মৃত্যুর পর রুহ কিভাবে আমাদের দেহ ছেড়ে চলে যায় সেই সম্পর্কে একটা দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে রাসূল (সাঃ) বলেন, “যখন একজন মু’মিন মৃত্যু বরণ করে তখন ফেরেশতারা জান্নাত থেকে কফিন ও সুগন্ধি নিয়ে দুনিয়াতে নেমে আসে এবং সেই মৃত ব্যাক্তির সামনে বসে। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা অবতরণ করে এবং সেই মু’মিন ব্যক্তিকে বলে ,” খুশি হও, আনন্দিত হও ! তোমার সাথে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার করা ওয়াদার ব্যাপারে আনন্দিত হও!” তারপর তিনি রুহ কে বেরিয়ে আসতে বলেন। তিনি বলেন, “হে প্রশান্ত আত্মা! বেরিয়ে এসো ! তোমাকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যে নি’আমত দিবেন, সে দিকে বেরিয়ে এসো” (আল ফাজরঃ: ২৭-২৮)
রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, সেই রুহ তখন বেরিয়ে আসে, এত সহজে, ঠিক যেভাবে পানির জগ উপুড় করলে তা থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে। দেহ থেকে এই রুহ যেন অতি সহজে, পিছলে বের হয়ে আসে। আর যেই মুহুর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা সেই রুহকে দেহ থেকে বের করে আনবেন, সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সকল ফেরেশতারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন, প্রত্যেকেই চাইবেন যেন তারা সেই রুহকে বহন করার সম্মান লাভ করতে পারেন! এই সম্মান পাওয়ার জন্য তারা কাড়াকাড়ি শুরু করে দিবেন! তারপর তারা এটাকে উপরের দিকে, আসমানের দিকে যেতে থাকবেন। আল্লাহর রাসূল বলেন, যাওয়ার পথে সেই ফেরেশতাদের দল যখনই আরেক দল ফেরেশতার সাক্ষাত লাভ করবেন, তারা সেই অসাধারণ সুগন্ধির সুবাস পেয়ে জিজ্ঞেস করেন, “এটা কার রুহ?” উত্তরে ফেরেশতাদের দল তাদেরকে বলবেন এটা হল অমুক ব্যক্তিয় রুহ এবং তারা সেই রুহকে ভালো ভালো নাম, উপাধি এসব দিয়ে প্রশংসার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। এভাবে চলতে চলতে একসময় তারা সবচেয়ে নিচের স্তরের আসমানের দরজার কাছে পৌঁছে যাবেন। আসমানের দরজার কাছে পৌঁছে গেলে তারা সেখানে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি চাইবেন। মুমিন বান্দার রুহের জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। আমরা জানি আসমানের সাতটি স্তর রয়েছে। আর যখনই এরকম একটা স্তরের আসমানের দরজা খুলে যাবে, তখন ঐ স্তরের আসমানের ফেরেশতারা, সেই রুহ নিয়ে আসা ফেরেশতাদের দলের সাথে সাথে যাবেন যতক্ষণ না তারা এভাবে চলতে চলতে পরবর্তী স্তরের আসমানের দরজার কাছে গিয়ে হাজির হবেন।
এভাবেই চারদিক থেকে ফেরেশতাদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে সেই রুহ চলতে চলতে এক সময় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে গিয়ে হাজির হয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সেই রুহ কে তখন জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দান করবেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলবেন, “একে আবার মাটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও কারণ এদের আমি মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছি আর সেখানেই তারা ফিরে যাবে। আর সেখান থেকেই আবার একদিন তাদেরকে উঠানো হবে।” এরপর সেই সম্মানিত রুহ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া সম্মান সাথে করে নিয়ে আবার নিচের দিকে দুনিয়াতে নেমে আসবে।
মুমিন বান্দার রুহের এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহর রাসূল (সঃ ) আমাদেরকে, অবিশ্বাসী কাফির এবং বদ আমলকারী পাপীদের রুহের কি অবস্থা হবে সে সম্পর্কে বলেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ফেরেশতারা জাহান্নাম থেকে একটি কফিন নিয়ে তার কাছে নেমে আসে। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার কাছে বসে এবং বলে, “হে পাপী আত্মা! আল্লাহ্র ক্রোধ এবং শাস্তির দিকে বেরিয়ে এসো।” তখন ভয়ে সেই পাপী বান্দার রুহ তার দেহের ভিতরে ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রতিটি স্নায়ু এবং মাংসপেশি আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার চেষ্টা করবে। তা কিছুতেই বেরিয়ে আসতে চাইবেনা। মৃত্যুর ফেরেশতা এই অবাধ্য রুহকে টেনে বের করবেন। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, এই রুহ টেনে বের করে আনাটা এতটাই কষ্টদায়ক হবে যে, যেভাবে একটা ভেজা উলের বল থেকে একটা কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল টেনে বের করে আনা হয়। এই ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে আরও একবার ভাবুন! কাঁটাযুক্ত একটা ডালকে ভেজা উলের বল থেকে বের করে আনার কথা! মৃত্যুযন্ত্রণায় সেই ব্যক্তির এক একটি স্নায়ু এবং পেশি ছিঁড়ে আসবে। সেই রুহ বের হয়ে আসার পর ফেরেশতারা তাকে পাকড়াও করার জন্য লাফিয়ে পড়বেন। তারা তাকে আটক করে জাহান্নামের সেই কফিনে ঢুকিয়ে ফেলবেন এবং আসমানের দিকে নিয়ে যাবেন। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, সেই রুহ থেকে একটা বিশ্রী দুর্গন্ধ বের হবে এবং ফেরেশতাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা তাকে অভিশাপ দেয়া শুরু করবে এবং জিজ্ঞেস করবে, “এটি কার রুহ?” তখন বাহক ফেরেশতারা তাকে নিকৃষ্টতম নামে পরিচয় দেবেন। তারপর ফেরেশতারা তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে যাবেন এবং আরো উপরে নিয়ে যাবার জন্য অনুমতি চাইবেন। কিন্তু তাদের জন্য আসমানের দরজাগুলো খোলা হবেনা। তখন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলবেন, “এই রুহকে নিম্নতম যমীনে নিক্ষেপ কর”। তখন আল্লাহ্ অপমানের সাথে সেই রুহ কে নিচে ছুঁড়ে ফেলার আদেশ দিবেন।
