আল-মুতাওয়াককিল আলাল্লাহ আবুল আয আব্দুল আযীয বিন ইয়াকুব বিন মুতাওয়াককিল জিন্দীর মেয়ে হাজ মুলক-এর গর্ভে ৮১৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। খিলাফত তার পিতার হস্তগত ছিল না। তিনি শৈশব থেকেই সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
তিনি জ্ঞানা আহরণে মশগুল থাকতেন। তিনি আমার পিতার কাছেও ইলম অর্জন করেছেন। তার চাচা মুকতাফী তার মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে দেন। তার ঔরসে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে যিনি খুবই নেককার,হাশিমী আর হাশিমীর আওলাদ। মুসতানজিদের অসুস্থতার সময় তাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করা হয়। তার মৃত্যুর পর ৮৮৪ হিজরীর মুহাররম মাসের ১৬ তারিখ সোমবারে সুলতান,বিচারপতিগণ আর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে আম জনতা তার হাতে বাইআত করে।
বাইআতের পর কেল্লা থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সেদিন তার সাথে ছিল গোটা মন্ত্রী পরিষদ। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে আবার কেল্লায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি মুসতানজিদের মতো কেল্লায় বসবাস করতেন।
এ বছর সুলতান মুলকুল আশরাফ হাজ্জের জন্য হিজায যান। তার পূর্বে একশো বছর কোন সুলতান হাজ্জ করেননি। হাজ্জের আগে তিনি মদীনা শরীফে যিয়ারত করেন আর সেখানে ছয় হাজার দিনার খরচ করেন। অতঃপর মক্কায় এসে পাঁচ হাজার দিনার ব্যয় করেন। সেখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এখানে একজন বড় মাপের উস্তাদকে নিয়োগ দেন। হাজ্জের আহকাম শেষ করে ফেরার সময় শহরে খুশির বন্যা বয়ে যায়।
৮৮৫ হিজরীতে দাওয়াদারের নেতৃত্বে মিসরের সৈন্যরা ইরাকের উপর হামলা চালায়। ইয়াকুব শাহ বিন হাসান রাহী অঞ্চলে তাদের সাথে লড়াই করে। এ যুদ্ধে মিসরীরা পরাজিত,অনেক মিসরী নিহত আর দাওয়াদার কয়েদ হয়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। এ যুদ্ধটি রমযানুল মোবারক মাসের শেষ দিকে সংঘটিত হয়।
৮৮৬ হিজরীর ১৭ই মুহাররম ভূমিকম্প হয়। এতে মাদরাসা সালিহার ছাদ ধসে পড়ে বিচারপতি শরফুদ্দীন বিন আব্দ নিহত হোন।
এ বছর রবিউল আউয়াল মাসে খাকী নামক একজন ভারতীয় লোক এসে তার বয়স দেড়শ’বছর দাবী করে। আমিও (গ্রন্থকার) তাকে দেখেছি। তার দাড়ি কালো,সে বলেছে,আমি ১৮ বছর বয়সে হজ করে ভারতে ফিরে যাই। সুলতান হাসানের যুগে তাতারীদের আক্রমণের সময় বাগদাদ হয়ে মিসর আসি। আমার মতে সে মিথ্যা বলেছে।
এ বছর শাওয়াল মাসে মদীনা শরীফ থেকে এ মর্মে পত্র আসে যে,রমযানুল মুবারকের ১৩ তারিখে বজ্রপাতের কারণে মসজিদে নববীর ছাদ,খাযানা অ গ্রন্থাদি জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। মসজিদের দেয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না – যা এক ভয়ংকর দৃশ্য।
৯০৩ হিজরীর মুহাররম মাসের শেষ বুধবারে খলীফা মুতাওয়াককিল আলাল্লাহ ইন্তেকাল করেন। তিনি পুত্র ইয়াকুবকে আলসাতমাসাক বিল্লাহ উপাধি দিয়ে ওলী আহাদ মনোনীত করে যান। এটাই হল সর্বশেষ অবস্থা, যা আমি এই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করলাম।