থাকাকালীন তার পিতার মৃত্যু হয়। বাবার ইন্তেকালের ছয় মাস পরে তিনি এক দাসীর গর্ভে ভূমিষ্ঠ হোন।
দাদার মৃত্যুর পর তিনি ১৯ বছর তিন মাস বয়সে খিলাফতে আসীন হোন, তাকে মুকুট পড়ানোর অনুষ্ঠানে শায়খ আবু ইসহাক শিরাজী, ইবনে সবাআ আর ওমানী উপস্থিত ছিলেন।
তার খিলাফতকালে শহরগুলতে অনেক নেক কাজ হয়। খিলাফতের সীমানা বৃদ্ধি পায়। তার খিলাফত ছিল পূর্ববর্তী খিলাফতের বিপরীত। বাগদাদে গান-বাজনা নিষিদ্ধ হয়, গায়ক-গায়িকাদের বাগদাদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। পর্দা বিনষ্ট না হওয়ার জন্য হাম্মামের সিঁড়িগুলো ভেঙে ফেলেন। বনু আব্বাসের মধ্যে তার খিলাফত ছিল খুবই দ্বীনদার, খুব নেককার আর প্রতাপান্বিত। তার খিলাফতের প্রথম বছর থেকেই পবিত্র মক্কা শরীফে উবায়দীদের নামে খুৎবা পাঠ করা হতে থাকে।
এ বছর নিযামুল মুলুক তারকা বিশেষজ্ঞদের সমবেত করে সূর্যাস্তের পর থেকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। আগে সূর্যোদয় থেকে দিনের শুরু হতো।
৪৬৮ হিজরিতে দামেশকে মুকতাদীর নামে খুৎবা দেওয়া শুরু হয়। আযান থেকে এ শব্দগুলো বাদ পড়ে – حي علي خير العمل এতে লোকেরা খুশী হয়।
৪৬৯ হিজরিতে আবু নসর বিন উস্তাদ আবুল কাশিম কাশিরী আশআরী বাগদাদের মাদসারা নিযামিয়ায় এসে ওয়াজ করেন। এতে হানাবেলারা রেগে যাওয়ায় এক বড় ফিতনার সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের দল ভারী হতে থাকে। ফলে এক দল আরেক দলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। এ বছর গোঁড়া হাম্বলি হওয়ার কারণে মুকতাদীর উযির ফখরুদ্দৌলা বিন জহিরকে বরখাস্ত করা হয়।
৪৭৫ হিজরিতে মুক তাদি সুলতানের কাছে আবু ইসহাক সিরাজিকে পাঠিয়ে উমায়েদ আবুল ফাতাহ এর অভিযোগ দায়ের করেন।
৪৭৬ হিজরিতে দুর্ভিক্ষ উঠে যাওয়ায় শহরগুলোতে ফসলাদি উৎপাদিত হয়। এ বছর মুকতাদী আবু শুজা মুহাম্মাদ বিন হাসানকে কলমদানী, দোয়াত আর যহিরুদ্দীন লকব প্রদান করেন। আমার মতে এ শব্দে এটাই প্রথম লকব।
৪৭৭ হিজরিতে কগুনীয়া আর আকসার শাসনকর্তা সৈন্যসহ সিরিয়ায় যান আর ইন্তাকিয়া শহর দখল করেন, যা ৩৫৮ হিজরি থেকে রোম সম্রাটের শাসনাধীন ছিল। সুলতান মূলক শাহ এ কাজের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান।
যাহাবি বলেছেন, রোমান সাম্রাজ্যের শহরগুলোর শাসনকর্তা সালজুক বংশীয়।
৪৭৮ হিজরিতে বাগদাদে অন্ধকার নেমে আসে, বিদ্যুৎ চমকায়। আকাশ থেকে বালু বর্ষিত হয়। কিছু কিছু স্থানে চড়ক পড়ে। এ দুর্যোগ দেখে লোকেরা ভেবেছিলো কিয়ামত বুঝি সমাগত। ইমাম আবু বকর তরতুসী নিজ চোখে এ দৃশ্য দেখে আমালি নামক গ্রন্থে এর বিবরণ পেশ করেন।
