পরকালের পথে যাত্রা – পর্ব ১০ – কিয়ামতের বড় লক্ষণ ০৩-১০

বড় লক্ষণ নং ৩ – ইয়াজুজ মাজুজঃ

ইয়াজুজ মাজুজ হল দুটি সম্প্রদায় । তারা কি মানুষ? নাকি ভিন্ন এক সৃষ্টি? তারা কি আদম সন্তান?

এবং এর উত্তর হচ্ছে, তারা অবশ্যই আদম সন্তান । এর দলিল রয়েছে সহীহ বুখারিতে ।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাওয়া তায়ালা আদমকে বলবেন “ও আদম ! জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা কর”। কারণ মানবজাতির একাংশ জাহান্নামে এবং অপরাংশ জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই আল্লাহ পুরো মানবজাতির পিতা আদমকে বলবেন  তার বংশধর হতে জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা করতে । কিন্তু আদম জানেন না কারা জাহান্নামী । তাই তিনি জিজ্ঞেস করবেন ” কারা  জাহান্নামের অধিবাসী”? আমার বংশধরদের কি পরিমান অংশ জাহান্নামে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা তাঁকে বলবেন প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন । প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ৯৯৯ জন জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।

 

এটা সাহাবাদের হৃদয়ে  এক প্রচন্ড আঘাত ছিল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের চেহারা দেখে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন । সাহাবাদের হৃদয় ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল। যখন তারা হাদিসটি শুনল তাদের চেহারার রং (কালার )পরিবর্তন হয়ে গেল । তারা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন ।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বুঝতে পেরেছিলেন ।

অতপর সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ” আমাদের মধ্যে কার নিশ্চয়তা আছে এই প্রতি হাজারের একজন হবে” ? অর্থাৎ সুযোগ এতই ক্ষীণ ! অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন ইয়াজুজ মাজুজের মধ্যে থেকে হবে ৯৯৯ জন আর তোমাদের মধ্য হতে হবে একজন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  অন্য এক হাদিসে বলেন যদি ইয়াজুজ মাজুজ কে কোন দলে সংযুক্ত করা হয় তবে তারা দলটিকে সংখ্যায় অনেক করে তুলবে । অর্থাৎ  তারা সংখ্যায় এত বেশী হবে সংখ্যাধিক্যের কারনে সবসময় অনুপাতটা তাদের পক্ষে থাকবে । তারা সংখ্যায় এত বেশি হবে যে একটি বর্ননা আছে যেখানে বলা আছে যখন তাদের একজন মারা যাবে তারা তাদের এক হাজার বংশধর রেখে যাবে । তবে বর্ননাটি দুর্বল হতে পারে ।

যাই হোক তারা সংখ্যায় অনেক বেশী হবে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন ” এমনকি যখন (কিয়ামতের নিদর্শন হিসাবে) ইয়াজুজ ও মাজুজকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং ওরা প্রতিটি উচ্চভুমি থকে (পতঙ্গের ন্যায়) নিচের দিকে বেরিয়ে আসতে থাকবে । ” (আম্বিয়াঃ৯৬)

অর্থাৎ  তারা সংখ্যায় অধিক হবে । তাই প্রথমে উল্লেখিত হাদিসটি থেকে বুঝা যায় তারা আদমের বংশধর হবে কারণ আল্লাহ আদমকে বলবেন  তার বংশধর হতে জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা করতে ।

আরেকটি সহিহ হাদিস যেখানে ইয়াজুজ মাজুজের কথা বলা হয়েছে । হাদিসটি সহীহ মুসলিম এ রয়েছে । ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জালের মৃত্যুর পর , আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা ঈসা (আঃ) এর কাছে ওহী পাঠাবেন ” আমার সৃষ্টি হতে এমন এক জনসমষ্টি বের হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় ।  তাই তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে নিরাপদে “তুরে” চলে  যাও” । তুর  ফিলিস্থিনে অবস্থিত । অর্থাৎ  আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুজ মাজুজের ব্যাপারে ঈসাকে সতর্ক করবেন । ঈসা (আঃ) সকল বিশ্বাসীদের নিয়ে জেরুজালেমে (ফিলিস্তিন)  লুকিয়ে থাকবেন । অতঃপর ইয়াজুজ-মাজুজ দলে দলে প্রতিটি উচুস্থান হতে নেমে আসবে । তাদের প্রথমজন টাইবেরিয়াস হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পানি পান করবে ।টাইবেরিয়াস হ্রদটি  ফিলিস্তিনে অবস্থিত । আর শেষজন যখন এর পাশ দিয়ে যাবে তখন সে বলবে এখানে একদা পানি ছিল । তারা সংখ্যায় এত বেশী হবে যে তারা সম্পূর্ণ পানিই পান করে ফেলবে ।

