নম্বর ৮, শান্তির প্রসার, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, শান্তির প্রসার ঘটবে, আবার এও আছে যে ফিতনার প্রসার ঘটবে। এবং এ দু’টো একই হাদীসে বলা আছে, অতঃএব এগুলো অবশ্যই ভিন্ন সময়ে ঘটবে। যখনই ইসলাম থাকবে, তখন শান্তি বজায় থাকবে। আর যখন মানুষের উপরে ধর্মের প্রভাব কমে যাবে, দীন মানার প্রবণতা কমে যাবে, তখন দুর্নীতি ও ফিতনা বৃদ্ধি পাবে, হত্যা বৃদ্ধি পাবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু হাদীসে এই শান্তি প্রসার সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। যেমন তাদের একটি হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা্ম কাবায় হেলান দিয়ে বসেছিলেন। খাব্বাব রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন এবং মক্কায়, ইসলামের প্রাথমিক বছর গুলোতে সাহাবারা যে কঠিন সময়ের মোকাবেলা করছেন সে ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফরিয়াদ জানালেন, ‘আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না ?’ রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোজা হয়ে বসলেন এবং তার চেহারাতে স্পষ্টত রাগ দেখা যাচ্ছিলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে কিছু লোককে ধরে আনা হতো, জমিতে গর্ত খোঁড়া হতো, সেখানে ঢুকাবার পর একটি করাত আনা হতো, তাদেরকে সেই করাত দিয়ে দু’টুকরা করা হতো, তবু তারা তাদের দ্বীন ছাড়তো না। তারপর তারা আরেকজন মুসলিম কে ধরে নিয়ে আসত এবং লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে থাকত, যতক্ষণ না তাদের হাড় থেকে মাংস আলাদা হয়ে যেত। কিন্তু তারপরেও সে তার দ্বীন ছাড়তো না। কিন্তু তোমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছো।’ যদিও খাব্বাব ও অন্যান্য সাহাবারা বিভিন্ন প্রকার অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তার পরেও রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘তোমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, ব্যতিব্যস্ত হয়ো না, আল্লাহ প্রদত্ত বিজয় আসবেই।
রসূলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্বে এমন লোক ছিলো যাদেরকে তোমাদের চেয়েও কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’ চিন্তা করে দেখুন, কারো মাথায় একটি করাত ধরা হয়েছে তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলার জন্য, কিংবা লোহার চিরুনি দিয়ে তার হাড় মাংস আলাদা করা হচ্ছে। চিন্তা করে দেখুন তাদের কষ্টের মাত্রা, কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও তারা তাদের দ্বীন ত্যাগ করেনি। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আল্লাহ এই দ্বীন পরিপূর্ণ করবেনই, তিনি এই দ্বীনকে বিজয় দান করবেনই, যখন এমন সময় আসবে, একজন সফরকারী সানআ’ থেকে হাজারমাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, কিন্তু সে আল্লাহ ও নেকড়ে ছাড়া আর কাউকেই ভয় করবে না।’ সানা ও হাদরামাউত অঞ্চলে শান্তি বিরাজমান থাকবে। সে সময়ে ইয়েমেনও আরবের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই একটি উপজাতীয় অঞ্চল ছিলো। সেখানে নিরাপত্তার অভাব ছিলো। আপনি যদি ভ্রমনে বের হতেন তবে আপনাকে সাথে নিরাপত্তা রক্ষী রাখতে হতো। যখনই কোন যাত্রীদল এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যেতো সেনাবাহিনীর একটি দলকে সেটার নিরাপত্তা প্রদান করতে হতো। রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, ‘মুসাফিররা আল্লাহ ও নেকড়ে জাতীয় শ্বাপদ প্রাণী ব্যতিত অন্য কাউকে ভয় না করেই হাদরামাউতের উদ্দেশ্যে সানা ত্যাগ করতে পারবে, এবং এটা ইসলামের প্রাথমিক বছরগুলোতে ঘটেছিলো, ভবিষ্যতেও এটা একইভাবে ঘটবে।’ অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, ‘এমন এক সময় আসবে যখন আরবের ভূমিসমূহ নদ-নদী ও বনজঙ্গলের ভূমিতে পরিণত হবে, হয়ে উঠবে সবুজ । মুসাফিররা তখন শুধুমাত্র হারিয়ে যাওয়ার ভয় ব্যতিরেকে অন্য কাউকে ভয় না করেই মক্কা এর উদ্দেশ্যে ইরাক ত্যাগ করবে।’
তৃতীয় একটি হাদীছ আছে যা আহমাদ এবং বুখারী বর্ণনা করেছেন। আদি ইবনে হাতেম রাসূলের (সাঃ) সাক্ষাতে এসেছিলেন। আদি ইবনে হাতেম ছিলেন উত্তর আরবের বড় একটি খৃষ্টান গোত্রের সর্দার এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার বাবা হাতেম আত-তা’ই একজন দয়ালু হিসেবে খুবই বিখ্যাত ছিলেন। যাই হোক, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে দেখা করতে আসলেন এবং তখন তার বুকের উপর একটি ক্রুশ ঝুলছিলো। রাসূল (সাঃ) বললেন, “তারা তাদের আহবার (যাজক) ও রুহবানদের (সন্ন্যাসীদের) ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে,” এবং এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তার মধ্যে কথোপকথন শুরু হলো। যা ঘটলো তা হচ্ছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে বসে ছিলেন এবং এক লোক সাহায্য চেয়ে সেখানে উপস্থিত হলো। সে সময় মুসলিমরা দারিদ্রতা ও কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আদি বিন হাতেমকে দাওয়াহ দিচ্ছিলেন আর আদি মুসলিমদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন – সাধারণ দরিদ্র মানুষ, যাদের অনেকেই ছিলো দাস, অনেকেই সম্ভ্রান্ত গোত্র থেকে আসেনি আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দাওয়াহ দিচ্ছিলেন এমন এক মানুষকে যিনি একটি বিখ্যাত পরিবারের সন্তান, অনেক সম্পদশালী এবং তার গোত্রের সর্দার। এজন্য তিনি সম্ভবত চিন্তা করছিলেন যে, ইসলাম তার জন্যে নয় বরং দরিদ্র লোকদের জন্যে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এটা খেয়াল করলেন এবং তিনি আদি ইবনে হাতেমকে বললেন, আমাদের এ দারিদ্রতা ও দুর্দশার যা দেখছো তার উপর ভিত্তি করে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ো না। এমন এক সময় আসবে যখন এই উম্মতে প্রাচুর্য ও নিরাপত্তা এতো বেশি থাকবে যে একজন মহিলা মক্কার উদ্দেশ্যে আল-হেরা ত্যাগ করবে এবং সে একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত আর কাউকে ভয় করবে না। আদি ইবনে হাতেম বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে যখন বলছিলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, তা’ইর ডাকাতদের কি হবে? তার গোত্র ছিলো তা’ই এবং সেজন্য তিনি তার গোত্রকে ভালোভাবেই চিনতেন। তারা ছিলো সশস্ত্র ডাকাত। তারা ঐ অঞ্চল দিয়ে গমনকারী যেকোন ভ্রমনকারীকে ডাকাতি করতো। এমন কেউই ছিলো না যারা তাদেরকে কর না দিয়ে ঐ অঞ্চল দিয়ে যেতে পারতো। তারা লোকদেরকে হত্যা করতো। এরা ছিলো মরুর নীতিবিবর্জিত একটি অপরাধীদল। এবং তিনি গোত্রের সর্দার হওয়ার সুবাদে তার গোত্রের লোকজনকে ভালোভাবেই চিনতেন। তিনি নিজেই নিজেকে বলছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে এসব কি বলছেন? কেমন করে একজন মহিলা একাকী মক্কার উদ্দেশ্যে আল-হেরা ত্যাগ করতে পারে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে ভয় না করেই? ডাকাত আর তা’ই গোত্রের কি হবে? আদি ইবনে হাতেম বললেন, জীবিত অবস্থায় সে নিরাপত্তার বাস্তবায়ন আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি। এ হাদীসটি এর কিছু অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছে মাত্র। তিনি বললেন, আমরা ডাকাত ও তা’ই গোত্রের ছিলাম, যারা এই ভূমিতে হিংসার আগুন প্রজ্বলিত করে রেখেছিল। এরপর সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হল, তবে সমগ্র দুনিয়াতে শান্তির সম্পুর্ণরুপে বিস্তার ‘ঈসা ইবনে মারইয়াম এবং আল-মাহদির সময়ে বিরাজমান থাকবে। আমরা ঐ শান্তিময় অবস্থার কিছুটা অংশ ক্ষুদ্র ও টুকরো টুকরো অবস্থায় দেখেছি কিন্তু ঐ সম্পুর্ণ নিরাপত্তা আমাদের এখনো দেখতে বাকী আছে যা ‘ঈসা ইবনে মারইয়ামের সময়ে প্রতিষ্ঠিত হবে।**