এরপর রুহেরা ক্ববরে ফিরে যায়। এখন আমরা আখিরাতের পরবর্তী পর্যায় আল ক্ববর নিয়ে কথা বলব। ক্ববর! উসমান (রাঃ) যখনি কোন ক্ববর দেখতেন তখনই কাঁদতেন। তাই অন্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করতেন,” ক্ববরের কথা আপনাকে যেভাবে ভীত করে জান্নাত বা জাহান্নাম আপনাকে সেভাবে উচ্ছ্বসিত বা ভীত করেনা কেন?”উসমান (রাঃ) বলেন, “আমি রসুলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে আখিরাতের প্রথম ধাপ হচ্ছে ক্ববর।যদি তুমি এতে সফল হও তবে পরের ধাপ গুলো তোমার জন্য সহজ হবে। আর যদি তুমি এতে ব্যর্থ হও তবে পরের ধাপ গুলো তোমার জন্য আরো কষ্টদায়ক হবে। আর একারণেই ক্ববরের কথা মনে হলেই আমি কাঁদি। ”
আর তারপর তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “ভয়ঙ্কর যত কিছু আমি দেখেছি তার মধ্যে ক্ববর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। আমি জীবনে ক্ববরের চেয়ে ভীতিকর আর কিছু দেখিনি।” শীঘ্রই আমরা সেখানে যাব। আমাদের প্রত্যেকেই যাবে। আমরা এই দুনিয়ার সকল আরাম ছেড়ে, সব কিছুকে পেছনে ফেলে ক্ববরে যাব। আমাদেরকে প্রত্যেককে একদিন বহন করে মাটিতে সেই গর্তে রেখে আসা হবে। কবর হবে অন্ধকার! এক মহিলা ছিল যে রসুলুল্লাহ (সঃ) এর সময় মসজিদ নববী পরিষ্কার করতেন। সেই মহিলা ছিলেন বৃদ্ধা। একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সে রাতেই মারা যান। তখন গভীর রাত হওয়ায় সাহাবাগণ (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সঃ) কে না জাগিয়েই তাঁকে ক্ববর দেন। পরে রসুলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেন সেই মহিলাটি কোথায়? তখন তারা বলেন তিনি মারা গেছেন এবং আমরা তাঁকে ক্ববর দিয়েছি। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন তোমরা আমাকে ডাকলেনা কেন? রসুলুল্লাহ (সঃ) ছিলেন এই উম্মতের পিতা। তিনি তাদের প্রত্যেকের জন্য -দুর্বল কি সবল,শিশু কি বৃদ্ধ, নারী কি পুরুষ সকলের জন্যই চিন্তা করতেন। তিনি আবার বলেন, তোমরা আমাকে ডাকলেনা কেন? তারপর তিনি বলেন আমাকে তাঁর ক্ববর দেখিয়ে দাও। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, এই ক্ববর গুলো অন্ধকার কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এদের উপর আমার সলাতের(জানাযাহ) কারণে আলোকিত করে দিবেন।(সহিহ বুখারী)
এই অন্ধকার ক্ববরে আপনার লাশ রেখে আসা মাত্রই ক্ববর আপনাকে চেপে ধরবে। এবং সেই চাপ হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। এটা হবে কারণ, আপনি এই মাটিরই অংশ এবং এই মাটি থেকেই আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, “ক্ববর চেপে ধরে, আর যদি কেউ এই চাপ থেকে রেহাই পেত তবে তিনি হতেন সাদ ইবন মুয়াজ !’ আল্লাহ্র ওয়ালী সাদ ইবন মুয়াজ ! কবর তাকেও চাপা দিল ! “অর্থাৎ এমনকি আল্লাহ্র ওয়ালীগণ ও এই চাপ থেকে রেহাই পাবেন না! রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, সাদ ইবন মুয়াজ, এই সেই ব্যক্তি যার মৃত্যুতে আল্লাহ্র আরশ কেঁপে উঠেছিল, এই সেই ব্যক্তি যার রুহকে স্বাগতম জানানোর জন্য সমস্ত আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল – এই সেই ব্যক্তি যার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা জানাযাহর সালাত আদায় করেছিল। কিন্তু তিনি ও ক্ববরের এই চাপ থেকে রেহাই পাননি যদি ও পরে সেই চাপ অপসারণ করা হয়। আল্লাহ্র এই ওয়ালী, সাদ ইবন মু’আয – তিনি ছিলেন আনসারদের নেতা। তিনি মদিনায় রসুলুল্লাহ (সঃ) কে মেহমানদারী করেন এবং মেহমানদারিতে তিনিই ছিলেন সবচে উত্তম। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত রসুলুল্লাহ (সঃ) কে নিরাপত্তা দেন। এরপর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে এই মর্যাদা দেন। এত মর্যাদা লাভ করার পরও ক্ববর তাকে চাপা দিয়েছে। একটি বাচ্চা ছেলে মারা গেল। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ” কেউ যদি কবরের চাপ থেকে রেহাই পেত তবে তা হত এই শিশুটি” কিন্তু সেই শিশুটিকেও এই চাপ সহ্য করতে হয়েছে।
এখন আমরা ফিতনাতুল কবর নিয়ে কথা বলব। কবরে আমাদের যে সব কঠিন পরীক্ষা এবং আযাব এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে সেটাই হল ফিতনাতুল কবর। কবরে একজন ব্যাক্তিকে যেই সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সেই সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন ,যখনি একজন কবরে প্রবেশ করবে মুনকার এবং নাকির নামক দুইজন ফেরেশতা আকস্মিক ভাবে উপস্থিত হবে। তারা এমন ভাবে চিৎকার করবে যে কবরের ব্যাক্তিটি চমকে উঠবে ও বিস্মিত হবে অর্থাত ফেরেশ্তাদের সাথে তার সাক্ষাত খুব একটা আনন্দদায়ক হবেনা। তারা হবে খুবই কঠোর ও কর্কশ এবং আপনার কাছ থেকে তারা তাৎক্ষনিক সঠিক উত্তর গুলোই আশা করবে।