অতপর রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন ঈসা (আঃ) তার সাথীগণ ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন এবং তাদের অবস্থা এতই শোচনীয় হবে যে তাঁদের (ঈসা ও তার সাথীদের) কাছে একটি ষাড়ের মাথা একশত দিনারের চেয়ে প্রিয় হবে ।  রাসুলুল্লাহ(সা) এর সময় একশত দিনার মূল্য অনেক ছিল । খাদ্য সংকটের কারণে একটি ষাড়ের মাথা সেই একশত দিনারের চেয়ে মূল্যবান হয়ে পড়বে। অথচ আমরা ষাড়ের মাথা না খেয়েই ফেলে দেই । অতঃপর ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহ্‌র নিকট দুয়া করবেন তাই  আল্লাহ তাদের কাছে কীটপতঙ্গ পাঠাবেন সেগুলো ইয়াজুজ-মাজুজের ঘাড়ে আক্রমন করবে এবং সকলে তারা একযোগে মৃত্যু বরণ করবে । দুটি সম্প্রদায়ই সম্পুর্ন ধ্বংস হয়ে যাবে ।

কিন্তু সমস্যা রয়েই যাবে । ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীগণ যখন সমতলে নেমে আসবেন তখন তাঁরা পৃথিবীর সর্বত্র ইয়াজুজ-মাজুজের মৃতদেহের পচনের গন্ধ পাবেন । তাদের দেহাবশেষ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে সম্পুর্ণ পৃথিবী দূষিত হয়ে পড়বে । অর্থাৎ ইয়াজুজ-মাজুজ জীবিত মৃত উভয় অবস্থায়ই মুসলিমদের ক্ষতি করবে ।  অতঃপর ইসা(আ) ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর নিকট পুনরায় দুয়া করবেন এবং আল্লাহ এক ঝাক পাখি প্রেরন করবেন যাদের গলা হবে উটের গলার মত বিশাল । তারা মৃত দেহগুলো বয়ে নিয়ে যাবে এবং আল্লাহ্‌র আদেশে অন্যত্র গিয়ে ফেলবে । অতঃপর আল্লাহ বৃষ্টিবর্ষণ করবেন,এতে পৃথিবী আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে ।

তিরমিযীর একটি হাদিসে রাসুল (সা) বলেন ইয়াজুজ-মাজুজ একটি প্রাচীর খনন করার কাজে নিয়োজিত আছে । এবার আমরা কুরাআনে ফিরে যাই যেখানে এই প্রাচীর সম্পর্কে বলা হয়েছে ।

কুরআন আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদের যুলকারনাইন সম্পর্কেও বলেছেন । হাজার বছর পুর্বে তিনি বাদশাহ হিসাবে পৃথিবী শাসন করেছেন। এইটি এতই আগের  ঘটনা যে এই ঘটনা ইতিহাসের বইতে ও খুঁজে পাওয়া যায় না । যুলকারনাইন শব্দের অর্থ হল “দুই শিংধারী “। কিছু মুফাসসির বলেছেন এটার মানে হল তিনি পুর্ব-পশ্চিম শাসন করেছিলেন । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা  কুরআনে যুলকারনাইন সম্পর্কে বলেন যে যুলকারনাইন পুর্ব ,পশ্চিম এবং এবং দু’পাহাড়ের  মধ্যবর্তী স্থান ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি যখন দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌছালেন তিনি তথায় এমন এক জাতির সন্ধান পেলেন যারা তাঁর কথা ভালভাবে বুঝতে পারছিলেন না ।

তারা বলল ” হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। ” (কাহাফঃ ৯৪) তারা যুলকারনাইনের কাছে ইয়াজুজ মাজুজের অনিষ্টতার ব্যাপারে নালিশ জানাল এবং তা হতে রক্ষার জন্য আমরা প্রাচীর নির্মাণ করতে চাই এবং এর জন্য আপনাকে আমরা পারিশ্রমিক দিব । যুলকারনাইন বলল ” আমাকে আমার প্রতিপালক যা দিয়েছেন তাই যথেষ্ট । অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব । আমার কাছে লোহার পাত এনে দাও। “(কাহাফঃ৯৫)