৯ম আলামতটি হচ্ছে হিজাজে একটি আগুনের আবির্ভাব হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, কিয়ামত ততক্ষন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না হিজাজ থেকে একটি আগুন বেরিয়ে আসে এবং এটার আলোয় বুসরার ঊটের গলা পর্যন্ত দৃশ্যমান হবে। বুসরা হচ্ছে শামে অবস্থিত সিরিয়ার একটি শহর। এটা ইরাকে অবস্থিত আল-বাসরা নয়, এই বুসরা শামের সিরিয়াতে। এই আগুন হিজাজ থেকে বেরিয়ে আসবে। মক্কা থেকে মদীনা এবং উত্তরে তায়েফ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলই হচ্ছে হিজাজ। হিজাজ থেকে একটি আগুন বেরিয়ে আসবে এবং তা এতো বিশাল হবে যে তার আলো শামের সিরিয়াতে পর্যন্ত দৃশ্যমান হবে যা শত শত মাইল দূরে অবস্থিত। এই আলামতটি ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়ে গেছে। এই আগুন আসলে একটি আগ্নেয়গিরি ছিলো। একটি আগ্নেয়গিরি যা মদীনার নিকটবর্তী ছিলো। এবং এটা ইমাম নববীর সময়ে দেখা গিয়েছিলো। ইমাম নববী (রঃ) বলেন, ৬৫৪ হিজরীতে একটি বিশাল আগুন মদীনা থেকে বেরিয়ে আসে। ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন, বেদুইনরা তাদের উটের গলায় সে আলোর ঝলকানি দেখতে পেয়েছিলো। আলোর ঝলক যা ছিলো বজ্রের মতো। ইবনে হাজার (রঃ) বলেন, আমরা মনে করি যে এই অগ্নুৎপাত যা মদীনায় ঘটেছিলো এটাই সেই আগুন/আগ্নেয়গিরি যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন এবং যা আল-ক্বুরতুবি এবং অন্যান্য ‘উলামারা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং, এই আলামতটি ইতিমধ্যে মদীনায় ৬৫৪ হিজরিতে সংঘটিত হয়ে গেছে।
তুর্কিদের সাথে যুদ্ধ নিয়ে ১০ম আলামতের কথা বলা হয়েছে।
তুর্কি লোকজন, যারা আনাতোলিয়ায় (যা তুরস্কে অবস্থিত) বাস করে শুধুমাত্র তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে না, যারা তুর্কমেনিস্তান অর্থাৎ মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসন করে এসেছে তাদের কথা বলা হচ্ছে। তুর্কমেনিস্তানের লোকজন এরা একটি বড় গোত্রের অংশ এবং যা চীন থেকে শুরু করে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এবং তাদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাসুল(সাঃ) বলেছেন যা বুখারি হতে বর্ণিত, “কেয়ামত তখন পর্যন্ত আসবে না যতক্ষণ না তোমরা তুর্কি লোকজনের সাথে লড়বে। যাদের চোখ ছোট, লাল মুখ এবং চ্যাপ্টা নাক এবং যাদের মুখমণ্ডল চামড়ার ঢালের মত। কেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত আসবে না যতক্ষণ না তোমরা সেই লোকদের সাথে যুদ্ধ করেছ যাদের জুতা পশম দ্বারা তৈরি।”
রাসুল (সাঃ) তাদের একটি বর্ণনা দিয়েছেন যে, তাদের গোলাকার মুখমণ্ডল, ছোট চোখ এবং নাকগুলো সমতল এবং এই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন লোকরা বাস করে বিশেষত মঙ্গোলিয়া এবং তাতারস্তানের দিকে এবং এটাই তাদের চেহারার বর্ণনা যা সাদাটে রঙের সাথে লালচে বর্ণের এবং ছোট চোখ বিশিষ্ট এবং তারা উটের পশমে নির্মিত জুতা ও কাপড় ব্যাবহার করে। সুবহানাল্লাহ এটা হাদিস বা রাসুল(সাঃ) এর মুজেজা, যে লোকদের সাথে মুসলমানরা লড়েছিল তাদের বর্ণনার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। এই যুদ্ধ বেশ আগে থেকে শুরু হয় এবং মুসলিম এবং তুর্কি উপজাতির মধ্যে দীর্ঘকাল চলতে থাকে এবং পরবর্তীতে যা ঘটেছিল যারা মঙ্গলিয়ান বলে পরিচিত তারা মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং সত্যিকার অর্থেই মুসলিম দুনিয়াকে ধ্বংস করে দেয় চেঙ্গিস খান, তৈমুর লং এবং হালাকু খানের নেতৃত্বে। শুধু যে তারা মুসলিম দুনিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিল তা নয়, তারা পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্য দিয়েও গিয়েছিল। তারা যেখানে গিয়েছিল সেখানেই জয়ী হয়েছিল এবং তারা খুব শক্তিশালী ও বলশালী ছিল।
বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে তাদের ছিল খুব শক্তিশালী একটি ঘোড়সওয়ার বাহিনী এবং সুবহানাল্লাহ যখন তারা বাগদাদে প্রবেশ করেছিল পুরো বাগদাদকে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করেছিল। বলা হয় দুই মিলিওন(বিশ লাখ) মানুষকে তারা হত্যা করেছিল এবং তারা মৃতের মাথার খুলি দিয়ে পিরামিড তৈরি করে মুসলিমদের নিয়ে উপহাস করেছিল।
তারপর তারা বাগদাদের লাইব্রেরীতে যায় এবং বলা হয়ে থাকে যে, সেখানকার সব বই নেয় যা তারা নদী পাড় হবার জন্য সেতু হিসেবে ব্যাবহার করে। অনেক বই যা ছিল মৌলিক যা অনেক মুসলিম মনিষীদের চিন্তার ফসল এবং এগুলোর অনেকগুলোই ছিল পাণ্ডুলিপি যার আর কোন কপি ছিল না কারন তখন মুদ্রণযন্ত্র ছিল না।আর বাগদাদের লাইব্রেরী ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী। বলা হয়ে থাকে নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছিল কারন বইয়ের কালি নদীর পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
সুবহানাল্লাহ!! রাসুল(সাঃ) আরো বলেছিলেন, তোমরা কিছু লোককে পাবে যারা ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শত্রু এবং তারা এ ধর্মের নিকৃষ্ট শত্রু থাকবে যতক্ষণ না তারা ইসলামে প্রবেশ করে এবং যারা জাহেলিয়াতের যুগে যারা শ্রেষ্ঠ ছিল তারা ইসলামেও শ্রেষ্ঠ হবে যদি তারা শিখতে(ইসালামকে বুঝতে) পারে।
এই মঙ্গোলিয়ান লোকেরা বিজয়ী হয়েছিল এবং তারা মুসলিম বিশ্বের শাসক হয়েছিল এবং তারা ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহন করেছিল। আজকে আপনি কোথাও দেখবেন না যে বিজয়ীরা পরাজিতদের ধর্ম রীতি নীতি অনুসরণ করছে বরং উল্টোটাই দেখবেন যে, পরাজিতরা বিজয়ীদের ধর্ম পালন করছে।আপনি পাবেন যে একটি পরাজিত রাষ্ট্রের নাগরিকেরা শক্তিশালী ও বিজয়ীদের অনুকরন করা শুরু করে। কিন্তু মঙ্গোলদের বেলায় এ প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্নতর।
একসময় তারা মুসলিম বিশ্বকে শাসন করেছে ও তারা একসময় সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু ,সুবহানাল্লাহ!! শেষ পর্যন্ত তারা মুসলিম হয়েছিল। যদিও তাদের ব্যাক্তিত্ব পরিবর্তনের জন্য লম্বা সময় প্রয়োজন হয়েছিল। ইবনে তাইমিয়ার সময় পর্যন্ত যখন তাতাররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল যদিও ততদিনে তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিলো, তারপরেও তারা মুসলিম বিশ্ব ধ্বংস করে যাচ্ছিলো। তাদের ইসলাম গ্রহন করে দ্বীন কে বোঝতে শেখার ব্যাপারে তাদের বেশ সময় লেগেছিলো।
এবং উসমানী বা অটোমান খিলাফাহ কারা ছিল? তারা এই তুর্কিরাই। কিভাবে তারা খিলাফা লাভ করল? এই ছোট ছোট তুর্কি গোত্র যারা মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসী হয়ে তুরস্ক পর্যন্ত যা বাইজে ন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল সেসময়। এবং সেটা ছিল পূর্ব রোমান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য। তুর্কিদের ছোট গোত্রই সেখানে যায় এবং আনাতলিয়ায় বসতি স্থাপন করে। তারা অনেক জায়গায়ই বসতি স্থাপন করে যা রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।যদিও তারা ছোট গোত্র ছিল তারা তাদের চারপাশের রোমানদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে এবং তারা এ গ্রাম ঐ গ্রাম এবং শহর পর্যন্ত যুদ্ধ করে।এই ছোট ছোট যুদ্ধ এখানে সেখানে তাদের প্রভাব বিস্তার করে এবং ধীরে ধীরে তাদের অধিকৃত এলাকা বাড়তে থাকে, বড় হতে থাকে যতক্ষণ না তারা রোমান সাম্রাজ্যকে সম্পূর্ণ দখল করে নেয়। তারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেছিল যদিও তারা শুধুমাত্র একটা গোত্র ছিল। এবং তারা প্রসার লাভ করে ও খিলাফতের অধিকারী হয়।এবং এ ক্ষুদ্র গোত্র বাড়তে বাড়তে একসময় মুসলিম বিশ্বকে শাসন করে।এবং এরাই সেই লোক রাসুল (সাঃ) যাদের কথা হাদিসে বর্ণনা করেছেন।
সুবহানাল্লাহ!! আপনারা জানেন যে, রাসুল(সাঃ) বলেছিলেন “তোমরা ইসলামের কিছু নিকৃষ্ট শত্রুকে পাবে যারা সর্বোৎকৃষ্ট মানুষে পরিণত হবে যেমন উমার ইবনুল খাত্তাব(রাঃ)।শুরুতে তিনি ইসলামের বড় শত্রু ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি সাহাবাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবীতে পরিণত হন।
১১নং আলামত – আস্থা হারানোঃ
