বাংলাদেশে পরিচিত ভণ্ডপীরদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস ও তার খণ্ডন
মুসলিম জনসাধারণের সরলতা এবং ধর্মের প্রতি সহজাত দুর্বলতাকে পুঁজি করে পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির হীন উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর অসাধু ভণ্ডপীর আজ মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংসের উদ্দেশ্যে খানকাহ ও দরবার খুলে বসেছে। তাই মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল-আখলাকের হিফাযতের উদ্দেশ্যে এ সকল ভ-পীরের ভন্ডামি সম্পর্কে সুস্পষ্ট অবগতি আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নিম্নে এ দেশের পরিচিত ভণ্ডপীরদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস ও তার সংক্ষিপ্ত খণ্ডন পেশ করা হলো।
এনায়েতপুরী ও তার অনুসারীদের আক্বীদা-বিশ্বাস
এনায়েতপুরীর নাম মাওলানা শাহ সূফী মুহাম্মাদ ইউনুস আলী। তার পিতার নাম মাওলানা শাহ সূফী আব্দুল কারীম। সে ১৩০০ হিজরীতে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার এনায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে।
এনায়েতপুরী ও তার অনুসারীদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস
১. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে কোন পার্থক্য নেই, শুধু মীম হরফ ছাড়া। আল্লাহ তা‘আলা হলেন আহাদ। আর হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আহমাদ।
খণ্ডন: হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর খোদার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বললে আল্লাহ তা‘আলারও স্ত্রী ও সন্তানাদি আছে বলতে হবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী ও সন্তান তখন আল্লাহ তা‘আলার স্ত্রী-সন্তান বলে গণ্য হবে। (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ কুরআন শরীফে (সূরা ইখলাস) এসেছে,
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
অর্থ: তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনি কারো থেকে জন্ম নেননি এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই।
২. এনায়েতপুরীর আক্বীদা হলো, ভালো-মন্দের ক্ষমতা পীর সাহেবের হাতে আছে।
খণ্ডন: এটা কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের স্পষ্ট বিরোধী। কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে, قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَمَالِ هَؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا
অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলে দিন, সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হয়। এই সম্প্রদায়ের কী হলো যে, তারা কোন কথা বুঝতেই পারে না।
৩. এনায়েতপুরীর অনুসারীরা তাকে প্রায় নবী আ. এর সমমর্যাদা সম্পন্ন মনে করে। তাদের ধারণায় যে ব্যক্তি এনায়েতপুরীর সাক্ষাত পেয়েছে, সে জান্নাতী।
প্রিয় পাঠক! এ ভ্রান্ত আক্বীদার খ-নের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ এটা স্বীকৃত যে, কাউকে দেখার মাধ্যমে জান্নাতী হওয়া হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খাস, তাও হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জীবদ্দশায় দেখা এবং মুমিন অবস্থায় মৃত্যু হওয়ার শর্তে। তাছাড়া হাদীসে আছে,
من بطأ به عمله، لم يسرع به نسبه
অর্থাৎ যার আমল তাকে পিছনে ফেলেছে তার বংশ-মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারেনি।
মাইজভান্ডারী পীরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
চট্টগ্রাম ‘মাইজভান্ডার’ দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ আহমাদুল্লাহ। তার পিতার নাম মৌলভী সৈয়দ মতিউল্লাহ। তিনি ১২৩৩ বাংলা ১লা মাঘ মোতাবেক ১৮২৬ ইংরেজী রোজ বুধবার জন্মগ্রহণ করেন। তার ঈমান বিধ্বংসী কুফরী আক্বীদাগুলো নিম্নরূপ।
মাইজভান্ডারীর আক্বীদা
১. পীর সাহেব মনের আশা পূরণ করেন এবং পরকালে মুক্তি দিবেন।
২. মাইজভান্ডারীর ভণ্ডপীর বলে থাকে, গান-বাজনা জায়েয।
অথচ শরীআতের দৃষ্টিতে গান-বাজনা সম্পূর্ণরূপে হারাম। হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ليكونن من أمتي أقوام، يستحلون الحر والحرير، والخمر والمعازف
অর্থাৎ আমার উম্মতের মাঝে এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।