আপনি একজন বিশ্বাসী হন বা না হন তারা ঠিক একইভাবে আপনার সামনে উপস্থিত হবে। যখন তারা উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সেই সময়টাকে ‘আল ইন্তাহার’ বলে। সুতরাং দুই জন ফেরেশতা মুনকার এবং নাকির নেমে আসার পর মাত্র তিনটি প্রশ্ন করবে। তারা জানতে চাইবে, তোমার রব কে? তোমার দীন কি? এবং কে তোমার নবী ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়াটাই আমাদের পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষার জন্যই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ। মাত্র তিনটি প্রশ্ন এই পরীক্ষায়। আমরা সারা বছর ধরে আমাদের পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করি প্রস্তুতি নেই। কিন্তু যেই পরীক্ষাটি আমরা নিশ্চিত ভাবে আমাদের জীবনে মুখোমুখি হতে যাচ্ছি তার জন্য আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি? প্রশ্ন গুলো আমাদের জানা উত্তর গুলোও আমাদের জানা। কে তোমার রব? কি তোমার দীন? কে তোমার রাসূল? মাত্র তিনটা প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর তারা সরাসরি চাইবে এবং আমাদেরকে দিতে হবে। একজন বিশ্বাসী অবশ্যই বলবে আমার রব আল্লাহ। আমার দীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মদ(সাঃ)। তখন উপর থেকে আওয়াজ আসবে আমার বান্দা সত্য বলছে। অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা নিজেই উত্তর গুলোর যথার্থতা যাচাই করছেন। ফেরেশতারা প্রশ্ন করতে থাকবে এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা নিশ্চিত করবেন উত্তর সত্য নাকি মিথ্যা ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুর’আনে বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে একটি মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুতী দান করবেন। দুনিয়া ও আখেরাতে। ইবরাহীম বিশ্বাসীদেরকে তিনি এই দুনিয়ায় একটি সুনিশ্চিত বক্তব্যের উপর অটল রাখবেন। কি সেই সুনিশ্চিত বক্তব্য? লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ। এটাই সেই বলিষ্ঠ এবং প্রতিষ্ঠিত বক্তব্য। এবং এইটাই সত্য ও বাস্তবতা। তাই আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বিশ্বাসীদের লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ এর উপর দৃঢ় রাখবেন। ফেরেশতারা নেমে আসবে এবং একজন অবিশ্বাসী কিংবা মুনাফিককেও এই প্রশ্ন গুলো করবে কে তোমার রব কি? তোমার দীন? কে তোমার রাসূল? এবং যখন তাকে তার নবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে সে উত্তর দিতে পারবেনা এবং বলবে হু? কি? আমি জানিনা। আমি সেটাই বললাম যেটা মানুষ কে বলতে শুনেছি। তারা তখন তাকে হাতুড়ি দিয়ে প্রচন্ড জোড়ে আঘাত করবে যা তাকে ধুলায় পরিণত করবে। লোক টি তখন বলতে থাকবে আমি জানিনা তবে আমি মানুষকে মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে কথা বলতে শুনেছি। আমি আবু জাহেল কে এই বিষয়ে বলতে শুনেছি আবু লাহাব কে বলতে শুনেছি আমি এবিসি নিউজ, সি এন এন এ শুনেছি। পত্রপত্রিকায় পড়েছি। এই সব গৎবাঁধা কথা বার্তা ই আমি তার সম্পর্কে শুনতাম। কিন্তু ফেরেশতারা আপনার কাছ থেকে এই উত্তর শুনতে চায় না। মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নবী শুধু এই উত্তরটুকুই তারা শুনতে চায়। সুতরাং এইটা সুস্পষ্ট হওয়া উচিৎ যে মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান সেই মূল বিষয়গুলোর একটি যার সম্পর্কে আপনি কবরে জিজ্ঞাসিত হবেন। শুধু মাত্র একজন সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করাটাই যথেষ্ট নয়।
আপনাকে অবশ্যই যারা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার প্রতিনিধিত্ত করে তাদের প্রতি ও বিশ্বাস আনতে হবে এবং তারা হল আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলগন। মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ঈসা (আঃ), মূসা (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। আমাদের অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার আম্বিয়াদের বিশ্বাস করতে হবে কারণ তাঁরাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বানী দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাই আমাদেরকে অবশ্যই মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর ঈমান আনতে হবে। কে কি বলল তা কখনোই গ্রহণযোগ্য উত্তর হবেনা। এবং এটাই কবরের শেষ পরীক্ষা। এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিশ্বাসীদের যে সকল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তার মধ্যে এটা হল সর্বশেষ ফিতনা এবং পরীক্ষা। চূড়ান্ত পরীক্ষা। এবং এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সকল পরীক্ষার অবসান হবে আর কোন পরীক্ষা থাকবেনা।
আল বুখারী হতে বর্ণিত আছে আসমা বিনতে আবু বকর বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে দাঁড়ালেন এবং খুতবা দেওয়া শুরু করলেন, খুতবা দিলেন কবরের ফিতনা সম্পর্কে, যতক্ষন না মসজিদে উগরে উঠা শোরগোল শুরু হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের ফিতনা নিয়ে কথা বলছিলেন। আসমা বলেন, হঠাত মসজিদে শোরগোল শোনা গেল, জোরালো আওয়াজ শোনা যেতে লাগলো । কিসের শোরগোল ছিল সেটা ? সেটা ছিল সাহাবা (রাঃ) এর কান্নার শব্দ। তারা সশব্দে কাঁদছিলেন। আসমা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)এর খুতবা শুনতে পাচ্ছিলাম না তাই শোরগোল এর শব্দ থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম এবং আমার পাশে একজন লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, বারাকাল্লাহু ফিক ! আল্লাহ্ আপনার সহায় হোন , রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ কি এমন কথা বলেছেন ? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, “আমাকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে, তোমাদের যার যার কবরে তোমরা ফিতনা, পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে ; আর এই ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার মত। কবরের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আর পরীক্ষা গুলো দাজ্জালের ফিতনার মতই হবে।”