শেষ বিচারের দিনের উপর আস্থা হারানো অসৎ লোকদের একটি চিহ্ন। কিন্তু এখানে একটি বিশেষ ধরনের অসাধুতার কথা বলা হয়েছে। রাসুল(সা) বলেছেন, বুখারি হতে বর্নিত, ‘‘ যদি আস্থা হারিয়ে যায় তবে কিয়ামত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। এবং এটাই পৃথিবীর শেষ পর্যায়। সাহাবা (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ আস্থা হারানো কি? এটি কিভাবে হারিয়ে যাবে?’’।রাসুল(সা) বলেন,“ যখন শাসন ক্ষমতা দেওয়া হবে অযোগ্যদের। তখন কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা কর। যখন নেতারা সুফাহাত হবে। সুফাহাত হল এমন লোক যাদের চিন্তার অভাব আছে। যারা ফিকহ ও দ্বীন সম্পর্কে অবুঝ। যখন তারা নেতা হবে তখন তোমরা কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা কর।”
সুবাহানআল্লাহ! শাসন ক্ষমতা ও নেতৃত্বের বিষয়ে অপর হাদিসে রাসুল (সা) বলেছেন; “ যদি তোমরা শাসন ক্ষমতার নেতৃত্বে এমন কাউকে বসাও এমনবস্থায় যখন তার থেকে উক্ত পদের জন্য যোগ্য লোক বর্তমান তবে তোমরা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করলে।’’
কাউকে নিয়োগ করা, কাউকে ভোট দেওয়া এবং কাউকে শাসন ক্ষমতার ও নেতৃত্বের স্থানে নিয়োগ দেওয়া যখন তার চেয়ে অধিকতর যোগ্য লোক বর্তমান,যে কাজটি উত্তম ভাবে করতে পারে, যার দ্বীন সম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে তবে তা মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করার নামান্তর। সে জন্যই নেতৃত্বের পদ একটি আস্থা। এটি একটি আমানত এবং আমরা দেখতে পাই যে আমানত বিনষ্ট হয়েছে। আস্থাও বিনষ্ট হয়েছে। যে লোকদের দ্বীনের জ্ঞান নেই, তাদের মনে কোন দয়া-মায়া বা লোকদের জন্য ক্ষমা নেই। তারা যে জায়গার নেতা হয় সে দেশ আস্থা হারায়। এতই কেয়ামতের একটি লক্ষণ। আমরা এমন অনেক ঘটতে দেখেছি।
১২নং আলামত – জ্ঞানকে উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং মুর্খতার প্রসার ঘটবেঃ
রাসুল(সা) বলেছেন, বুখারি হতে বর্নিত, “কেয়ামতের কিছু নিদর্শন হল জ্ঞানকে উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং মুর্খতা তার স্থান দখল করবে। সাহাবা (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তবে কি জ্ঞানীরা রাতে ঘুমিয়ে পরবেন এবং সকালে জেগে দেখবেন সহসা তাদের জ্ঞান কেড়ে নেওয়া হয়েছে?” রাসুল(সা) বললেন, “আল্লাহ তার বান্দাদের থেকে দ্বীনের জ্ঞান তুলে নেন না। বরং জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের মৃত্যুর মাধ্যমে তুলে নেন। এমনকি যখন কোন জ্ঞানী আলিম অবশিষ্ট থাকে না তখন মুর্খ লোকদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা না জেনে রায় দেয়। তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।”
রাসুল(সা) বলেছেন আল্লাহ তার বান্দাদের হৃদয় থেকে ধর্মীয় জ্ঞান তুলে নেন না। বরং জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের আত্মাকে মৃত্যুর মাধ্যমে তুলে নেন। অর্থাৎ যখন জ্ঞানীরা মারা যাবেন তখন লোকজন মুর্খদের কাছে যায়। তাদের মুফতি বানায় যাদের দ্বীন সম্পর্কে বুঝ নেই। তারা ভুল পথে পরিচালিত এবং অন্যদেরও ভুল পথে পরিচালনা করে। আমারা আজকে উম্মাহর মধ্যে অনেক নতুন বেদাত প্রচলিত দেখতে পাই যা অনেকে ইবাদাত হিসেবে পালন করে। মানুষ একাজ করে কারণ ভুল ফতোয়া, যা তথাকথিত পণ্ডিতদের দ্বারা প্রদত্ত রায় দ্বারা সৃষ্ট। দুর্ভাগ্যবশত ফতোয়ার বিষয়টিকে আজকাল হাল্কা করে দেখা হয়।
সাহাবা (রাঃ) দের সময়ে তাঁরা কোন ফতোয়া দেওয়া থেকে দূরে থাকতেন। তাঁরা ফতোয়া দেওয়া পছন্দ করতেন না। এই দায়িত্ব থেকে তাঁরা এড়িয়ে যেতে চাইতেন। একজন তাবেঈ বলেছেন, “আমি ৩০জনেরও বেশী সাহাবা (রাঃ) কে একই মসজিদে দেখছি , যখন তাদের কাছে এসে কেউ কোন প্রশ্নের উত্তর চাইতেন তাঁরা সবাই তাঁদের পাশের জনকে দেখিয়ে দিয়ে বলতেন, “আমার কাছে এর জবাব নেই, যাও অন্য সাহাবীকে জিজ্ঞাসা কর।” অন্য সাহাবীরাও এভাবে পাশের জনকে দেখিয়ে দিতেন। আর এখন বর্তমান সময়ে, দেখা যায়, যে প্রশ্ন এখনো জিজ্ঞাস করা হয়নি আমরা পারলে তারও উত্তর দিয়ে দেই। আমরা উত্তর দেওয়ার জন্য দৌড়ে যাই আর তাঁরা উত্তর দেওয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতেন, কারণ তাঁরা জানতেন এটা একটা দায়িত্ব। উমার ইবনে খাত্তাবকে একবার একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি প্রশ্নকারীকে জিজ্ঞাস করলেন, এটা কি ঘটেছে ? সে বলল না। তিনি বললেন, “ঠিক আছে তাহলে চলে যাও, যখন এটা ঘটবে তখন এসে আমার কাছে জিজ্ঞাস করবে। আমি বদরের সাক্ষী সাহাবীদের তলব করব, তাঁদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করব। আমি নিজে কোন ফতোয়া দিব না।” তাঁরা তাত্ত্বিক কিছু নিয়ে অর্থাৎ যে ঘটনাটা এখনো বাস্তবে ঘটেনি, এমন সমস্যা নিয়ে, তার সমাধান কি হবে, এগুলো নিয়ে চিন্তাও করতে চাইতেন না। এখন আমরা অনেক তাত্ত্বিক প্রশ্ন করি। আমরা এমন সব প্রশ্ন করি যার ব্যবহারিক কোন প্রয়োগ নেই। আর সাথে সাথে আমরা স্বেচ্ছায় উত্তরও দেই। সুবহানআল্লাহ্ একবার ইমাম মালিকের কাছে একলোক এসেছিলেন অনেক পথ অতিক্রম করে মরক্কোর আল-মাগরিব থেকে। কিছু বর্ণনায় আছে, তিনি আন্দালুস থেকেও আসতে পারেন , আল্লাহ্ আলম। এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তিনি ইমাম মালিকের কাছে এসেছিলেন ৪০ টি প্রশ্ন নিয়ে। ৪০ টার মধ্যে ৩৬ টাতেই ইমাম মালিক উত্তর দিয়েছিলেন, আল্লাহু আলম আমি জানি না, আল্লাহ্ই ভাল জানেন । তিনি মাত্র ৬টা বা ৪টা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। লোকটি বলল, আমি এতদূর মরক্কো থেকে আপনার কাছে এসেছি আল্লাহু আলম, আমি জানি না, এটা শুনতে ?!! যখন আমি ফিরে যাব তখন আমি আমার মানুষদের কি বলব ? ইমাম মালিক বললেন, তাদের বলে দাও ইমাম মালিক বলেছেন তিনি জানেন না। এই হলেন ইমাম মালিক। তিনি ৪০ টার মধ্যে ৩৬ টা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন আমি জানি না। সুবহানআল্লাহ্ আমি এমন কিছু মানুষের কথা জানি যাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ভুল ফতোয়ার কারনে। তাঁরা এমন কাউকে জিজ্ঞেস করে যে, সে এমন কোন একটা ভুল ফতোয়া দেয় যা সেই মানুষটাকে অনেক অনেক বেশী সমস্যাই ফেলে দেয়। এটা পরিবার ভঙ্গের কারণ হতে পারে, তাদের জীবনে দুর্যোগের কারণ হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত এত পেরেশানীর পর একসময় তাঁরা বুঝতে পারেন যে এটা একটা ভুল ফতোয়া ছিল। তাদের এটা করার কোন দরকারই ছিল না। তারা এটা শুধুমাত্র আল্লাহ্র ওয়াস্তেই করেছিল এবং এটাকেই সঠিক মনে করেছিল, কিন্তু তারা পরে বুঝতে পারে যে এটা ভুল ছিল।
এখন আমরা দেখব ওই ব্যক্তির অপরাধ যে ভুল ফতোয়া দিয়েছিল। এ ঘটনাটি সাহাবাদের সময় হয়েছিল। তাঁরা একটা গাজওয়া বা যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন। সেখানে একজন সাহাবা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নদোষ হয়েছিল বলে তিনি অপবিত্র ছিলেন। এজন্য তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমাকে কি গোসল করতে হবে ? আমাকে কি মাথাও ধুতে হবে ?” কারন যখন আপনি অপবিত্র থাকবেন তখন আপনাকে সমস্ত শরীর ধুতে হবে। ফরয গোসল। তাঁরা বললেন, হ্যা তোমাকে মাথা সহ সারা শরীর ধুতে হবে। যখন পানি তাঁর মাথা স্পর্শ করল তিনি মারা গেলেন। কারণ তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। যখন তিনি মাথাটা ধুয়ে ফেলেন তখন সেখানে পানি ঢুকে যায় যার কারণে মনে হয় ইনফেকশানের মত কিছু হয়, আল্লাহু আলম। এবং তিনি মারা যান। যখন তাঁরা রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) এর কাছে যান, তাঁকে এই ঘটনা সম্পর্কে বলেন। রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) বলেন, “তারা মেরে ফেলেছে, আল্লাহ্ও তাদের মেরে ফেলুন।” তারপর রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) বলেন, “ক্ষতস্থানের উপরের ব্যান্ডেজ মুছে ফেলাই তাঁর জন্য যথেষ্ট ছিল। তারা যদি না জানত তবে কেন জিজ্ঞেস করে নি? অজ্ঞতার প্রতিষেধক হল জানতে চাওয়া। তারা তাঁকে কিভাবে উত্তর দিতে পারল? তারা কেন আমাকে জিজ্ঞেস করে নি ?” তারা কেন রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করল না ? অজ্ঞতার প্রতিষেধক হল জানতে চাওয়া। দেখুন তাহারাহ বা পবিত্রতার মত বিষয়ে আপনি ছোট একটা ফতোয়া দিয়ে আপনি কিভাবে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে পারেন।
