পরকালের পথে যাত্রা – পর্ব ১৬ – জবাবদিহিতা

রিয়া’

রিয়া’ হচ্ছে লোক দেখানো ভাল কাজ; আল্লাহর জন্য নয় বরং কাউকে দেখানোর জন্য কোন কিছু করা। এটা খুবই ভয়ংকর একটি বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা) একে ছোট শিরক বলে অভিহিত করেছেন। শিরক কি? শিরক হচ্ছে অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো। যেটা আল্লাহর জন্য করার কথা ছিল, কিন্তু করা হচ্ছে অন্য কারো জন্য – সেটাই রিয়া’, এভাবে এটি এক ধরনের শিরক।

উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় মুনাফিকদের সালাতকে। তারা তাদের সালাতে একাগ্রচিত্ত থাকে না। আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।“  [আল কুরআন ৪,১৪২] তারা হয়ত মসজিদে সালাত আদায় করছে, কিন্তু তাদের মন থাকে অন্য কোথাও। একজন আলেম যখন লোক দেখানোর চেষ্টা করে কিংবা একজন কুরআন মুখস্ত করে কেবল অন্যদেরকে দেখানোর জন্য যে সে একজন ক্বারী, তখন সেটা রিয়া’ হবে। আল্লাহতালা হচ্ছেন ‘গনি’; তিনি সবধরনের অভাব থেকে মুক্ত। এ কারনে তিনি তার বদলে অন্য কারও উপাসনা করা হলে তা গ্রহণ করেন না-সেটা হয় শিরক। একইভাবে, কাজের ক্ষেত্রে, আল্লাহতালা আপনার কাছ থেকে এমন কিছু চান না যেটা পরিপূর্ণভাবে কেবল তাঁরই জন্য করা হয় না। অনেকেই হয়ত মুসলিমের এই হাদিসটি শুনে থাকবেন যে,

আবু হুরাইরা (রা) এর চারদিক থেকে লোকজন জড়ো হলো। এবং সিরিয়ানদের মধ্য থেকে নাতিল নামে একজন তাকে বললো, “হে শেইখ! আমাদেরকে এমন কিছু বলুন যেটা আপনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছ থেকে শুনেছেন।“ তিনি বললেন,” হ্যাঁ। আমি আল্লাহর রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছিঃ

শেষবিচারের দিনে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যার বিষয়টি ফয়সালা করা হবে সে হলো সেই ব্যক্তি যে শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে হাজির করা হলে আল্লাহ তাকে দিয়ে তার নিয়ামতগুলোর কথা বর্ণনা করাবেন এবং সে সেগুলো বর্ণনা করবে (এবং স্বীকার করে নেবে যে সে দুনিয়াতে এগুলো উপভোগ করেছিল)। (এরপর) আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি করেছিলে (এই নিয়ামতগুলো দিয়ে)?” সে বলবে, “আমি তোমারই জন্য যুদ্ধ করেছি শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করবার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।“ আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি যুদ্ধ করেছো এই জন্যে যে তোমাকে বীর যোদ্ধা বলা হবে। এবং তোমাকে সেটা বলা হয়েছিলও।“ (এরপর) তার বিরুদ্ধে ফয়সালা হবে এবং তার মুখমন্ডল নিচের দিকে করে টেনে হিচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর আরেকজন ব্যক্তিকে আনা হবে যে জ্ঞানার্জন করেছিল এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছিল আর সে কুরআনও তিলোয়াত করতো। তাকে আনা হবে এবং আল্লাহ তাকে দিয়ে তার নিয়ামতগুলোর কথা বর্ণনা করাবেন এবং সে সেগুলো বর্ণনা করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, “তুমি কি করেছিলে (এই নিয়ামতগুলো দিয়ে)?” সে বলবে, “আমি জ্ঞানার্জন করেছিলাম এবং আমার অর্জিত জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করতাম।“ আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি জ্ঞানার্জন করতে এই কারনে যে লোকে তোমাকে পন্ডিত বলবে। আর তুমি কুরআন পাঠ করতে যাতে লোকে তোমাকে ক্বারী বলে এবং তোমাকে তা বলাও হতো।“ তখন তার বিরুদ্ধে আদেশ হবে এবং তার মুখ নিচের দিকে করে তাকে টেনে হিচড়ে জাহান্নামের আগুনে ছুড়ে ফেলা হবে।