উল্লিখিত আক্বীদা ছাড়াও আরো অনেক ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদায় বিশ্বাসী মাইজলানডারই পীর ও তার মুরীদরা। কাজেই এ ভ্রান্ত দল থেকে নিজের ঈমান-আমল হিফাযত করা আবশ্যক।
সুরেশ্বরী পীরের পরিচিতি
‘সুরেশ্বর’ শরীয়তপুর জেলার নাড়িয়া থানার একটি গ্রাম। এখানকার শাহ সূফী সৈয়দ জান শরীফ শাহ ‘সুরেশ্বরী পীর’ নামে খ্যাত। বর্তমানে সুরেশ্বরী পীরের অধঃস্তন উত্তরাধিকারী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত খানকায়ে সুরেশ্বর চৌধুরীপাড়া, ঢাকাতে অবস্থিত।
সুরেশ্বরীর ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস
তাদের আক্বীদা-বিশ্বাসের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক আক্বীদা হচ্ছে,
১. পীরের নিকট দীক্ষিত না হইলে কোন ইবাদত কবুল হয় না।
এখানে বাইআত হওয়াকে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য শর্ত তথা ফরয করা হয়েছে। অথচ কোন কিছুকে ফরয সাব্যস্ত করতে হলে কুরআন-হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা থাকা আবশ্যক, যা এখানে অনুপস্থিত। বাইআত হওয়াকে উলামায়ে কেরাম সুন্নাত বলেছেন। অতএব পীর ধরাকে ফরয বলা কোন দলীল ছাড়া শরী‘আতের মধ্যে অতিরঞ্জন করা, যা শরী‘আত বিকৃত করার ন্যায় জঘন্য অপরাধ। হাদীসে আছে, عن عائشة رضي الله عنها، قالت : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه، فهو رد.
অর্থ: হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত বিষয় গ্রহণযোগ্য নয়।
২. চন্দ্রপুরীর মত ভণ্ডপীর সুরেশ্বরীর মতেও কামেল ওলীর কোন ইবাদত-বন্দেগীর প্রয়োজন হয় না।
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানেন তথা তিনি সকল অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী। সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সব কিছুই তাঁর চোখের সামনে বিদ্যমান।
খণ্ডন: কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আছে, অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই আছে। এটা আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ গুণ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলে দিন, যত মাখলুক আসমান এবং যমীনে রয়েছে, তাদের কেউ গায়েব জানে না একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া। আর (এ কারণেই) তারা জানে না, তারা কবে পুনরুত্থিত হবে?
আটরশী পীরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আটরশীর ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের’ প্রতিষ্ঠাতা জনাব হাশমত উল্লাহর জন্ম হয় জামালপুর জেলার শেরপুর থানার অন্তর্গত পাকুরিয়া গ্রামে। তারপর ভণ্ডপীর এনায়েতপুরীর নির্দেশে ফরিদপুরে এসে ‘জাকের ক্যাম্প’ নামে সে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীকালে এটারই নাম দেয়া হয় ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’।
আটরশীর ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ
১. আটরশীর ভণ্ডপীরের বক্তব্য হলো, পরকালে পীর সাহেব মুরীদদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।
অথচ স্বয়ং নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গোত্রের লোক বনূ হাশেম, বনূ মুত্তালিবসহ নিজ কন্যা ফাতিমা রাযি. কেও বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের নাজাতের ব্যবস্থা নিজেরা করে নাও। আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারব না’।
২. দেওয়ানবাগী ভণ্ডপীরের মত আটরশীর এ ভ-ও মনে করে যে, পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আবশ্যকীয়তা নেই।
কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনামতে স্বচ্ছ ঈমানের দাবি হলো, মানুষের ভালো-মন্দ, সফলতা-ব্যর্থতা, ইজ্জত-সম্মান সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার অধীনে।
৩. অথচ ভণ্ডপীর আটরশীর কথা হলো, ভালো-মন্দের ক্ষমতা পীর সাহেবের হাতে।
এতসব কুফরী আক্বীদা সম্বলিত ব্যক্তি কীভাবে মানুষের পথনির্দেশক পীর হতে পারে? কাজেই ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’ এর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
চন্দ্রপুরী পীরের পরিচিতি
ফরিদপুর জেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের মৌলভী সৈয়দ আবুল ফযল সুলতান (মৃত ১৯৮৪ খ্রি.) ‘চন্দ্রপাড়ার পীর’ নামে খ্যাত। তিনি শাহ সূফী এনায়েতপুরীর শিষ্য। তিনি দেওয়ানবাগী পীর মাহবূবে খোদার পীর ও শ্বশুর।
