প্রথম হিজরিতে নবীজি

নবীজি যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার অদূরবর্তী কুবায় অবস্থান করছিলেন, সে সময় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু ইসলামি সন ও তারিখের সূচনা করেন এবং ‘মুহাররম’-কে হিজরি সনের প্রথম মাস নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম হিজরিতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম নামক দ্বীনের এবং মদিনা নামক নতুন রাষ্ট্রের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র হিসেবেমসজিদে নববি নির্মাণ করেন। মক্কাথেকে মদিনায় হিজরতকারী মুহাজির সম্প্রদায় এবং মদিনায় বসবাসরত আনসার সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনের এক বিরল উপমা স্থাপন করেন; মুহাজির-আনসার ভ্রাতৃত্বের এই বিরল বন্ধনটি পৃথিবীর ইতিহাসের মতো একটি প্রথা ও দফাসর্বস্ব কোনো কীর্তি ছিলো না; এটি ছিলো আনসারদের রক্ত-সম্পদ ও সম্পর্কে মুহাজিরদের উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত একটি অভাবিত ভ্রাতৃত্ব-চুক্তি। প্রথা, বংশগত গৌরব, অন্যায় ও অনুচিত দাবির অযৌক্তিতার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর রাসূল শুধুমাত্র ইসলামকে অগ্রগণ্য রাখার দাবিকে প্রধান করে সকল মুসলিমদের মধ্যে এক বৈপ্লবিক চুক্তি সম্পাদন এই প্রথম হিজরিতেই। মদিনার ইহুদিদের সাথে সম্পাদন করেন পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথমতম আধুনিক ও অভিনব সম্প্রীতি-চুক্তি, যা কিনা ছিলো একটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে সুসংহত ও দৃঢ় করারলক্ষ্যে নজিরবিহীন; ৪৭টি ধারায় বিন্যস্ত মদিনা সনদ নামে বিখ্যাত এই চুক্তি পৃথিবীর আধুনিক রাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান বলে বিবেচিত।এছাড়াও মক্কার কাফেরদের উপর্যপুরি চড়াও-ধমকি এবং তাদের ষড়যন্ত্রে মদিনার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে রূপ নিতে শুরু করে, তখন আত্মরক্ষার উপায় ও অংশ হিসেবে মুসলিমদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এ হিজরিতেই জিহাদের নির্দেশ করা হয়,—পরবর্তীতে নানা পরিপ্রেক্ষিত ও অবস্থা বিবেচনায় যে নির্দেশনার আরও উপযোগিতা ও বিস্তৃতি ঘটে। জিহাদের নির্দেশ মোতাবেক এ হিজরিতে দুইটি সারিয়া প্রেরণ করা হয়,—একটিহযরতহামযা রাযিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে, অন্যটি হযরত উবাইদা ইবনুল হারেসা রাযিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে।


প্রথম সারিয়াহ : হযরত হামযার নেতৃত্বে
হিজরতের ৭ মাস পর পবিত্র রমজান মাসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হামযা রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ৩০ জন মুহাজিরের আমির বানিয়ে একটি সাদা পতাকা হাতে দিয়ে কুরাইশদের একটি কাফেলার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।কিন্তু তারা যখন সমুদ্রের তীরে উপনীত হয়ে পরস্পর লড়াইয়ে রত হলেন, তখন মাজদি ইবনে ওমর জুহানি মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ বন্ধ করে দিলেন।
সারিয়ায়ে উবায়দা ইবনুল হারেস এবং ইসলামের প্রথম তির নিক্ষেপের ঘটনা
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১ম হিজরির শাওয়াল মাসে হযরত উবায়দা ইবনুল হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ৬০ জন লোকের আমির নিযুক্ত করে বাতনে-রাগেবঅভিমুখে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।এই যুদ্ধেই হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কাফেরদের প্রতি তির নিক্ষেপ করেছিলেন;আর কাফেরদের উপর এটাইছিলোইসলামের পক্ষ থেকে ছোড়া প্রথম তির।

তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি;সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতি শফি।