রসুলুল্লাহ (সঃ) আরো বলেন, “আদম সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত এমন কোন ফিতনা নেই, এমন কোন ফিতনা নেই যা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়াবহ, দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা নেই।” এবং আমাদের প্রত্যেকেই ক্ববরে এই ধরণের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাব! এই ফিতনা অমুক এবং তমুক ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে না; আমি আর আপনি, আমাদের ব্যাপারেই এই কথা বলা হচ্ছে ! আমাদের সবাইকেই এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, এই হাদিসে আমাদের কথাই বলা হচ্ছে। এখানে অন্য কারো কথা বলা হচ্ছেনা। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সবাই সেই ফিতনার মধ্য দিয়ে যাব।
আমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে এবং আমাদেরকে সেই পরীক্ষা আর জবাবদিহিতা অতিক্রম করতে হবে। সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই ভয়ানক কথা শোনামাত্রই মসজিদে উগরে উঠা কান্নার রোল পড়ল, তাঁরা কাঁদছিলেন, কেউ সশব্দে, কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কারণ তাদের অন্তর ছিল কোমল। আর আমরা? আমাদের অবস্থা কি! আমাদেরকে এই হাদিস মোটেই প্রভাবিত করেনা। করলেও তা নিতান্তই সাময়িক। খুব দ্রুতই তা আবার চলে যায়। এমন ও হয় যে, আমরা হয় ত কারো জানাযাহ পড়তে যাচ্ছি -আমি নিজের চোখে দেখেছি- আমরা জানাযযাহ পড়তে যাই, চোখের সামনে ক্ববর দেখতে পাই , দেখতে পাই মানব জীবনের সমাপ্তি, দেখতে পাই কিভাবে একজন মানুষকে একটা মাটির গর্তে পুঁতে রেখে আসা হয়। নিজের চোখে এসব দেখেও, এমনকি সেই ক্ববরস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই, আমাদের অবস্থা এমন হয় যে, আমরা হাসি-ঠাট্টা করতে পারি। আমি এগুলো দেখেছি, এইভাবে মানব জীবনের চরম অনিবার্য পরিণতি দেখেও, আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করতে পারি।
আমাদের অন্তরগুলো… হচ্ছে পাথরের মত। এতে কোন কোমলতা নেই, নিরেট পাথর। অথচ সাহাবাগণ (রাঃ) শুধুমাত্র শুনেই এমনভাবে ভীত হয়ে পড়েন যে আসমা (রাঃ) বলেন যে কান্নার আওয়াজের জন্য তিনি কিছু শুনতে পাচ্ছিলেননা। আসলে আমরা কঠিন রোগে ভুগছি। এই অন্তরের কাঠিন্য এমন এক রোগ যা থেকে আমাদের শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করা প্রয়োজন। এই রোগটা শারীরিক হৃদরোগের চেয়েও খারাপ। হৃদরোগ হলে আমরা আমাদের টাকা-পয়সা, সময় ব্যয় করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু এই ধরণের অসুস্থতার জন্য আমরা কিছুই করিনা। আমরা এই ব্যাপারে চিন্তাও করিনা। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, [add arabic] “এই উম্মাহ, ফিতনার মধ্য দিয়ে যাবে, ক্ববরে, আর যদি এমন না হত যে ভয়ে তোমরা মৃতদেরকে আর ক্ববর দেবেনা, তাহলে আমি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে অনুরোধ করতাম তিনি যেন তোমাদেরকে শোনার ক্ষমতা দেন যে মাটির নিচে কি হচ্ছে।” তিনি বলেন,”কি হচ্ছে আমি তা শুনতে পাই, মাটির নিচে কি হচ্ছে আমি তা শুনতে পাই। এবং আমি আল্লাহকে অনুরোধ করতাম তিনি যেন তোমাদেরকেও তা শুনার অনুমতি দেন কিন্তু আমার ভয় হয় যে তা শুনতে পেলে তোমরা আর তোমাদের মৃতদেরকে ক্ববর দেয়ার সাহস করতে না। তোমরা যদি শুনতে পারতে মাটির নিচে কি হচ্ছে তাহলে ক্ববর না দিয়ে তোমরা মৃতদেরকে মাটির উপরেই রেখে দিতে। মাটির নিচে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে সেগুলোর ভয়ে তোমরা তাকে কবর দিতেনা।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ(রঃ) বলেন, শুধু রসুলুল্লাহ (সঃ) ই নন আমরা এমন আরো কয়েকজনের কথা জানি যারা তা শুনেছেন। তিনি বলেন, আমরা এমন কিছু ঘটনার কথা জানতে পেরেছি যে তারা ক্ববরের আযাব এর ভয়াবহ আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন এমনকি অনেকে কবর থেকে মৃত ব্যক্তিকে কবর হতে বের হয়ে আসতেও দেখেছেন। এবং তারা চিৎকার করছিল এবং তাদের শরীরে অনেক ক্ষতচিহ্ন ছিল। ইমাম ইবন তাইমিয়াহ(রঃ) বলেন, ঘুমের সময় আমাদের দেহ থেকে রুহ আলাদা হয়ে যায়। এরপরেও স্বপ্ন দেখার সময় যদি স্বপ্ন তীব্র হয় তখন আমাদের শরীর নড়াচড়া শুরু করে এবং এমনকি অনেকে স্বপ্নের মধ্যে যা দেখে সে অনুসারে আচরণ করা শুরু করে, কেউ হয়তো চিৎকার করে উঠতে পারে আবার , অনেকে ঘুমের মাঝে হাটাহাঁটি ও শুরু করে থাকে যদিও সে সময় চোখ বন্ধ থাকে, সে ঘুমন্ত অবস্থাতেই এগুলো করে। যদিও তখন রুহ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আল্লাহই ঘুমের সময় তোমাদের রুহ নিয়ে নেন” অর্থাৎ ঘুমের সময় রুহ কে শরীর থেকে বের করে নেয়া হয়। ইমাম ইবন তাইমিয়াহ ও একই কথা বলেন। কখনো কখনো কবরের শাস্তি এত তীব্র হতে পারে যে শরীর সেই শাস্তির চোটে নড়াচড়া শুরু করে এবং আপনি হয়তো দেখতে পারেন যে, সেই ভয়াবহ আযাবের কারণে মৃত ব্যক্তির লাশ ক্ববর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং সেখানেও ফেরেশতারা তাদের পিছু ধাওয়া করে তাদেরকে শাস্তি দিবে।
কবরের শাস্তির বর্ণনা এবং কবরের পুরস্কার
প্রশ্নোত্তরের পর, মু’মিন যখন সঠিক উত্তর দিবে তখন উপর থেকে শোনা যাবে, “আমার বান্দা সত্য বলছে। সুতরাং তাঁর কবরকে জান্নাতের উপকরণে সুশোভিত করে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক দাও আর তাঁর জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও।” তারপর এই কবরটিকে মাটির নিচে, দুনিয়ার একটি অংশ এই কবর, কিন্তু একে তখন সরাসরি জান্নাতের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। দুনিয়াতে মু’মিনের কবর জান্নাতের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। সেখানে একটি দরজা থাকে এবং সেই ব্যক্তি জান্নাতে তাঁর আবাস দেখতে পায়। শুধু তফাত এতটুকু যে, তিনি সেখানে যেতে পারেন না কিন্তু তা দেখতে পান। তারপর একজন সুদর্শন লোক তাঁর কবরে আসেন। খুবই সুদর্শন। তখন মৃত ব্যক্তিটি বলবে, তুমি কে? ঐ লোকটি বলবে, আমি তোমার ভাল কাজ সমূহ। আর আমি এসেছি কেয়ামত পর্যন্ত তোমাকে সঙ্গ দিতে। আমি তোমার সাথে থাকব। তুমি একা থাকবেনা।
