পরকালের পথে যাত্রা – পর্ব ১৪ – সৎ কর্মশীলদের অবস্থা

আমরা এতক্ষণ (১৩ তম সেশনে ) আলোচনা করলাম, বিশ্বাসী হওয়ার পরেও যারা গুনাহগার তাদের অবস্থা কিয়ামতের দিন কি হবে সেই সম্পর্কে।

এখন আমরা আজকে ১৪তম সেশনে আলোচনা করব কিয়ামতের দিন সৎ কর্মশীলদের অবস্থা কি হবে সেই সম্পর্কে , কারা কিয়ামতের দিন ভয় ভীতি আযাব হতে নিরাপদ থাকবে? তারা কারা?

আল্লাহ্‌ সুবহানওয়াতালা বলেন, ‘’যাদের জন্য প্রথম থেকেই আমার পক্ষ থেকে কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে তারা দোযখ থেকে দূরে থাকবে।তারা তার ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং তারা তাদের মনের বাসনা অনুযায়ী চিরকাল বসবাস করবে। মহা ত্রাস ‘ফাজাআল আকবার’ তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেঃ আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। ‘’ [ ২১ঃ ১০১-১০৩]

যারা কিয়ামতের দিন নিরাপদ থাকবে, তারা কারা ? তারা হচ্ছে যাদের জন্য প্রথম থেকেই আল্লাহ্‌র কল্যাণ নির্ধারণ করা হয়েছে; তাদের আল্লাহ্‌ নিরাপদ রাখবেন সেই ওয়াদা আল্লাহ্‌ তালা করেছেন। আল্লাহ্‌ তালা তাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘’ 
لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ
লা ইয়াহজুনু হুমুল ফাজাআল আকবার’’।‘’

ফাজা’আল আকবার’’- মানে হচ্ছে মহা ত্রাস। আর আল্লাহ্‌ তালা কিয়ামতের দিনকে ‘’মহা ত্রাস’’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই দিনটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। কিয়ামতের দিনের চেয়ে ভয়ংকর দিন আর নেই।আল্লাহ্‌ বলছেন, “ লা ইয়াহজুনু হুমুল ফাজা’আল আকবার’’- মানে মহা ত্রাস তাদের চিন্তান্বিত করবে না। অর্থাৎ ন্যায় পরায়ন ঐ সকল মুমিনরা সবচেয়ে ভয়ংকর দিনেও চিন্তামুক্ত থাকবে, নিরাপদে থাকবে। 

এই সকল ব্যক্তিদের এত নিশ্চিন্ত নিরাপদ থাকার কারন কি? যখন অন্যেরা ভীতসন্ত্রস্ত, ভীষণ চিন্তায় থাকবে। আর এইসকল লোকরা থাকবে ফুরফুরে মেজাজে। এর উত্তর রয়েছে কুরআন ও হাদিসে ,

এই সকল লোকেরা যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত, 
إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا

‘’ আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।‘’ [৭৬ঃ১০]

এই সকল পুণ্যশীল নারি ও পুরুষ, যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত যে আমরা এমন এক দিনের ভয় রাখি যা “ আবুস (tensed)” এবং “কামতারির(long day)”। “আবুস” মানে হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা যার ছাপ চেহারায় পড়ে অর্থাৎ ভয় করা। 
ইবনে আব্বাস (রা) এর মতে “কামতারিরা” হচ্ছে অনেক বড় ও দীর্ঘস্থায়ী একটি দিন। কাতাদা(রা) এর মতে কামতারিরা মানে হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন এবং ভয়ঙ্কর একটি দিন। 

ঐ পুণ্যশীল নারী ও পুরুষেরা দুনিয়ায় থাকতে এই দিনটিকে ভয় পেত। তারা এইদিন এর ভয় পেত দুনিয়া থেকে তাই আল্লাহ্‌ সুবহান ওয়াতালা এই ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনে তাদের নিরাপদ রাখবেন।

 

রাসুল (সা) একটি হাদিসে কুদসি তে বলেন, 
“আল্লাহ্‌ তালা বলেন, ‘আমার নামের শপথ! আমি কখনই আমার বান্দাদের দুই কালেই সুখী বা দুখী রাখবনা। আমার বান্দা যদি দুনিয়াতে থাকতে কিয়ামত দিবস কে ভয় না পায়, তাহলে তারা কিয়ামত দিবস তাদের জন্য এক ভীতিকর দিন হবে। আর কেউ যদি দুনিয়াতেই এই দিনটিকে ভয় পায়, তাহলে কিয়ামত দিবসের দিন সে থাকবে নিরাপদ এবং তার মনে তাকবে শান্তি।” – 

অর্থাৎ আপনি যদি দুনিয়াতে থাকতে কিয়ামত দিবসকে ভয় না পান, তাহলে অবশ্যই আপনি কিয়ামত দিবসের দিন ভীতসন্ত্রস্ত থাকবেন। আর আপনি যদি, দুনিয়া থেকেই এই দিনটিকে ভয় করে আসতে থাকেন, তাহলে আপনি এই দিন থাকবেন ফুরফুরে মেজাজে, নিরাপদে। আর ঐ ভয়ংকর দিন ভীতসন্ত্রস্ত থাকার চেয়ে, দুনিয়াতে ঐ দিনটিকে ভয় করা ঢের ভাল। 
কারন, আমরা এই আলোচনা থেকে আগেই জানতে পেরেছি, আপনি যদি আগে একটী কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যান, পরে আপনার জন্য তা ততটাই সহজ হয়ে যাবে। দুনিয়াতে আপনি যত সহজে আপনার গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাবেন,পরবর্তীতে তত সহজে পরিত্রাণ পাবেন না।

এখন, কিভাবে আপনি আপনার গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাবেন?

এবং  আমরা জানি যে আগে কষ্ট ভোগ করলে পরে সহজতা লাভ হয়।

যদি আপনি কোন গুনাহ করে থাকেন, তবে আখিরাতের চেয়ে দুনিয়ায় এই গুনাহ থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়া  অনেক সহজ।

 

গুনাহ থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার ১১ টিরও বেশী পদ্ধতি রয়েছে, সংক্ষেপে বলতে গেলে দুনিয়ায় আপনার জীবনের দুঃখ,কষ্ট, সংগ্রামের বিনিময়ে আল্লাহ আপনার কিছু গুনাহ মাফ করে দিবেন যেমন, আপনার বিভিন্ন রোগ, অসুস্থতা, দুর্যোগ, আর্থিক সঙ্কট কিংবা যেকোনো কষ্টের ক্ষেত্রে আপনার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

যদি তা যথেষ্ট না হয়, মৃত্যুলগ্নে আপনার রুহ বের করে নেয়ার সময় যে কষ্ট অনুভব করবেন তার কারনে অন্য গুনাহ সমুহ মাফ করে দেয়া হবে। এটাও যদি আপনার পরিশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে কবরের আযাব রয়েছে।

এতেও যদি না হয় তবে রয়েছে বিচার দিবসের ভয়াবহতা, 
আর এর পরও যদি গুনাহ রয়ে যায় তবে তাকে কিছু সময়ের জন্য জাহান্নামে থাকতে হবে, কারন গুনাহ এর পরিশুদ্ধি হতেই হবে, ১০০% পরিশুদ্ধ না হলে আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। 
জান্নাতে কোন রকম অপবিত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়, তাই আপনাকে পরিশুদ্ধ হতে হবে।

 

আপনার কৃতকর্মের ফল অনুযায়ী আপনাকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই দুনিয়ায় নিজের পরিশুদ্ধি করে নেয়া অনেক সহজ কারন এর জন্য আপনাকে কেবল আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে এবং এই দুনিয়ায় যে কষ্টভোগ করবেন তা আখিরাতের তুলনায় নগণ্য।

আল্লাহ বলেন, তারা জাহান্নামে ধৈর্য ধারন করতে পারবে না কেউ জান্নামের কষ্ট সহ্য করতে পারবে না, আর তাই পরের জন্য অপেক্ষা না করে আগেই এই পরিশুদ্ধির চেষ্টা করা উচিৎ।

যারা এই দুনিয়ায় বিচার দিবসের ভয় অনুধাবন করে, আল্লাহ তাদের সে দিন প্রশান্তি দান করবেন। আমরা একটু লক্ষ করলেই দেখতে পাব যে, আমাদের মাঝে আখিরাতের ব্যাপারে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমরা গাফেল,অসতর্ক, অসচেতন। সুবহানাল্লাহ, আমরা যদি আমাদেরকে লক্ষ করি তবে দেখতে পাব, জান্নামের বিষয়য়ে সাহাবাদের সচেতনতার একভাগও আমাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। তারা সত্যিই আখিরাতের ব্যাপারে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন।

রাসুল্লুল্লাহ (সা) যখন তাদের আখিরাতের কথা বলতেন তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন এবং বিচার দিবসে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে তারা সর্বদা সচেতন ছিলেন।

বর্ণিত রয়েছে যে, উমার বিন আব্দুল আজিজ যিনি ইসলামিক খিলাফতের  অধীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন,যা তৎকালীন সময়ের একমাত্র মহাশক্তি, তিনি চাইলেই নিজেকে ভোগসুখের জোয়ারে গা ভাসিয়ে রাখতে পারতেন। উমার বিন আব্দুল আজিজ এর স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আব্দুল মালিক থেকে বর্ণিত আছে, একরাতে উমার বিন আব্দুল আজিজ  ঘুমানোর সময় হঠাৎ উঠে কাঁপতে থাকেন এবং ভোঁর পর্যন্ত কাঁদতে থাকেন, তিনি সারা রাত ঘুমাতে পারেন নি, আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হল, উনি ঘুমাতে পারলেন না কেন ? উনি বললেন, আমি সেই দিনের স্মরণ করছিলাম যে দিন আমাকে বলা হবে হয় তুমি জান্নাতে যাও না হয় জাহান্নামে।সেই দিনই আমার জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ব্যাপারে চূড়ান্ত ফলাফল দেয়া হবে।  সেই দিনের স্মরণে তিনি সারা রাত কান্না করলেন, তিনি জানতেন যে সেটাই শেষ সুযোগ, এরপর কেবল জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।

সাহাবা, তাবেইন, তাবে তাবেঈন ধর্মপ্রাণ সালাফদের মাঝে বিচার দিবস নিয়ে যে ভীতি কাজ করত তা একটি ইবাদত স্বরূপ।