তিনি দু’’পাহাড়ের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গা  লোহা দিয়ে পুরোপুরি ভরাট করে দিলেন এবং তিনি তাদের লোহা উত্তপ্ত করতে বললেন । অতঃপর তিনি তাতে গলিত তামা ঢেলে দিলেন । এখানে ‘কিতরা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ লেড বা কপার দুই হতে পারে । যখন আপনি স্টিল এর সাথে লেড বা কপার মিশাবেন তখন ব্রাস বা  ব্রোঞ্জ পাবেন । এবং উভয়ই স্টিল এর চাইতে বেশী মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী । তাই তিনি লোহা তথা স্টিলের সাথে লেড বা কপার মিশিয়েছিলেন যদিও কিতরা এর সুনির্দিষ্ট অর্থের ব্যাপারে মুফাসসিরদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে । আল্লাহ সুবহানা তায়ালা এখানে বলেন তিনি শুধু ” সাদ্দ ” নির্মান করেন নি , সাদ্দ অর্থ হল প্রাচীর । কিন্তু তিনি ‘রাদম” নির্মান করে দিয়েছিলেন । রাদম শব্দের অর্থ এমন অন্তরায় বা প্রচীর যা পরিপূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে দেয় । সাদ্দ হল শুধু আনুভুমিক দেয়াল তাই উপরিভাগ ফাকা থাকে অর্থাৎ ছাদ বলতে কিছু থকে না , তাই তারা দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠে  টপকে যেতে পারত । যদিও ঐ সকল লোকজন শুধু এরকমই একটি প্রতিবন্ধক (সাদ্দ )এর জন্য অনুরোধ করেছিল তথাপি যুলকারনাইন পৃথিবী বুক থেকে ইয়াজুজ মাজুজকে সম্পূর্ণ ভাবে মোহরাঙ্কিত বা অবরুদ্ধ করে দেন অর্থাৎ ‘রাদম’ তৈরি করে দেন ।

এইটাই হল  “ইহসান” , যে কোন কাজে সর্বোচ্চ শ্রম দেওয়া ।

তাই আজকে আমরা ইয়াজুজ-মাজুজকে দেখতে পাই না । তারা ঠিক কোথায় রয়েছে তাও আমরা জানিনা । তবে রাসুল(সা)একটি হাদিস থেকে জানা যায় তারা মদিনার পুর্ব দিক হতে আসবে ।  আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালাই ভাল জানেন । অবশেষে যুলকারনাইন তার সাধ্যমতো সর্বোত্তম প্রাচীর তৈরি করে দেয়ার পরে তাদের বলেছিলেন যা কুরআনে এভাবে এসেছে , “এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য। (কাহাফঃ  ৯৮)

এবার আমরা রাসুল(সা)  হাদিসটিতে চলে আসি যেখানে রাসুল(স) বলেছেন ” ইয়াজুজ মাজুজ প্রাচীর ভেদ করে বের হয়ে আসার জন্য প্রতিদিন খনন কাজে লিপ্ত । একসময় যখন তারা খননের শেষ দিকে চলে এসে সূর্যের আলো দেখতে পায় তখন তাদের নেতা বলেঃ চল ,ফিরে যাই । বাকি কাজটা আগামিকাল শেষ করে ফেলব । অর্থাৎ তারা প্রায় শেষ পর্যন্ত চলে আসে , অত:পর তারা ফিরে যায় । তারা পরের দিন আসে তবে তারা আরও মজবুত রুপে এটাকে পায় । প্রতিদিন এভাবেই চলতে থাকে । অতঃপর আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় শেষ হলে একদিন তারা খনন করে ফিরে আসার সময় তাদের নেতা বলবেঃ ইনশাল্লাহ  আগামীকাল সকাল সকাল এসে বাকী কাজ শেষ করে বের হয়ে যাবো। এবার তারা ইনশাল্লাহ বলবে । তাই পরের দিন এসে তারা যেভাবে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই পাবে । এবং তারা বাকী খনন সম্পন্ন করে বের হয়ে আসবে ।