চন্দ্রপুরীর ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ
১. ভণ্ড চন্দ্রপুরী বলে থাকে, হযরত জিবরীল আ. ও আল্লাহ তা‘আলা এক ও অভিন্ন। চন্দ্রপাড়া পীরের জামাতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘সূফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আত্মার বাণী’ ৫ম বর্ষ, ১ম সংখ্যায় আছে, ‘সুলতানিয়া মুজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম চন্দ্রপুরী ফরমান, জিবরীল আ. বলতে অন্য কেহ নন। স্বয়ং হাকীকতে আল্লাহ’। (নাঊযুবিল্লাহ)।
অথচ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ হয়েছে যে, জিবরীল আ. আল্লাহ ভিন্ন পৃথক সত্তা। আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী নিয়ে রাসূলের নিকট আগমনকারী ফেরেশতা।
২. ভণ্ড চন্দ্রপুরীর আরেকটি কুফরী আক্বীদা হলো, বড় বুযুর্গদের ইবাদত লাগে না।
অথচ পবিত্র কুরআনে কারীমে স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِين
অর্থাৎ (হে নবী!) আপনি আপনার প্রভুর ইবাদত করুন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।
আল্লাহ তা‘আলার নবীর সমান ইয়াকীন এবং বিশ্বাস অর্জন করা কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। তদুপরি আজীবন নবীকে শরী‘আতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে একজন উম্মত এই ক্ষমতা ও স্বাধীনতা কোত্থেকে পেল যে, সে শরী‘আতের অনুসরণ হতে মুক্ত হয়ে যাবে?
৩. ভণ্ড চন্দ্রপুরী আরো বলে থাকে, ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী করেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ কুরআনে ফেরেশতাগণের গুণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে যে, لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُون
অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহ তা‘আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করেন না। এবং যা তাঁদেরকে আদেশ করা হয় তা পালন করেন।
চন্দ্রপুরী ও তার অনুসারীগণ এ ধরণের অনেক কুফরী আক্বীদা-বিশ্বাসে লিপ্ত। কাজেই আমাদেরকে এ ভন্ডের প্রতারণা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা আবশ্যক।
দেওয়ানবাগীর পরিচিতি
দেওয়ানবাগী ভণ্ডপীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে। তার নাম মাহবূবে খোদা। ঢাকার অদূরে ‘দেওয়ানবাগ’ নামক স্থানে একটি এবং আরামবাগ, ঢাকাতে ‘বাবে রহমত’ নামে আরেকটি দরবার স্থাপন করেছে। মাহবূবে খোদা নিজে এবং তার ভক্তবৃন্দ তাকে ‘সুফি সম্রাট’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
দেওয়ানবাগীর ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা
১. ভণ্ড দেওয়ানবাগী মনে করে, মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়। সে বলে, ইসলাম বা মুসলিম কোন ব্যক্তি বা ধর্মের নাম নয়। এটা আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট বিধান এবং বিধান পালনকারীর নাম। যে কোন অবস্থানে থেকে এই বিধান পালন করতে পারলেই তাকে মুসলিম বলে গণ্য করা যায়।
অথচ পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা মতে পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায় হলো, দীন ইসলাম গ্রহণ করা।
২. সে জান্নাত-জাহান্নাম, হাশর, মীযান, পুলসিরাত, কিরামান কাতিবীন, মুনকার-নাকীর, ফেরেশতা, হুর ইত্যাদি বিষয়কে অস্বীকার করেছে। অর্থাৎ এগুলোর এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে, যা এগুলোকে অস্বীকার করার নামান্তর।
অথচ এগুলোকে সঠিকভাবে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, নিঃসন্দেহে সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।
৩. ভণ্ড দেওয়ানবাগী দাবি করে যে, কাবা শরীফ তার কাছে উপস্থিত। তাই হজ্জের প্রয়োজন নেই।
অথচ ইসলামে হজ্জ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরয। এর ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে কুফরী।
এতসব কুফরী আক্বীদা সত্ত্বেও ভণ্ড দেওয়ানবাগী নিজেকে বর্তমান যামানার মহান সংস্কারক, মুজাদ্দিদ, শ্রেষ্ঠতম আল্লাহর অলী দাবি করে থাকে এবং এ মিথ্যা দাবির প্রমাণ স্বরূপ শিরকী আক্বীদা সম্বলিত বিভিন্ন স্বপ্ন উল্লেখ করে থাকে। একজন মুসলমান হিসাবে এ বিবেচনা থাকা উচিত যে, একজন কুফরী আক্বীদার ভণ্ডপীর কীভাবে আল্লাহর অলী হতে পারে?