আমরা এই পয়েন্টে আলোচনা করছিলাম, অজ্ঞতার কথা, অবশ্যই এখানে যে অজ্ঞতার বলা হচ্ছে তা দ্বীনের জ্ঞানের কমতির কথা, দুনিয়ার জ্ঞানের কথা নয়। দুনিয়ার জ্ঞান সবসময় বেড়ে চলেছে। এই হাদিসে আখিরাতের জ্ঞানের কমতি কথা বলা হচ্ছে, দ্বীনের, আল্লাহ্ তায়াআলার দ্বীনের। এই জ্ঞানই হল শরিয়া। এমন এক সময় আসবে যখন অবস্থা এর চেয়েও খারাপ হবে। ইবনে মাজাহর এক হাদিসে আল হুজাইফা ইবনে ইয়ামান হতে বর্ণিত , রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) বলেন, “ইসলাম এমনভাবে মুছে যাবে যেভাবে তোমাদের কাপড় থেকে দাগ মুছে যায় বা ধুয়ে যায়।” তখন কাপড়ের রঙ স্থায়ী ছিল না। তাই আপনি যদি আপনার কাপড় নিয়মিত ধুতেন তবে এর রঙ ফিকে হতে থাকতো যতক্ষন পর্যন্ত এর রঙ চলে না যায়। হুয়াইফা বলেছেন ইসলামের ক্ষেত্রেও ঠিক এটিই ঘটবে। ইসলাম ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুছে যায়। মানুষ সালাত সম্পর্কে কিছুই জানবে না, সিয়াম সম্পর্কে জানবে না, ইবাদাত সম্পর্কে জানবে না। কিছুই জানা যাবে না এবং আল্লাহ্ পৃথিবী থেকে সমস্ত কুরআন তুলে নিবেন। কোন আয়াতই অবশিষ্ট থাকবে না। একরাতের মধ্যে সম্পূর্ণ কুরআন তুলে নেওয়া হবে। কোন কিছুই বাকি থাকবে না। রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) বলেন, “এবং তখন বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলারা থাকবে যারা বলবে আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের অনেক আগে বলতে শুনতাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর আমরাও এখন এটা বলছি। ইসলাম সম্পর্কে তারা এটুকুই তারা মনে রাখতে পারবে।” তারা সালাত চিনবে না, সিয়াম চিনবে না, যাকাত চিনবে না, তারা কিছুই চিনবে না। তারা শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এই শব্দটাই চিনবে। বৃদ্ধ পুরুষ মহিলারা বলবে আমাদের মনে আছে অনেক আগে আমাদের মা বাবারা এটা বলত, তাই আমরাও বলি। সিলাহ (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি একজন তাবেঈন, যিনি হুজাইফার রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছাত্র ছিলেন, তিনি যখন হুজাইফার থেকে এই হাদিস বর্ণনা শুনছিলেন তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাদের জন্য কি করবে যখন তারা নামাজ সম্পর্কে কিছু জানবে না, সিয়াম সম্পর্কে কিছু জানবে না, হজ্জ সম্পর্কে কিছু জানবে না, সাদাকাহ সম্পর্কে কিছু জানবে না। কোন কিছু সম্পর্কেই জানবে না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাদের জন্য কি করবে ? হুজাইফা তার দিক থেকে অন্য দিকে ফিরে যান। তাই তিনি প্রশ্নটি আবার করেন। হুজাইফা আবার অন্য দিকে ফিরে যান। যখন তিনি তৃতীয়বারের মত প্রশ্নটি করেন তখন ইহুজাইফা বলেন, “হে সিলাহ ! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাঁদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাঁদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাঁদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবে”- তিন বার । কারণ এসব মানুষকে আল্লাহ্ তাঁদের অজ্ঞতার জন্য মাফ করে দিবেন। তারা সালাত চিনবে না, সিয়াম চিনবে না, জাকাত চিনবে না, তাঁদের এই বিষয়ে কোন জ্ঞান থাকবে না। আল্লাহ্ তাঁদের মাফ করে দিবেন তাঁদের অজ্ঞতার জন্য এবং তাঁদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কবুল করে নিবেন যদিও তা ছিল শুধুমাত্র কিছু শব্দ যা তারা বলত। কিন্তু এটা তাঁদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবে তাঁদের অজ্ঞতার কারণে। কিন্তু সেখানে যদি জ্ঞান-ইলম অবশিষ্ট থাকত তবে তাঁদের অবশ্যই সালাহ পড়তে হত, সিয়াম পালন করতে হত, হজ্জ পালন করতে হত, সাদাকাহ দিতে হত। এটা হল অজ্ঞতার কারণে মাফ পাওয়ার একটা উদাহরণ। কারণ সেই সময়ে শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এতটুকু ইলমই অবশিষ্ট রয়েছে, কাজেই তাদেরকে ততটুকুই আমল করতে হবে। ধীরে ধীরে একসময়, অবস্থা এর চেয়েও খারাপ হবে। এখানে মানুষ শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জানবে আর মুসলিম বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলাল্লাহ্ (সঃ) বলেন, “এমন এক সময় আসবে যখন এই জমিনের বুকে আল্লাহ্র নাম নেওয়া হবে না। ” ইবনে কাসীর বলেন, এই হাদিসের দুইটা ব্যাখ্যা আছে। একটির মতে, তখন পাপের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কারণ মানুষ তখনই পাপকে বাঁধা দেয় হবে যখন মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে। তাদের মতে তখন মুনকার বা পাপাচার ও অন্যায়ের কাজে বাধা দেয়া হবে না। অন্য আরেকটি মতে হাদিসটিকে আক্ষরিক অর্থে নেওয়া হয়েছে। আপনি পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র নাম শুনবেন না। অবস্থা এত খারাপ হবে যে মানুষ বেঁচে থাকবে কিন্তু আল্লাহ্র নাম নিবে না। আর এটাই হবে শেষ সময়। সেই অবশ্যম্ভাবী শেষ সময় যখন কেয়ামত হবে। এটা তখন হবে কারণ এর পরের হাদিস যা ইমাম আহমাদ হতে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ বলেন, “ কেয়ামত ততদিন পর্যন্ত হবে না যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ্ সব ধার্মিক ব্যক্তিকে পৃথিবী থেকে তুলে নিবেন।” আল্লাহ্ যখন তাঁদের তুলে নিবেন তখন পৃথিবীতে যারা বাকি থাকবে তারা আর কিছুই জানবে না। তারা পাপ থেকে বেঁচে থাকবে না এবং ভাল কাজ করবে না। আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ বলেন, “এই সময়ে পৃথিবীর সকল কুরআন তুলে নেওয়া হবে, যা মানুষের হৃদয়ে ছিল তাও। তারা সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠবে এবং সেখানে কোন কুরআন থাকবে না।“ ইবনে তাইমিয়া বলেন , “ আল্লাহ্ এমন ভাবে কুরআন নিয়ে যাবেন যে একটা আয়াতও মানুষের মনে থাকবে না এবং একটা হরফও মাসহাফে বাকি থাকবে না। আল্লাহ্ এটা পুরোটাই নিয়ে যাবেন কারণ তারা এটার যোগ্য না। ” মানুষ এত খারাপ ও পাপী হবে যে হবে যে তারা কুরআন পাওয়ার যোগ্য হবে না । আল্লাহ্ এটা নিয়ে যাবেন এবং কেয়ামত হবে।
পরবর্তী আলামত, ১৩ নং , নিরাপত্তা বাহিনীর বৃদ্ধি, আরবিতে সুরতা। তাবারানী বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “এমন একটা সময় আসবে যখন একটা নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে, যারা নিজেদের উপর আল্লাহ্র অভিশাপ নিয়ে সকালে বের হয় এবং আল্লাহ্র অভিশাপ নিয়ে রাতে ফিরে আসে। সাবধান , তাদের সহযোগী হয়ো না’।” এই হাদিসে সেই নিরাপত্তা বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে যারা মানুষের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করে, তাদের অত্যাচার নিপীড়ন করে, আল্লাহ্র আনুগত্য করতে বাঁধা দেয় এবং মানুষের মসজিদের যাওয়ার ব্যাপারে গুপ্তচরবৃত্তি করে। যদি মানুষ দাওয়াত দেয় এবং সত্য কথা বলে তবে তারা তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে এবং অত্যাচার করে, মেরে ফেলে। এ ধরনের নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে এ কথা বলা হচ্ছে। এটা নিরাপত্তা রক্ষী বা পুলিশ, যারা আইন প্রয়োগ করে তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে না না। আইন প্রয়োগ ভিন্ন বিষয়। এটা বলা হচ্ছে সুরতাহ বা নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে যারা শাসক এবং সরকারকে পাহারা দেয় কিন্তু আল্লাহ্ তায়াআলার দ্বীনকে পাহারা দেয় না। তারাই যারা মানুষের উপর অত্যাচার নিপীড়ন চালাচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, তারা নিজেদের উপর আল্লাহ্র অভিশাপ নিয়ে সকালে বের হবে এবং আল্লাহ্র অভিশাপ নিয়ে রাতে ফিরে আসবে। সাবধান, তাদের সহযোগী হবে না। তাদের উপদেষ্টা হবে না।তাদের একজন হবে না। তাদের সাহায্য এবং সমর্থন করবে না’। রসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে শুধুমাত্র তাদের একজন হতেই বারন করেন নি। বরং রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আরো বলেছেন, এমনকি তাদের সাহায্যও করবে না। তাদের ‘বাতানা’ও হবে না। বাতানা হল তাদের সমর্থকরা। আমাদের… মুসলিমদের অত্যাচার নিপীড়ন করা থেকে দূরে থাকা উচিত। এটি যে শুধু এখন আছে তা নয়, এটি বনী উমাইয়ার কিছু খলীফা, বনী আব্বাসের কিছু খলীফার মধ্যে এবং উসমানীয়া খিলাফাতের সময়ও ছিল। এটা এখনো মুসলিম বিশ্বে চল হয়ে আসছে। সুবহানআল্লাহ্ মানুষের উপর এই অত্যাচার নিপীড়ন এই উম্মাহর জন্য আল্লাহ্র তায়াআলার একটা পরীক্ষা।