প্রসঙ্গত, রাসুলুল্লাহ (সা) এর সময়কালেই খুবি ক্ষু্দ্র একটা  ছিদ্র (small opening) তারা করতে পেরেছিল । কারণ একদা রাসুলুল্লাহ (সা) এর মুচকি হাসিমুখ হঠাৎ  পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল এবং বলেছিলেন “ আজকে ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীরে একটি ছিদ্র হয়েছে”।  তাই আমরা বলতে পারি  এই প্রাচীরে ছিদ্র হয়ে গেছে ।

 

যাই হোক আমরা আগের হাদিসে ফিরে আসি । রাসুল(সা) বলেন যে  তাদের প্রথম দল একটি নদীর সমস্ত পানি পান করে ফেলবে এবং পরবর্তী দল এসে বলবে “এখানে তো একসময় পানি ছিল” । লোকজন ভয়ে সহায় –সম্পদ নিয়ে  পালিয়ে যাবে  । তারা কোন মানুষ দেখতে না পেয়ে মনে করবে যে তারা জমীনের সকল অধিবাসীকে হত্যা করা ফেলেছে । এখন, আকাশের অধিবাসীরা বাকি আছে । এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে । রক্ত মিশ্রিত তীর ফিরে আসলে তারা বলবে “আমরা জমীনের অধিবাসীকে হত্যার পর এবার আকাশের অধিবাসীদেরো হত্যা করেছি ।তাদের ঔদ্ধত্য দেখুন ! অতঃপর আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা তাদের প্রতি এক ধরনের কীটপতঙ্গ  প্রেরণ করবে এবং এতে তারা সবাই মারা যাবে । রাসুল (সা) আরও বলেন জমিনের জীব-জন্তু তাদের মরদেহ ও চর্বি ভক্ষণ করে মোটা হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করবে ।

 

এখন , পৃথিবীর ঠিক কোথায়  ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান তা আমরা জানি না । তারা বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাস করা কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনসমষ্টি  নয় । তারা এমন সম্প্রদায় যাদের সম্পর্কে আমরা জানি না । কিন্তু কিছু লোকজন আছে তারা মনে করে ‘ঐ’ লোকজন হল ইয়াজুজ মাজুজ , বা  ‘ওরা’ হল ইয়াজুজ মাজুজ । এমনকি পূর্বের কিতাব গুলোতেও ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে তথ্য আছে । তাই আহলে কিতাবরাও এ সম্পর্কে ধারণা রাখে । তারা গগ এবং মেগগ নামে ইয়াজুজ-মাজুজকে চিহ্নিত করে। সুবহানাল্লাহ ।এরকম একজন হলেন প্যাট রবার্টসন নামে একজন আমেরিকান যিনি “The 700 club” এর host ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের মাধ্যমে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পর যখন কিছু মুসলিম রিপালিক স্বাধীনতা লাভ করল এবং তাদের মধ্যে কারো কারো নিউক্লিয়ার অস্ত্রও মজুদ ছিল । তাই প্যাট রবার্টসন তাঁর The 700 club অনুষ্ঠানে একটি বড় worldmap নিয়ে আসেন এবং বলেন এই মুসলিম রিপাবলিকগুলোর নিউক্লিয়ার অস্ত্র আছে এবং এক সময় এরা ইরানের সাথে হাত মেলাবে এবং তারা পুরো বিশ্ব ধ্বংস করে ফেলবে ।সুতরাং  এটাই প্রমাণ করে যে মুসলিমরাই হল ইয়াজুজ মাজুজ। নিতান্তই পাগলামি আর হাস্যকর যে মুসলিমরাই শেষমেষ হয়ে গেল ইয়াজুজ মাজুজ! এরকম কিছু মুসলিম ও আছে যারা মনে করে “এই” বা “ঐ” লোকগুলো হল ইয়াজুজ-মাজুজ কিন্তু সত্য হল এটি গায়েব অর্থাৎ আমরা কেউ জানিনা ।

 

চতুর্থ,পঞ্চম ও ষষ্ঠ আলামতযেটা হলো আল-খুসুফ, ভূমিধ্বস। এটি প্রচণ্ড রকমের একটি ভূমিকম্প হতে পারে যাতে করে পৃথিবীর একাংশ ধ্বসে পড়বে। মুসলিম শরীফের এই হাদীসে  রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেন, তিনটি খুসুফ, একটি হলো পূর্বে, একটি হলো পশ্চিমে আর আরেকটি হলো আরব উপদ্বীপে। পৃথিবী কম্পিত হবে যার ফলে এর একাংশ ধসে পড়বে এবং এগুলো কোন সাধারণ ভূমিকম্প নয়। এগুলো বেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প। এটি এত বড় হতে পারে যা কিনা পুরো পশ্চিম United States কে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে পারে।