রাজারবাগের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তার মতাদর্শ
রাজারবাগী পীর দিল্লুর রহমান। বর্তমানে সে রাজারবাগের মুহাম্মাদীয়া ও সুন্নাতী জামে মসজিদ দরবারে অবস্থান করছে।
তার ঈমান বিধ্বংসী কয়েকটি আক্বীদা
১. সে নিজের নামের আগে-পরে প্রায় ৫২টি উচ্চ অর্থ সম্পন্ন খেতাব সংযুক্ত করেছে। সে বলে, এর মধ্য হতে অনেকগুলো খেতাব তাকে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। বাকিগুলো দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (নাঊযুবিল্লাহ)
২. নিজেকে ইমামুস সিদ্দীকীন অর্থাৎ সিদ্দীকগণের ইমাম বলে থাকে এবং এর মাধ্যমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ঐকমত্যের ভিত্তিতে উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. এর চেয়েও উর্ধে নিজেকে স্থান দিয়ে থাকেন। কাজেই তার ভণ্ড হওয়ার জন্য এ উপাধিই বড় প্রমাণ।
৩. সে ‘হাবীবুল্লাহ’ খেতাব ব্যবহার করেছে। অথচ ‘হাবীবুল্লাহ’ বলতে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বোঝানো হয়।
৪. তার খেতাবগুলোর মধ্যে কুফরী জ্ঞাপক খেতাবও রয়েছে। যেমন ‘কাইয়ূমুয যামান’ খেতাবটি আল্লাহ তা‘আলার নাম ‘কাইয়ূম’ থেকে নেয়া, যার অর্থ হচ্ছে ‘জগতের ধারক ও রক্ষক’। তাহলে ‘কাইয়ূমুয যামান’ অর্থ দাঁড়াচ্ছে যামানার রক্ষক। এ কথাটি কেবল আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অন্য কারো ক্ষেত্রে নয়। কোন মাখলূক কাইয়ূম হতে পারে না। হলে আব্দুল কাইয়ূম (জগতের রক্ষকের বান্দা) হতে পারে। সুতরাং কোন মানুষের জন্য নিজেকে সংশ্লিষ্ট অর্থের ধারক মনে করে এমন উপাধি গ্রহণ নিঃসন্দেহে কুফরী।
৫. মাসিক ‘আল-বাইয়িনাত’ সম্পর্কে সে এত বাড়াবাড়ি করেছে যে, ‘আল-বাইয়িনাত’ জুলাই ১৯৯৯ সংখ্যার ১৪৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে, আল্লামা রূমী রহ. এর মসনবী শরীফকে যেমন ফার্সী ভাষার কুরআন শরীফ বলা হয়, তদ্রুপ আল-বাইয়িনাতও যেন বাংলা ভাষার কুরআন শরীফ। (নাঊযুবিল্লাহ)। অথচ কুফরী আক্বীদা সম্বলিত পত্রিকা আল বাইয়িনাতকে কুরআন বলা নিঃসন্দেহে কুফরী কথা।
৬. মাসিক ‘আল-বাইয়িনাত’ পত্রিকায় উলামায়ে কেরাম সম্পর্কে এমন গালি-গালাজ লেখা হয়, যা কোন ভদ্রতা ও শালীনতার আওতায় পড়ে না।
অথচ গালি-গালাজ করা ফাসেকী ও হারাম। হাদীসে বলা হয়েছে, سباب المسلم فسوق অর্থাৎ মুসলামনকে গালি দেয়া ফাসেকী।
দৃষ্টান্তস্বরূপ এখানে বাংলাদেশের পরিচিত ভণ্ডপীরদের কিছু বিভ্রান্তি তুলে ধরা হয়েছে। মুসলমানদেরকে এসব ভণ্ড থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে হিফাযত করুন। আমীন।