অতঃপর, আরেকজন লোককে আনা হবে আল্লাহ যাকে বিরাট ধনী করেছিলেন এবং সব ধরনের সম্পদে সম্পদশালী করেছিলেন। তাকে আনা হবে এবং আল্লাহ তাকে দিয়ে তার প্রদত্ত নিয়ামতগুলোর কথা বর্ণনা করাবেন এবং সে সেগুলো বর্ণনা করবে (স্বীকার করবে যে সে এগুলো উপভোগ করেছিলো)। আল্লাহ তখন তাকে জিজ্ঞেস করবেন, “তুমি কি করেছিলে (এই নিয়ামতগুলোর দ্বারা)?” সে উত্তর করবে, “আমি তোমার সন্তুষ্টি আনতে পারে এমন সকল কাজে এই সম্পদ ব্যায় করেছি।“ আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি এরকম করেছিলে যাতে তোমার সম্পর্কে বলা হয়ঃ সে খুবই দানশীল এবং এমনটিই বলা হয়েছিলো।“ তখন আল্লাহ তার বিরুদ্ধে আদেশ করবেন এবং তার মুখ নিম্নমুখী করে টেনে হিচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।“ [মুসলিম ২০/৪৬৮৮]

রিয়া’র আরেকটি বিশাল সমস্যা আছে; যেটা অদৃশ্য। একে সনাক্ত করা খুবই কঠিন হতে পারে। যদি না আপনি নিজের নিয়তগুলোকে বিরতিহীনভাবে যাচাই করে যেতে থাকেন, খুব সহজেই রিয়া’র পথে পা বাড়াতে পারেন যে কোন মূহুর্তে।  নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “কেন আমি এই কাজটি করছি?” যখন আপনি আপনার নিয়তকে যাচাই করেন, শয়তান আসে এবং আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করবার অপচেষ্টা করে। শয়তান তাদের কাছে আসে এবং তাদেরকে বলে, “তুমি এটা করছো রিয়ার জন্য। তাই এই কাজ করো না।“ এবং এভাবে সে মানুষকে ভাল কাজ করা থেকে বিরত রাখে!

আবু হুরাইরা (রা) কে আরেকবার একই রকম একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। এক লোক আবু হুরাইরা (রা) এর কাছে এসে তাকে বললো  যে সে কুরআন মুখস্ত করতে চায় না কারন একটা হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে যদি কেউ কুরআন মুখস্ত করে এবং পরে ভুলে যায়, তবে বিচারদিবসে সে  বিকৃত মুখ নিয়ে উপস্থিত হবে। আবু হুরাইরা (রা) বললেন, “এটাই কুরআনকে হারিয়ে ফেলবার প্রথম ধাপ। কুরআন না শেখার পরিকল্পনা করে, তুমি আসলে তার চাইতেও বহুগুণ খারাপ অবস্থায় পতিত হলে।“

অনুরুপভাবে, আলেমগণ বলেন যদি শয়তান আপনাকে এমন ধারনা দিয়ে থাকে যে আপনি যা করছেন সেটার রিয়ার জন্য, তবে সে কাজটি  করুন এবং নিয়ত করুন যে আপনি কাজটি আল্লাহর জন্য করছেন।

উদাহরণস্বরূপ, কোথাও কোন কাজের জন্য সবার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। শয়তান এসে আপনাকে সবার সাথে দান না করে, গোপনে একা একা দানের কাজটি করতে বলতে পারে। এক্ষেত্রে এই যে আপনি পিছপা হলেন এর মাধ্যমে শয়তান আপনাকে বিষয়টি ভুলিয়ে দিতে পারে এবং এভাবে আপনি হয়ত মোটেই দান করলেন না। এ কারনে আলেমরা বলে থাকেন, “কাজটি কর এবং নিজের নিয়তকে বরং পরিশুদ্ধ কর।“

