আবু তালেবের সাথে সিরিয়ায় মুহাম্মদ ও পাদরি বুহায়রা
তখন মুহাম্মদের বয়স বারো বছর। তাঁর চাচা আবু তালিব বাণিজ্যে যাবেন। মুহাম্মদও সাথে যাওয়ার আবদার ধরলেন। না-না করেও মুহাম্মদের আবদার না রেখে পারলেন না আবু তালিব। মুহাম্মদের এ আবদার নিছক শখ ছিলো না। তিনি সবসময় চাইতেন কোনো-না-কোনোভাবে চাচার কষ্ট লাঘব হোক।
ব্যবসা-উপলক্ষে আবু তালিব গমন করেন শামদেশে, বর্তমান সিরিয়ায়। সফরের এক পর্যায়ে তিনি বসরায় গিয়ে উপস্থিত হন। বসরা ছিল শাম-রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান এবং হুরানের কেন্দ্রীয় শহর। সে সময় তা আরব-উপদ্বীপের রোম-আয়ত্তাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। এ শহরে জারজিস নামক একজন খৃস্টান ধর্মযাজক বসবাস করতেন; তাঁর উপাধি ছিল বুহায়রা বা বাহিরা, এবং এ উপাধিতেই তিনি সকলের নিকট পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। মক্কার ব্যবসায়ী-দল যখন বসরায় শিবির স্থাপন করেন, তখন পাদরি গির্জা থেকে বেরিয়ে তাঁদের নিকট আগমন করেন এবং আতিথেয়তায় আপ্যায়িত করেন; অথচ এর আগে কখনো তিনি এভাবে গির্জা থেকে বেরিয়ে কোনো বাণিজ্য-কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তিনি কিশোর মুহাম্মদের অবয়ব, আচরণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে বুঝতে পারেন যে, ইনিই হচ্ছেন বিশ্বমানবের মুক্তির দিশারি আখেরি নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর মুহাম্মদের হাত ধরে তিনি বলে, ‘ইনি হচ্ছেন বিশ্ব জাহানের সরদার। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ব-জাহানের রহমতরূপী রাসূল মনোনীত করবেন।’
আবু তালিব এবং কুরাইশের লোকজন বললেন, ‘আপনি কিভাবে অবগত হলেন যে, তিনিই হবেন আখেরি নবি?’ বুহায়রা বললেন, ‘গিরিপথের ওই প্রান্ত থেকে তোমাদের আগমন যখন ধীরে ধীরে দৃষ্টিগোচর হয়ে আসছিলো, আমি প্রত্যক্ষ করলাম যে, সেখানে এমন কোনো বৃক্ষ কিংবা প্রস্তরখণ্ড ছিলো না, যা তাঁকে সেজদা করেনি। এ সকল জিনিস নবি-রাসুল ছাড়া সৃষ্টিরাজির অন্য কাউকে কখনো সেজদা করে না। অধিকন্তু ‘মোহরে নবুওত’ দেখেও আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি। তাঁর কাঁধের নিচে কড়ি হাড্ডির পাশে সেব ফলের আকৃতিবিশিষ্ট একটি দাগ রয়েছে, সেটাই হচ্ছে ‘মোহরে নবুওত’। আমাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলসূত্রে আমরা এ সব কিছু অবগত হতে পেরেছি।’
এরপর বুহায়রা আবু তালিবকে বললেন, ‘তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আর বিদেশ-ভ্রমণ করবেন না। শীঘ্রই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কারণ, তাঁর পরিচয় অবগত হলে ইহুদি ও রোমীয়রা তাঁকে হত্যা করে ফেলতে পারে।’
এ কথা জানার পর আবু তালিব তাঁকে কয়েকজন গোলামের সাথে মক্কা ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নবুওতের অজানালোকঘেরা এক রহস্যময় জীবনের পথে এভাবেই হাঁটতে থাকে কিশোর মুহাম্মদ…