আল মুসতানজিদ বিল্লাহ

আল মুসতানজিদ বিল্লাহ আবুল মুযাফফর ইউসুফ বিন আল মুকতাফী ৫১৮ হিজরিতে গিরজিস্তানের তাউস নামক বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।

৫৪৭ হিজরিতে মুকতাফী তাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। মুকতাফীর মৃত্যুর পর তার কাছে বাইয়াত করা হয়।

মুসতানজিদ ইনসাফ, সুবিচার ও নমনিয় স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি অনেক শুল্ক ক্ষমা করে দেন। ইরাকের সমস কর মাফ করেন। বখাটে ও সন্ত্রাসী লোকদের সাথে তিনি কঠোর আচরণ করতেন। এক লোক মানুষের ক্ষতি করতো, তাকে বন্দী করে নিয়ে আসা হয়। আরেক লোক তার মুক্তিপণ হিসেবে দশ হাজার দিনার দেওয়ার প্রস্তাব দিলে খলীফা তা প্রত্যাখ্যান করেন আর বলেন, “এ লোকটিকে বন্দী করতে পারলে আমিই দশ হাজার দিনার পুরস্কার দিবো।”

ইবনে জাওযী বলেছেন, মুসতানজিদ বিল্লাহ উজ্জ্বল প্রাজ্ঞতা, নির্ভুল অভিমত, সঠিক বিচার, প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর দয়ার্দ্র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি উপমাহীন পদ্য আর বাকবিদগ্ধ গদ্য রচনা করেন। ইলম ও বীরত্বে তার দক্ষতা প্রসিদ্ধ। তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন।

খিলাফত লাভের প্রথম বছর অর্থাৎ ৫৫৫ হিজরিতে মিসর শাসনকর্তা আল ফায়েয মারা গেলে তার ছেলে আযদলিদ্বীনিল্লাহ তখতে উপবেশন করেন। তিনি হলেন উমাইয়া বংশের সর্বশেষ খলীফা।

৫৬২ হিজরিতে সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গি আমীর আসাদউদ্দিনকে দুই হাজার অশ্বারোহী দিয়ে মিসরে পাঠান। আসাদউদ্দিন দুইমাস পর মিসর অবরোধ করে রাখেন। মিসরের শাসনকর্তা ফিরিঙ্গীদের সাহায্য প্রার্থনা করে। দিময়াত থেকে সাহায্য এসে পৌঁছলে আসাদউদ্দিন সাইদ শহরে চলে যান। সেখানে মিসরীদের সাথে যুদ্ধ হয়। শত্রু বাহিনীর তুলনায় নিজের সৈন্য সামান্য হওয়ার পরও আসাদউদ্দিন বিজয় অর্জন করেন, সহস্রাধিক ফিরিঙ্গী ভূগর্ভস্থ কক্ষে শায়িত হয়। যুদ্ধ শেষে তিনি সাইদ শহরের খারাজ মাফ করে দেন। এরপর ফিরিঙ্গীরা ইস্কান্দারিয়া আক্রমণ করতে চাইলে তা আগেই আসাদউদ্দিনের ভাতিজা সালাহুদ্দিন ইউসুফ বিন আইয়ুব দখল করে নিয়েছিলেন। ফিরিঙ্গীরা চার মাস ইস্কান্দারিয়া অবরোধ করে রাখে। সংবাদ পেয়ে আসাদউদ্দিন ধেয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। তিনি সসৈন্যে সিরিয়ায় ফিরে আসেন।

৫৬৪ হিজরিতে ফিরিঙ্গীরা বিশাল বাহিনী নিয়ে মিসরে হামলা করে। মিসরের শাসনকর্তা ভয় পেয়ে কাহেরা শহরে আগুন লাগিয়ে দেয় আর সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গির সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। সাহায্য করতে আসাদউদ্দিন এগিয়ে যান। খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। মিসরের শাসনকর্তা তাকে কলম, দোয়াত আর খিলআত প্রদান করেন। তিনি তা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করেন। কিন্তু জীবন তাকে ছাড় দেয়নি। ৫৬৫ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। এরপর মিসরের শাসনকর্তা তার ভাতিজা সালাহউদ্দিন ইউসুফ বিন আইয়ুবকে উযির নিয়োগ করে মুলকুন নাসের উপাধি দেয়। সালাহুদ্দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত এখানেই মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেন। ৫৬৬ হিজরির রবিউস সানি মাসের আট তারিখে খলীফা মুসতানজিদ ইন্তেকাল করেন।

যাহাবি বলেছেন, মুসতানজিদ অসুস্থ অবস্থা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ে আকাশ লাল হয়ে ছিল, যার আলো আর লাল বর্ণ দেওয়ালে দেখা যেতো।

তার শাসনামলে যেসকল ওলামায়ে কেরামগণ ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – মুসনাদ আল ফিরদাউসের লেখক দায়লামী, আল বয়ান শাফীয়ার লেখক উমরানী, ইবনে বাযযারী শাফী, উযির ইবনে হুবায়রাহ, শায়খ আবদুল কাদির জিলানী, ইমাম আবু সাইদ সুমআনী, ইবনে নাজীব সহরওয়ারদী, আবুল হাসান বিন হাযীল আল মাকরী প্রমুখ।