প্রভু  তাঁর বান্দার সামনে তার পাপগুলো উপস্থাপনঃ

সাফওয়ান ইবনে মুহরিয হতে বর্ণিত, ইবনে উমার (রা) যখন কা’বা তাওয়াফ করছিলেন, সেই মূহুর্তে এক ব্যক্তি তার কাছে আসলো এবং বললো, “হে আবু আবদুর রহমান!” কিংবা বলেছিল, “হে ইবনে উমার! আপনি কি নাবী (সা) কে আন-নাজওয়া বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন?” ইবনে উমার বললেন, “আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি মুমিন ব্যক্তিকে তার প্রভুর সামনে উপস্থিত করা হবে ( হিসাম নামে বর্ণনাসূত্রের একজন নাবী (সা) এর বক্তব্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন ) মুমিন ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে আসতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তার প্রভু তাকে তাঁর পর্দা দিয়ে ঢেকে দেন এবং তার (বান্দার) কৃত পাপের স্বীকারোক্তি নেন।“ (আল্লাহ তাকে বলবেন) “তুমি কি জান যে তুমি অমুক অমুক পাপ করেছিলে?” সে দু’বার উত্তর দেবে, “হ্যাঁ! আমি জানি।“ [বক্তা আরও যোগ করেনঃ আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করতেই থাকবেন যতক্ষণ না সে নিজেকে একদমই বিপর্যস্ত ভাবতে শুরু করে] তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, “আমি দুনিয়াতে এটি গোপন রেখেছিলাম এবং আমি আজকে এটি তোমার জন্য ক্ষমা করে দিলাম।“ অতঃপর তার ভাল কাজগুলোর হিসেব তুলে রাখা হবে। অন্যান্যদের ক্ষেত্রে কিংবা কাফিরদের জন্য এগুলো সবার সামনে ঘোষনা করা হবে, সাক্ষীদের উপস্থিতিতেঃ এরা হচ্ছে সেই সকল ব্যক্তি যারা তাদের রবের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতো।  [ নিশ্চয়ই, জালেমদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অভিসম্পাত ] [বুখারী ৬/৬০/২০৭]

আল্লাহ কর্তৃক বান্দার সীমাবদ্ধতাগুলোর কথা প্রকাশ করাঃ

আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন, “নিশ্চয়ই, মহাপরাক্রমশালী এবং মহামহিম আল্লাহ, পুনরুত্থান দিবসে বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমার খোঁজ নাও নি।“ সে বলবে, “হে আমার রব! আমি কীভাবে তোমার খবর নিতাম যেখানে তুমি হলে গোটা দুনিয়ার পালনকর্তা?” এর উত্তরে আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল কিন্তু তুমি তাকে দেখতে যাও নি এবং তুমি কি জানতে না যে তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তবে তুমি তার মাধ্যমেই আমাকে খুঁজে পেতে?”

“হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খাওয়াও নি।“ তখন সে বলবে, “হে আমার রব! আমি কীভাবে তোমাকে খাওয়াতাম যেখনে তুমি হলে গোটা বিশ্বের প্রভু?” তিনি বলবেন, “তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলো কিন্তু তুমি তাকে খাওয়াও নি। তুমি কি তখন জানতে না যে তুমি যদি তাকে খাওয়াতে তবে তার কাছেই তুমি আমাকে দেখতে পেতে।“

(এরপর রব পুনরায় বলবেন) “হে আদম সন্তান! আমি তৃষ্ণার্থ অবস্থায় তোমার কাছে (পানি) চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে তা দাও নি।“ সে বলবে, “হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে তোমাকে পান করাবো যেখানে তুমি হচ্ছে সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক।“ এর উত্তরে তিনি বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে পান করাও নি। এবং যদি তুমি তাকে পান করাতে তবে তার কাছেই তুমি আমাকে খুঁজে পেতে।“