আমরা ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল এর ঘটনা জানি, তার সাথে যা হয়েছিল। আর চারজন প্রসিদ্ধ আলেমও এই ফিতনার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন এই নিরাপত্তা বাহিনীর কারনে। ইমাম আবু হানিফাহ অথবা ইমাম মালিকের কাঁধের হাড় মচকে গিয়েছিলো।* ইমাম শাফিকে তারা জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল যদিও তিনি বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। আর ইমাম আহমেদকে জেলে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাকেও অনেক দিন বন্দি রাখা হয় এবং তিনি সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। আর এখন বর্তমানেও অত্যাচার করা হচ্ছে, কথা বলতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে আর তাদের অনেককে মেরেও ফেলা হয়েছে।
এর পরের ১৪ নং আলামত হল জিনার প্রচলন। ইমাম বুখারি হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন যে জিনার প্রচলন ঘটবে। আর অপর একটি হাদিস যা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর হাদিসের সায়েন্টিফিক মিরাকল যেখানে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, যখন জিনার প্রচলন ঘটবে তখন যদি মানুষ জনসম্মুখে এর প্রচার করে তবে আল্লাহ তাদের মাঝে এমন এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাবেন যা তাদের পূর্ববর্তীদের সময়ে ছিলো না’। এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন যে মানুষ শুধুমাত্র জিনাহ করবে তাই নয়, তারা ইজহারিজ্জিনাহ অর্থাৎ তা খোলামেলাভাবে এবং জনসম্মুখেই করবে, প্রচারণা চালাবে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ্ এইসব মানুষের উপর রোগ ও দুর্ভোগ পাঠাবেন যা আগে কখনোই ছিল না, এমন রোগ ও দুর্ভোগ পাঠাবেন যা আগে কখনোই ছিল না, এবং এইডস এর ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছে।
এইডস হল এমন একটা রোগ যা আগে ছিল না আর আল্লাহ্ এটা মানুষের মধ্যে পাঠিয়েছেন জিনাহর কারণে। জিনাহর ব্যাপক বিস্তার ঘটছে এবং তা খোলামেলাভাবেই । বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখুন তা জিনাহর প্রচারণা করছে, টেলিভিশন জিনাহর প্রচারণা করছে, সিনেমা জিনাহর প্রচারণা করছে। সব সিনেমাতে , অনুষ্ঠানে তারা নারী পুরুষের, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড এর মধ্যকার সম্পর্ক রোমান্স এর কথা বলছে। এগুলো সবই জিনাহর প্রচারণা। এমনকি সিগারেট কিংবা গাড়ির বিজ্ঞাপনের সাথেও অবশ্যই নগ্নতা থাকবে। সেটাও জিনাহর প্রচারণা। আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তায়াআলা রোগ পাঠাচ্ছেন এবং মানুষের এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে তারা এইডস এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করবে যার ফলে সমস্যার সমাধান হবে। আল্লাহ্ অন্য আরেকটি রোগ পাঠাবেন ঠিক যেভাবে আল্লাহ্ এইডস পাঠিয়েছেন, যা আগে ছিল না। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এই রোগ সম্পর্কে জানত না।
ইমাম মুসলিম বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, ঈসা ইবনে মারিয়ামের সময়ের পর আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের রূহ নিয়ে যাবেন এবং শেষ পর্যন্ত পাপীরা বাকি থাকবে এবং তাদের মধ্যে গাধাদের মত অর্থাৎ পশুদের মত যৌন সম্পর্ক থাকবে। কোন নিয়ম নীতি থাকবে না। সবকিছুই আইনসম্মত, সবকিছুই বৈধ। উচ্ছৃঙ্খলতা এবং মানুষের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হবে যেমন হয়ে থাকে পশু সমাজে গাধাদের মধ্যে, সেখানে সবকিছুই জনসম্মুখে হয়। এক হাদিস আছে যেখানে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, এই উম্মাহ্ শেষ হবে না এমন একটা সময় আসা পর্যন্ত যখন একজন লোক কোন মহিলার দিকে অগ্রসর হবে এবং রাস্তার মাঝখানে তার সাথে মিলিত হবে। রাস্তার মাঝখানে সবার সামনে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, সেই সময়ে তাদের মধ্যকার সবচেয়ে উত্তম সবচেয়ে ন্যায়বান ব্যক্তি আসবে এবং তাদের বলবে,“ তোমরা যদি পারো তবে দয়া করে ওই দেওয়ালের পিছনে যাও, শুধুমাত্র দেওয়ালের পিছনে। এটাই হবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির কাজ। সে তাদের জিনাহ করতে বাঁধা দিচ্ছে না। সে চিৎকারও করছে না, তাদেরকে ধমকও দিচ্ছে না। সে শুধু বলছে , ‘‘ আমাকে মাফ কর, যদি তোমারা পারো তবে দয়া করে দেওয়ালের পিছনে যাও।’’ এটা হল পাপীদের সময়।
এখন জিনাহর এই ব্যাপারটা মুসলিম ও অমুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছে। আমাদেরকে আমাদের নিজেদের ব্যাপারে সৎ থাকতে হবে। কখনো কখনো আমরা শুধু অমুসলিম বিশ্বের অসুস্থতার কথা বলি। আমাদের অমুসলিমদের সংস্কৃতির ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। হলিউডের সংস্কৃতি , এটাই এখন সারা পৃথিবীজুড়ে। স্যাটেলাইট এটাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে পবিত্র জায়গার মানুষও ঠিক তাই দেখছে যা আপনি টিভিতে এখান থেকে দেখছেন, কোন পার্থক্য নেই। সুবহানআল্লাহ্ যে স্যাটেলাইট ডিশ আপনাকে বিশ্বের সকল স্থান থেকে বিভিন্ন চ্যানেল এনে দিচ্ছে তা আপনি খুঁজে পাবেন মুসলিম বিশ্বের কিছু অংশের বাসা বাড়ির উপরও যে অংশ এমন বিচ্ছিন্ন যে তাতে কয়েক দশক যাবত ইসলামের দাওয়াহই পৌঁছে নি। হয়ত ইসলামের দাওয়াহ কয়েক দশক যাবত ওইসব মানুষের কাছেও পৌঁছে নি যারা পাহাড়ের চুড়ায় বা বনের মাঝখানে বাস করে, কিন্তু আপনি দেখবেন হলিউড তাদের কাছেও পৌঁছে গেছে।
মুভি, নগ্নতা আর সংস্কৃতির ধ্বংস এখন বিশ্বব্যাপী। এটা আঞ্চলিক কোন ব্যাপার নয়। এটাই এখন বিশ্বায়ন। সুবহানআল্লাহ্ আমরা মুসলিম বিশ্বের যেসব কথা শুনতাম কিছু সমাজের রক্ষণশীল হওয়ার ব্যাপারে সেটার এখন পরিবর্তন হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এসব ব্যাপার আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মিডিয়া নয় আমরাও এসব ব্যাপারকে বাড়িয়ে তুলছি কারণ হালালকে কঠিন ও হারামকে সহজ করে ফেলেছি। দেখুন বিয়ে করা কত কঠিন ! আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে মুসলিম বিশ্বের সংস্কৃতিতে বিয়েকে কিছু মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব করে ফেলেছি। অনেকে বিয়ে করতে পারছেন না। পুরুষ ও মহিলার উপর বিয়ের পূর্বে চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক বোঝা ও দায়িত্ববোধ বিয়েকে অনেকের জন্য কঠিন ও অনেকের জন্য অসম্ভব করে ফেলেছে। কিন্তু সাথে সাথে জিনাহ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আইন এটাকে সহজ করে দিয়েছে। মিডিয়া এটাকে সহজ করে দিয়েছে। পত্র পত্রিকায় জিনাহকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, আর বিয়ে করাকে কঠিন করা হচ্ছে।
সুবহানআল্লাহ্ সাহাবা (রাঃ)দের সময় বিয়ে খুব খুব সহজ ছিল। তাঁরা খুতবা দিতেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে হয়ে যেত, খুবই সাধারন। এখন আপনাকে অনেক কিছু কিনতে হবে, এখানে নির্দিষ্ট টাকার মোহর থাকবে, অলংকার থাকতে হবে, আসবাব পত্র থাকতে হবে, ডিগ্রী থাকতে হবে। আমি আমার মেয়ের জন্য একজন ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার খুঁজছি। মুসলিম ম্যাগাজিনগুলোর ম্যাট্রিমনিতে আপনি দেখবেন একজন ২৮ বছরের মেয়ে তাঁর নিজ দেশের একজন মানুষ খুজছে স্বামী হিসেবে যাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। যদি সে আল্লাহ্ তায়াআলার সবচেয়ে কাছের মানুষও হয় তাহলেও হবে না। তাকে ডাক্তারই হতে হবে। এসব কি মুসলিমদের বিয়ে করার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে দিচ্ছে না?