একজন তাবেঈন তাঁর এক ছাত্র ছিল, তিনি তাঁর ছাত্রকে একদিন প্রশ্ন করলেন, তুমি ত্রিশ বছর ধরে আমার কাছে পড়েছ। বল তুমি এতদিনে কি কি শিখলে? সেই ছাত্রটি বলে, আমি আটটি জিনিস শিখেছি। তার মধ্যে একটি তিনি বলেন, আমি শিখেছি যে আমাদের সবারই কিছু ভালবাসার মানুষ এবং ভালোবাসার বস্তু রয়েছে। এর মধ্যে অনেক কিছু দুনিয়াতেই আমাদের ছেড়ে যাবে। কিছু জিনিস আমরা ঘরে রেখে যাব। কেউ কেউ হয়ত কবর পর্যন্ত যাবে কিন্তু যখন কবরে প্রবেশ করব তখন আমাদের সাথে আর কোন ভালোবাসার কেউ থাকবেনা, কেউ থাকবে না, না আমাদের কোন ভালবাসার মানুষ, না কোন ভালোবাসার বস্তু। আমাদের ভাল কাজ ছাড়া আর কোন ভালবাসার মানুষ বা জিনিস আমাদের সাথে থাকবেনা। তাই আমি আমার ভাল কাজ গুলোকেই আমার সবচেয়ে প্রিয় করে নিয়েছি। আমি আমার পরিবার ছেড়ে যাব, আমি আমার সম্পত্তি ছেড়ে যাব, আমি আমার গাড়ি-আমার বাড়ি ছেড়ে যাব -সব কিছু ছেড়ে যাব। একমাত্র যা আমি নিয়ে যেতে পারব তা হল আমার ভাল কাজগুলো। তাই আমি চাই অনেক ভাল কাজ নিয়ে যেতে।
এরপর, রসুলুল্লাহ(সঃ) আরো বলেন, কবরে দুটি জানালা দিয়ে জান্নাত এবং জাহান্নাম দেখানো হবে। এবং তাকে জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হবে, মু’মিন না হলে তুমি এখানে যেতে। আর জান্নাত দেখিয়ে বলা হবে তোমার ঈমানের কারণে তুমি এখানে যাবে। জান্নাত দেখতে পেয়ে সে বলবে, ‘ইয়া রাব ! বিচার দিবস শুরু করুন। সে ব্যক্তি যখন কবরে বসে জান্নাতের এত নাজ-নেয়ামত দেখতে পাবে তখন সে জান্নাত লাভের জন্য অস্তির হয়ে বলে উঠবে ‘ও আল্লাহ ! বিচার দিবস এখনই শুরু করে দিন !’ যাতে আমি আমার পরিবার এবং ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি। সে কোন পরিবার এবং সম্পত্তির কথা বলছে? দুনিয়ার? না। সে আখিরাতের পরিবার ও সম্পত্তির কথা বলছে। সে তখন আর দুনিয়ায় যা কিছু ফেলে গেছে তার ব্যাপারে চিন্তিত নয়। সে আর দুনিয়ায় ফিরে আসতে চায়না। সে দুনিয়া নিয়ে আর আফসোস ও করবেনা। এখন সে অস্থির হয়ে আছে কখন সে জান্নাতে তার জায়গায় প্রবেশ করবে।
অপরদিকে, আল-কাফির ওয়া আল –ফাজির রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কাফের অথবা পাপী ব্যক্তিকে প্রশ্নোত্তরের পরে উপর থেকে আল্লাহ্ বলবেন, সে মিথ্যাবাদি। আসমান হতে একটি ঘোষণা শোনা যাবে, সে একজন মিথ্যাবাদী । আরও বলা হবে, তার কবরকে জাহান্নামের আযাবে পরিপূর্ণ করে দাও আর জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দাও। তারপর তার কবরকে জাহান্নামের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। আমরা কবর গুলোকে দুনিয়ার অংশ ভাবি। আসলে কবর গুলো আখিরাতের সাথে সংযুক্ত। আমরা এটা জানিনা যে জান্নাতিরা ক্ববর থেকে জান্নাত দেখতে পায় আর জাহান্নামিরা ক্ববর থেকে জাহান্নাম দেখতে পায়। তারপর কুৎসিত বিকৃত চেহারার একটি লোক সেই পাপী বান্দার কবরে আসবে। তখন সে বলবে,তুমি কে?তুমি দেখতে এই বীভৎস কেন? সেই লোকটি বলবে, আমি তোমারই খারাপ কাজসমূহ। আর আমি কিয়ামত পর্যন্ত তোমার সাথে থাকব। এবং সেই বিভৎস চেহারার লোকটির দেহ থেকে সব সময় একটি পঁচা দুর্গন্ধ ভেসে আসতে থাকবে। তারপর রসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, তার জন্য ও দুইটি জানালা খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাত দেখিয়ে বলা হবে মু’মিন হলে তুমি এখানে যেতে পারতে। আর জান্নাত দেখতে পেয়ে তার আফসোস আরো বেড়ে যাবে, কারণ সে এত এত আকর্ষণীয় নেয়ামতের কিছুই লাভ করতে পারবে না। অর্থাৎ সে শুধু শারীরিকভাবেই কষ্ট পাবেনা মানসিকভাবেও আফসোসের কারণে কষ্ট পাবে। তারপর জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হবে এইখানে তুমি যাবে। তখন সে বলবে, ‘ইয়া রাব! বিচার দিবস শুরু কোরো না।
একজন মুসলিম কেও কি ক্ববরে শাস্তি পেতে হবে? হ্যা। ইমাম আল কুরতুবি বলেন, মনে রাখবে কবরের শাস্তি শুধু কাফির বা মুনাফিক্বদের জন্য নয় এটা মুসলিমদের ও তাদের আ’মলে ঘাটতির কারণে ভোগ করতে হতে পারে। তাহলে কি কি কারণে মুসলিমদের ক্ববরের আযাব ভোগ করতে হতে পারে?
সাধারণ ভাবে বলা যায় আ’মলে ঘাটতির কারণেই এটা হবে। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ ও রয়েছে যার কারণে কবরের আযাব ভোগ করতে হবে। প্রথমত, চুরি। অন্যায়ভাবে কারো জিনিস নিয়ে নেয়া এবং ধোঁকা দেয়া। রসুলুল্লাহ(সঃ) এর একজন চাকর ছিল। একসময় তারা জিহাদে ছিলেন। সেই চাকরটি রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য জিন (ঘোড়ার পিঠে যার উপর বসা হয়) ঠিক করে দিচ্ছিল তখন একটা তীর এসে তাকে আঘাত করে এবং সে মারা যায়। তখন মুসলিমরা বলতে শুরু করে, তাকে অভিনন্দন! সে তো জান্নাতে চলে গেল কারণ সে যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেছে। কিন্তু রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, না! আল্লাহ্র শপথ! যেই চাদরটি সে খায়বারের যুদ্ধের সময় চুরি করেছিল তাতে জড়িয়ে তাকে কবরে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। এই লোকটি আল্লাহ রাস্তায় যুদ্ধরত ছিল। সেখানেই মারা যায়। মুসলিমরা বলে যে সে শহিদ হয়ে গেছে অথচ রসুলুল্লাহ বললেন, না! আল্লাহ্র শপথ! যেই চাদরটি সে খায়বারের যুদ্ধের সময় চুরি করেছিল তাতে জড়িয়ে তাকে কবরে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। শুধু একটা চাদর! একটা কাপড়ের টুকরো মাত্র যা সে বিনা অনুমতিতে নিয়ে নিয়েছিল। আর রসুলুল্লাহ(সঃ) বললেন যে এই কারণে তাকে কবরে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে!