[মুসলিম ৩২/৬২৩২]

আমলনামা বন্টনঃ

আমলনামাগুলো একটা উচু স্থান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং মানুষেরা থাকবে নিচে। আমলনামা নিক্ষেপের মূহুর্তটি এমন একটি মূহুর্ত যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে মানুষের চুল বিবর্ণ হয়ে যাবে (দুঃশ্চিন্তায়) – কারন তারা জানবে না তাদের কোন হাতে এই আমলনামা পেতে যাচ্ছে।  যদি এটি ডানহাতে আসে তবে ভাল। কিন্তু যদি তা বাম হাতে আসে তবে সে ধ্বংস হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।  অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে, সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে।“ [আল কুরআন ৬৯, ১৯-২৪] খেয়াল করে দেখুন যে এখানে আল্লাহ বলছেন ফলফলাদি সম্পর্কে যেগুলো অবনমিত এবং তিনি বলছেন, “খাও এবং পান কর।“ এটি একদম উপযুক্ত জায়গা এমনটি বলবার কেননা সেটা হবে এমন একটি দিন যেদিন ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা একদম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে।

আর যে বামহাতে আমলনামা পাবে তার কি হবে? “যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত। আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।“ [আল কুরআন ৬৯,২৫-২৯] যে দু’টি জিনিস নিয়ে আমরা এই দুনিয়ার জীবনে সবচেয়ে বেশি ছুটে থাকি – ক্ষমতা এবং সম্পদ – সেদিন আমাদের বিন্দুমাত্র উপকার করতে পারবে না। আপনি দুনিয়াতে যা কিছু চান সেগুলো অর্থের বিনিময়ে কিনতে পারবেন, এটি আপনাকে পরিতৃপ্ত করবে। কিন্তু বিচার দিবসে এগুলো হবে মূল্যহীন। যেগুলো একদিন আপনার মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত ছিল সেগুলো আজকে কিছুই না। ক্ষমতার ক্ষেত্রেও একই জিনিস প্রযোজ্য – এটা আজকে আপনাকে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেয় এবং আপনার জন্য সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। বিচার দিবসে, আপনি এতটাই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বেন যে এমনকি আপনি আপনার নিজের অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করবার ক্ষমতাটি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলবেন; এগুলো আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। সুতরাং ক্ষমতা এবং প্রাচুর্য বিচার দিবসে মূল্যহীন। যদি আপনি এগুলোর কোনটির পেছনে ছুটে থাকেন তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

কিসাস – সৃষ্টির মধ্যে বিবাদসমূহের মীমাংসা

 

বিচারদিবসে অনেকগুলো বিষয়ের হিসেবের খাতা খোলা হবে। মানুষজন প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, “পৃথিবীতে কেন এত রোগ-শোক, দুর্ভিক্ষ এবং অনাচার? আল্লাহ কোথায়?” তারা যে জিনিসটি উপলব্ধি করতে পারে না সেটি হচ্ছে বিচার দিবসে সবকিছু ফয়সালা হবে। এই ফয়সালাটা হবে ব্যাপকতাপূর্ণ এবং এমনকি জন্তু জানোয়ারও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আল্লাহ কোন কিছুই বিবেচনার বাইরে রাখবেন না।

আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন, “দাবীদারগণ পুনরুত্থান দিবসে এমনভাবে তাদের দাবীগুলো আদায় করবে যেমনিভাবে একটা আবাসস্থলহীন মেষ একটা আবাসস্থল প্রাপ্ত মেষের কাছ থেকে তার দাবী বুঝে নেবে।“ [মুসলিম ৩২/৬২৫২]