আল্লাহ ভীতি একটি ইবাদত ইবন কাইয়ূম বলেছেন, আমাদের দুটি ডানা থাকতে হবে একটি হল আমাদের আশা (রজা) আল্লাহ দয়ালু এবং করুণাময়, আরেকটি হল (খাওফ) আল্লাহর শাস্তির ভীতি। পাখির দুটি ডানার মাঝে যদি একটি অন্যটির চেয়ে ভারী হয় তবে পাখি উড়তে পারে না। আমরা যদি কেবল আশা নিয়ে বসে থাকি এই ভেবে যে আল্লাহ পরম করুণাময়, দয়ালু এবং ক্ষমাশীল , আল্লাহ আমার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন তা আমাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে অলস করে তোলে, আমি যা ইচ্ছা তা করতে পারি – এমন ভাবের উদয় ঘটে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অসমঞ্জস্যতা ।

অপরদিকে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে যদি কোন বান্দা আশা ছেড়ে দেয় তবে তা আরেকটি অসমঞ্জস্যতা।ইবন কাইয়ূম এর মতে আমাদের মাঝে এই দুইের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে হবে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ পরম করুণাময়, দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং আল্লাহর শাস্তিসমূহ তীব্র ও কঠোর।

আল্লাহর প্রতি এ ভীতি মুজাহাদার মাধ্যমে গড়ে  তুলতে হবে এবং এটি একটি সংগ্রাম।

সর্বদা আখিরাতের স্মরণের মাধ্যমে এই ভীতি গড়ে তুলতে হবে।  কাজেই সেই ভীতিকর দিনে নিরাপদ নিরুদ্বিগ্ন থাকার এটা হচ্ছে ১ নম্বর উপায়, আর তা হল দুনিয়াতে থাকতেই সেই দিনকে ভয় করা এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়া। 


২ নম্বর উপায় হচ্ছে- নিজেকে তাদের মধ্যে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা, যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই ভীতিকর দিনে নিজের আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দান করবেন।

যেদিন সূর্য মানুষের মাথার খুব কাছে চলে আসবে এবং যেদিন আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয় থাকবে না।

এবং সেই বিচার দিবস  ৫০,০০০ বছর দীর্ঘ, সূর্য থাকবে মাথার উপর, সেদিন কোন ছায়া থাকবে না, কোন পাহাড় থাকবে না, কোন বিল্ডিং থাকবে না, থাকবে না কোন গাছ কোন কিছুই থাকবে  না। ভুমি থাকবে সমতল। আল্লাহর আরশ এর ছায়া ছাড়া সেদিন কোন ছায়া থাকবে না। এই ছায়া কেবল একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষদের জন্য থাকবে, যে কেউ নিজের ইচ্ছামত দৌড়ে গিয়ে এই ছায়া লাভ করতে পারবে না।

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

যে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবেনা সে দিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন।

 

প্রথম হল ন্যায় পরায়ণ শাসক।

ইমাম নববি বলেছেন, রাসুল্লুলাহ (সা) ন্যায় পরায়ণ শাসক দিতে শুরু করেছেন কারন ন্যায় পরায়ণ শাসকের উপকারিতা ও ন্যায়পরায়ণতা সকলে ভোগ করবে। এই শাসক মুসলিমদের দেখা শোনা করে এবং পাশাপাশি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে, আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই দুনিয়ায় শান্তি আনায়ন সম্ভব। আমরা ন্যায়, জাস্টিস, আদল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি অবমূল্যায়ন করে থাকি। ইবন তাইমিয়া বলেছেন, জান্নাত এবং পৃথিবী  ন্যায় এর বুনিয়াদে নির্মিত। 
অর্থাৎ ন্যায় আদল, এর উপর এই আসমান যমীন সৃষ্টি করা হয়েছে, সব কিছুকে যথাযথভাবে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে।
 যদি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে এই ভারসাম্য রক্ষা হয়, আর যদি ন্যায় বিচার না থাকে তাহলে সব কিছু ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, কারণ এই আসমান যমীন সব কিছুকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ন্যায় এর ভিত্তির উপর, কাজেই এই বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ন্যায় এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই মানুষরা সম্পদশালী হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে , নিরাপদ থাকবে। আর শাসক যদি ন্যায় পরায়ণ হয় তবে সমাজে এই শান্তি প্রতিফলিত হবে। এই কারনেই আল্লাহ এই ব্যক্তি বর্গদের বিচার দিবসে শান্তি প্রদান করবেন। 

এরা পৃথিবীতে মানুষদের জীবনে শান্তি আনায়ন করেছে তাই আল্লাহ বিচার দিবসে তাদেরকেও শান্তি প্রদান করবেন।

আমি আগেই বলেছি যে,আমরা কিভাবে এই ন্যায় পরানতার বিষটিকে অবমূল্যায়ন করে থাকি, যখনই আমাদের হাতে ক্ষমতা থাকে, তখন আমরা ন্যায় এর বদলে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করি।

দ্বিতীয় হল, সেই যুবক যে তাঁর রবের এবাদতের মাঝে প্রতিপালিত হয়ে বড় হয়েছে।

কেন বিশেষ করে যৌবনের কথা বলা হয়েছে? সাধারণত মানুষরা তাদের যৌবনে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে সচেতন থাকে না। তবে এটি কোন সাধারণ নিয়ম নয়, এমন অনেক যুবক রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে, আর যুবকদের হাত ধরেই আল্লহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। কোন যুবক যদি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকেই বড় হতে থাকে এবং কখনও পথভ্রষ্ট না হয় তবে আল্লাহ বিচার দিবসের দিন তাদের আরশের ছায়া প্রদান করবেন। এই যুবকরা সর্বদা আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল ছিল এবং শয়তান দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়নি। তাদের এই একনিষ্ঠতার পুরস্কার তারা বিচার দিবসের দিন পাবে।

 




নাম্বার (৩) যাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহর ঘরের(মসজিদ) সাথে একাত্ম হয়ে থাকে। তারা সবসময় আল্লাহর ঘরে(মসজিদে) জামায়াতের সাথে ইবাদাত করতে চায়, যেখানেই যাক না কেন মসজিদের খবর জেনে নেয়, অন্যকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়, “মসজিদ কোথায়? আমি মসজিদে যেতে চাই।”

যখনই তাঁরা ভ্রমন করেন, তাঁরা মসজিদ খুজে বেড়ান। তাঁরা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে যান, তাঁরা সেখানের নিকটবর্তী মসজিদ সম্পর্কে জেনে নেন। তাঁরা যখন নিজের বাসায় থাকেন এবং সালাতের সময় হয় তখন তারা অন্তর থেকেই মসজিদে যাওয়ার একটা তাগিদ বোধ করেন। তাঁরা মসজিদকে ভালবাসেন।

 

তাদের কাছে এমনটা মনে হয় না যে, কেউ তাকে মসজিদে যেতে জোর করছে । বরং তাঁরা মসজিদে যান নিজের স্বেচ্ছায় অনুপ্রানিত হয়ে। তাঁরা মসজিদকে ভালবাসেন, আর এই ভালবাসাটা একান্তই আন্তরিক।

আর এখানে রাসুলুল্লাহ সা) বলেন যে, যাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহর ঘরের(মসজিদ) সাথে একাত্ম হয়ে থাকে।  ইমাম আন নাওয়াবী বলেন যে, এর মানে হচ্ছে তাঁরা মসজিদে জামায়াতে সালাত পড়তে পছন্দ করে, 

এটার মানে এই নয় যে তাঁরা মসজিদে বসবাস করতে পছন্দ করে, অযথা শুয়ে বসে সময় কাটায়, গল্প গুজব করে এমন লোকদের কথা বলা হয়নি। 

কারন এটাকে আমরা ভুল ব্যখ্যা করতে পারি না , কেউ মসজিদে এসে বসে থাকবে আর কিছুই করবে না,এমনিতেই সেখানে অবস্থান করবে, এমনটা এখানে বুঝানো হয়নি। আর এখন তিনি বলেন, এই ভালবাসাটা হচ্ছে মসজিদে জামাতে সালাত আদায়ের জন্য। তাঁরা অনুভব করেন মসজিদে এসে জামাতে সালাত আদায়ের বিষয়টি।

 

একদিন উমার ইবনে খাত্তাব মসজিদে এসে দেখলেন মসজিদে কিছু মানুষ শুয়ে আছে আর বসে বসে সময় কাটাচ্ছে, অথচ তখন কাজের সময় ছিল। তাঁরা বলল, “আমরা মসজিদে অবস্থান করছি কারণ আমরা হচ্ছি মুতাওয়াক্কীলুন, আমরা তাওয়াক্কুল কারী।”

 

উমার ইবনে খাত্তাব একটি লাঠি নিলেন এবং তাদেরকে আঘাত করে বললেন, “তোমরা জান যে আকাশ থেকে বৃষ্টির সাথে সোনা রুপা পড়ে না। তোমরা যদি মসজিদেই অবস্থান কর তাহলে এমন আশা কর না যে আকাশ থেকে তোমাদের কাছে সোনা রুপা পতিত হবে । তোমাদের বাইরে বেরোতে হবে এবং কাজ করতে হবে।”

 

রাসুলুল্লাহ(সঃ) একদিন মসজিদে গেলেন এবং সেখানে একজন সাহাবা দেখলেন। রাসুলুল্লাহ(সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি মসজিদে বসে কি করছ অথচ এখন সালাতের ওয়াক্ত নয়?”  যদি মানুষের জন্য কোন কাজকর্ম ছাড়া এমনি এমনি অবিরত ভাবে মসজিদে বসে থাকা কোন সওয়াবের কাজ হত তাহলে রাসুলুল্লাহ(স) এভাবে তাকে প্রশ্নটি করতেন না। কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সঃ) তাকে প্রশ্নটি করলেন কারণ তখন সালাতের সময় ছিল না, তাই তিনি বললেন, “এখানে তুমি কি করছ?” সাহাবী বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, আমি অনেক মানসিক পীড়ায় ভুগছি। ”

 

তখন রাসুলুল্লাহ(সঃ) সেই হাদিসটি বললেন, বল, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযাম, ওয়াল আযযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবন, ওয়াদাল ইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিযাল’  

ইয়া আল্লাহ ! আমি তোমার কাছ থেকে পরিত্রাণ চাই দুঃখবোধ ও ভয়-দুশ্চিন্তা হতে, আমি তোমার কাছে দুর্বলতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও কাপুরুষতা হতে, পরিত্রাণ চাই ঋণ ও মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে, …এভাবে এই হাদিসটার শেষ পর্যন্ত বললেন। রাসুলুল্লাহ () জিজ্ঞেস করেছেন তুমি মসজিদে কি করছকারন তখন কাজের সময় ছিল, তখন সালাতের সময় ছিল না।

 