কারণ আমার মনে হয় প্রাদেশিক যে বিভাজন, তা অ্যারিজোনার মধ্য দিয়ে চলে গেছে অথবা ক্যালিফোর্নিয়ার পূর্বাংশ দিয়ে। তাই এই অঞ্চল গুলো বেশ বিপদজনক। তাই, একটি বিজ্ঞাপন ছিল যেখানে অ্যারিজোনাতে সবাইকে জমি কিনতে বলা হয় কারণ একদিন তা সমুদ্র উপকূলীয় সম্পদে পরিণত হবে। তাই এখনই কিনে রাখা ভাল যখন কিনা তা অনেক সস্তা কেননা এখানে একদিন সমুদ্র উপকূল হতে যাচ্ছে।

একটি বিশাল ভূমিকম্পের ফলে বিরাট ভূমিধ্বস ঘটবে এবং তা এমনি এমনি হবে না যেভাবে মানুষ চিন্তা করে। এই ঘটনা গুলো আল্লাহর কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত ঘটনা। এগুলো হলো মানব সম্প্রদায় এর গুনাহের কারণে তাদের জন্যে শাস্তি । আল্লাহ মানব জাতিকে পরীক্ষা করছেন এবং সুবহানআল্লাহ আপনারা দেখবেন যে 1994 সালে আমেরিকায় নর্থারেজ এর ভূমিকম্পটি বেশ ভয়ানক ছিল। এটি নর্থারেজ এর উপত্যকায় হয়েছিল। কারণ সেখানে পর্ণোগ্রাফির স্টুডিও গুলো এবং সুবহানআল্লাহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রটিও সেখানে ছিল।

১৯০৬ সালে সানফ্রানসিসকোর ভূমিকম্পটির কারণ হিসেবে আমরা জানি সেখানকার দুর্নীতি এবং ন্যায়-ভ্রষ্টতা। সুতরাং, এই ঘটনা গুলো এমনিতেই ঘটেনা। এর অবশ্যই কারণ রয়েছে। একবার মদিনাতে ভূমিকম্প হয়েছিল। সাধারণ ভূমিকম্প। এটি প্রথমবার হোল, তারপর আবার হোল এবং যখন তৃতীয় বারের মতন হোল তখন উমর ইবন খাত্তাব(রাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়ালেন এবং বললেন “হয় তোমরা গুনাহ করা বন্ধ কর নয় আমি মাদিনা ত্যাগ করলাম”। উমার ইবন খাত্তাব(রাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন যে এগুলো মানুষের গুনাহের কারণে হচ্ছে। বর্তমানের মানুষরা হলে বলত প্রথমটি ছিল ভূমিকম্প এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি ছিল আফটার শকস। একবার উহুদ পাহাড় কম্পিত হয়েছিল। তখন রাসুলুল্লাহ(সঃ) তার হাত উহুদ পাহাড়ের উপর রেখে বলেছিলেন, “কম্পিত হোয়ো না। কেননা তোমার উপর রয়েছে একজন নাবী, একজন সিদ্দিক, এবং দুইজন শহীদ”। আবু বাকর(রাঃ) হল সিদ্দিক এবং উমার ও উসমান(রাঃ) হল শহীদ।

তো এই তিনটি ভূমিকম্পই হচ্ছে আল খুসুফ।

সপ্তম আলামত ধোঁয়া, “আদ-দুখান”। কুরআনে একটি সূরা রয়েছে এর উপর যার নাম “আদ-দুখান”। আমরা এই ধোঁয়া সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না। শুধু জানি যে এটি এক ধরনের ধোঁয়া যা কিনা পৃথিবীতে আসবে অবিশ্বাসীদের জন্যে শাস্তি স্বরূপ।

অষ্টম আলামত সূর্যের পশ্চিম দিক থেকে উদয়  রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার আগে কিয়ামত সংঘটিত হবে না”। যখন তা হবে সকলেই তা বিশ্বাস করবে। পৃথিবীর বুকে সকল মানব তখন তা বিশ্বাস করবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “তখন ঈমান আনলে তা কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না”।

আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল। আল্লাহর এ নিয়মই পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে কাফেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ গাফির ৮৫

আয়াতটির অর্থ হল ‘যদি তারা আগে বিশ্বাস না করে। অর্থাৎ ঐ সময়ে কেউ মুসলিম হলে এটি আর গ্রহণযোগ্য হবে না।

কেউ যদি নিজেকে বিশ্বাসী দাবি করে অথচ তারা ভাল কাজ করে না কিন্তু সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবার পর থেকে ভাল কাজ করে ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এই কারণেই আপনার রেকর্ড গুলো সেরকমই থাকবে তা সূর্য উদয় এর আগে যেমন ছিল।

 

যদি আপনি ভাল কর্ম সূর্য উদয়ের আগে থেকেই শুরু করেন তবে হতে পারে তার পুরস্কার আপনি সূর্য উদয়ের  পরও পেতে থাকবেন। কিন্তু আপনি আগে যদি না করে থাকেন তবে নতুন করে করার জন্য কোন পুরস্কার আপনি পাবেন না। কেন? ইমাম আল-কুরতুবী বলেছেন, “যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে তখন মানব সম্প্রদায় জানতে পারবে এটিই হল সমাপ্তি। যার কারণে এটি হল মৃত্যু সমতুল্য”। যখন কেউ মৃত্যু ফেরেশতা কে দেখতে পাবে তারা কি তখন তওবা করতে পারবে? অনেক দেরি হয়ে গেছে।

যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে তখন সকলেই অনুধাবন করতে পারবে যে এটিই হল দুনিয়ার সমাপ্তি এবং  তখন তওবার সকল দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর কোন তওবা আর গ্রহণযোগ্য নয়।

নবম আলামত দাব্বাতুল আরদ(অদ্ভুত জন্তু) ।আল্লাহ বলেন, যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না। নামল ৮২

ওয়া ইযা ওক্বায়াল ক্বাওলু আলাইহিম আখরাজনা লাহুম দা-আ-ব্বাতাম মিনাল আরদি  তুকাল্লিমুহুম, এর অর্থ বলা যায় তাদের সাথে কথা বলা বা চিহ্নিত করা। তুকাল্লিমুহুম এর অর্থ আরবিতে বলা যায় যে, কথা বলা এবং এটিকে আরও বলা যায় কালিম অথবা কালাম। যখন আপনি কারো উপর দাগ দিবেন তখন বলা হয় কালামা। যখন আপনি কোন দাগ কারো উপর দিবেন সেটা হল কালামা। উভয় অর্থ সঠিক। ইবন-আব্বাস(রাঃ) বলেন, “উভয় অর্থ সঠিক। যা ঘটবে টা হল, জন্তুটি আসবে এবং মানুষের সাথে কথা বলবে, আল্লামা আলূসী বলেন উল্লেখিত আয়াতটিই হবে তার কথা , অর্থাৎ সে বলবে, ‘সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না’।

সে বলবে, “তুমি একজন বিশ্বাসী আর তুমি একজন অবিশ্বাসী”। এটি বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের চেহারায় দাগ দিয়ে দিবে। আর এর উপর কিছু হাদিস রয়েছে। রাসুলুল্লহ সা) বলেন, দাব্বাতুল আরদ নামে একটি প্রাণী বের হবে, এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। প্রানীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে- আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি-মুসনাদে আহমাদ।

আল্লাহর বাণী তাদের উপর পড়বে, মানে যখন জন্তুটি কথা বলবে সে বলবে, মানুষ আল্লাহর নিদর্শনসমূহে অবিশ্বাসী।

এটা তাদেরকে আহত করবে, এর মানে কি? আল-কুরতুবী বলেছেন, “আল্লাহর বাণী তাদের উপর পড়বে” বলতে বুঝায় আল্লাহর আযাব তাদের উপর পড়বে। এর কারণ হচ্ছে দুর্নীতি, শয়তানি এবং অহংকারে তাদের বাড়াবাড়ি এবং কারণ তারা অবহেলা করে আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে এবং তারা সেগুলোকে নিয়ে চিন্তা করে না।

