আল হাকিম বি আমরিল্লাহ আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আল মুসতাকফী।
কুস শহরে ইন্তেকালের সময় মুসতাকফী হাকিমকে উত্তরাধিকার মনোনীত করলে সুলতান আল মুলকুন নাসর হাকিমের চাচাতো ভাই ইব্রাহীমকে নির্বাচন করে। ইব্রাহীমের চরিত্র ভালো না হওয়ার কারণে কাযী আযুদ্দীন বিন জাআমত সুলতানের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তা কোন কাজেই আসেনি। সুলতান ইব্রাহীমের কাছেই বাইয়াত করে। অবশেষে মৃত্যুর সময় সুলতানের বোধ দয় হয়। সে ইব্রাহীমকে অপসারণ করে আহমাদের (হাকিমের) কাছে বাইয়াত গ্রহণের জন্য আমীর-উমারাদের ওসীয়ত করে। সুলতানের মৃত্যুর পর আল মানসুর আবু বকর বিন নসর সুলতান হয়।
৭৪১ হিজরির যিলহজ মাসের এগারো তারিখ মঙ্গলবারে নতুন সুলতান একটি মজলিশের আয়োজন করে। এ মজলিসে ইব্রাহীম আর হাকিম উভয়কেই ডেকে আনা হয়। ভরা মজলিসে কাযিদের জিজ্ঞাসা করে, শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে খিলাফতের হকদার কে ? কাযী আযুদ্দীন বিন জামাত বললেন, খলীফা মুসতাকফী মৃত্যুর সময় কুস শহরে পুত্র আহমাদকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। এ কাজের সত্যতা প্রমাণের জন্য খলীফা কুস শহরের চল্লিশজন ইনসাফগার সাক্ষীও রেখে গেছেন। এরা আমার নায়েব কুস শহরের কাযীর কাছে সাক্ষীও দেখেছে। উপরন্তু আমি নিজেও এর সাক্ষী, এ কথা শুনে সুলতান সাথে সাথে ইব্রাহীমকে অপসারণ করে আহমাদের কাছে বাইয়াত করে আল হাকিম বি আমরিল্লাহ উপাধি দেয়।
ইবনে ফাযলুল্লাহ ‘মাসালিক’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ হাকিম বি আমরিল্লাহ হলেন আমাদের যুগের ইমাম (মহান নেতা) আর আমাদের দেশের জন্য রহমতের বারিধারায় সিক্ত বাদশাহ, তার পক্ষ থেকে শত্রুর প্রতি ক্রোধ আর মিত্রের প্রতি প্রশান্তি পৌঁছে যেতো। সারা জীবনে কল্যাণকর কাজ করার কারণে তার প্রতি সকলের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি নত হয়ে যেতো। তিনি খিলাফতের রীতিনীতিগুলোকে পুনর্জীবন দান করেন। তার বিরুদ্ধবাদীদের কাউকে তিনি শাস্তি দেননি। তিনি বাপ দাদার পদাঙ্ক অনুসরণে চলতেন। নিজ পরিজনের মধ্যে বিরাজিত হতাশা আর মতভেদ দূর করে দেন। সকল মিম্বরগুলতে তার নামে খুৎবা পাঠ হতে থাকে।
আল্লামা ইবনে হাযার বলেন, “প্রথমে তার উপাধি আল মুসতানসির নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে আল হাকিম লকব হয়ে যায়।”
শায়খ যায়নুদ্দীন ইরাকী বলেন, হাকিম মুতাআখখিরীনদের কাছে হাদিস শুনেছেন। ৭৫৩ হিজরির মধ্যবর্তীতে প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
তার শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে – সুলতান মানসুরের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা আর মদ পানের দায়ে তাকে অপসারণ করা হয়। কথিত আছে যে, তার বাবার স্ত্রীদেরও ছাড়তো না। তাকে কুসে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর ওখানেই সে নিহত হয়। বস্তুত এটা ছিল আল্লাহ’র পক্ষ থেকে তার কৃত অপরাধের প্রতিদান – যা তার পিতা খলীফা মুসতাকফীর সাথে করেছিলো। যারাই বনু আব্বাসকে কষ্ট দিয়েছে, তারাই সাথে সাথে শাস্তি পেয়েছে – আল্লাহ’র এই আদত সর্বদা চালু ছিল।
মানসুর অপসারিত হওয়ার পর তার ভাই আল মুলকুল আশরাফ সুলতান হয়। তাকেও তখত থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর তার ভাই আহমাদ নসর লকব ধারণ করে মসনদে আরোহণ করে। ৭৪৩ হিজরিতে আহমাদকেও ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তার স্থানে তার ভাই ইসমাইল সালিহ উপাধি নিয়ে সুলতান হয়। ৭৪৬ হিজরিতে ইসমাইল সালিহের মৃত্যু হলে খলীফা তার ভাই শাবানকে আল কামিল উপাধি দিয়ে সুলতান মনোনীত করেন। ৭৪৭ হিজরিতে কামিল নিহত হলে তার ভাই আমীর হাজ আল মুযাফফর উপাধি নিয়ে তখত নসীন হয়। তাকেও ৭৪৮ হিজরিতে অপসারনের পর তার ভাই হোসেনকে নসর উপাধি দিয়ে সুলতান বানানো হয়।
৭৪৯ হিজরিতে ভয়াবহ প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
৭৫২ হিজরিতে হোসেন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তার ভাই সলিহ সুলতান মনোনীত হয়। আন নাসর মুহাম্মাদ বিন কালাদুনের আওলাদ থেকে আটজন সুলতান মনোনীত হয়।
তার যুগে যেসব ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – হাফেজ আবুল হাজ, তাজ আবদুল বাকী ইয়াযনী, শামস আবদুল হাদী, ইবনুল ওয়ারদী, আবু হিয়ান, ইবনুল লুবান, ইবনে আদলান, ইবনে ফযলুল্লাহ, ইবনে কায়্যিম জাওযী প্রমুখ।