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি তোমার কাছে এসে তোমার কন্যাকে বিয়ে করতে চায় এবং তুমি যদি তার ধর্ম, চরিত্র ও পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং যদি তুমি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কর তবে পৃথিবীতে মারাত্মক ধরনের ফিৎনা ফাসাদ শুরু হবে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) সমাজের সেই ফিতনার কথা বলছেন যা ঘটবে এবং আপনাদেরই ক্ষতি হবে। কারণ আমরা সকলেই একই নৌকার যাত্রি। এটার জন্য আমাদের সবাইকে ভুগতে হবে। আমরা আমাদের মেয়েদের একই পরিবেশে গড়ে তুলছি। যদি আমরা পরিস্থিতির পরিবর্তন না করি তবে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) ঠিক ব্যাপারটাই খেয়াল করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছিলেন “ ধর্ম ও চরিত্রে সন্তুষ্ট হও” । দ্বীন, সালাত, ইবাদত এবং চরিত্রও গুরুত্বপূর্ণ। একজন ধার্মিক লোকও খুব রূঢ় হতে পারেন। তাই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) চরিত্র সম্পর্কেও বলেছিলেন অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্ম না, চরিত্রও ভাল হতে হবে। আবার কারো চরিত্র যদি খুব ভাল হয় কিন্তু ধার্মিক না হয় তবে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। দুইটা ব্যাপারই একসাথে থাকতে হবে। সুবহানআল্লাহ্ একজন আলেম বলেছিলেন, ধনী লোকেদের জন্য এটা অনেক বড় সাদাকাহ হবে যদি তারা তাদের জীবদ্দশায় তিন বা চার জোড়া দম্পতির বিয়ের দ্বায়িত্ব (আর্থিক খরচ) নিয়ে নেয়।
মসজিদের সামনের ভিক্ষুকদের টাকা দেয়ার থেকে বরং বিয়েতে সাহায্য করুন। অনেক আলেম বলেছেন মসজিদের সামনে থাকা ভিক্ষুকেরা আসলে ব্যবসায়ী । তারা আসলে এক প্রকার ব্যবসায়ী, এবং এটা প্রমান করে যে সাদাকা করার সময় আমাদের অনেক বেশী সতর্ক থাকতে হবে যে আমরা আসলে কিভাবে সাদাকা করছি। আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে আমরা অনেক ইমোশনাল, আমরা মুসলিম দেশগুলোতে দেখি যে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কাঁদছে অথবা ভিক্ষা করছে, আর দেখবেন সবাই তাকে ভিক্ষা দিচ্ছে! কিন্তু আপনি দেখবেন যেই মানুষটার আসলেই টাকার দরকার সেই মানুষটা সাদাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সে কোন সাহায্যই পাচ্ছে না।
উদাহরন স্বরুপ, ধরুন একজন যুবক ও একজন নারী বিয়ে করতে চাচ্ছে এবং তাদের কাছে বিয়ে করার মত টাকা পয়সা নাই। এক্ষেত্রে তাদেরকে এক করে দিলে অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে এর জন্য। কিছুক্ষণ পূর্বে, আমি যে হাদিসটি উল্লেখ করলাম, তাতে এক জন পুরুষ ও একজন নারীর কথা বলা হয়েছে যারা রাস্তায় সবার সামনে জিনা করেছে। আল কুরতুবি বলেন, এটা রাসুলুল্লাহ(স) এর নব্যুয়াতের একটি লক্ষণ। তিনি এমন কিছু ব্যাপারে কথা বলেছেন যেগুলো ঘটে গেছে, বিশেষত আমাদের সময়ে। আল কুরতুবি তার সময়ের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, আল আন্দালুস, স্পেনের মুসলিম এবং ওখানে ইসলাম শক্ত অবস্থান যা কিনা পরবর্তীতে খিলাফাতে রুপান্তরিত হয়, তার পরেও কি করে মুসলিম বিশ্ব তা হারালো। খিলাফাহ বাগদাদেও ছিল। তখন মুসলিমেরা অনেকদিন পর্যন্ত একই সাথে দুই খিলাফাহ মেনে নিতে পারেনি। অবশ্যই মুসলিমদের জন্য একটি খিলাফাহ ব্যবস্থাই থাকতে হবে। আর এজন্যই স্পেনের মুসলিমরা নিজেরা অনেকদিন যাবত খিলাফাহর ডাক দিতে সাহস পায়নি, যদিও তারা খিলাফাহ আল আসাবিয়াহর থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। কিন্তু তারা একসময় অনেক বেশী সফল, প্রাচুর্যপূর্ণ এবং অনেক ধনী ও শক্তিশালী হয়ে যায়, তাই তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ও নিজেরাই খিলাফাহ গঠন করে ফেলে। আর সেটাই মুসলিম বিশ্বে একই সাথে দুটি খিলাফাহ থাকার প্রথম ঘটনা। একটি কুরতুবাতে এবং অন্যটি বাগদাদে।
তাই, একটি সময় স্পেন মুসলিমদের শক্ত ঘাটিতে পরিনত হয়। কিন্তু মুসলিমরা এই অবস্থান কিভাবে হারাল? এখন স্পেনে প্রবাসী ছাড়া কোন মুসলিম নেই, কিছু আছে, কিন্তু আসল আদি বাসিন্দারা নেই। আমি বুঝাতে চাচ্ছি, ইসলাম মিশরে প্রবেশ করেছে এবং এখনও মিশরের সবাই মুসলিম, আফগানিস্তানেও সবাই মুসলিম, পাকিস্তানেও সবাই মুসলিম, কিন্তু স্পেনে ৮০০ বছর ইসলাম থাকার পর ও কিভাবে সম্পূর্ণভাবে এটা বিলুপ্ত হল? ইসলাম মুছে গিয়েছে, স্পেন থেকে পুরোপুরিভাবে মুছে গিয়েছে।
সুবহানাল্লাহ, একটি কারন হতে পারে, স্পেন এ বসবাসরত মুসলিমরা খুবই প্রাচুর্য মন্ডিত ছিল, তারা ছিল সম্পদশালী ও ধনী, এবং তাদের মধ্যে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বলেছেন যে, সেখানে একজন বেশ্যা ছিল যে তার কপালে কবিতা লিখে রেখে মানুষকে আকর্ষণ করত আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। কুরতুবি তার সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবে বলেন, “এ ঘটনা আমাদের সময়ে ঘটেছিল, আর এভাবেই এসব কারনে মুসলিমরা এক সময় স্পেনকে হারাল।”
নং ১৫ – রিবা(সুদ) সম্প্রসারণ
রিবা-যার অর্থ সুদ,কিন্তু আজকাল আমরা একে মুনাফা, ফিন্যান্সিং, মটগেজ রেট ইত্যাদি হিসেবে নতুন নাম দিতে পারি, এটা বিভিন্ন রুপে আসতে পারে, কিন্তু এটা একই জিনিসকে বুঝায়। ইংরেজিতে usury সুদ এর একটি অনুবাদ হতে পারে, কিন্তু তা এখন আর ব্যবহার করা হয় না। তারা আর usury ব্যবহার করে না। আমাদেরকে এই শব্দগুলো জানতে হবে, এই সময়ে এগুলোকে কি বলে, আধুনিক ভাবে কি বুঝায় তাও জানতে হবে।
রিবা হচ্ছে কবিরাহ গুনাহ সমূহের একটি। এবং এটি সেই দুটি গুনাহর একটি, যেখানে আল্লাহ ২ ধরনের গুনাহকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। ২ টি গুনাহর একটি হচ্ছে রিবা আরেক টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে আমার আওলিয়াহ, আমার বন্ধুকে শত্রু হিসেবে নিবে তার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করবো।’
এই হচ্ছে দুটি গুনাহ, আল্লাহ যার জন্য গুনাহকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরানে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও”। বাকারাহ ২৭৮-২৭৯
আব্বাস(রঃ) এই আয়াতের তাফসিরে বলেন, যে রিবা সংক্রান্ত কাজ করেছে কেয়ামতের দিন তাকে এমন ভাবে উঠানো হবে যেন শয়তান তাকে আবিষ্ট করে রেখেছে এবং তার হাতে অস্ত্র দিয়ে বলা হবে- যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। তারা তাকে অস্ত্র দিবে এবং আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে বলবে।
রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, কেয়ামত সন্নিকটে আসলে রিবা অনেক সম্প্রসারিত হবে। এই হাদিসটি আত তাবারানি বর্ণনা করছেন।
রাসুলুল্লাহ(স) এর সময় দুই ধরনের রিবা ছিল। রিবা আল ফাদল ও রিবা আন নাসিয়্যাহ। রিবা আন নাসিয়্যাহ হচ্ছে সময়ের উপর ভিত্তি করে। আর রিবা আল ফাদল হচ্ছে সোনার বিপরিতে সোনা ও রুপার জন্য রুপা, এবং এই লেনদেনে আপনি একটি বাড়তি অংশ যোগ করছেন, তাই আপনি এখানে একই জিনিস বিনিময়ের বানিজ্য করছেন, কিন্তু আপনি সেই বাড়তি অংশকে আল ফাদল বলছেন। এই ধরনের রিবা এখনও আছে, তবে এখন রিবা আন নাসিয়্যাহ ই বেশী প্রচলিত। আর রাসুলুল্লাহ(স) এর সময়ে এর প্রচলিত ধরন এমন ছিল যে, আমি আপনার থেকে টাকা ধার নিব, আপনি আমাকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দিবেন, এক মাস অথবা আরও বেশী, আমি যদি এই সময়ের ভেতর আপনাকে টাকা শোধ করতে পারি, আমি ওই একই পরিমাণ ধারকৃত অর্থ পরিশোধ করব, কিন্তু আমি যদি ওই সময় পার করে দেই, তাহলে আমাকে রিবার জন্য বারতি টাকা যোগ করতে হবে, এটাকেই রিবা আন নাসিয়্যাহ বলে। এটা বলতে গেলে বর্তমান ক্রেডিট কার্ড এর মতই। তারা আপনাকে এক মাসের অথবা আরও বেশী সময়ের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ দেয়, আপনি যদি ওই সময়ের মাঝে শোধ করেন, তো সেটা ঠিক আছে। কোন বাড়তি অর্থ জমা দিতে হবে না, কিন্তু আপনি যদি ওই মেয়াদকৃত দিনের পরে চলে যান, আপনাকে বাড়তি টাকা দিতে হয়, আর রাসুলুল্লাহ(স) এর সময় রিবা আন নাসিয়্যাহ এই রকম ই ছিল। তারা বলত “তাক-দি-ওয়া তারবি”, আপনি আমাকে এখনই দিলে একই পরিমান পরিশোধ করবেন, আর পরে দিলে আরো বেশী যোগ করে পরিশোধ করবেন। আর এখন এটাকে মানুষ বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করছে। আপনি এমন কোন কোম্পানি খুজে পাবেন না যারা সল্প সময় অথবা বেশী সময় সাপেক্ষে ধার দেয় না।