সুবহানআল্লাহ! একটা চাদরের জন্য! তাহলে তাদের কি হবে যারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে? যারা মুসলিমদের অধিকার নষ্ট করে অন্যায় ভাবে তাদের টাকা আত্মসাৎ করছে? তাদের ক্ববরে কি হবে? তাদের এই কাজের বিনিময় হবে খুবই নিকৃষ্ট। দুনিয়ায় সামান্য উপভোগের জন্য আত্মসাৎ করা এই টাকায় কোন বারাকাহ থাকেনা। এর বদলে আল্লাহ আপনাকে রোগ ব্যাধি এবং বিপদ আপদে জর্জরিত করে দেবেন যাতে আপনার সব অর্থ এইভাবেই খরচ হয়ে যায়। কারণ এই টাকাতে কোন বারাকাহ নেই। অর্থ সম্পদ এমন এক জিনিস যা আপনার জন্য বিশাল পুরস্কার অথবা কঠিন শাস্তির কারণ হতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি কিভাবে তা খরচ করেন তার উপর। এটা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার তরফ থেকে একটি পরীক্ষা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনাকে পরীক্ষা করে দেখতে চান আপনি কি কৃতজ্ঞ নাকি অকৃতজ্ঞ।
দ্বিতীয়ত, রসুলুল্লাহ (সঃ) (সহিহ বুখারী হতে) দুটি ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এবং তখন তিনি বলেন এই দুটি ক্ববরের লোক দুটিকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তারা এখন সেই শাস্তি ভোগ করছে। কিন্তু রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, তারা তেমন কোন গুরুতর কারণে শাস্তি ভোগ করছেনা বরং তারা তো একারণে শাস্তি ভোগ করছে যে তাদের একজন মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেড়াত, গীবত নামীমা ইত্যাদি করত, আর একজন প্রস্রাবের পর নিজেকে ভালভাবে পবিত্র করতো না। একজন এখানে সেখানে কথা লাগিয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করতো আরেকজন নিজেকে পবিত্র করতোনা। অথচ আমরা জানি যে পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।
তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম কারণ গুলো সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে। রসুলুল্লাহ (সঃ) কখনো কখনো ফজরের পর সলাত শেষে ঘুরে বসতেন এবং সাহাবাগণকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করতেন যে তারা কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছেন কিনা। যদি কেউ স্বপ্ন বলত তবে তিনি তার ব্যাখ্যা বলে দিতেন। একদিন তিনি জিজ্ঞেস করলে সবাই বলেন যে তারা দেখনি। তখন তিনি বলেন আমি দেখেছি। এবং আমরা জানি যে নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওয়াহি, তাঁদের স্বপ্ন সত্য, বাস্তব।
তিনি বলেন আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন দুই জন লোক এসে আমার হাত ধরে এবং আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। তো আমরা এমন একটা লোকের পাশ দিয়ে যাই, যে বসে ছিল এবং কেউ একজন লোহার আংটা দিয়ে তার মুখ এমনভাবে টানছিল যে আংটাগুলো তার মুখ চিরে গলার পাশ দিয়ে বের হয়ে আসছিল। আমি জিজ্ঞেস করি, এ কে? তারা জবাব না দিয়ে আমাকে আরেক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখানে আমি দেখতে পাই, একজন চিত হয়ে শুয়ে আছে এবং তার পাশে একজন একটা পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বড় একটা পাথর। তারপর সেই পাথরটা জোরে শুয়ে থাকা লোকটার মাথায় ছুঁড়ে মারল এবং এতে লোকটার মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল আর পাথরটা গড়িয়ে চলে গেল। পাথরটি আবার কুড়িয়ে আনতে আনতে শুয়ে থাকা এইটুকু সময়ের মধ্যে লোকটির চূর্ণ বিচুর্ণ মাথা আবার আগের মত হয়ে গেল। তারপর সে আবার লোকটির মাথায় একইভাবে আঘাত করে। এবং বার বার সে এই রকমই করতে লাগল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি হচ্ছে? তারা জবাব দিলনা। তারপর তারা আমকে একটা কোণক আকৃতির চুলার কাছে নিয়ে গেল। চুলাটার উপরের দিক ছিল সংকীর্ণ আর নিচে ছিল চওড়া। আর তার ভিতরে কিছু নারী-পুরুষ ছিল। হঠাৎ করে তাদের নিচ থেকে চুলায় আগুন জ্বলে উঠল এবং তাদের পুড়িয়ে দিল। তখন তারা চিৎকার করে উঠে এবং চুলা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল। কিন্তু চুলাটা যেহেতু কোনকের মত ছিল তারা পিছলে নীচের আগুনে পড়ে যেতে লাগল। আমি জানতে চাইলাম কি এটা? তারা উত্তর দিলনা। তারপর আমরা যেতে লাগলাম এবং একটি রক্তের নদী দেখতে পেলাম। সেই নদীতে কেউ একজন সাঁতার কাটছিল। এবং যখনই সেই রক্তের নদী থেকে লোকটি বের হয়ে আসতে চাইত তীরে দাঁড়ানো একজন তার মুখে একটি বিশাল পাথর ছুড়ে মারত এবং তা তাকে ধাক্কা দিয়ে আবারো সেই রক্তের নদীতে ফিরিয়ে নিত। এবং আবার সে বের হয়ে আসতে চাইলে তীরে দাঁড়ানো লোকটি তাকে আবার আরেকটি পাথর ছুড়ে মারলো এবং পাথরটি তাকে ধাক্কা দিয়ে রক্তের নদীতে ফিরিয়ে নিল।
আমি বললাম এইটা কি? উত্তর না দিয়ে তখনই তারা আমাকে তাদের সাথে একটি সুন্দর সবুজ বাগানে নিয়ে গেল। বাগানটির মাঝাখানে ছিল একটি বিশাল গাছ। গাছটির নিকটেই একজন বৃদ্ধ লোক অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে ছিল। এবং পাশে তখন আরো একজন লোক ছিল যার দুই হাতের মধ্যে ছিল আগুন এবং সে আগুনটিকে প্রজ্জলিত করছিল এবং আরো বেশি মাত্রায় পোড়াচ্ছিল। তারপর তারা আমাকে গাছটির উপরে নিয়ে গেল এবং আমরা গাছের উপরে একটি গৃহে প্রবেশ করলাম। আমি এই ঘরের চাইতে সুন্দর ও মনোরম কোন ঘর আগে কখনো দেখিনি। সেই ঘর এ ছিল কিছু বৃদ্ধ বৃদ্ধা তরুন তরুনী ও বাচ্চা। তারপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম এবং তারা আমাকে আরো উপরের একটি রুম এ নিয়ে গেল যেটা ছিল আগেরটির চাইতে আরো বেশী সুন্দর বেশি মনোরম। সেখানে গিয়ে আমি কিছু তরুন ও বৃদ্ধ লোক দেখতে পেলাম।
এরপর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাতে অনেক কিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। এখন বলুন, আমি যা কিছু দেখেছি তার তাৎপর্য কি তারা আমাকে বলল যেই লোকটির মুখে আংটা ছিল যা তার মুখ চিড়ে গলার পাশ দিয়ে বের হয়ে আসছিল সে মিথ্যাবাদী, সে মিথ্যা বলত এবং তার নিকট হ’তে মিথ্যা রটানো হত। এমনকি তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ত। অতএব তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আমাদের মনে হতে পারে একটা মিথ্যা কিভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। আপনি যদি মিথ্যা বলেন এখনকার সময়ে সেটা গনমাধ্যম এর সাহায্যে খুব সহজেই পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর আপনার মুখ থেকে মিথ্যা একবার বের হয়ে গেলে সেটা আর ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব না, যেন একটা উটকে সুঁইয়ের ফুটোর ভেতরে ঢুকানোর চেষ্টা করার মত। একবার যদি তা মুখ থেকে বের হয়ে যায় তাহলেই হল। তাই ঐ ব্যাক্তি যখন মিথ্যা বলে তার পক্ষে আর মিথ্যাটাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয় না এবং তা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিচার দিবস পর্যন্ত এটাই তার শাস্তি। মিথ্যুক এর শাস্তি, মিথ্যা বলার শাস্তি। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন মিথ্যা মানুষ কে দুর্নীতির দিকে পরিচালিত করে আর দুর্নীতি মানুষ কে পরিচালিত করে জাহান্নামের আগুনের দিকে। এবং একজন মানুষ ততক্ষন পর্যন্ত মিথ্যা বলতে থাকবে যতক্ষন না আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