কিন্তু এই হাদিসটিতে সেসব মানুষের কথা বলা হয়েছে যারা মসজিদকে এ কারনে ভালবাসে যে তাঁরা মাসজিদে যেয়ে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করতে চায়, এটাই ইমাম আন নাবাওয়ী প্রদত্ত ব্যাখা।

কিছু মানুষ রয়েছে যারা মসজিদে যাওয়াটাকে একটা জোর করে চাপানো ব্যাপার মনে করে, তারা একটা মানসিক চাপ বোধ করে, তাই তাঁরা সব সময় মসজিদে না যাওয়ার ফন্দি ফিকির করতে থাকে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা মসজিদে নিজে থেকেই যেতে ভালবাসে যদিও মসজিদ অনেক দূরে হয়, তাঁরা কখনই মসজিদে যেতে দেরি করেন না। এরা হয়তো অনেক দূর পথ ড্রাইভ করে আসে, ফাযর, ইশা অথবা অন্যান্য ওয়াক্ত এর সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করে । কেন? কারণ তাদেরকে মসজিদে আনার জন্য কারও তর্ক করতে হয় না। তাঁরা অনেক পথ অতিক্রম করে মসজিদে নিজে থেকেই মসজিদে আসে কারন মসজিদের জন্য তাদের অন্তরে ভালবাসা আছে।

আবার এমন কিছু মানুষ আছে যারা মসজিদের খুব নিকটেই বাস করে কিন্তু তার পরেও তাঁরা কখই মসজিদের দ্বারপ্রান্তেও যায় না, তাঁরা সবসময় মসজিদের বাইরে থাকার জন্যই অজুহাত খুজতে থাকে, কারন তাদের মনে মসজিদের জন্য কোন ভালবাসা নাই।

 

রাসুলুল্লাহ(স) মুনাফিকদের সম্পর্কে একটি হাদিসে বলেন, যদি তাদের কাউকে বলা হয় যে খেজুরের চাষ করা হয়েছে, মসজিদের বাইরে বিনামূল্যে খেজুর বিতরন করা হবে তাহলে তাঁরা আসত। আর এখন আপনি নিজেকে সেখানে ভেবে দেখুন, যদি মসজিদে সালাতে যাওয়ার জন্য আপনাকে ৫০০ টাকা অফার করা হয় তাহলে আপনি যাবেন,নাকি যাবেন না? যদি ৫০০ টাকার জন্য আপনি মসজিদে যেতে রাজি থাকেন তার মানে দাড়াঁচ্ছে মসজিদে না যাবার পেছনে আপনার কোন যৌক্তিক কারণ নেই, আপনি কেবল অজুহাত দাঁড়া করান। আর ৫০০ টাকা ও যদি আপনাকে মসজিদে টানতে না পারে তাহলে হয়তো আপনার অন্য কোন সমস্যা আছে।

এক্ষেত্রে আমার ধারনা মসজিদে প্রতিওয়াক্ত সালাতের জন্য যদি ২০০টাকা করে দেয়া হত তাহলে মসজিদ পরিপূর্ণ ভরে যেত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার জন্য ওয়াদা করেছেন যে তিনি তোমাকে ছায়া দিবেন এমন এক দিনে যেই দিনটি হবে ৫০ হাজার বছর এর সমান। তাহলে কোনটা বেশি ভাল? ২০০ টাকা নাকি হাশরের দিনে আল্লাহ প্রদত্ত ছায়ার নিচে আশ্রয়?

 

নম্বর ৪ দুজন মানুষ যারা পরস্পরকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসে, তাঁরা আল্লাহর কারনেই এক হয় এবং আল্লাহর কারনেই পৃথক হয়ে যায়। এরা এমন দুজন মানুষ যারা পরস্পরকে ভালবাসে কোন দুনিয়াবী সাফল্যের জন্য না, কোন ব্যবসার জন্য না, পরস্পরের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য না। কিন্তু তাঁরা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর জন্যই। তারা ভালবাসে সঠিক কাজের জন্য, সচ্চরিত্র ও সদাচরণের জন্য। এটা আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালার জন্য ভালবাসা। 

আর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তারা একত্র হয় এবং আলাদা হয় আল্লাহর কারনে। তাঁরা গীবত করার জন্য একত্র হয় না, তাঁরা মিথ্যাচারের জন্য একত্র হয় না, অপ্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য একত্র হয় না, তাঁরা মুসলিমদের বিরুধ্যে নীল নকশা করতে একত্র হয় না, বরং তাঁরা একত্র হয় আল্লাহর রাহে। এটা অনেকটা মুসা ও হারুনের মত ভ্রাতৃত্ববোধ। 

মুসা বলেন  যেন আমরা তোমাকে অনেক মহিমান্বিত করতে পারি ও অনেক বেশি স্মরন করতে পারি। এজন্যই মুসা বলেছিলেন, “আমি আমার ভাইকে আমার সাথে চাই।”

আর উদাহরনস্বরুপ সালমান আল ফারসি ও আবু দ্বারদ্বার ভ্রাতৃত্ববোধ, তাঁরা একত্র হতেন। যেমন আব্দুল্লাহ আবু মাসউদ একজন সাহাবীকে বলেন, আসো ঈমান নিয়ে কিছু কথা বলি। তাঁরা ঈমান নিয়ে কথা বলতেন, দ্বীন নিয়ে কথা বলতেন, তাঁরা মুসলিম উম্মাহর অবস্থা নিয়ে কথা বলতেন।

তো, তাঁরা কোন দুনিয়াবী কারনে একত্র হতেন না, তাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্যই একত্রিত হতেন। কারন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে হাশরের দিন ছায়া দিবেন। এ সংক্রান্ত আরও কিছু হাদিস আছে যেগুলো মোটামুটি একই ধরণের অর্থ বহন করে।

 

নম্বর ৫ একজন পুরুষ যে কিনা একজন সুন্দরী মহিলা দ্বারা মন্দ কাজের জন্য আহবান্বিত হয়, কিন্তু প্রত্যুত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর এমন ঘটনার সর্বোচ্চ উদাহরন হচ্ছেন ইউসুফ (আঃ)। কারণ উনি খুবই সুন্দরী এক মহিলার কাছ থেকে মন্দ কাজের জন্য ডাক পেয়েছিলেন, আর সে মহিলা অনেক সম্পদশালীও ছিল, সে ছিল মিশরের আযিয এর স্ত্রী, আর ইউসুফ(আঃ) ছিলেন আযিয এর কৃতদাস। তাই, ইউসুফ (আঃ) এর উপর এই মহিলার কর্তৃত্ব ছিল।

যাই হোক, ইউসুফ কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, “না”, এমন কাজ তিনি করবেন না।আর এই জন্য তিনি ভুক্তভোগী হয়েছিলেন, তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি এমন হয় কোন ব্যাক্তিকে সুন্দরী, সক্ষম কোন মহিলা অশ্লীলা কাজের দিকে প্রস্তাব করল যার উপর কর্তৃত্ব আছে, আর সে লোকটিসে ডাকে সাড়া দিল না, হাশরের দিনে আল্লাহ প্রদত্ত ছায়ার নিচে সে লোকটি আশ্রয় পাবে। কেন? কারন এই কাজটি করা খুবই কঠিন। এটা করা খুব সহজ কাজ নয়, কারণ সেই বিশেষ পরিস্থিতিতে
 শুধুমাত্র “আমি আল্লাহকে ভয় করি” এই কথাটি বলাও তখন অনেক কঠিন।

আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পুরস্কৃত করবেন কোন কাজের কাঠিন্যের অনুসারে, আর এই কাজটি খুবই কঠিন। তাই আল্লাহ তা’আলা মহৎ এবং এই কাজের জন্য অনেক বেশি পুরস্কৃত করবেন।

কারণ এটা এমন একটা সময়ে যখন আপনার কামনাকে টেনে ধরা খুব সহজ নয় যখন সব কিছুই আপনার বিরুদ্ধে, শয়তান প্রলোভন দেখাচ্ছে, সে সেই নারীকে আপনার চোখে সুন্দরী করে দেখাচ্ছে, আপনার ও সেই কাজটি করার সামর্থ্য আছে এবং এছাড়া আপ্নার উপর তার কর্তৃত্ব আছে, আপনি তার ডাকে সাড়া না দিলে হয়তো আপনাকে ক্ষতি করার সামর্থতার আছে। এই সব কঠিন বিষয়ের জন্যই এই কাজটির পুরস্কার এত বেশী। আর যেই কাজ যত বেশী কঠিন হবে, তার পুরস্কারও তত বেশী হবে।

 

নম্বর ৬ অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, সেসব লোকের কথা যারা সাদাকা করে এবং তা এমন ভাবে গোপন রাখে যেন তার বাম হাত জানে না যে তার ডান হাত কি খরচ করছে। এই হাদিসটিতে এক ধরনের সাদাকার কথা বলা হয়েছে আর তা হচ্ছে ‘গোপন সাদাকা’।

 

২ রকমের সাদাকা আছে, প্রকাশ্য এবং গোপন। আর এক্ষেত্রে একটি শব্দ জড়িত রয়েছে। যাকাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এটা প্রকাশ্যে বা জনসম্মুখে  করা ভাল। এর কারণ যাকাত হচ্ছে ইসলামের একটি স্তম্ভ এবং মানুষকে এটা মনে করিয়ে দেয়ার একটা বিষয় রয়েছে। তাই এটা সবার সামনে করা বেশী ভাল। 

কিন্তু ঐচ্ছিক সাদাকা গোপনে দেয়া ভাল। কিন্তু এটাই একমাত্র নিয়ম না। এমন কিছু সময় আছে যখন সাদাকাও পাব্লিকলি দেয়া উচিৎ,সেটা করা উচিত অন্যদেরও সাদাকা করতে উৎসাহিত করার জন্য। সে কারনেই কিছু ঘটনার সময় রাসুলুল্লাহ(সঃ) প্রকাশ্যে সাদাকা করতে বলেছেন। আর আমরা সেই বিখ্যাত ইতিহাসটা জানি, যখন রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর কাছে কিছু গরিব আরব বেদুঈন এসেছিল তখন তিনি মিম্বার থেকে সবাইকে সাদকা করতে উৎসাহিত করেছিলেন, তখন একজন আনসার ২ বস্তা সাদাকা করলেন, এক বস্তা খাদ্য ও অন্য বস্তা ভর্তি কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র, এবং তিনি তা রাসুলুল্লাহ(সঃ) ও অন্য সবার সামনে এনে রাখলেন। এটা দেখে অন্য সবাই ও যার যার বাড়ী থেকে জিনিস পত্র নিয়ে আসল এবং ঐ লোকদেরকে অনেক খাবার, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে দিল। রাসুলুল্লাহ(সঃ) তখন বললেন, যে একটি ভাল সুন্নাহর সূচনা করে, সে এটার পুরস্কার ও কেয়ামত পর্যন্ত যারা সেই কাজটি করবে তাদের সবার সমান পুরস্কার পাবে হাশরের দিন।তাই রাসুলুল্লা(সঃ) বলেছেন, সে তার পুরস্কার পাবে এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ এই কাজ করবে তাদের পুরস্কারের সমান পুরস্কারও পাবে।