সবাই, আমেরিকার প্রায় সবাই লোনের উপরই চলে, যে কোন ধরনের লোন, এই ধরনের অথবা অন্য ধরনের, যে কোন ধরনের ঋণ। এসবে রিবার বাড়তি টাকা যোগ হয়। তো, রাসুলুল্লাহ(স) তখন আমাদের এই সময়েরই উদাহরনস্বরুপ এই হাদিসটিতে আলোচনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, “একটি সময় আসবে যখন সবারই সুদের সাথে কারবার হবে। এবং যে সুদের কারবার করবে না, তার গায়েও সুদের ধুলা লাগবে।”
সুদ অনেক ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রায় সবাই এই কারবার করবে। কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু মানুষ যারা সরাসরি সুদের কারবার করবে না, তাদের ও সুদের ধুলা লাগবে। এর মানে আপনি ক্ষতির সম্মুখিন হবেন যেভাবেই হোক, এটাই বোঝানো হয়েছে এই হাদিসে, লেনদেন সুদের উপর ভিত্তি করে হবে, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আপনি যদি সুদ থেকে দূরে থাকতে চান, আপনি অনেকটাই পারবেন, কিন্তু এর পরও আপনি বিশ্ব অর্থনীতির মাধ্যমে সুদ দ্বারা পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হবেন।
আপনারা জানেন, আগের যুগে রাস্তা ছিল ধুলাময়। তাই যখন একটি ঘোড়া অথবা একটি গাধা বা ঊট পাশ দিয়ে ছুটে যেত তখন ধুলা থেকে দূরে থাকার শত চেষ্টা করেও ধুলা থেকে বাঁচা যেত না। তাই আপনি যদি আপনার সাধ্যমত পরিস্কার থাকার চেষ্টা করেন, এটা ভাল, কিন্তু কিছু ধুলা আপনাকে ছুয়ে যাবেই। এবং এখন এটাই ঘটছে। আপনি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেন পরিস্কার থাকার,কিন্তু কিছু ধুলা আপনার শরীরে লাগবেই। এবং এটা একটা বিপর্যয়, কারন আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলা বলেছেন তিনি সুদকে ধ্বংস করে দিবেন। আর, সুদের মাঝে কোন কল্যান নাই। তাই যেই দুনিয়াতে সুদের কারবার হয়, সেটা কল্যানকর নয়। আর এজন্যই আমরা এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি যদিওবা হয়তো আমরা অনেকেই তা সরাসরি ব্যবহার করছি না।
আর বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব এখন সব জায়গাতেই, আর এর ভিত্তি হচ্ছে সূদ। সুবহানাল্লাহ। মনে হয় যেন পুরো বিশ্ব সুদের সাগরের উপর ভাসছে, এটা অবশ্যই একটা দুঃসময় সে অর্থে। এবং ইসলাম শুধুমাত্র কিছু ইবাদাতের সমষ্টি না, যেগুলো আমরা করে থাকি, কিন্তু ইসলাম হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান যা কিনা আমাদের কিভাবে টাকা পয়সার লেনদেন করতে হয় তা শিখায়। কিন্তু, আমরা ইসলাম থেকে একেক সময় একেক জিনিস বাদ দিয়ে দিচ্ছি, কখনো টাকাপয়সা,কখনো রাজনীতি,কখনো সামাজিক জ়ীবন, এভাবে যদি সবকিছু আলাদা করে ফেলি তাহলে, ইসলাম বলতে আর বাকি কি রাখছি?!
এবং আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলার দ্বীন হচ্ছে ইসলাম, যা পরিপূর্ণ। আর আমরা সব কিছু থেকেই একে বাদ দিতে চেষ্টা করছি!
রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ তাদের টাকা পয়সা কোথা থেকে পেল সেটা নিয়ে ভাববে না।” এটা হালাল নাকি হারাম রাস্তায় এসেছে। মানুষ শুধুমাত্র টাকা কামাই করতে চাইবে, এটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, আর তা হচ্ছে সম্পদ কামানো । টাকা কামাও, কিভাবে সেটা কোন বিষয় নয়। এই লোকগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা আবার যে দেশে বাস করে সেই দেশের আইন মেনে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু যখন-ই আল্লাহর আইনের কথা আসে, তখন সেটা হয়ে যায় অপ্রাসঙ্গিক। আর এই মানুষগুলো শেষ বিচারের দিন আল্লাহর সম্মুখীন হবে এবং প্রতিটি পয়সা সে কিভাবে পেয়েছে এবং কিভাবে খরচ করেছে এই হিসাব তাকে দিতে হবে। আর এটা হচ্ছে সেই ৪ টি প্রশ্নের একটি যা সবাইকে জিজ্ঞেস করা হবে। আপনার টাকা কিভাবে আপনি আয় করেছেন এবং কিভাবে খরচ করেছেন, প্রতিটি পয়সার হিসাব আপনাকে দিতে হবে।
নং ১৬ – মসজিদ-সজ্জা
আর এটি এমন এক আলামত যেটি বলতে গেলে ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। একটি হাদিস ইবন মাজাহ বর্ণনা করছেন আনাস ইবন মালিক থেকে, রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “একটি সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদ তৈরী নিয়ে অহংকার করবে অথবা প্রতিযোগিতা করবে।” মানে, আমরা মসজিদ তৈরীতে প্রতিযোগিতা করব। আর এরপর আরেকটি বর্ণনা যা আসলে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন, এটি হাদিস নয়, এটা ছিল উমার ইবন খাত্তাব এর একটি আদেশ, আবু সাঈদ আল খুদরি বলেন, মদিনায় রাসুলুল্লাহ(স) এর মসজিদের ছাঁদ তাল গাছের পাতার তৈরী ছিল। তাই তারা তাল গাছের শাখা নিয়ে আসতেন আর একটির উপর আরেকটি রেখে ছাঁদ তৈরী করতেন।
আর সেই ছাঁদ তাদেরকে শুধুই ছায়া দিত, পানি থেকে রক্ষা করত না। তাই বৃষ্টি সময় ভেতরে পানি ঢুকে পরত আর পুরো মসজিদ কাদা হয়ে যেত। রাসুলুল্লাহ(স) ও আবু বকর(র) এর সময় সেই মসজিদের এই অবস্থা ছিল। আর এটিই ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী বরকতময় মসজিদ। এই জায়গা থেকেই দাওয়াহ শুরু হয়। খুবই স্বাভাবিক ভাবে তাদের কাছে তাই এটার স্থাপত্য ও সৌন্দর্য কোন ব্যপারই ছিলো না। এটা কখনই কোন মানদন্ড নয়। রাসুলুল্লাহ(স) এর মসজিদই ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে কল্যানকর মসজিদ, যেখান থেকে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে, আর এটার কোন পানিরোধক ছাঁদ ও ছিল না!
উমার ইবন খাত্তাব এর সময় তিনি একজন কারিগরকে ডেকে বললেন, এমন একটা ছাঁদ তৈরী কর যা পানিরোধক হবে। তিনি আরও বললেন, সাবধান, লাল অথবা হলুদ রঙ ব্যবহার কর না, কারন এসব উজ্জ্বল রঙ। তিনি ওই রাজমিস্ত্রিকে বললেন ওই ২টি রঙ ব্যবহার না করতে, কারন এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। আর এরপর আনাস ইবন মালিক বলেন, “এমন সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদ নিয়ে অহংকার করবে কিন্তু তারা সেগুলোকে জীবিত রাখবে না।” মানে হচ্ছে, তারা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে কিন্তু কেউ মসজিদে যাবে না। তারা মসজিদ বানানোর খাতিরেই মসজিদ বানাবে, কিন্তু সেগুলো হবে মৃত, জীবিত নয়।
ইবন আব্বাস বলেন, “এমন একটি সময় আসবে যখন তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের মত মসজিদ সাজাবে।” আর এখন আমরা লাল-হলুদ রঙ ব্যবহার করা থেকেও অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এখন আমরা সোনা-রুপা, বিশাল বড় ঝারবাতি এবং ক্যালিওগ্রাফি ব্যবহার করছি যাতে আপনার জ্ঞাত প্রায় সব রঙ ই রয়েছে। উমার ইবন খাত্তাব বলেছিলেন, “লাল এবং হলুদ রঙ ব্যবহার কর না।” এটা শুধুমাত্র লাল-হলুদ রঙ এর ক্ষেত্রে তিনি বলেননি, বরং তিনি বলেছেন মনযোগে ঘাটতির কথা, কারন তিনি বলেছিলেন মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে। আবার আপনি দেখে থাকবেন, সুবহানাল্লাহ, যায়সালাত , যা মানুষ সালাতের জন্য ব্যবহার করে তাতে সব রকম মনযোগহানিকর জিনিস রয়েছে। এবং এখন তুরস্কতে একটি কোম্পানি রয়েছে যারা এক নতুন ডিজাইনের যায়সালাত তৈরী করেছে, যার চারপাশে খুবই উজ্জ্বল রঙ এর সীমানা রয়েছে। তাই আপনি এটা রাতের অন্ধকারেও ব্যবহার করতে পারবেন, আর সাথে সাথে কয় রাকাত সালাহ আপনি পড়লেন তাও হিসেব রাখতে পারবেন, কারন আপনি যখন কোন রাকাত বাদ দিবেন তখন এটি একটি সংকেত দিয়ে আপনার ভুল ধরে দিবে। এবং কয়েকজন আলেমকে কে এটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তারা বলেছেন এটা হারাম। এটা মানুষের সলাতে ব্যাঘাত ঘটাবে। এটা হিসেব রাখবে কতগুলো সেজদা আপনি করেছেন, কতগুলো রুকু করেছেন, আবার আপনাকে তা ঘোষনা করে জানিয়ে দিবে, এবং এটার সীমানায় লাইট ও আছে, তাই যদিও আপনি অন্ধকারের মাঝে থাকেন, এটি কোন সমস্যা না, কারন এটা আপনাকে আলো দিবে। উচ্চ প্রযুক্তির হাই টেক যায়সালাত । আর এটি হচ্ছে সালাত থেকে মনোযোগ হানিকর, এটা মনযোগ নষ্ট করে।