৪৭৯ হিজরিতে সুবতা ও মুরাকিশের শাসনকর্তা ইউসুফ বিন তাশফিনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুকতাদী তাকে তার অধীনস্থ রাজ্যগুলো প্রদান করে আমিরুল মুসলিমীন উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি তার কাছে খিলআত আর পতাকা পাঠান। এতে পশ্চিমাঞ্চলীয় ফকিহগণ আনন্দিত হোন। ইউসুফ মুরাকিশ শহরের প্রবর্তন করেন। এ বছর সর্বপ্রথম সুলতান মূলক শাহ বাগদাদে এসে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় অবস্থান করে আর খলীফার সাথে পোলো খেলে ইস্পাহানে ফিরে যায়। এ বছর থেকে হারামাইন শরীফাইন উবায়দীদের নাম রহিত করে খুৎবায় খলীফার নাম পাঠ করা হয়।
গাযানার শাসনকর্তা আল মুঈদ ইব্রাহীম বিন মাসউদ বিন মাহমুদ সবক্তগীন ৪৮১ হিজরিতে ইন্তেকাল করলে তার স্থানে তার ছেলে জালালুদ্দীন মাসউদ তখত নশীন হয়।
৪৮৩ হিজরিতে তাজুল মূলক মুসতাওয়াফিদ্দৌলা বাগদাদের বাবুল আবযারে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আবু বকর শাশী এখানে শিক্ষকতা শুরু করেন।
৪৮৪ হিজরিতে ফিরিঙ্গীরা গোটা সাকলীয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। মুসলমানরা ২০০ হিজরিতে এ দ্বীপটি পদানত করেছিলো। আগলিবের বংশধররা খলীফার পক্ষ থেকে এটি শাসন করতো। তাদের থেকে উবায়দী মাহদীরা এটি দখল করে আর ফিরিঙ্গীরা তাদের থেকে তা ছিনিয়ে নেয়। এ বছর মূলক শাহ বাগদাদে এসে একটি বৃহৎ জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আশেপাশে আমীর-উমারাগণ নিজেদের বাস ভবন তৈরি করে। এরপর মূলক শাহ ইস্পাহানে ফিরে যায়।
৪৮৫ হিজরিতে সুলতান মূলক শাহ আবার বাগদাদে এসে খলীফাকে অতিসত্বর বাগদাদ ছেড়ে চলে যাওয়ার সংবাদ দেয়। খলীফা কিছুটা সময় প্রার্থনা করেন। সে তার প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর খলীফা সুলতান মূলক শাহ’র উযীরের কাছে সময় চাইলে সে মাত্র দশ দিন সময় দেয়। কিন্তু দশ দিন অতিক্রান্ত না হতেই সুলতান রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। লোকেরা এটাকে খলীফার কারামত হিসেবে উল্লেখ করে।
কথিত আছে, খলীফা মুকতাদী সময় লাভের দিনগুলোতে রোযা রাখতে শুরু করেন। ইফতারের মুহূর্তে ছাইয়ের উপর বসে সুলতান মূলক শাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য খুবই বিনয়ের সাথে আল্লাহ’র কাছে দুয়া করতেন, আল্লাহ তার দুয়া কবুল করেন।
সুলতান মূলক শাহ’র মৃত্যু সংবাদ তার স্ত্রী গোপন রেখে আমীর উমারাদের কাছ থেকে তার পাঁচ বছরের শিশু সন্তান মাহমুদের জন্য উত্তরাধিকারের (ওলী আহাদের) শপথ নেয়। এরপর সে তাকে সুলতান মনোনীত করার জন্য খলীফার কাছে আবেদন জানায়। খলীফা তা মঞ্জুর করেন আর তাকে নাসিরুদ্দীন ওয়া দুনিয়া উপাধি দেন। কিছুদিন পর মাহমুদের ভাই বরকিয়ারুক হামলা চালায়। খলীফা তাকে সুলতান বানিয়ে রুকনদ্দৌলা উপাধি দেয়। এটি ৪৮৭ হিজরির মুহাররম মাসের ঘটনা।
এ ঘটনার পরদিন শামসুন নাহার নামক বাঁদির বিষ প্রয়োগে খলীফা মুকতাদী ইন্তেকাল করেন।
তার খিলাফতকালে যেসকল ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – আবদুল কাহের জুরজানী, আবুল ওয়ালিদ বাজী, বিখ্যাত নাহুবিদ আবু ইসহাক শিরাজি, শামেলের লেখক ইবনে সবাআ, ইমামুল হারামাইন আল মুতাওয়াল্লী, আদ দামগানী হানাফি, ইবনে ফাযাল মুজাশায়ী, বুযুদী শায়খে হানাফী প্রমুখ।