 

আমরা আরেকটি ঘটনা জানি, রাসুলুল্লাহ(সঃ) মিম্বার থেকে বলেছেন, “কে দেবে? কে দেবে? কে দেবে?” এটা ছিল তাবুক/মুতা যুদ্ধের সময়। তিনি মানুষকে দান করার জন্য আহ্বান করেছেন, আর সব সময়ই উসমান ইবনে আফফান আসতেন এবং টাকা দিতেন। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে দু’ভাবেই দান করতেন। রাসুলুল্লাহ(সঃ) যখনই অনুদান চাইতেন, তিনি দিতেন। উসমান রাঃ এক গাদা সম্পদ নিয়ে আসলে রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন আজকের পর উসমান যাই করুক না কেন তাতে তার কোন ক্ষতি হবে না। সে অনেক দিয়েছে, তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে এমন করে মাফ করে দিয়েছেন যে এর পর থেকে তিনি যাই করুক না কেন, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। 

এটা এক ধরনের সাদাকা, আর একটা হচ্ছে সাদাকা ই সী’র, এটা হচ্ছে গোপন সাদাকা। আর সাদাকা ২ ভাবেই করা উচিৎ, অবস্থা, সময়ের উপর ভিত্তি করে। যখন কাউকে উৎসাহিত করার কোন দরকার নাই, তখন সাদাকা মানুষকে দেখিয়ে করা উচিৎ না। তোমাকে এমন গোপন ভাবে করতে হবে যেন তোমার বাম হাত না জানে যে ডান হাত কি ব্যয় করছে। 

এটা আসলে কথার গোপনীয়তা, অর্থাৎ কাউকে না জানানো যে আপনি কি করছেন,ডান হাত বাম হাতের বিষয়টি আক্ষরিক না। কিন্তু এটা একটা আরবীয় কথা বলার মাধ্যম, যা বুঝায় কোন বিষয়কে গোপন রাখা।

 

উদাহরণস্বরূপ এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের পরিচয় গোপর রেখে অভাবীদের দ্বারে সাহায্যের সাদাকা পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু অভাবীরা দাতা সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু যখন দাতা মরে যায় তখন তাঁরা জানতে পারে যে , যার কাছ থেকে তাঁরা এতদিন টাকা নিত, সেই ই আসলে দাতা ছিলেন। এবং এটা ছিল একজন আলেমের ঘটনা, যিনি গোপনে মানুষকে দান করতেন, কিন্তু মানুষ জানতো না, কে তাদেরকে দান করছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারলো তখন যখন দেখলো যে সেই আলেমের মৃত্যুর পর তারা আর সেই দান পাচ্ছে না।

 

সবশেষে, ৭ নম্বর একজন মানুষ যে কিনা একা ঘরে,আল্লাহকে স্মরন করে এবং তার চোখ কান্নায় ভরে যায়। অর্থাৎ একজন মানুষ একা একা, আল্লাহকে স্মরন করে এবং চোখ জলে ভিজে যায় আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও ভয়ের কারনে। আর এটা ঘটে একা থাকার সময়, ইখলাসের সাথে, কারন এখানে লোক দেখানোর কিছু নাই। এই ইখলাসের জন্যই আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলা হাশরের দিন তাকে ছায়ার নিচে আশ্রয় দিবেন।

 

অর্থাৎ এগুলোই হচ্ছে সাতটি শ্রেণী, আমি আবার উল্লেখ করছি, ১ একজন ন্যায় নিষ্ঠ শাষক, ২ এমন তরুন যে আল্লাহর ইবাদাত করতে করতে বড় হয়, ৩ যে মানুষের অন্তর মসজিদের সাথে যুক্ত, ৪ যে পুরুষ সুন্দরী নারীর কুপ্রস্তাবের জবাবে বলে “আমি আল্লাহকে ভয় করি”,  ৫ যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে,  ৬ এমন সাদাকা যেন দাতার বাম হাত না জানে ডান হাত কি ব্যয় করছে এবং ৭ সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে নির্জনে স্মরন করে ও কাঁদে।

 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা শুধু মাত্র এদেরকেই হাশরের দিনে ছায়ার নিচে আশ্রয় দিবেন এমনটি নয়, আরও কিছু শ্রেনীর মানুষ রয়েছে যাদের কথা আমরা উল্লেখ করব। 

আল মাস’আরঃ
রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, আল মাস’আর হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে কিনা অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। যদি এই মানুষটি আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, তুমি যদি তাকে পরিশোধের জন্য অধিক সময় দাও অথবা ঋণ মাফ করে দাও তাহলে হাশরের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তোমাকে ছায়ার নিচে আশ্রয় দিবেন। 

কারণ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন হচ্ছে মানুষের জন্য খুবই পীড়াদায়ক ব্যাপার, বিশেষ করে যাদের পরিবার আছে, যারা অন্যের দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের জন্য। অর্থনৈতিক সমস্যা একটা বিপর্যয়। সেই মানুষটা আপনার থেকে টাকা ধার নিয়েছে, তার যদি সমস্যা থাকে তাহলে তাকে বেশি করে সময় দিন, অথবা বলে দিন, “আপনার হাতে যখন টাকা হবে তখন আমাকে ফেরত দিলেই চলবে।” অথবা তাকে কিছু বিরতি দিন কিংবা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত করে দিন যদি আপনার পক্ষে তা সম্ভব হয়।আল্লাহ দুনিয়াতে আপনার জন্য এটা সহজ করেছেন, তিনি আখিরাতে আপনাকে তার ছায়ার নিচে আশ্রয় দিবেন।

 

এবং যে সাত শ্রেনীর মানুষ আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবেন তাদের মধ্যে আমরা একটি মিল উল্লেখ করতে পারি, তাদের প্রত্যেকে কাজটি ছিল খুব কঠিন, আর দুনিয়াতে তারা সেই কঠীন পরিস্থিতিতে সফলতা সবর প্রদর্শন করেছে বলে আল্লাহ তাদেরকে পরকালের কঠিন দিনে, সহজ করে দেবেন, ছায়া দান করবেন।

সাধারণত যেসব মানুষ দুনিয়াতে অনেক কঠিন কাজ করে তাঁরা অন্যের জন্য কাজগুলোকে সহজ করে দেয়। দেখা যায়, একজন সৎ শাসক অন্যের জন্য অনেক কিছু অনেক সহজ করে দেন। যে মানুষটি সাদাকা করেন, সেও অন্যের জন্য কাজকে সহজ করে দেন। যে মানুষটি অসৎকামনাকারী নারীর ডাকে সারা দেয় না, তার জন্য আল্লাহ আখিরাতকে সহজ করে দিবেন। এসব হচ্ছে অন্য শ্রেনীর কিছু উদাহরন যারা হাশরের দিন আল্লাহ প্রদত্ত ছায়ার নিচে আশ্রয় পাবে।

নম্বর ৩ -রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “এই দুনিয়াতে যে ব্যাক্তি কোন মুমিনের কোন সমস্যা সহজ করে দিবে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান হাশরের দিন সহজ করে দিবেন।”

আর এটা এমন একটা বিষয় যাকে আমরা তুচ্ছ জ্ঞান করি, আর তা হচ্ছে অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। আর আমরা তো অনেক সময় এমন বুঝেই বসে থাকি যে, ইসলাম মানেই শুধুমাত্র কয়েক রাকাত সালাত, রোজা, যাকাত , এই সব। আর এর পরে আপনি  আরেকজনের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছন, খারাপ ব্যবহার করছেন, প্রতারণা করছেন আর তারপরেও চিন্তা করছেন যে আমরা যথার্থই তো করছি। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তার একটি বড় কারন হবে মানুষের প্রতি তাদের ব্যবহার, 

আর এই সংক্রান্ত বেশ কিছু হাদিস আছে,

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম)

যদি আপনি দুনিয়াতে কোন মুমিনের অবস্বাদ সহজ করে দেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া  তা’আলা আখিরাতে আপনার অবস্বাদ সহজ করে দিবেন। আর রাসুলুল্লাহ(সঃ) আরও বলেন, যে কোন মুসলিমের গোপনীয়তা রক্ষা করে তাহলে আল্লাহ তার দোষ ও হাশরের দিন গোপন রাখবেন। ‘আওরাহ’ হচ্ছে এমন কিছু যা আপনি অন্য কাউকে দেখাতে চান না। এ কারনেই শরীরের গোপন অংশকে আওরাহ বলা হয়। কিন্তু এখানে তা বুঝানো হয় নি। 

সাধারণত শরীরের গোপন অংশকে আওরাহ বলা হয় কিন্তু এছাড়াও এমন কিছু যা আপনি চান না অন্য কেউ দেখুক, তাও আওরাহর ভেতর পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার পাপসমুহ। যদি কেউ কোন পাপ করে, সে হয়তোবা মানুষ থেকে দূরে গিয়ে সেটা করে, সে মানুষ থেকে তা গোপন রাখে এবং সে মানুষের কাছে তা প্রকাশ করতে চাই না।

 

আবার, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কিছু মানুষ যারা সালাত পরে, খুবই ঈমানদার কিন্তু সে মদ্যপানে আসক্ত, যা কিনা একটা বড় গুনাহ। এই মানুষটার অন্তরে আল্লাহর প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা আছে এবং সে তার দুর্বলতা জানে, এবং সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে এই আসক্তির বিপর্যয় নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে পতিত। আর সে চাই না যে কেউ এটা জানুক। সে তা সবার কাছ থেকে গোপন রাখে। আপনি কোন ভাবে এই লোকটার মদ্যপান সম্পর্কে জানতে পারলেন। আপনি যদি এখন তা গোপন রাখেন আর কাউকে না জানান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হাশরের দিন আপনার এমন একটা পাপকে গোপন রাখবেন।

কারন সবার ই এমন কিছু গোপনীয়তা থাকে যা সে অন্য কাউকেই জানাতে চায় না। আমাদের সবারই আছে। হতে পারে কোন চিন্তা, কাজ অথবা কোন পাপ কাজ যা করা হয়েছে, আর আপনি এটা কাউকে জানাতে চান না। আর আপনি এই পাপ কাজটি করতে অন্য কাউকে সাহায্য করছ না। আপনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছ। যদি আপনিগুনাহ গোপন রাখেন, আল্লাহ ও আপনারটি হাশরের দিনে গোপন রাখবেন।

 

এখন আপনি অবাক হতে পারেন যে কিভাবে এই অবৈধ কাজের কথা গোপন রাখবেন? 