অত্যাচারঃ

দুইজন বিবাদমান ব্যক্তির মাঝে কীভাবে ফয়সালা করা হয়? আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি অন্য একজনের ওপর তার সুনাম-সুখ্যাতি কিংবা অন্য কোন বিষয়ে জুলুম করলো, তার উচিত সেই বিচারদিবসের পূর্বেই ক্ষমা চেয়ে নেয়া যখন তার কাছে কোন অর্থ-সম্পদ থাকবে না (খারাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত করবার মত), কিন্তু যদি তার করা ভাল কাজ থাকে, সে যে পরিমান অত্যাচার করেছে সে অনুযায়ী তার ভাল কাজগুলো থেকে কেটে নেয়া হবে। আর যদি তার কোন ভাল কাজই না থাকে তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপের বোঝা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।“ [বুখারী, ৩/৪৩/৬২৯]

শেষ বিচারের দিন একমাত্র বিনিময় যোগ্য মুদ্রা হবে সৎ কাজ। সে দিন আপনি পৃথিবী এবং তাতে যা কিছু আছে সব বিলিয়ে দিতে রাজি থাকবেন কেবল একটিমাত্র ভাল কাজের বিনিময়ে।

কেন আপনি আরেকজনের অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করবেন অথবা তাদের বিরুদ্ধে অন্য কিছু করবেন? কারন আপনি তাদেরকে ঘৃণা করেন; তারা আপনার শত্রু। যদি আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করেন – আপনি কখনই চাইবেন না আপনার শত্রুকে আপনার ভাল কাজগুলোর কিছু অংশ দিয়ে দিতে। তাই যদি আপনি কাউকে অপছন্দ করেনঃ প্রথমে আল্লাহ্‌র কাছে চান যাতে তিনি আপনার অন্তর থেকে ঘৃণাবোধ দূর করে দেন এবং নিজেকে এমন কোন অবস্থানে বসাবেন না যেটা আপনার আরও বেশি ক্ষতির কারন হবে। এটি অতি সাধারণ একটা ব্যাপার।

 

ইমাম শাফিয়ি কিংবা হাসান আল-বাসরি কেউ একজন হবেন, তার কাছে এক লোক আসলো এবং বললো, “অমুক আপনার বিরুদ্ধে কথা  বলেছে।“ ইমাম কিছু ফল কিনে আনলেন এবং ঐ লোকের বাড়ি গিয়ে বললেন, “আমি শুনেছি যে আপনি আমাকে আপনার ভাল কাজের কিছু অংশ দিয়ে দিয়েছেন এবং আপনাকে এর বিনিময়ে এই ক্ষুদ্র উপহারের বাইরে কিছু দেবার মত নেই আমার।“

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, বিচার দিবসে অত্যাচার আধারের মত হবে। [বুখারী, ৩/৪৩/৬২৭]

হত্যা

যখন আপনি কারো ক্ষতি করেন কিংবা কাউকে হত্যা করেন- তখন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হয়ে দাঁড়ায় রক্তের বদলা নেয়ার ব্যাপারটি। হাশরের দিন যে বিষয়গুলোর বিচার সবচাইতে আগে হবে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদিসে  রাসুল (সাঃ) বলেন, হাশরের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীর মাথা তার হাতে ধারন করবে এবং তার শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। আল্লাহতালা সেই ব্যক্তিকে নিজের সামনে হাজির করবেন এবং লোকটি জিজ্ঞেস করবে, “হে আল্লাহ্‌! এই লোককে জিজ্ঞেস করুন কেন সে আমাকে হত্যা করেছিল?” এবং হাশরের দিনে এর ফয়সালা হয়ে যাবে।

 

আব্বাসীয়রা নিজেদের খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য যাদেরকে ব্যবহার করেছিল তাদের মধ্যে আবু মুসলিম আল-খুরসানী ছিলেন একজন। এবং সেটি করতে গিয়ে সে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছিল। বাস্তবে কি ঘটেছিল আল্লাহতালা ভালো জানেন, কিন্তু বলা হয়ে থাকে তিনি আরাফাহ এর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার কাছে আমাকে ক্ষমা করবার প্রার্থনা করছি এমন একটা বিষয়ে যে আমি মনে করি তুমি আমাকে কখনোই ক্ষমা করবে না।“ এক ব্যক্তি তাকে বললো, “আপনি কি বলছেন এসব? আল্লাহ তো সবকিছুই ক্ষমা করেন।“ আবু মুসলিম বললো, “তুমি কি আরাফায় অবস্থানকারী এই লোকগুলোকর সবাইকে দেখতে পাচ্ছো? (এটা হজ্বের দিন ছিল) তাদের প্রত্যেকের আমার কাছে দাবী আছে।  আমি তাদের প্রত্যেকের পরিবারে লোকদেরকে হত্যা করেছি। তুমি কীভাবে কল্পনা করতে পার যে আল্লাহতালা আমাকে ক্ষমা করবেন যদি এই লোকগুলো হাশরের দিন আল্লাহর কাছে গিয়ে প্রতিশোধ দাবী করে।“  সুতরাং ইতিহাসের পাতা জুড়ে, সর্বকালের সব অত্যাচারীকে  বিচারদিবসে খুবই উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হবে।