আবু দারদা বলেন, “তোমরা যদি তোমাদের মসজিদ ও কুর’আন সাজাও, তাহলে ধ্বংস আসবে।” এটি ধ্বংসের একটি লক্ষণ, যদি আপনি মসজিদ এবং কুর’আন সাজান, আর আমরা এখন ঠিক তাই ই করছি। আপনি দেখবেন খুবই দামি অনন্য ছাপার কুর’আন যা সোনালী হরফে বা সোনা দিয়ে লিখা হয়েছে এবং অনেক দামী কাপড়ে মোড়ানো। যেমন ভেলভেট কাপড় যা কিনা খুবই দামী। আর আপনি এমন মসজিদও দেখবেন যা অনেক টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে দেখবেন এগুলো এমন লোক বানিয়েছে যারা এমনকি সালাত ও পড়ে না।
যেমন, রাজা বা রাষ্ট্রপতিরা, যারা সালাত ও পড়ে না। এমনকি সালাত পড়তে জানেও না এবং তারা এমন অনেক টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরী করে যা মানুষ ব্যবহার করে না। দেখে থাকবেন মানুষ বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেক শব্দ হচ্ছে, সবাই মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে,আর বলছে, ‘বাহ ! দারুন ! কি সুন্দর মসজিদ’! কিন্তু কেউ সালাত পড়তে যাচ্ছে না। আবার অনেক জায়গায় এমন মসজিদ দেখবেন যা এতই সুন্দর যে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর সালাতের সময় কেউ সালাত পড়তে যায় না। এসব মানুষ মসজিদে আসে দেখার জন্য এবং ইসলামিক স্থাপত্য দেখে অবাক হবার জন্য। আবু দারদা বলেন, এটা ধ্বংসের একটি চিহ্ন। সুবহানাল্লাহ, এটা আবু দারদার ইলম ও বিচক্ষণতা, কারন এটা এই কাজগুলো এমন ধরণের মানূষের চিহ্ন যারা প্রতীকি কাজ করে এবং মূল কাজের অনেক কিছুই ছেড়ে দেয়। মানুষ সুন্দর কিছুর পেছনেই ছুটে। কিন্তু তারা কোন জিনিসেই আসলে আগ্রহী নয়। আর এসব ই বিপথগামী মানুষের চিহ্ন।
নং ১৭ – উচু দালান তৈরী
রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, ‘তুমি মেষ ও ছাগল পালককে দেখবে উচু প্রাসাদ বানাতে প্রতিযোগিতা করতে যারা কিনা নগ্নপদ ও গরিব ছিল’। আর এটা ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ(স) তাদের কে খালি পায়ের, নগ্ন হিসেবে বর্ণনা করেছেন এর মানে এই না যে তাদের কাপড় নাই, এর মানে হচ্ছে তারা এতটাই গরীব ছিল যে তারা নিজেদের সতর ঠিকমত ঢাকতে পারত না। কাপড়ের অভাবে ! আল্লাহই জানেন, এই হাদিসগুলোতে আমরা মুসলিম উম্মাহর প্রতি নির্দেশনা পাই, এসব মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে বলছে, অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে নয়। রাসুলুল্লাহ (স) কেয়ামতের বিভিন্ন চিহ্ন সস্পর্কে আলোচনা করেছেন যেগুলো মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কিত। অবশ্যই কিছু চিহ্ন সকল বিশ্ববাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে স্বভাবতই, অথবা কিছু নির্দিষ্ট মানুষ সম্পর্কে, কিন্তু যখন হাদিসে কোন নির্দেশনা থাকে না এবং কিছু নির্দিষ্ট মানুষ সম্পর্কে বলা হয়, তখন আমরা ধরে নেই যে তারা হচ্ছে মুসলিম। এটা তেমনই একটি হাদিস এবং এখানে এমন কিছু মানুষের কথা বলা হয়েছে যারা প্রথমে গরিব ছিল এবং আকস্মিক ধনী হয়ে যায়। আর তাদের এত টাকা আছে যে তারা এখন আর প্রয়োজনের জন্য ভবন নির্মাণ করছে না, তারা ভবন নির্মাণ করছে প্রতিযোগিতার জন্য।
‘ইয়া তাতাওয়া লুনা ফিল বুনিয়ান’, ইয়া তাতাওয়ালুন মানে হচ্ছে তারা এমন মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করছে যারা উচু দালান তৈরী করছে, আর আপনি এর উদাহরন গালফ এলাকায় আরব উপসাগরে খুজে পাবেন। একসময় যেসব মানুষ খুবই দরিদ্র ছিল তারা হঠাৎ করে অনেক টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে খনিজ তেলের কারণে, তাই এখন তারা দালান নির্মানের প্রতিযোগিতা করতে পারে অথচ এক সময় তারা থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থাও করতে পারত না। আর এখন এটা সুউচ্চ ভবন তৈরীর প্রতিযোগিতা! আর সুবহানাল্লাহ, এটা ছিল আদ জাতির চিহ্ন। এটা ছিল আদ জাতির একটি সাফল্য। কুরানে তাদের নবী হুদ(আ) বলেন, “তোমরা প্রত্যেক পাহারের উপর সৌধ তৈরী করছ, অপচয়, তোমাদের এসবের প্রয়োজন নাই’। (শুয়ারা ১২৮) তারা পাহাড়ের চূড়াতে সৌধ তৈরী করত।
তারা উপত্যকায় বাস করত আর অ কারনে পাহারের চূড়াতে প্রাসাদ তৈরী করত। তা’বাসুন -আবাস মানে হচ্ছে অপচয়। তারা তাদের টাকা অপচয় করছে। তারা এটা অহংকার বশত করেছে।
নং ১৮ – দাসী নিজের মনিবকে জন্ম দেবে
এই হাদিসটি জিব্রিল এর একটি বিখ্যাত হাদিস। এটা বুখারি ও মুসলিম এ আছে। জিব্রিল(আ) মোহাম্মাদ(স) কে জিজ্ঞেস করলেন কেয়ামতের লক্ষণ সম্পর্কে। রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, কেয়ামতের একটি লক্ষণ হচ্ছে, মহিলা বা দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে । আলেমরা এই হাদিসে কয়েকটি ব্যখ্যা দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে, এমন একটি সময় আসবে যখন তারা তাদের পিতা-মাতার খুব বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে, আর বাচ্চারা তাদের মায়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করবে যেন মনীব ও দাসীর সম্পর্কের মতন হয়ে যাবে। সন্তান যেন মায়ের মনীব হয়ে যাবে। তাদের মাঝে কোন সম্মান থাকবে না। আর এটা হচ্ছে ইবনে হাযার এর অভিমত। তিনি বলেন, “এটাই সব থেকে গ্রহনীয় মত কারন এটাই সবচেয়ে স্বভাবত”। আর আমার মনে হয় আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। আগে মুসলিম ও অমুসলিম সমাজে বাবা মায়ের জন্য অনেক সম্মান ছিল, বড়দের জন্যও। আর আপনি এটা এশিয়ান, ভারতীয়, হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিতে এমনকি বিশ্ব জ়োড়া বিভিন্ন সংস্কৃতিতে দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনি এখনও দেখতে পাবেন যে কয়েক জেনারেশন আগেও মানুষ বাবা মায়ের সাথে কেমন আচরন করত আর এখন কিভাবে করে। এখন আপনি দেখবেন যে, ১৮ বছর বা এরও আগে,বাচ্চারা পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আর তারা তাদের বাবা মায়ের প্রতি কোন কিছুই করনীয় মনে করে না। আর এটা আইন অনুযায়ী-ই ১৮ বছরের পর বাবা মায়ের প্রতি সন্তানের কোন দায়বধ্যতা থাকে না। তারা স্বাধীন, সম্পূর্ণ যদি বাবা মা ১৮ বছরের ছেলে অথবা মেয়েকে আদালতে নিয়ে যায়, তারা এর থেকে কিছুই পাবে না, কিচ্ছু নাহ, এটাই আইন!
আমরা এখন এমন আইন নিয়ে কথা বলছি যার কিনা যুক্তিযুক্ত হওয়ার কথা। এখন মানুষের অভ্যাস ও কাজ কর্ম আরও বেশী খারাপ। আর আপনারা যদি ভয়ংকর বাজে গল্প শুনে থাকেন -আমাদের অতদুর যাওয়ার দরকার নাই-কিভাবে সন্তানরা বাবা-মার সাথে ব্যবহার করে। যখন ইসলামের একটি শিক্ষা, আর সুবহানাল্লাহ, এটা এমনিতেই বোধগম্য যে বাবা মা সন্তান্দের জন্য কি পরিমান করে থাকেন, আল্লাহর পরেই দ্বিতীয় বাধ্যবাধকতা হচ্ছে পিতামাতার প্রতি। কারন আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলা আমাদের সব থেকে বেশী সাহায্য করেন। আমরা আল্লাহর কাছে সবকিছুর জন্য ঋণী। তিনি আমাদের কাছে কিছুর জন্যই ঋণী নন। এজন্যই আমাদের কৃতজ্ঞতা আল্লাহর কাছেই হওয়া উচিত। তারপরেই হচ্ছেন বাবা মা।
আর সে জন্যই আল্লাহ কুর’আনে বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন শুধুমাত্র তারই ইবাদাত করতে এবং পিতা মাতার প্রতি সদয় হতে।”
আল্লাহ নিজের নাম উল্লেখ করার পরই বাবা মায়ের প্রতি সুন্দর হতে বলেছেন। যখন একটা বাচ্চা অসহায় থাকে তখন তার মা এবং বাবা তাকে বড় করতে যে পরিমান কষ্ট করে, এবং আল্লাহ তাদের যে ক্ষমতা দিয়েছেন, আর শুধুমাত্র এভাবেই একটি বাচ্চা টিকে থাকতে পারে। আর সুবহানাল্লাহ, ১৫ বছর বয়সে সেই বাচ্চাটা আর কিছুই ফেরত দেয় না। আর এটাই হচ্ছে অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত সীমা।