তারপর তারা বললেন, যে ব্যক্তির মাথা পাথরের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা হচ্ছিল, সে ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে কুরআন হতে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও তার নির্দেশ মোতাবেক আমল করত না। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণই করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। এই তিনি এমন এক যে কুরআ’ন শিখেছে, কুরআ’ন অধ্যয়ন করেছে মুখস্ত করেছে কিন্তু রাতের বেলা ইবাদত ও কুরআ’ন তিলাওয়াত করেনি এবং দিনের বেলায় কুরআ’ন এর নির্দেশ মেনে চলেনি। আজকাল কিছু লোক পাওয়া যায়, তাদের কথামত কুরআ’ন হল শুধুমাত্র বারাকাহ যার কোন ব্যবহার নেই। কুরআ’ন তাদের অন্তরে আছে কিন্তু এর ভিত্তিতে তারা তাদের জীবনকে পরিচালিত করেনা। আমরা কুরআ’ন জানি কিন্তু আমরা এর অনুসরন করিনা।এবং কুরআ’ন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার এটাই শাস্তি। কুরআ’ন একটি পবিত্র গ্রন্থ। এতে বারাকাহ আছে কিন্তু সেটা শুধু মাত্র কুরআ’নের নির্দেশ গুলো মেনে চলার মধ্য দিয়ে ই আসে। সুন্দর কাপড় দিয়ে কুরআ’ন কে আবৃত করে তাকের উপর রেখে দিয়ে তার উপর ধুলোর আস্তর তৈরির মাধ্যমে বারাকাহ আসেনা। কুরআ’ন কে অন্তরে ধারন করতে হবে।
তারপর তারা আমাকে বলল, (আগুনের) চুলায় (oven) যাদেরকে দেখেছেন, তারা হ’ল যেনাকারী (নারী-পুরুষ)। বিচার দিবস পর্যন্ত এইটা তাদের শাস্তি। এবং যেই ব্যাক্তিটি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটছিল এবং বের হয়ে আসতে চাইলে পাথর দিয়ে আঘাত করে পুনরায় তাকে রক্তের নদীতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিল সে হল সেই ব্যাক্তি যে সুদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং বিচারদিবস পর্যন্ত এইটাই হল তার শাস্তি। এইটা হল দুনিয়ায় শাস্তি, কবরের শাস্তি, কিয়ামতের দিনের শাস্তি, এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি,এবং দুনিয়ায় সুদ এর সাথে যুক্ত থাকার মধ্যে কোন আনন্দ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পরিশেষে সুদের পরিণতি হবে শুধুই ক্ষতি এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সুদকে দুনিয়া এবং আখিরাতে ধ্বংস করে দিবেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন বিচার দিবসে, যেই ব্যাক্তি সুদ/রিবা নিয়ে কাজ করত সে যখন কবর থেকে বের হয়ে আসবে ফেরেশতারা তাকে অস্ত্র দিয়ে বলবে, যাও, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে যুদ্ধ কর। কারন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা কুরআ’নে জানিয়ে দিয়েছেন যদি আপনি সুদ নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষনা রইল।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনার বিরুদ্ধে বিচার দিবসে এই যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। এবং আপনার সাথে ন্যায়সঙ্গত থাকার জন্য তিঁনি আপনাকে অস্ত্র দিবেন তাঁর সাথে যুদ্ধ করার জন্য। এইটাই হল সুদের ফলালফল। এবং আখিরাতে এর ফলাফল অবশ্যই জাহান্নাম। এটা হল রিবা, সুদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার চূরান্ত পরিণতি।
আমরা নানান উপায় খুঁজি, যুক্তি ফতোয়া খুঁজি সুদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার হুকুম হল আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা দুই ধরনের মানুষ ব্যাতীত অন্য কারূ বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষনা দেননি। কোন ব্যাক্তি যে আল্লাহর আউলিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে-যে আমার আউলিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমি আমি ত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করব।এবং দ্বিতীয় ব্যাক্তি হল সে যে সুদের সাথে সম্পৃক্ত।
তারপর তারা বলতে লাগল যেই লোকটি গাছের নিকটে বসে ছিলেন তিনি হলেন ইব্রাহীম(আঃ) এবং তাকে ঘিরে থাকা শিশু গুলো হল সেই সব শিশু যারা অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে। আর যেই লোকটি আগুন জালাচ্ছিল সে হচ্ছে জাহান্নামের প্রহরী. মা’লিক ! আর গাছের উপরের ঘরটি বিশ্বাসী পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রাখা হয়েছে।এবং তার উপরের ঘরটি হল তাদের যারা শহীদ হয়েছে। এইবার উপরে তাকাও আমি হলাম জিব্রাঈল এবং এ হল মিকাঈল। এবং আর উপরের দিকে তাকাও। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে তাকালেন এবং তিনি বললেন আমি অনেক উপরে আকাশে মেঘের মত কিছু একটা দেখতে পেলাম.তারা আমাকে বলল এইটা আপনার বাড়ি। আমি তাদের কে বললাম আমাকে সেখানে ভ্রমন করতে দাও। তারা বলল না! এখনো দুনিয়াতে আপনার জীবনের কিছু অংশ ব্যয় করা বাকি আছে তারপরে আপনি আপনার বাড়িতে ভ্রমন করতে পারবেন। গাছের উপরের ঘরটি হল সেই সকল বিশ্বাসীদের জন্য যারা দুনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তারো উপরের ঘরটি হল শহীদদের জন্য। এইটা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে শহীদদের দেয়া সম্মান। এবং তারপর অনেক উপরের বাড়িটি যা চোখে পর্যন্ত দেখা যায় না সেটা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানবজাতির নেতা, আদর্শ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্য রেখেছেন।
কিছু বিষয় আছে যেগুলো কবরের শাস্তির কারণ হতে পারে যেমন ঋণ এর মধ্যে থাকা। একটি হাদিসে আছে যখন সাহাবাদের মধ্যে একজন মারা গেলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)তার ভাইকে বললেন যাও, তোমার ভাই এর ঋণ শোধ কর কারন ঋণের জন্য তোমার ভাই এর জান্নাতে যাওয়া থেমে আছে। সে ততক্ষন জান্নাতে যেতে পারবেনা যতক্ষন না ঋণ থেকে মুক্তি পাবে। সুতরাং ঋণ সেই সাহাবী কে ঘিরে ফেলবে এবং এবং ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে যাওয়া থেকে আটকে রাখবে। তাই রাসূলুল্লাহ্(সাঃ) তার ভাইকে বলেছিলেন “শোধ কর। তোমার ভাই এর ঋণ শোধ কর।“
আরো একটি বিষয় আছে যা মৃতের ক্ষতি করতে পারে এবং তা হল তার পরিবারের মাত্রাতিরিক্ত কান্না। যদি আপনি মারা যান এবং আপনার পরিবার অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে তা আপনাকে ব্যথা দিবে কারণ যখন উমার ইবন খাত্তাব(রাঃ) আহত হলেন এবং মারা যাচ্ছিলেন সুহাইব আর রুমি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন সাথি ও সাহাবি আশেপাশেই ছিলেন , তিনি এসে দেখলেন উমার ইবন খাত্তাব(রাঃ) মারা যাচ্ছেন। তা দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করে দিলেন। উমার ইবন খাত্তাব(রাঃ) চাননি তার জন্য কেউ কাঁদুক। কান্নার সাথে সাথে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগল এবং তিনি বলতে লাগলেন আমি ঠিক আছি এটাই স্বাভাবিক। আমাদের ভালবাসার কোন মানুষ যখন আমাদের কে ছেড়ে চলে যাবে এইটা স্বাভাবিক যে আমাদের খারাপ লাগবে আমরা দুঃখ পাব কিন্তু সেটা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায় কিংবা আমরা যেন ধৈর্য হারিয়ে না ফেলি। কারন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের কে ধৈর্যশীল দেখতে চান। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর চোখ থেকেও অশ্রু ঝড়ত যখন তার ভালবাসার কেউ মারা যেতেন কিন্তু তিনি কখনই নিজেকে বা সাহাবাদেরকে কারো জন্য অতিরিক্ত কান্নাকাটি করার অনুমতি দেননি।
কি রক্ষা করতে পারে কবরের শাস্তি থেকে?