ইবন-মাসউদ(রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর বানী(অর্থাৎ আযাব) তাদের নিকট আসবে যখন জ্ঞানীরা(আলেম) মৃত্যু বরণ করবে, জ্ঞান হারিয়ে যাবে এবং কোরআনকে তুলে নেয়া হবে। এখানে বলা হচ্ছে যখন কোরআনকে মানুষের অন্তর হতে নিয়ে যাওয়া হবে।

আবু হুরাইরা(রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলআল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “তিনটি ঘটনা ঘটার পর কেউই তার ইমান থেকে উপকৃত হবে না! একটি হল পশ্চিম দিক হতে সূর্যোদয়, দ্বিতীয়টি হল আদ-দাজ্জাল, তৃতীয়টি হল জন্তুর(কথা বলা) আগমন। এর পর অনেক দেরি হয়ে গেছে।

দাজ্জালের সময়টি আমি ব্যাখ্যা করেছি। তখন এত বেশি ফিতনা ছড়াবে যে আপনি যদি আগে থেকে প্রস্তুত না থাকেন তবে আপনি কখনই দাজ্জালের সময় নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন না। আর জন্তুটির সময় সকল বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী চিহ্নিত হবে। আর বিস্তারিত রয়েছে হাদিসটিতে যা রয়েছে তিরমিযী এবং আহমাদে।

“দাব্বাতুল আরদ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি। কাফেরর নাকে সুলায়মান (আঃ) এর আংটি দিয়ে দাগ লাগিয়ে দিবে এবং মুসা (আঃ)এর লাঠি দিয়ে মুমিনদের চেহারাকে উজ্জ্বল করে দিবে। এমনিক লোকেরা খানার টেবিলে (দস্তরখানায়) বসেও একে অপরকে বলবে: হে মুমিন !হে কাফের! হে মুমিন ! হে কাফের!”

রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “জন্তুটি আসবে সুলায়মান (আঃ)  এর আংটি এবং মুসা(আঃ) এর লাঠি নিয়ে।এটি বিশ্বাসীদের চিহ্নিত করবে মুসা(আঃ) এর লাঠি দ্বারা এবং অবিশ্বাসীদের চিহ্নিত করবে সুলায়মান (আঃ) এর আংটি দ্বারা”। রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “মানুষজন একসাথে খেতে বসবে আর বলবে, আমাকে এটা দাও হে বিশ্বাসী, আমাকে এটা দাও হে অবিশ্বাসী”। সকলের মুখমণ্ডলে তা লিখিত থাকবে। মানুষজন একজন আরেকজনকে ডাকবে, ইয়া কাফির,হে অবিশ্বাসী, ইয়া মু’মিন, হে বিশ্বাসী। শেইখ আহমেদ সাখির হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু আলবানি একজন বাহকের কারণে দুর্বল বলেছেন। তিরমিযীও একই বাহক থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহু ’আ’লাম।

দশম আলামত –  বিচারদিবসের সর্বশেষ আলামত হচ্ছে অগ্নি বা আগুন। রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “এবং একটি আগুন উৎপন্ন হবে ইয়েমেন(এর আদান) হতে। এই আগুনটি পৃথিবীর সকল মানুষজনকে  পবিত্র ভূমির দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। এটি তাদেরকে একসাথে নিয়ে যাবে। এটি অনবরত তাদের পিছু নিতে থাকবে এবং মানুষজন এটি থেকে দৌড়ে পালাবে এবং যেই কিনা পিছিয়ে থাকবে আগুনটি তাকেই পুড়িয়ে ফেলবে। এটি তাদেরকে দিনের বেলা অনুসরণ করবে আর রাতের বেলা তাদের সাথেই ঘুমিয়ে থাকবে”। তাদের একা ছাড়বে না এবং এটি আসবে ইয়েমেন হতে। রাসূলুল্লাহ(সঃ) জায়গাটির দিকে নির্দেশ করে বললেন, যে তা আদান এর অববাহিকা হতে। আদান আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে অনেক আগ্নেয়গিরি এ অঞ্চল বিদ্যমান। আদান শহরটি সমুদ্রবর্তী। রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেন যে আগুনটি এই অঞ্চলের(আদান) জ্বালামুখ হতে আবির্ভাব ঘটাবে এবং তা সকল মানুষকে আল-মাহশার এর দিকে নিয়ে যাবে। আল-মাহশার হচ্ছে আস-শাম এর একটি অঞ্চল।

