আয যাহের বি আমরিল্লাহ আবু নসর মুহাম্মাদ বিন আন নাসের লিদ দ্বীনিল্লাহ ৫৭১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার শাসনামলে তিনি উত্তরাধিকার মনোনীত হোন। পিতার পর তিনি তখতে আরোহণ করেন।
৫২ বছর বয়সে তিনি তখত নসীন হোন। প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ রাজ্য জয়ের প্রতি মনোনিবেশ না করার কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখন আর সেখানে কি রোপণ করা যেতে পারে ?” তারা বললো, “আল্লাহ আপনার জীবন দীর্ঘায়ু করুন।” তিনি বললেন, “আসরের পর দোকান খুললে সে কতটুকুর মুনাফা করতে পারে ?” তিনি প্রজাবৃন্দের সাথে করুণাসূচক আচরণ করেন, সকল ট্যাক্স ক্ষমা করেন, অত্যাচার প্রতিহতকরণের ব্যবস্থা নেন আর প্রচুর দান করেন। (আবু শামাহ)
ইবনে আসির বলেন, “আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) আর উমর ফারুক (রাঃ) কতৃক প্রবর্তিত ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নীতিগুলো তিনি ছাড়া কোন খলীফা অনুসরণ করেননি। তবে এটা যদি বলা হয়, উমর বিন আবদুল আযিযের পর সেই নীতি অনুসরণের কোন খলীফা ছিল না, তবে সেটা হবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ অভিমত।”
তার পিতা আর পিতামহ যে ভুখন্ড আর সম্পদ কুক্ষিগত করেছিলেন, সেগুলো তিনি হকদারদের ফিরিয়ে দেন। সাম্রাজ্যের সকল কর তিনি মাফ করে দেন। তিনি খাজনা আদায়ে পুরানো নীতি অনুসরণের আহকাম জারি করেন। প্রাচীন প্রথায় ইরাকের শুল্ক আদায়ের নির্দেশ দেন। পুরানো খলীফাদের যুগে ইরাকে বিশ হাজার দিনার আদায় করা হতো। তার পিতার যুগে আশি হাজারে উন্নতি হয়। তিনি পুরানো হিসাব অনুযায়ী দশ হাজার ক্ষমা করে দশ হাজার আদায়ের নির্দেশ দেন। এরপরও প্রজাবৃন্দের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সতেজ বৃক্ষের খাজনা আদায়ের হুকুম দেন।
এ ইনসাফের পরও রাষ্ট্রীয় ধনাগারে সম্পদ জমা দেওয়ার সময় ওজনে কম নিয়ে বেশী দেওয়ার খলীফা কর্তৃক লিখিত নির্দেশ জারি হওয়ায় উযির বললো, “এভাবে ওজন দিলে পঁয়ত্রিশ হাজার দিনার জনগণের মাঝে চলে যাবে।” খলীফা বললেন, “পঁয়ত্রিশ কোটি দিনার চলে গেলেও আপত্তি নেই।”
তার ন্যায়বিচারের আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ওসেতা শহরের এক সরকারি অফিসারের কাছে এক লাখ দিনার ছিল, যা সে অন্যায়ভাবে উপার্জন করেছিলো। দারুল খিলাফতের নির্দেশে সেগুলো হকদারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
জনগণের মধ্যে যারা খাজনা অনাদায়ের দায়ে বন্দী ছিল, তিনি দশ হাজার দিরহাম পাঠিয়ে বিচারককে তাদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
ঈদুল আযহার রাতে তিনি ওলামা আর সাথীদের মধ্যে এক লাখ দিনার বণ্টন করেন। লোকেরা বললো, “আপনার মতো আর কোন বাদশাহ এতোটা ব্যয় করেনি।” তিনি বললেন, “সন্ধ্যার সময় আমি দোকান খুলেছি, পরপারের সওয়াব অর্জনের জন্য আমার হাতে যথেষ্ট সময় কোথায় ?” তিনি সরকারপ্রধান হওয়ার পর সরকারি অফিসগুলোতে অসংখ্য কাগজের টুকরো পাওয়া যায়। লোকেরা বললো, “কেন আপনি সেগুলো খুলে দেখছেন না ?” তিনি বললেন, “দেখে কি হবে ? সেগুলোতে কোন না কোন পরনিন্দা লেখা আছে।” (ইবনে কাসির)
সুবত ইবনে জাওযী বলেছেনঃ খলীফা ধনাগারে প্রবেশ করলে খাদেম বললো, “আপনার পিতার যুগে এ কোষাগার ধন রত্নে পরিপূর্ণ ছিল।” জবাবে তিনি বললেন, “আমি কোষাগার ভরপুর করার জন্য আসিনি, আল্লাহ’র পথে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে চাই। ধন-রত্ন সংগ্রহ ও জমা করা সওদাগরের কাজ।”
ইবনে ওয়ায়েল বলেছেনঃ আয যাহের ন্যায়বিচার করতেন আর শুল্ক মাফ করেন। তিনি জনগণের সাথে উঠা বসা করতেন, আর তার বাবা এ ক্ষেত্রে পর্দার সাহায্য নিতেন।
৬২৩ হিজরির রযব মাসের ১৩ তারিখে এ মহামতি খলীফার ইন্তেকাল হয়। তিনি নয় মাস কয়েক দিন খিলাফত পরিচালনা করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করার অনুমতি লাভ করেন। আর আবু সালিহ নসর বিন আব্দুর রাযযাক বিন শায়েখ আবদুল কাদির জিলানী তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।
তার মৃত্যুর বছর দুবার চন্দ্রগ্রহণ হয়। মৌসুলের শাসনকর্তা তার প্রসংশাগাঁথা লিপিবদ্ধ করেছেন।