আল ওয়াসিক বিল্লাহ ইব্রাহীম বিন ওলীয়ে আহাদ আল মুসতামসিক বিল্লাহ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাকিম বি আমরিল্লাহ আবুল আব্বাস আহমেদের দাদা হালিমের ছেলে মুহাম্মাদকে আল মুসতামসিক বিল্লাহ উপাধি দিয়ে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। তবে তিনি পিতার সামনে ইন্তেকাল করায় হাকিম তার নাতি ইব্রাহীমকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। হাকিমের ধারণা ছিল, ইব্রাহীমের মধ্যে খিলাফত পরিচালনার যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিজেই বুঝতে পারেন যে, ইব্রাহীম এ কাজের যোগ্য নন। কারন তিনি খেলাধুলা প্রিয় আর চরিত্রহীন লোকদের সহচর ছিলেন। হাকিম তার সংশোধনে অপারগ হয়ে তাকে উত্তরাধিকার থেকে অপসারণ করে ইব্রাহীমের চাচা মুসতাকফীকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। ফলে ইব্রাহীম খলীফা আর সুলতানের মধ্যে মনোমালিন্যের বীজ বপন করেন। যে ইতিহাস দুনিয়াবাসির অজানা নয়।
মুসতাকফী মৃত্যুর সময় পুত্র আহমাদকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। কিন্তু সুলতান এ ব্যাপারে ভ্রূক্ষেপ না করায় জনগণ ইব্রাহীমের কাছে বাইয়াত করে আর তাকে ‘আল ওয়াসিক বিল্লাহ’ উপাধি দেয়। মৃত্যুর সময় সুলতান এ কাজে দারুন অনুতপ্ত হয় আর ৭৪২ হিজরির মুহাররম মাসের শেষে ইব্রাহীমকে অপসারণ করে আহমাদকে ‘হাকিম বি আমরিল্লাহ’ উপাধি দিয়ে খলীফা নির্ধারণ করে দেয়।
আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানি বলেছেন, “লোকেরা ইব্রাহীমের অনৈতিক কাজগুলোর অভিযোগ জানালেও সুলতান তাদের কথায় কোন প্রকার কান দেয়নি, উপরন্তু তারই হাতে বাইয়াত হয়।”
ইবনে ফাজলুল্লাহ ‘আল মাসালিক’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ খিলাফতের যোগ্যতা এসে যাবে ভেবেই হাকিম ইব্রাহীমকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু তিনি সৎ লোকের সহচরে না গিয়ে মন্দ মানুষের সংস্পর্শে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। মুসতাকফীর মৃত্যুর সময় তার ছেলের প্রতি করুণা করার প্রেক্ষিতে খলীফার সাথে সুলতানের সম্পর্কে ভাটা পড়ে, যার বিবরণ আমরা আগেই পেশ করেছি। এর সূত্র ধরে সুলতান ইব্রাহিমকেই মনোনীত করে। যেহেতু ইব্রাহীমের দাদা হাকিম তাকে উত্তরাধিকার বানিয়েছেন মুসতাকফী তার ছেলে আহমাদকে মনোনীত করার আগেই। প্রধান বিচারপতি আবু উমর বিন জামাত সুলতানের বিরোধীতা করেন। কিন্তু তার অভিমতটিই প্রাধান্য পেয়ে যায়। খুৎবায় তার পরিবর্তে সুলতানের নাম উল্লেখ হয়। মুসতাকফীর মৃত্যুর পর থেকে খুৎবায়, মিম্বরে আর দুয়ার মজলিসে খলীফাদের নাম বিলুপ্ত হয়ে যায় আর সুলতানদের নাম বাকি থেকে যায়। সুলতানের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত ছিল। মৃত্যুর কড়াঘাতে শংকিত সুলতানের তখন দৃষ্টি খুলে যায়। খলীফা মুসতাকফীর ওসীয়ত মোতাবেক খিলাফত বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সুলতান এবার উঠে পড়ে লাগে। সে তার আগের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় আর ইব্রাহীমকে অপসারণ করে।