ইসলামে মদ্যপান করা হারাম। এখন আপনি হয়তোবা ভাবছেন, এই বড় গুনাহ গোপন রাখা কিভাবে ভাল হতে পারে, অথচ এই কাজের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, আদালতে যাবার বিধান আছে। ইসলামে ক্রিমিনাল আইন এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে প্রকাশ্যে যে কোন পাপ কাজ যা মানুষের খারাপ করবে, ক্ষতিসাধন করবে  ধংসের মুখে ঠেলে দেবে, এমন কাজ থেকে মুক্ত রাখা। 

যখন পাপটি গোপনীয় তখন তা সমাজের কাউকে আক্রান্ত করছে না। এই লোকটি এই কাজটি একা একা নিজের বাড়ীতে করছে, গোপন রাখছে এবং তা সমাজের কাউকে আক্রান্ত করছে না। এটা কখন বিপদজনক হবে? যখন এটা জনসম্মুখে করা হবে। কারন তখন এটা অন্যদেরকেও করতে উৎসাহিত করবে, এটা অন্যদেরকে পাপ করতে আগ্রহী করবে। মদ হয়তোবা মানুষের মনেই ছিল না, কিন্তু যখন সে কাউকে জনসম্মুখে তা পান করতে দেখছে, সে বিল বোর্ডে মদের বিজ্ঞাপন দেখছে, সে যখন মদের কোম্পানি দেখছে, তখন তা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু এটা যদি গোপনে নির্জনে করা হয় তাহলে একটা সম্ভাবনা থাকে যে সেই লোকটি একদিন এই কাজটি ছেড়ে দিবে, এই অতীত সে ভুলে যাবে এবং নতুন করে জীবনের পথ চলতে শুরু করবে, তাওবা করার পরে। এমন ক্ষেত্রে এই পাপগুলো গোপন রাখা উচিৎ, কিন্তু বিপদ হবে যখন তা প্রকাশ্যে ঘটতে থাকবে। 

আর তাই একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, যখন মানুষ ব্যভিচার করে জনসম্মুখে—- তখন আল্লাহ তাদেরকে এমন অসুখ দিয়ে শাস্তি দেন যা কিনা তার আগের পুরুষের ছিল না। কিন্তু যখন তাঁরা এটা জনসম্মুখে করে। আর আমি আপনাদের একটা বড় গুনাহ মদ্যপানের উদাহরন দিয়েছি, কিন্তু এটা অন্যান্য ছোট গুনাহর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “যে চায় যে খারাপ বিস্তার লাভ করুক মুমিনদের ভেতর, আল্লাহ সুবহনাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন  শাস্তি দিবেন”।

কিছু স্কলার এর মতে এরা হচ্ছেন তাঁরা যারা গুপ্তচরের মত অন্যের গোপন কথা শুনে এবং তা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে যা ঘটে তা হল এরা এসব খবর সবাইকে জানিয়ে দেয় আর এই সংবাদ মানুষকে নষ্ট করে। অন্যের দোষ সম্পর্কে খুব বেশী কথা বলাও একটা খারাপ কাজ। বিশেষত যিনা অথবা এমন কিছু নৈতিক ব্যপারে কথা বলা, স্ক্যান্ডাল । অনেক কিছুই দেখা যায় ধামাচাপা পড়ে যায় যা কেউ জানে না। তাঁরা এসব নিয়ে অনেক কথা বলে আর তা ছড়িয়ে দেয় এসব মানুষের মনকে দূষিত করে, আর এটাই একটা খারাপ কাজ। আর যা মানুষের মনের ভেতর নাই, এমন বিষয়ের অবতারণা আপনি করবেন না। 

হাশরের দিন মুমিনদের থেকে কিছু মানুষ আসবে, সাধারন নিয়ম হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সবাইকে ডাকবেন, তাঁরা আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তাঁরা একা দাঁড়াবে, আর অন্য সব সৃষ্ট জীব, মানুষ ও জ্বীন সহ সবাই সেখানে চারদিক থেকে দেখতে থাকবে। 

আর এখানে কথা হবে আল্লাহ ও সেই লোকটির ভেতর। আল্লাহ লোকটিকে তার গুনাহ সমুহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেনযে, “আপনি কি এই পাপটি করেছ?”, সবার সামনে জিজ্ঞেস করবেন। অর্থাৎ সব পাপ সবার সামনে খোলাসা হয়ে যাবে। সেই দিন কিছুই গোপন থাকবে না, সবকিছুই জনস্মমুখে উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: আল্লাহ ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন, তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলা তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার নেক আমলের দফতর তাকে দেয়া হবে। আর যারা কাফের বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা হবে। ফেরেশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

এই চমৎকার সুযোগটি পাবার জন্য একটা উপায় হচ্ছে অন্যের পাপকে গোপন রাখা। অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা। এটা একই ভাবে গুপ্তচরবৃত্তি না করার শিক্ষার মধ্যে পরে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, “অন্যের ব্যপারে গুপ্তচরবৃত্তি কর না।” আমাদের সবারই নিজেকে নিয়ে চিন্তিত হবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে, অন্যের ব্যপারে চিন্তা এত চিন্তিত হই কি করে? কিন্তু আপনি যদি এমন কিছু জনসম্মুখে দেখেন, তাহলে এটা প্রতিহত করা আপনার দায়িত্বের ভেতর পরে যায়।  সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ আপনার দায়িত্বের মধ্যে পরে, কারন এখন এটা প্রকাশ্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি করবেন না, মানুষকে গোপনে অনুসরণ করবেন না, এসব ইসলামের শিক্ষা নয়, দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথম যমানার মুসলিমদের একটা শিক্ষনীয় বিষয় ছিল নিজের বিষয়ে মননিবেশ করা। যেটা তোমার বিষয় নয় তা এড়িয়ে চলা ইমানের পরিপূর্ণতার একটি অংশ। 

আর এরপরে রাসুলুল্লাহ(সঃ)  বলেন, “আল্লাহ তোমাকে ততক্ষন পর্যন্তই সাহায্য করবেন জতক্ষন তুমি তোমার ভাই এর সাহায্যে লিপ্ত থাকবে।”  অর্থাৎ, আল্লাহ আপনাকে ততক্ষন পর্যন্তই সাহায্য করবেন যতক্ষন আপনি আপনার ভাই এর সাহায্যে লিপ্ত থাকবেন।

 

হাশরের দিনে বিজয়ীঃ
এর পর আরেকটি হাদিস রয়েছে, রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “তুমি যদি তোমার ভাইয়ের অনুপস্থতিতে তাকে বিজয়ী কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তোমাকে হাশরের দিনে বিজয়ী করবেন।”

এর মানে কি? মানে হচ্ছে, যদি কোন মিটিং এ এমন হয় কেউ আপনার কোন সৎ স্বভাবের ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার ব্যপারে মিথ্যাচার করছে, মন্দ কথা বলছে, গীবত করছে তাহলে আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন, সত্যটা জানিয়ে দেবেন আর তাঁরা যা বলছে তা অস্বীকার করবেন। আপনি যদি আপনার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এই কাজটি করেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে হাশরের দিনে বিজয়ী করবেন। কারন আপনি আপনার ভাই এর পক্ষ নিয়েছেন, যেই মিটিং এ আপনার ভাইটি অনুপস্থিত ছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনাকে বিচারের দিন সাহায্য করবেন যেদিন আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হবে। আর আমাদের ভাইদের অথবা আলেমদেরকে গীবত করতে দেয়া উচিৎ নয়। যদি কেউ করে আমাদের উচিৎ তাতে বাধা দেয়া, কিন্তু শুধুমাত্র বাধা দেয়ার জন্য বিরোধিতা করা উচিৎ না। কারন মানুষ ভুল করে। আর আমি শুধুমাত্র আমার সমমনা স্কলারদের পক্ষেই ডিফেন্ড করব, আর সবার ব্যপারে চুপ থাকবা, না, এমন নয়, আপনি একই কাজ সব ক্ষেত্রে করবেন, যেটা দেখবেন ভুল, আপনি তা সমর্থন করবেন না, আর যেটাকে সঠিক দেখবেন সেটাকে সমর্থন করবেন।

 

রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “তোমার ভাইয়ের সাহায্য কর তা সে অত্যাচারিত ও অথবা অত্যাচারী যাই হোক না কেন।” 
এই নিয়মটি একটি জাহিলিয়াহর সময়ের নিয়ম, ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ের নিয়ম। তখন সাধারন নিয়ম ছিল হচ্ছে, নিজের ভাইদেরকে সাহায্য করা, তাঁরা ঠিক অথবা ভুল হোক। যদি আমার গোত্রের কোন লোক ভুল কাজ করে থাকে আমি তাহলেও তাকে সাহায্য করব। যদি আমার গোত্রের কেই অন্য গোত্রের কাউকে হত্যা করে এবং এর পর তাঁরা আমার সেই হত্যাকারী ভাইকে মারতে আসে, আমি তখনও আমার ভাইকেই সাহায্য করব। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমার ভাইকে তোমার সাহায্য করতে হবে সে অত্যাচারিত অথবা অত্যাচারী হোক না কেন। সাহাবাগণ এর মানে বুঝতে পারেননি, কারন এটা ছিল একটা জাহেলিয়াহর নিয়ম, এটা কিভাবে রাসুলুল্লাহ(সঃ) সমর্থন করেন?! 

রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন এটার একটা নতুন অর্থ বললেন, “তোমার অত্যাচারী এই বলে সাহায্য কর যে সে ভাইকে ভুল করছে, আর  তার অত্যাচার বন্ধ কর। আর তোমার ভাই যদি অত্যাচারিত হয় তাহলে তাকে তা থেকে রক্ষা কর। কিন্তু যদি তোমার ভাই নিজেই অত্যাচার করে থাকে তাহলে তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রাখ ।“ আর এটাই হচ্ছে এই পুরনো আরব প্রবাদের নতুন ইসলামিক ব্যাখ্যা। 
ইসলাম একে নতুন অর্থ প্রদান করেছে, এবং ইসলাম এভাবে বহু শব্দকে নতুন অর্থ প্রদান করেছে। যেভাবে কিছুক্ষণ আগে আমরা দেখেছি, রাসুলুল্লাহ (সা) দেউলিয়া শব্দটির একটি নতুন অর্থ প্রদান করেছেন, আখিরাতের প্রেক্ষাপটে।

 

আমরা আলোচনা করছিলাম, যারা হাশরের ময়দানে নিরাপদে থাকবেন তাদের সম্পর্কে, আমরা ন্যায়নিষ্ঠ শাষক সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু ন্যায়পরায়ণতা শুধুমাত্র শাষকের জীবনেই প্রতিফলিত করার জন্য নয়। ন্যায়পরায়ণতা আমাদের সবার জীবনেই প্রস্ফুটিত হওয়া উচিৎ। ন্যায়পরায়ণতা শুধু খলিফা, শাষক অথবা রাষ্ট্রপতির প্রয়োগের জন্য হয়, বরং আমাদের সবার জীবনেই এর প্রয়োগ করতে হবে। কারন আমাদের সবারই কিছু না কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আর আপনার যদি কিছু দায়িত্ব থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ন্যায় নিষ্ঠতা দেখানোর কিছু সুযোগও থাকবে, কিছু ক্ষেত্রও থাকবে।

সহিহ মুসলিম এ রাসুল (সাঃ) বর্ণনা করেছেন, “ন্যায় পরায়ণ শাসক আল্লাহর নিকট নূরের উচ্চ মিনারায় অবস্থান করবে, যা থাকবে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ডান পাশে। তবে আল্লাহর উভয় হাতই ডান হাত। যেসব শাসক ন্যায় ইনসাফ ও সততার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করবে, নিজেদের পরিজনদের সাথে ইনসাফ করবে এবং তাদের উপর ন্যাস্ত প্রতিটি দায়িত্বের ক্ষেত্রে আদলের পরিচয় দেবে- কেবল তারাই এ মর্যাদার অধিকারী হবে” মুসলিম ৬। ৪৫৭৩

আমরা অনেক সময় ই ন্যায় বিচারের কথা বলি, কিন্তু যখন আমাদের নিজেদের ব্যাপারে আসলে তা ভুলে যাই। আরেকটি জায়গা যেখানে অনেক সময় ন্যায় বিচার করা হয় না, সেটা হল পরিবার, বাচ্চারা, স্ত্রীর চিকিৎসা অথবা ছোট ভাই বোনদের ক্ষেত্রে। আমাদের বোঝা উচিত এসবের সঠিক ভাবে বিচার করলে অনেক পুরস্কার পাওয়া যায়। 

আমরা সবাই জানি সবচেয়ে বড় শাস্তি যে অপরাধের জন্য তা হল জুলুম। আল্লাহ বলেছেন মজলুমের দুআ এবং আল্লাহর মাঝে কিছুই  অবস্থান করে না, উভয়ের মধ্যে কোন বাধা পর্দা থাকে না, মজলুম ব্যাক্তির দু’আ আল্লাহর কাছে তৎক্ষণাৎ পৌছে যায়, যদিও বা সে হয় একজন কাফির।  সবচেয়ে (সাঃ) হাদিসে বলেছেন, দ্রুত কবুল হয় অত্যাচারিতদের দুয়া যদিও সেই ব্যক্তি অবিশ্বাসী হয়।

 

প্রত্যেকেরই তার নির্দিষ্ট এলাকা আছে যেখানে তাকে ন্যায়বিচার করতে পারে। আপনার হাতে যখন ক্ষমতা থাকবে তখন সেটা ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে, এবং যত বেশি ক্ষমতা থাকে ততই সেইটা প্রলোভনের হয় এবং  বিশেষ করে সেখানে যদি আপনার কোন বিরোধী না থাকে। ধরুন শিশুরা অথবা দুর্বল কেউ থাকে তারা শক্তিশালী কর্তৃক অত্যাচারিত হতে পারে।

এটা মনে রাখা উচিত, কোন কিছুই আল্লাহর চোখ এড়িয়ে যায় না, এবং শেষ বিচারের দিন আমাদের প্রতিটি অন্যায় অবিচারের জন্য বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
 ,  কিন্তু এটা মনে রাখা উচিত কোন কিছুই আল্লাহর চোখ এড়িয়ে যায় না এবং শেষ বিচারের দিন তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কারন আল্লাহ সুবাহান ওয়ালাতা’লা কিছুই বাদ দিবেন না, তা নাহলে এইটা অবিচার হয়ে যাবে।  আল্লাহর একটি নাম আল হল আদল, অর্থাৎ ন্যায় বিচারক, আল্লাহ সবার ক্ষেত্রেই ন্যায় বিচার করবেন, এমনকি পশু পাখির ক্ষেত্রেও। 

রাসুল (সাঃ) বলেছেন  আল্লাহর বিচার এমন হবে যে, দুনিয়ায় যদি কোন ছাগলের শিং না থাকে এবং সে যদি শিং ওয়ালা কোন ছাগল থেকে অধিকারবঞ্চিত হয়, আল্লাহ সেই দিন তাঁকে শিং দিয়ে তার অধিকার আদায় করতে বলবেন, এরপর মীমাংসা হয়ে গেলে সবাইকে ধুলায় পরিণত করবেন। সুতরাং আমাদের পরিবার বা যেই এলাকা আমার অধীনস্ত সেখানে ন্যায় বিচার করতে হবে।

 

কাজেই, হাশরের ময়দানে ন্যায় বিচাকরা নিরাপদে থাকবেন, এরপর আছেন যারা হলেন, আশ শুহাদা ওয়াল মুরাবিতুনঃ এর অন্তর্ভুক্ত
, শুহাদা, যারা আল্লাহর জন্য মারা যান। এবং মুরাবিতুন, এটি এসেছে আল রিবাত এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ এসেছে  রাবাতা থেকে। যখন কোন কিছু বাঁধা হয় তাকে রাবাত বলে।

 রাবাত এমন একটা জায়গা কে বলে হয়, যা বেধে রাখা হয় যেমন একটা আর্মি পোস্ট যা শত্রুদের থেকে ঐ এলাকা পাহারা দেয়া হয়, সেই এলাকা কে বলে রিবাত, সুতরাং কোন সেনাবাহিনীর ঘাঁটি কে বলে রিবাত, যদি সেইটা কোন কিছুর সাথে বাঁধা নাও থাকে কিন্তু সেই পাহারাদার সেই এলাকাকে শত্রুর হাত থেকে পাহারা দেয়, তাকে বলে রিবাত।

 

রাসুল (সাঃ) বলেন, শহীদদের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকবে
:

১) আল্লাহ শহীদদের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন ঠিক  যে মুহূর্তে তার দেহ থেকে এক বিন্দু রক্ত হবে”।

২) শহিদরা তাদের স্থান হবে জান্নাত সেটা দেখতে পাবে”

৩) তৃতীয় নম্বর হল, তাদের কে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়া হবে


৪) এবং এই ৪ নম্বর হচ্ছে আজকে আলোচনার বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত, যা নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম, হাশরের দিনে কারা নিরাপদে নিশ্চিন্তে থাকবেন, শহীদদেরকে সবচেয়ে ভীতিকর এবং আতংকের দিনের পেরেশানী থেকে রেহাই দেয়া হবে, তারা সেই ভয়ংকর দিনকে ভয় করবেন না, কোন দিন সব দিনের থেকে ভীতিকর দিন? যেদিন শেষ বিচারের দিন।
যেদিন বাকি সবাই একটি আতংকিত অবস্থায় থাকবেন, যেদিনকে আল্লাহ বলেছেন, ‘ইয়াওমুল ফাযা’আল আকবার’, এই দিনে আমরা সবাই আতংকিত অবস্থায় থাকব , দুনিয়াতে সংঘটিত যেকোন গুনাহের শাস্তির জন্য, কারণ সেদিন সব কিছু প্রকাশিত হয়ে পড়বে, 
অথচ এই দিনে শহীদেরা কেন নিরাপদে থাকবেন? কারণ, তাদের গুনাহ আল্লাহ ইতিমধ্যে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তারা এক প্রশান্তি আর নিরাপত্তার অনুভূতি লাভ করবেন সবচেয়ে ভয়ের দিনে, আর সেই দিনের দৈর্ঘ্য হল ৫০০০০ বছর। 

এবং  এরপর রাসূল (সা) বলেন, এবং এটা হচ্ছে ৫ নম্বর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শহীদদের মাথায় একটী মুকুট দান করবেন যা হচ্ছে ওয়াকার, ওয়াকার হল এমন একটি মুকুট বা তাজ যা সম্মানের পরিচায়ক, যার ফলে সেদিন তাদের সম্মান ও মর্যাদা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে, এবং সেই মুকুটের একটি ইয়াকুত পাথর বা রত্ন হবে এই দুনিয়ার সবকিছু থেকে উত্তম। 
এবং এরপর ৬ নম্বর হচ্ছে, তাদেরকে জান্নাতের ৭২ জন হুর আল আইন এর সাথে বিয়ে দেয়া হবে এবং 
৭ নম্বর হচ্ছে, তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য শাফায়াহ করার সুযোগ পাবেন, 

এবং বিচারের দিনে এই শাফাআত বা সুপারিশের অর্থ হল, এমন অনেকে থাকবে যারা নির্দিষ্ট কোন শাস্তির মধ্যে দিয়ে যাবে, 
এবং শহীদ ব্যক্তি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন, তাদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য, আল্লাহ একজন শহীদকে অনুমতি দিবেন তার স্বজনদের ৭০ জনের জন্য সুপারিশ করার। 

এগুলো হল, একজন শহীদের কিছু অনন্য গুনাবলী এবং আমরা যা নিয়ে আলোচনা করছিলাম,  তারা সবচেয়ে ভয় এবং আতংকের দিনে পেরেশানী মুক্ত থাকবেন, কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শাহাদাহ ; এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত, এটা কোন ক্ষতি বা লস নয়, যখন কেউ আল্লাহর জন্যে মারা যায়, 
এটা আল্লাহর পক্ষ হতে একটি অনুগ্রহ, নিয়ামত এবং একারনেই আল্লাহ বলেন, ওয়া ইত্তাখিজু মিনকুম শুহাদা, 
আল্লাহ তোমাদের মধ্যে থেকে বাছাই করেন কে শহীদ হবে, 
এটা এমন কোন বিষয় নয় যা যে কেউ পেতে পারে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে একটা নির্বাচন, আল্লাহ নিজে পছন্দ করে বাছাই করবেন, কারা এই উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন।

 