প্রথমত ভাল কাজ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) একটি হাদিসে বলেন যখন মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করা হয়, সে কবরে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায় যারা তাকে রেখে চলে যাচ্ছে। এবং মানুষ গুলো চলে যাওয়ার পর তার ভাল কাজ গুলো তাকে ঘিরে ফেলবে। সালাহ তার মাথার নিকটে আসবে। সাওম তার ডান পাশে চলে আসবে। এবং যাকাত তার বাম পাশে চলে আসবে ও অন্যান্য ভাল কাজ গুলো তার পা এর নিকটে চলে আসবে। যখনই লোকটিকে মাথার দিক থেকে আক্রমন করা হবে সালাত বলে উঠবে, না ! তুমি এই দিক থেকে আসতে পারবেনা। এবং আক্রমন যখন হবে ডান দিক থেকে সাওম বলে উঠবে না ! তুমি এই দিক থেকে আসতে পারবেনা। যাকাত বলে উঠবে তুমি এই দিক থেকেও আসতে পারবেনা। অন্যান্য ভাল কাজ গুলো বলবে তুমি পা এর দিক দিয়ে আসতে পারবেনা। এবং তারা নিরাপত্তা প্রদানের জন্য চতুর্দিক থেকে লোকটিকে ঘিরে একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে।
দ্বিতীয়ত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাওয়া। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, যখন তুমি তাশাহুদ পড়বে তখন আল্লাহর নিকট ৪ টি জিনিস থেকে আশ্রয় চাইবে। আল্লাহর নিকট জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাও। আশ্রয় চাও কবরের শাস্তি থেকে। জীবন এবং মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং ভন্ড মসীহ, আদ-দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে।
তাশাহুদ এর পর ও সালাম ফিরানোর পূর্বে এই গুলো হতে আল্লাহর কাসে আশ্রয় চাওয়া সুন্নাহ। আপনি সালাতে তাশাহুদ এবং দুরুদ পাঠ করা শেষে আল্লাহর নিকট এই বিষয় গুলো থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। আমাদের কে আল্লাহর নিকট এই চারটি বিষয় থেকে ক্রমাগত আশ্রয় চাইতে হবে।
তারা কারা যারা কবরের পরীক্ষা,ফিতনা থেকে নিষ্কৃতি পাবে? কবরের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবেনা? এই তালিকার শীর্ষে আছে আশ-শাহীদ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, একজন শহীদের ৬ টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন।
১। তার শরীর থেকে প্রথম রক্ত বিন্দু বের হয়ে আসার সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে।
২। জান্নাতে তার স্থান সে দেখতে পাবে।
৩। কবরের শাস্তি থেকে সে রক্ষা পাবে।
৪। সবচাইতে ভীতিকর দিন বিচার দিবসের ভয় হতে রক্ষা পাবে।
৫। প্রশান্তির মুকুট তার মাথায় পড়ানো হবে, যার প্রতিটি পান্না এই দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল কিছুর চাইতে মূল্যবান । এবং বাহাত্তর জন হুর আল আইন এর সাথে তার বিয়ে দেয়া হবে।
৬। তাকে তার আত্মীয়স্বজনদের মধ্য থেকে সত্তর জনের জন্য শাফা’আ চাইবার অনুমতি দেয়া হবে।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একজন শহীদ কে এই ৬ টি বৈশিষ্ট দিয়েছেন। সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন জানতে চাইলেন ও আল্লাহর রাসূল এইটা কেমন করে সম্ভব যে প্রত্যেক বিশ্বাসী কে কবরের পরীক্ষা ও ফিতনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে অথচ শহীদ দের যেতে হবে না? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) উত্তরে বললেন, মাথার উপর তরবারির ঝলকানিই তার জন্য যথেষ্ট ফিতনা। যুদ্ধের ময়দানে যখন তরবারি গুলো তার মাথার উপরে চকচক করতে থাকে, ক্ষীণ আলো সে তরবারি গুলোতে প্রতিফলিত হতে থাকে, এবং প্রতিটি মুহুর্তে সে মৃত্যুকে দেখতে পায়, এটাই একজন শহীদের জন্য ফিতনা। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে কবরে আনন্দ ও প্রশান্তি দান করবেন। এবং আমরা এই ব্যাপারটিকে আজ আগুনের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য বলব। বিস্ফোরণ মিসাইল এবং বুলেট, যেগুলো আল্লাহর জন্য যুদ্ধরত মুজাহিদ ও যোদ্ধাদের কাছ ঘেঁষে অতিক্রম করে, এগুলো হচ্ছে তাদের জন্য ফিতনা। এবং যখন তারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করবে, তারা তাদের কবরে প্রশান্তি লাভ করবে। কারন তারা ইতোমধ্যে যথেষ্ট পরিমান ফিতনার মধ্যে দিয়ে গেছে। তারা ফিতনার মধ্য দিয়ে গেছে যখন তারা যুদ্ধের মাঝ ময়দানে অবস্থান করছিল।
এক জন সৈন্য যে বাড়ি থেকে সুদূরে মুসলিমদের প্রতিরক্ষায় ধৈর্যশীলতার সাথে তার পদে প্রহরারত আছে। যুদ্ধের নির্দেশ এর জন্য অপেক্ষা কছে। তাকে বলা হয় মুরাবাত। মুরাবাত এসেছে রাবাত থেকে, রাবাত হল কোন কিছুকে বেধে রাখা। এবং মুরাবাত হল এমন একজন যাকে সেই পদটিতে নিযুক্ত করা হয়েছে – যা সে ত্যাগ করতে পারবেনা। অনেকটা এমন যে আপনি আপনার উট বা ঘোড়া কে বেঁধে রেখেছেন। সেই রক্ষীকে, সৈন্যটিকে পদটি নিতে হবে এবং দিনে ও রাতে তা রক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে। এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। এবং এই কারনে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা মুরাবাত কে একটি বিশেষ পুরুস্কার দিচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)বলেন প্রত্যেক ব্যাক্তির কাজ তার মৃত্যুর মুহুর্তে থেমে যায় শুধু মাত্র একজন ব্যাতীত এবং তিনি হলেন সেই ব্যাক্তি যে রাবাত হিসেবে মৃত্যু বরণ করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা তার কাজ চলমান রাখবেন এবং বিচার দিবস পর্যন্ত সেগুলো বেড়েই চলবে এবং কবরের ফিতনা থেকে সে নিষ্কৃতি পাবে। যা একজন মুরাবাত এর পুরুস্কার।
সর্বশেষে আরো একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে ব্যাক্তি জুমা’আর দিনে মৃত্যুবরণ করবে সেও এই সম্মান লাভ করবে এবং হাদিস টি হাসান। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)বলেন কোন মুসলিম, যে শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা তাকে কবরের শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি দিবেন।
সাল্লাল্লাহু আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাহবিহী ওয়া সাল্লাম তাসলীমান কাসীরাহ