 

আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কি জানো কোন ব্যক্তি দরিদ্র (দেউলিয়া)?” তারা (রাসুলের সাহাবাগণ) বললো, “আমাদের মধ্যে দরিদ্র সেই ব্যক্তি যার কাছে দিরহাম কিংবা সম্পদ কোনটিই নেই।“ তিনি (রাসুল (সাঃ) ) বললেন, “আমার উম্মাহের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র হবে যে হাশরের ময়দানে তার সালাত, সাওম এবং যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে কিন্তু সে নিজেকে দেউলিয়া হিসেবে দেখতে পাবে কেননা সে তার ভাল কাজগুলো সব হারিয়ে ফেলবে, কারন সে অন্যদের ওপর জুলুম করতো, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ করতো এবং অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ ভোগ করতো এবং অন্যের রক্ত ঝরাতো এবং মানুষের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো। আর তার ভালো কাজগুলো দিয়ে দেয়া হবে (অত্যাচারিত ব্যক্তিকে) । আর যদি তার ভালো কাজগুলোর পরিমান প্রায়শ্চিত্তের জন্য যথেষ্ট না হয় তবে তার (অত্যাচারিতের) পাপগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।“ [মুসলিম, ৩২/৬২৫]  অর্থনীতির ভাষায়, দেউলিয়া হচ্ছে সে ব্যক্তি যার কিছু পরিমান অর্থ ছিল কিন্তু সে সেটা হারিয়েছে। দেউলিয়া এবং গরীব- এই  দুই ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। গরীব হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে দীর্ঘ সময় ধরে দরিদ্র ছিল। সুবহানাল্লাহ। তুলনাটা একদমই নিখুত। এই ব্যক্তি প্রচুর হারিয়েছেন এবং হয়ত পাপের বোঝা অর্জন করেছেন- অন্যদের সাথে তার খারাপ ব্যবহারের কারনে।

 

একজন পাপাচারী মুসলিম (যে মদ খায়, ইত্যাদি) এবং আরেকজন মুসলিম যে সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে -সালাত আদায়কারী এবং সাওম পালনকারী মুসলিম হয়ত পাপাচারী মুসলিমের ওপর অত্যাচার করেন। কিন্তু হাশরের দিনে সাওম পালনকারী মুসলিমটিকে তার অত্যাচারের কারনে পাপাচারী মুসলিমের পাপের বোঝা বহন করতে হবে। অপরের প্রতি সদ্ব্যবহারকে, অন্যের প্রতি আচরণকে কখনও ছোট করে দেখবেন না; আপনি আপনার সবকিছু হারিয়ে বসতে  পারেন এর জন্য।

ইসলাম দ্বীনটিকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে পূর্ণাঙ্গরূপে নিতে হবে। আপনাকে ইবাদাহ এবং অন্যদের সাথে ব্যবহার এ দুটোর মাঝে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। আমরা যেমনি বললাম, সবকিছুর ফয়সালা হবে। এমনকি পশুদের মধ্যকার বিবাদও। তাবারানীর একটি হাদিসে আছে, আল্লাহতালা পশুদের মাঝে বিবাদের ফয়সালা করবেন। তাদের সমস্ত বিবাদ মীমাংসা হবার পর আল্লাহতালা পশুদেরকে বলবেন ধূলোয় পরিণত হতে; তাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে। সকল পশুদের ভাগ্য হলো এই যে তারা ধূলোয় পরিণত হবে। […] অবিশ্বাসীরা বলবে, আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম! [আল কুরআন ৭৮,৪০]

