আর রাশেদ বিল্লাহ আবু জাফর মানসুর বিন মুসতারশিদ ৫০২ হিজরিতে এক বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে, জন্মের সময় তার পায়খানার রাস্তা বন্ধ ছিল। চিকিৎসকগণ পরামর্শক্রমে স্বর্ণের রাগ দিয়ে পায়খানার রাস্তা চিড়ে দিলে পরবর্তীতে তা ভালো হয়ে যায়।
৫১৩ হিজরিতে তার পিতা মুসতারশিদ তার শাসনামলে তাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। পিতার মৃত্যুর পর ৫২৯ হিজরির যিলকাদা মাসে তিনি খিলাফতের তখতে আরোহণ করেন।
রাশেদ ছিলেন মিষ্টভাষী, সাহিত্যিক, কবি, বীর, প্রাজ্ঞ, দানশীল, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ আর ঝগড়া ফাসাদকে ঘৃণাকারী।
সুলতান মাসউদ বাগদাদে আসার সময় খলীফা মৌসুলে চলে যান। মাসউদ বাগদাদে এসে বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আর ওলামাদের সমবেত করে অনেক লোকের সাক্ষ্যর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র তাদের সামনে তুলে ধরলো। রাশেদ এই অত্যাচার করেছেন, অমুকের অমুকের সম্পদ গ্রাস করেছেন, রক্তের শরাব পান করেছেন। এ ক্ষেত্রে আপনারা ফতোয়া দিন যে, এ খলীফাকে অপসারণ করা নায়েবে সালতানাতের জন্য জায়েয কিনা। এ মুহূর্তে তার ইমামত কি সহিহ হবে ? সুলতানগণ তার স্থানে অন্য খলীফা নির্বাচন করেছেন।
ওলামাগণ তাকে অপসারণের ফতোয়া দিয়ে দেন। মজলিসে ওলামাদের মধ্যে কাযী শহর ইবনে কুরখীও উপস্থিত ছিলেন। লোকেরা সাথে সাথে তার চাচা মুহাম্মাদ বিন মুসতাযহারকে আল মুকতাযা লি আমরিল্লাহ উপাধি দিয়ে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। এটা ৫৩০ হিজরির যিলকদ মাসের ষোলো তারিখের ঘটনা।
সংবাদ পেয়ে রাশেদ বিপুল অর্থ-সম্পদের লোভ দিয়ে এক দল সৈন্য নিয়ে আজারবাইযান চলে যান। সৈন্যরা সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এরপর হামদান গিয়ে সেখানেও নারকীয় তান্ডব চালায়। অনেক লোককে হত্যা, অনেককে শুলেতে চড়ানো আর বহু আলিমের দাঁড়ি কামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ইস্পাহান অবরোধ করে শহরে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
৫৩২ হিজরির রমযান মাসের ষোলো তারিখে এক আযমী লোক তার তাঁবুতে ঢুকে ছোরা দিয়ে তাকে হত্যা করে। তার সাথে খলীফার সহচরদেরও সে হত্যা করে। খবর পেয়ে বাগদাদবাসী এক দিন মাতম করে।
উম্মাদ কাতেব বলেছেন, রাশেদ ছিলেন ইউসুফ (আঃ) এর লাবণ্য আর দানশীলতার সর্বশেষ ব্যক্তিত্ব।
চাদর আর ছরি মৃত্যু পর্যন্ত রাশেদের কাছেই ছিল। মৃত্যুর পর সেগুলো মুকতাফীর কাছে পৌঁছে যায়।