রাসূলুল্লাহ(সঃ) আস-শামের দিকে নির্দেশ করে বললেন, সেখানে তোমরা মিলিত হবে এবং মুসনাদে আহমাদের অন্য আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেন। তখন হিজরতের(ইসলামের কারনে স্বদেশ পরিবর্তন) পর হিজরত হবে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হিজরত হবে সেই সকল বান্দার হিজরত যাদের হিজরত হবে ইব্রাহিম(আঃ) এর হিজরতের স্থান। কোথায় ইব্রাহিম(আঃ) এর হিজরতের স্থান? জেরুযালেম, পবিত্র ভূমি। প্রথম হিজরত ছিল মক্কা হতে মদিনা এবং আরেকটি হিজরত হবে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের হিজরত জেরুযালেম এর দিকে। ঐ সময়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের হিজরত হবে ইব্রাহিম(আঃ) এর হিজরতের স্থান এবং অন্যান্য যারা ঐ সময় থাকবে তারা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানবগোষ্ঠী।

আস-শাম সম্পর্কে আগে যথেষ্ট বলা হয়েছে আস-শাম হচ্ছে সিরিয়া,ফিলিস্তিন,জর্ডান,লেবানন এবং এর সবচেয়ে পবিত্র অংশ হচ্ছে জেরুযালেম। অর্থাৎ, বাইত-আল-মাকদাস। অনেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ(সঃ) স্থানটির অনেক প্রশংসা করেছেন কারণ সেখানে জিহাদ চলবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত। শুরুতে তা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। পরে জিহাদ হয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে, এর পর জিহাদ হয় তাতারদের বিরুদ্ধে এবং এখন জিহাদ হচ্ছে আল-ইয়াহুদ এর বিরুদ্ধে, পুনরায় আবার তা হবে রোমানদের বিরুদ্ধে। এর পর আবার হবে তা হবে আদ-দাজ্জাল এর বিরুদ্ধে। সেখানেই মুসলিমরা জিহাদে অংশগ্রহণ করতে যায়। মুসনাদে আহমাদ এর একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন।

“আমি স্বপ্নে কিতাবের স্তম্ভ দেখতে পেলাম। কিতাবটি হল আল-কুরআন। কিতাবের স্তম্ভটি আমার থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তাই আমি তা অনুসরণ করতে লাগলাম। আমি কিতাবের স্তম্ভটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম এবং দেখলাম তাকে আস-শাম এ নিয়ে রাখা হয়েছে এবং ফিতনার সময় সেখানটায় ইমান থাকবে”। অন্য আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “যখন আমি আল-ইসরার(ঊর্ধ্ব আসমানে গমন বা মি’রাজ) ভ্রমণে ছিলাম তখন আমি একটি সাদা স্তম্ভ দেখতে পেলাম অনেকটা যুদ্ধের ব্যানারের মতন এবং তা আমার কাছ হতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমি ফেরেশতাটিকে জিজ্ঞেস করলাম যে এটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা বলল যে এটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আস-শামে এবং সেখানে এটিকে স্থাপিত করা হবে”। এখন আস-শামে যে সমাবেশ তা কি বিচার-দিবসের সমাবেশ নাকি এটি অন্য এক সমাবেশ। কিছু স্কলার(বিশিষ্ট আলেম) যেমন গাযযালি এবং অন্যান্যরা বলেছেন যে এই সমাবেশটি হল বিচার-দিবসের সমাবেশ। কিন্তু অধিকাংশ স্কলার (বিশিষ্ট আলেম) বলেছেন যে হাসর হবে দুটি। একটি সমাবেশ হবে দুনিয়াতে আর অন্যটি হবে আখিরাতে। সুতরাং, দুনিয়ার সমাপ্তির দিকে মানব সম্প্রদায় একবার একত্রিত হবে পবিত্র-ভূমিতে আর আরেকবার হাশরের ময়দানে। কিয়ামত দিনের হাশর  হবে ভিন্ন এবং তারা কোরআনের এ আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে ব্যাবহার করে যে “যখন জমিনকে পরিবর্তিত করা হবে” ।

যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এবং আল্লাহর সামনে পেশ হবে। (ইবরাহীম ৪৮)

কিয়ামতের দিন জমিন, সূর্য এবং সবকিছুই ভিন্ন হবে। আল্লাহু’আ’লাম!!! এতে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

 

এখানেই সমাপ্তি হচ্ছে বিচারদিবস বা কিয়ামত এর আলামত।