 

আবু যার (রাঃ) বলেছেন যে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন এবং দুটো মেষ একে অপরের মাথায় আঘাত করছিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবু যার (রাঃ) কে বললেন, “এই মেষ দুটোকে দেখেছো? তুমি কি জান তারা কেন পরষ্পরের সাথে বিবাদে লিপ্ত?” আবু যার (রাঃ) বললেন, না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন যে, “আল্লাহ জানেন এবং বিচার দিবসে তিনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন।“ এখানে আরো লক্ষ্যনীয় হচ্ছে যে বিবাদে লিপ্ত মেষদুটো আমাদের কাছে বেশ কম তাৎপর্যময় মনে হচ্ছে হয়ত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিটি তথ্যকে একটা নির্দিষ্ট উপায়ে রূপান্তরিত করতেন এবং সেটাকে একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতেন। সেজন্য এমনকি এত ক্ষুদ্র একটা বিষয়ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিত। আমাদের চারপাশের যেকোন কিছুই আমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত।

 

আলমিযানঃ পাপপূণ্যের তুলাদন্ড

আল-কুরতুবী বলেন, জবাবদিহির পর (হাশরের দিন) কর্মগুলোকে ওজন করা হবে কেননা এই পরিমাপটার উদ্দেশ্য বান্দাকে পুরষ্কৃত করা, সুতরাং এটা জবাবদিহির পরেই হওয়া উচিত। জবাবদিহি হচ্ছে কৃত কর্মগুলোর হিসেব-নিকেশ। ভালো ভাবে তুলে ধরবার জন্য- ধরুন আপনার কাছে নানান জিনিসপত্রে ভরা একটা বস্তা আছে। হিসেবের মাধ্যমে ঐ জিনিসগুলো সনাক্ত করা হবে একে একে। আল্লাহ আপনার কৃত কাজগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন যেন ভালো কাজগুলো খারাপগুলো থেকে পৃথক হয়ে পড়ে, গ্রহণযোগ্য কাজগুলো অগ্রহণযোগ্য কাজগুলো থেকে আলাদা হয়ে যায়। হিসেবেটা (জবাবদিহি) হবে আপনাকে যেগুলোর জন্য পুরষ্কৃত করা হবে এবং যেগুলোর জন্য শাস্তি দেয়া হবে সেগুলো আলাদা করার জন্য। সেজন্য, আল-মিযান আসবে আল-হিসাব এর পর।

আল্লাহ বলেন, “আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।“ [আল কুরআন ২১,৪৭]

 

আসলে কোন বিষয়টি ওজন করা হবে সেটা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে এই যে আমলগুলো বস্তুর আকারে উপস্থিত হবে এবং সেগুলোকে ওজন করা হবে। কিন্তু ব্যক্তির কাজগুলোকে ওজন করা হবে নাকি ব্যক্তিকে ওজন করা হবে? অনেক আলেম বলেন উভয়টিই হবে। অনেকে বলেন কেবল কৃত কর্মগুলোই। এই মতাবিরোধ আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় অতি নগন্য।

আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে, আবু দারদা (রাঃ) বলেন যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মুমিনের পাল্লায় পুনরুত্থান দিবসে  উত্তম চরিত্রের চাইতে ভারি আর কিছু থাকবে না।“ [আমি এটা আবু দাউদ ৪১/৪৭৮১ তে খুঁজে পেয়েছি] উত্তম চরিত্রকে কখনও ছোট করে দেখবেন না। এটি হচ্ছে সত্য, দয়া, অপরের প্রতি কর্তব্যসমূহ পূরণ করা।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুটি বাক্য আছে যেগুলো দয়াময়ের কাছে খুব প্রিয় এবং উচ্চারণে খুবই সহজ কিন্তু পাল্লায় খুবই ভারী। এগুলো হচ্ছে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি এবং সুবহানাল্লাহ আল আজীম।“ [বুখারী ৯/৯৩/৬৫২]

বুখারীতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, […] “যে ব্যক্তিটির জন্য এটি (একটি ঘোড়া) একটি পুরষ্কারের উৎস, সে হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে তার ঘোড়াকে আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াই করার জন্য রাখে। সে এটিকে একটি লম্বা দড়ি দিয়ে চারণভূমি কিংবা একটা বাগানা বেঁধে রাখে। দড়ির জন্য এর পক্ষে যতটুকু খাওয়া সম্ভব হয় পুরোটাই (তার মালিকের জন্য) পুরষ্কারের যোগ্য একটি কাজ বলে বিবেচিত হবে। এবং যদি এটি দড়ি ছিঁড়ে কিছু দূর বাইরেও চলে যায়, এমনকি এর গোবরও ঐ লোকের ভাল কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং যদি এটি কোন নদীর ধার দিয়ে যাবার সময় তা থেকে পানি পান করে তবে সেটাও জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচিত হবে যদিও বা তার এটিকে পানি পান করানোর কোন ইচ্ছাই না থেকে থাকে। [বুখারী, ৪/৫৬/৮৩৯]

তিরমিযীতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, শেষ বিচারের দিনে আল্লাহতালা সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে এক ব্যক্তিকে হাজির করবেন। আল্লাহ তাকে ৯৯ টি কাগজের খন্ড দেবেন। এদের প্রত্যেকটি হবে যতদূর চোখ যায় ততটুকু পর্যন্ত দীর্ঘ, খারাপ কাজের বিবরণ দিয়ে পূর্ণ থাকবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি কি এই কাগজে লিখিত কোন কিছু অস্বীকার করছো? লোকটি বলবে না। আল্লাহ বলবেন তোমার কৃতকর্ম লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা কি তোমার ওপর কোন জুলুম করেছে বা কিছু ভুল লিখেছে? সে বলইবে, না। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলবেন, তোমার কি কোন অজুহাত আছে (যতগুলো পাপ কাজ করা হয়েছে সেগুলোর পেছনে)? লোকটি বলবে, না। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলবেন, তবে হ্যাঁ। তুমি এমন কিছু একটা করেছো যেটার জন্য তোমাকে পুরষ্কৃত করা যায়। তোমার একটি ভাল কাজ আছে আমার কাছে এবং তোমার প্রতি আজকে কোন অন্যায় করা হবে না। তার সামনে এরপরে একটি কার্ড উপস্থাপন করা হবে যাতে লেখা থাকবে আশহাদুআন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এবং আল্লাহ তাকে বলবেন, যাও এবং তোমার কাজগুলোর পরিমাপ পর্যবেক্ষণ কর। ৯৯ টি কাগজের খন্ড থাকবে একদিকে আর অন্য দিকে বসানো হবে ঐ একটি কার্ড। কার্ডটি যখন বসানো হবে তখনই ৯৯ টি খন্ডের পাল্লা উপরে উঠে যেতে থাকবে, কারন আল্লাহর নামের চাইতে ভারী কিছু নেই। এই হচ্ছে কালিমার মর্যাদা।

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে কালিমা উচ্চারণ করে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দ্বারা পুরষ্কৃত করবেন। আমরা আল্লাহর কাছে চাই যেন তিনি আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন যারা এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।

 

আল হাউযঃ জলাধার

আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছেন আল-হাউয  নামের একটি জলাধার। শেষ বিচারের দিনে এটি হবে একমাত্র পানির ব্যবস্থা। আকি-হাউযের পানি আসে জান্নাত থেকে, আল কাউসার নদী থেকে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার জলাধারটি একমাসের পায়ে হাটা দুরত্বের সমান দীর্ঘ। এর পানি দুধের চাইতেও সাদা, দুধের চাইতেও সুগন্ধময়, এবং পান-পাত্রগুলো আকাশের তারাগুলোর তাইতেও বেশি