রাসুল (সাঃ) রিবাত সম্পর্কে বলেন, হাদীসট সহীহ জামেয়াহ সগীরাহতে আছে, 
রিবাত, আর্মি পোস্ট পাহারা দেয়া একদিনের জন্য, এটা এক বছর সিয়াম পালনের থেকেও উত্তম,
এবং রাসূল (সাঃ) বলেন, যে কেউ মুরাবাত হিসেবে মারা যায়, আল্লাহর জন্যে, আর্মি পোস্ট পাহারা দেয়া অবস্থায় মারা যায়, 
তাকে সবচেয়ে ভীতিকর দিনের ভীতি থেকে রেহাই দেয়া হবে’, এবং এটা এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও, 
যদি কেউ একজন মুরাবাত হয়, এবং সে স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়, শত্রুপক্ষের গোলাগুলি বা আক্রমণে নয়, তবুও সে এই মর্যাদা পাবে। 

রাসুলুল্লাহ সা) বলেন, ‘এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জান্নাত হতে রিযক এবং হাওয়া দিতে থাকবেন যতদিন তারা কবরে থাকবে, এবং এরপর রাসূল (সাঃ) বলেন, এবং তারা শেষ বিচারের দিন উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত একজন মুরাবাতের সওয়াব লাভ করতে থাকবেন, সুতরাং, তাদের আমল চালু থাকবে এবং তারা এর জন্য সওয়াব পেতে থাকবেন, যদিও তারা মৃত্যু বরণ করেছেন।

 এবং এরপর রাসূল (সাঃ) বলেন, 
 

এরপর রাসূল (সাঃ) মিশকাত তিরমিযি, এবং আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে বলেন, “একটা উট দোহন করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় পরিমাণ যদি কেউ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’। 
এবং এই সময়টা হতে পারে কয়েক মিনিট।

এরপর রাসূল (সাঃ) বলেন, যদি কেউ আল্লাহর রাস্তায় আহত হয়, এবং আল্লাহ জানেন কে তার রাস্তায় আহত হয়, শেষ বিচারের দিনে তাঁদের শরীর থেকে রক্ত বের হবে,যার রঙ হবে সাফ্রান এর মত এবং যার গন্ধ হবে , 
মাশকের মত এবং তারা সেই জখমের চিহ্ন নিয়ে হাশরের ময়দানে হাজির হবে’।

এতক্ষণ আমরা শুনলাম, হাশরের দিনে মুজাহিদিন, আশ শুহাদা এবং আল মুরাবিতুন এর অবস্থা কিরূপ হবে সে সম্পর্কে।

 

এরপরের অংশে যাদের কথা আমরা আলোচনা করবো তারা হলেন, যে ব্যক্তি তার রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে, তারাও হাশরের ময়দানে একটি বিশেষ মর্যাদা লাভ করবেন।
 
রাগ খুব কঠিন একটা অনুভূতি হৃদয়ের, এবং যখন সেইটা হয় তখন মনে হয় শরিরের রক্ত ফুটছে এবং শারিরিক এবং মানসিক অবসথা পরিবর্তন হতে থাকে। যে বেক্তি রেগে থাকে সে অনেক সময় রাগের বশে অবিবেচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, অথবা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে ।যদি কেউ তার রাগ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে অর্থাৎ কেউ প্রচণ্ড রেগে আছে কিন্তু তারপরেও সেই রাগ কে সে নিয়ন্ত্রন করছে জান্নাতে তার জন্য অনেক পুরষ্কার রয়েছে, 


রাসুল (সাঃ) বলেন, তিরমিজি এবং আবু দাউদে আসছে এবং যা হাসান  
ক্রোধ প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেওযে তা সংবরণ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সব মাখলুকের সামনে তাকে আহ্বান করে যে হুর সে কামনা করবে তা গ্রহণ করার অধিকার তাকে দিয়ে দেবেন (আবু দাউদ)

যেমন যদি কেউ দুর্বল অবস্থায় থাকে তাহলে সে রেগে গেলেও প্রতিশোধ নিতে পারবে না, কিন্তু কেউ যদি শক্তিশালি অবস্থায় থাকে সে রেগে যেয়ে প্রতিশোধ নিতে পারবে, কিন্তু সে না নেয়, আল্লাহ হাশরের মাঠে সেই সুযোগ দিবে, তার যেই জান্নাতের হুর ইচ্ছা তাকে নেয়ার, আল্লাহ তার নাম সবার সামনে ঘোষণা করবেন এবং সবার সামনে আপনাকে পুরস্কৃত করবে  এত পুরস্কার কারন রাগের মাথায় সব সময় ঠিক থাকা যায় না এবং বিশেষ করে সেই ব্যক্তি যার রাগ অনেক বেশি তার পক্ষে এবং অনেক সময় যখন এটা অনেক কঠিন হয় রাগ নিয়ন্ত্রন করা এবং প্রতিশোধ নেয়ার মত অবস্থায় থাকলেও যদি কেউ প্রতিশোধ না নেয়  তার উত্তম পুরস্কার আছে

আল্লাহ সুবাহান ওয়ালা তা’লা  বলেন , যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (ইমরান ১৩৪)

মুত্তাকিদের একটি বৈশিষ্ট্য হল যাদের মাঝে তাকওয়া আছে, তারা রাগ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে, রাগার ফলে খারাপ আচরন এবং ধংসাত্বক মনোভাব এবং মানুষদের সাথে খারাপ আচরন করা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য না, রাসুল (সাঃ) সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন সত্য জানার পর এবং প্রতিশোধ নেবার মত অবস্থা থাকার পরও ক্ষমা করে দেয়া  খুব ই মহৎ একটা কাজ,

যদিও ইসলাম এ চোখের বদলে চোখ , দাঁতের বদলে দাঁত নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়, কিন্তু ক্ষমা করে দেয়া আরও মহৎ একটা গুণ, আইনের মাধ্যমে আপনি শাস্তি দিতে পারেন অথবা নিতে পারেন যেটা আপনার প্রাপ্য, কিন্তু ক্ষমা একটা ব্যক্তিগত ইচ্ছামুলক কাজ,
একজন ব্যক্তি চাইলে অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, কিন্তু তিনি যদি নিজের হক নষ্টকারীকে শাস্তি প্রদানের জন্য আদালতে আবেদন করেন, আমরা তাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য জোর করতে পারি না। এটা সম্পূর্ন মযলুম ব্যক্তির ইচ্ছা, যে সে বদলা নেবে না ক্ষমা করে দেয়ার মাধ্যমে আরও মহান মর্যাদা লাভ করবে।

যিনি আজান দেন (মুয়াজ্জিন) তাঁর পুরস্কার, থাকবেঃ

রাসুল সা) বলেছেন সহিহ মুসলিম এ আছে যেই বেক্তি আজান দেন, হাশরের দিন তাকে অনেক লম্বা দেখাবে, এইটাই হবে তাঁর পুরস্কার।  যেই বেক্তি আজান দেন তিনি সবাইকে নামাজে আহ্বান করেন। দ্র মুসলিম ৭৫১/২


বুখারী-২-৫৮২

সুতরাং আপনি একা নন, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে আছেন, এবং হাশরের দিন তারা সাক্ষী দিবে, আল্লাহর সৃষ্টির সকলেই মুসলিম, শুধু কিছু খারাপ মানুষ এবং খারাপ জিন  ছাড়া।

যেই ব্যক্তি পাকা চুল রেখে দেয় , তাঁর কি হবেঃ 

রাসূল সা) বলেন,  
যে বেক্তি পাকা চুল রেখে দেয় তাঁর চুল হাশরের ময়দানে আলো হয়ে যায়। তিরমিজি

 

যেই ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে এবং সে অবস্থায় বড় হয়ে উঠে  এবং তার চুল পেকে যায় আল্লাহর সেই চুল হাশরের ময়দানে নূর হয়ে যায়, আমরা অনেক সময় পাকা চুল রাখতে চাই না, কারণ আমরা ভাবি এইটা বৃদ্ধ এর লক্ষণ, 
 
রাসূল সা) বলেন,
তুমি তোমার সাদা চুল ফেলে দিয়ো না, এইটা বয়সের প্রতিক দেখে আমরা অনেকেই যুবক বয়সে সাদা চুল ফেলে দেই, রাসুল  বলেন,রেখে দাও, কারণ হাশরের ময়দানে এটা নূর হয়ে উঠবে এবং আল্লাহ প্রত্যেক সাদা চুলের জন্য পুরস্কার দিবেন এবং এক স্তর বৃদ্ধি করবেন প্রতি সাদা চুলের জন্য

 

রাসুল (সাঃ) বলেন, সাদা চুল নুরের মত, যদি তুমি ফেলে দিতে চাও ফেলতে পারো এবং কে আছে যে মুমিনের নুরের প্রতিক ফেলে দিতে চায়?

 

পরের অংশ হল ওযুঃ 
রাসূল সা) বলেছেন, আমার উম্মাতদের শেষ বিচারের দিনে গুর্ এবং মুহাজ্জিলিন দ্বারা পৃথক করা হবে। (বুখারী)

গুর্ এবং মুহাজ্জিনলিন ঘোড়ার সৌন্দর্যের উপমায় ব্যবহার করা হয়। গুর্ হল ঘোড়ার কপালের উজ্জ্বল দাগ। কপালে এবং পায়ে উজ্জ্বল দাগের কারণে ঘোড়াকে সুন্দর দেখায়। গুর্ এবং মুহাজ্জিলিন এখানে মুমিনের সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। 
ওযুর মাধ্যমে মুমিনের কপালে অর্থাৎ চেহারায় উজ্জ্বলতা আসবে। অর্থাৎ নূরানী চেহারা হবে আর এই নূরানী চেহারার দ্বারা মুহাম্মাদ এর উম্মাতদের পৃথক করা হবে।

 

রাসূল সা) বলেছেন, আল্লাহপাক শেষ বিচারের দিনে মুমিনদের অলংকার দান করবেন, এবং আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা দেহের যেই অংশে ওযুর পানি পৌঁছায়  দেহের সেই অংশে অলঙ্কার প্রদান করবেন”

 

মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আছে,  একদিন রাসূল (সাঃ) এক গোরস্থানে গেলেন, তাঁর সাথে অনেক সাহাবী (রাঃ) ছিলেন। রাসূল (সাঃ) মুমিন কবরবাসীদের সালাম দিয়েবললেন যে ইনশাল্লাহ শীঘ্রই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব। তারপর তিনি আফসোস করেবললেন, ইশ! আমি যদি আমার ভাইদের দেখে যেতে পারতাম!

সাহাবীগণ অবাক হয়ে বললেন, রাসূল (সাঃ) আমরা আপনার কি ভাই নই?

রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, তোমরা আমার বন্ধু, সাহাবী, আমার ভাই হল আমার সেই সব উম্মত যারা এখনো পৃথিবীতে আসেনি।
সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তো তাদের দেখবেন না, তাহলে তাদের চিনবেন কিভাবে?
রাসূল (সাঃ) বললেন, ধর একজন লোকের একটি ঘোড়া আছে আর সেই ঘোড়ার গুরর এবং তাহজিল আছে। তাহলে অনেক ঘোড়ার মাঝেও তো তাকে চেনা যাবে।
সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ।  রাসূল (সাঃ) বললেন, ওযুর কারণে শেষ বিচারের দিন আমার উম্মতের চেহারায় উজ্জ্বলতা থাকবে, আমি তাদের সেই উজ্জ্বল নূরানী চেহারা দেখেই তাদের চিনে নেব।

অর্থাৎ আমরা রাসূল (সাঃ)এর ভাই। আমরা সঠিকভাবে ওযু করলে শেষ বিচারের দিন আমাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং আমাদেরকে মহানবী (সাঃ) তাঁর ভাই হিসেবে চিহ্নিত করবেন।

 

সুপারিশ বা শাফায়াহঃ

শেফা সাধারনত ২ প্রকার। প্রধান শেফা এবং ক্ষুদ্র শেফা। । প্রধান শেফা হল শেষ বিচারের দিনের রাসুল  কর্তৃক সুপারিশ। প্রধান শাফায়াহ শুধুমাত্র রাসুল সা) কে দেয়া হয়েছে, ক্ষুদ্র শাফায়াহ দেয়া হচ্ছে আরও কিছু বান্দাদেরকে যেমন শহীদ, সহ অনেক আলেমদেরকেও দেয়া হবে। কিন্তু সেগুলো হবে রাসূল সা) কর্তক প্রধান শাফায়াহ এর পরে, শেষ বিচারের দিন ,যা ৫০ হাজার বছর ধরে হবে্‌, সূ্র্য মানুষের মাথার ঠিক কয়েক হাত উপরে থাকবে । আল্লাহ সুবাহান ওয়ালা তা’লা কারো সাথে কথা বলবেন না, এবং মানুষরাও দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছু কোর্টে  পারবে না। মানুষ গরমে খুব ঘামতে থাকবে, তারা ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়বে,কিন্তু আল্লাহতালা তাদের সাথে কোন কথা বলবেন না। তারা আল্লাহর আম্বিয়াগন দের বলবেন যেন আল্লাহ তা’লা বিচারকাজ শুরু করেন, তারা এতটাই বিধ্বস্ত ক্লান্ত থাকবে যে, যদিও অনেক মানুষ বুঝতে পারবে যে তারা জাহান্নামে যাবে, এরপরেও তারা বিচার শুরু করে দেয়ার জন্য চাইতে থাকবে।

 

মহানবী(সাঃ) একদিনএক দওয়াতে খাবার খাচ্ছিলেন, খাবারে তিনি একটা গ্রাস নিয়ে হঠাৎ তিনি সাহাবীদের বললেন আমি শেষ যামানার এবং শেষ দিনের নেতা হব হাশরের দিনে, এবং আমি তাদের সকলের ‘সাইয়েদ” এবং নেতা  হব। তারপর তিনি নীরব হয়ে গেলেন। সাহাবীগনও নীরব হয়ে গেলেন। তারপর মহানবী(সাঃ)বললেন, তোমরা জানবে না কেন? সাহাবীগন জানতে চাইলেন।

কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন একটি প্রান্তরে। তারা সকলকে শুনবে ও দেখবে। সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে। মানুষেরা এমন দু:চিন্তা অস্থিরতায় বন্দি হবে, যা তারা সহ্য করতে পারবে না আবার এর থেকে বাঁচতেও পারবে না। 

তখন মানুষেরা একে অপরকে বলবে, দেখছো আমরা কি দুরবস্থায় পতিত হয়েছি? আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে কে শুপারিশ করবে আমরা কি সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবো না? চলো আমরা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাই। তারা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, 

হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আপনার মধ্যে আত্মা ফুকে দিয়েছেন। তিনি আপনাকে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে শুপরিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি দুরাবস্থায় আছি? আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পতিত হয়েছি? 

আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। তিনি তো আমাকে সেই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তা অমান্য করেছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। নূহের কাছে যাও। নাফসি নাফসি, আমার কি হবে ! আমার কি হবে !


তারা নূহ আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে হে নূহ! আপনি পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা বলে অভিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। 
আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে দুআ করেছিলাম। আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। 
নাফসি নাফসি, আমার কি হবে ! আমার কি হবে !

(এবং সুবহানাল্লাহ, দেখুন শেষ বিচারের দিনে কিভাবে মানুষের সামনে বাস্তবতা সত্য হিসেবে ফুটে উঠবে, এই কঠিন বিপদের দিনে তারা আল্লাহর আম্বিয়াদের পিছনে দৌড়াবে, তারা কোন প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী, রাজা বাদশাহর পিছনে ছুটবে না,  অথচ দুনিয়াতে তারা তাদের দ্বারে ভিক্ষা করেছে, তাদের সিজদাহ করেছে, তাদের দাস হিসেবে জীবন যাপন করেছে, কিন্তু আজকে সবাই বুঝে গেছে , এরা আমাদের কোন কাজেই আসবে না, এবং যাদের থেকে তারা দুনিয়াতে পলায়ন করে থাকতো, আল্লাহর আম্বিয়াদের থেকে দূরে সরে থাকতো, আল্লাহর আদেশ থেকে দূরে পালিয়ে থাকতো, তারা আজকে সেই আম্বিয়াদের পিছনে দৌড়াবে, তারা বুঝে নিবে এই আম্বিয়ারাই হচ্ছেন দুনিয়াতে আল্লাহর মুখপাত্র, তাই তারা আম্বিয়াদের দ্বারস্থ হবে )

তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে। তারা বলবে, আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীর মধ্যে তার খলীল (বন্ধু)। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি কিছু মিথ্যা বলেছিলাম। তাই আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। 
নাফসি নাফসি, আমার কি হবে ! আমার কি হবে !

(এখানে উল্লেখ্য, আল্লাহর আম্বিয়াগণ নিষ্পাপ, তারা কোন গুনাহ করেনি, এরপরেও তারা বলতে থাকবেন, আমার কি হবে, আমার কি হবে, নাফসি নাফসি, কারণ তারা সামান্য বিষয়েও অত্যন্ত সতর্ক থাকেন, তারা আল্লাহর জবাবদিহিতার ভয় রাখেন, এবং আমরা জানি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজের ক্ষেত্রে যেগুলোকে মিথ্যা মনে করছেন সেগুলো আসলে মিথ্যা ছিল না, একইভাবে অন্যান্য নবীদের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য, তাদের এই নাফসি নাফসি, মূলত তাদের সতর্কতার বহিঃপ্রকাশ। ঠিক যেভাবে সালাহ পড়ার পরে, আমরা বলে থাকি, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ! অথচ সালাহ কোন গুনাহের কাজ নয় )

তারা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে মূছা আপনি আল্লাহ তাআলার রাসূল। আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি একজন মানুষকে হত্যা করেছিলাম। (অথচ এটা ছিল অনিচ্ছাকৃত, কিন্তু বিচার দিবসের ভয়াবহতার কারণে তারা নিজেদের এই কাজগুলোকেও ভয় করতে থাকবে) অথচ আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলাম না। এখন আমার চিন্তা আমি করছি। 
নাফসি নাফসি, আমার কি হবে ! আমার কি হবে !

তোমরা ঈছা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা ঈছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে হে ঈছা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি দোলনাতে থাকাকালেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে আল্লাহর বাক্য ও তার পক্ষ থেকে রূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা মারইয়ামের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। আমার চিন্তা আমি করছি। 
নাফসি নাফসি, আমার কি হবে ! আমার কি হবে !

তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও। তারা আমার কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আল্লাহ রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? 

আমি চলে আসবো তখন আরশের নীচে। আর আমার প্রতিপালকের জন্য সেজদা করবো। তখন আল্লাহ আমার জন্য তার রহমত উম্মুক্ত করবেন। আমাকের এমন প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার বাণী অন্তরে গেথে দিবেন যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। অত:পর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি প্রার্থনা করো, তোমার প্রার্থনা কবুল করা হবে। তুমি শুপারিশ করো তোমার শুপারিশ কবুল করা হবে। 

তখন আমি বলবো, হে প্রতিপালক! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত!! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতদের জান্নাতে প্রবেশ করাও। তবে তাদেরকে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না। তাদের জান্নাতের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অবশ্য অন্যসব দরজা দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারবে। যার হাতে মুহাম্মাদের জীব তার শপথ, জান্নাতের গেটের দু পাটের মধ্যে প্রশস্ততা হবে মক্কা ও বসরার মধ্যে দূরত্বের সমান। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)


রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সকল নবীকে কোন একটি বিষয় আল্লাহপাকের কাছে চাইতে বলা হয়েছিল, যেটি আল্লাহ পাক অবশ্যই প্রদান করবেন। সকল নবী-রাসূল দুনিয়ায়তেই আল্লাহপাকের কাছে একটি করে জিনিস চেয়ে নিয়েছিলেন যা আল্লাহ্‌ অবশ্যই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) চাননি। তিনি শেষ বিচারের দিন তাঁর উম্মতদের জন্য এটি রেখে দিয়েছেন। (মুসলিম ১। ৪০৫)

 

এরপরে রাসূল (সাঃ) প্রধান সুপারিশ করার সাথে সাথে শেষবিচার শুরু হবে। সুতরাং প্রধান শেফা এইটাই যা চাওয়ার মাদ্ধমে বিচার কাজ শুরু হবে। এরপর সবাইকে হিসাবের বই দেয়া হবে। আমলনামা। সবাইকে তার নিজের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে,

এটা ছিল প্রধান শাফায়াহ, যা রাসূল সা) করবেন সমস্ত মানব জাতির বিচার শুরু করার জন্য, 
এবং এরপর আরও কিছু ছোট ছোট সুপারিশ থাকবে,  যেগুলোকে বলা হয় শাফায়াহ ছুগরা, বা ছোট শাফায়াহ, যেখানে কিছু নেককার বান্দাগণ আল্লাহর অনুমতিক্রমে শাফায়াত করার সুযোগ পাবেন। 


কাজেই আমাদের পরকালের পথে যাত্রার’  পরবরতী 
স্তর হচ্ছে মানুষের হিসাব নিকাশ, কিন্তু এরপূর্বে ইনশা আল্লাহু তায়ালা আমাদের পরবর্তী সেশনে 
আমরা আলোচনা করব বিচার দিবসের কিছু নামসমূহ এবং বিচারের কিছু মূলনীতি নিয়ে।