একটি বৈপ্লবিক চুক্তি, জাহেলিয়াত-জীবনের অবসান ও নবীজি

মসজিদে নববি নির্মাণের পর মুহাজির-আনসার ভ্রাতৃত্ব-চুক্তির মতোই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকটি চুক্তিও সম্পাদন করেন হিজরতের অব্যবহিত পরেই;মুসলিমদের মাঝে সম্পাদিত এই চুক্তির অধীনে জাহেলিয়াত-যুগের সকল গোত্রীয় গণ্ডগোলের মূলোৎপাটন এবং যাবতীয় কুসংস্কার ও রসম-রেওয়াজের বিলোপ ঘটে। এ অঙ্গীকারনামার দফাগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে বিন্যস্ত হলো—
এ চুক্তি লিখিত হচ্ছে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরাইশ, ইয়াসরিবি এবং তাঁদের অনুসারী ও তাঁদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলিমগণের জন্য।
১. এরা নিজেদের ছাড়া অন্য সকল মানব থেকে ভিন্ন একটি গোষ্ঠী।
২. কুরাইশ-মুহাজিরগণ নিজেদের পূর্বেকার অবস্থা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে দিয়ত (হত্যার বিনিময়) দেবেন এবং মুমিনদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে বন্দিদের মুক্তিপণ প্রদান করবেন।আনসারদে রসকল গোত্র নিজেদের পূর্বেকা রঅবস্থা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে দিয়ত প্রদান করবেন এবং তাঁদের সকল দল ঈমানদারদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত পন্থায় আপন বন্দিদের জন্য মুক্তিপণ প্রদান করবেন।
৩. ঈমানদারগণ কোনো সহায়-সম্পদহীনকে (এতিম) মুক্তিপণ ও দিয়ত প্রদানের ব্যাপারে উত্তম পন্থা মোতাবেক প্রদান এবং সম্মান করা থেকে বিমুখ করবেন না।
৪. সকল ধর্মপ্রাণ মুমিন ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধাচরণ করবেন,যারা তাঁদের প্রতি অন্যায় আচরণ করবে অথবা ঈমানদারদের বিরুদ্ধে অন্যায়, অত্যাচার, পাপ ও গণ্ডগোলের পথ বেছে নেবে।
৫. মুমিনগণ তাদের বিরুদ্ধে কাজ করবেন—যদিও তাদের মধ্যে কেউ আপন পুত্রও হয়।
৬. কোনো কাফেরের বদলে কোনো মুমিনকোনোমুমিনকেহত্যাকরবেননা।
৭. কোনো মুমিন কোনো মুমিনের বিরুদ্ধে কোনো কাফেরকে সাহায্য করবেন না।
৮. আল্লাহর জিম্মা (অঙ্গীকার) একই হবে। একজন সাধারণ মানুষের প্রদানকৃত জিম্মা সকল মুসলমানের জন্য সমানভাবে পালনযোগ্য হবে।
৯. যে সকল ইহুদি মুসলিমগণের অনুগামী হবে, তাদের প্রয়োজনে সাহায্য করতে হবে এবং তারা অন্য মুসলিমগণের মতো হয়ে যাবে। তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা যাবে না; কিংবা তাদের বিরুদ্ধে অন্যকে সাহায্যও করা যাবে না।
১০. মুসলিমগণের সম্পাদিত সন্ধি হবে একই। কোনো মুসলিম কোনো মুসলিমকে বাদ দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধের ব্যাপারে কোনো সন্ধি করবেন না;বরং সকলে সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতেই তা করবেন।
১১. মুসলিমগণ ওই রক্তপাতের ব্যাপারে সমান অধিকার রক্ষা করবেন, যা আল্লাহর পথে প্রবাহিত হবে।
১২. কোনো কুরাইশ-মুশরিককে আশ্রয় দেবেন না, তাদের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সাহায্য করবেন না, আর কোনো মুমিনের হেফাজতের ব্যাপারে মুশরিকদেরকে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় করাবেন না।
১৩. যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে হত্যা করবে এবং তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার নিকট থেকে হত্যার বদলা গ্রহণ করা হবে—যদি নিহতের অভিভাবক রাজি থাকেন।
১৪. যে সকল মুমিন এর বিরুদ্ধাচরণ করবেন,তাদের জন্য এছাড়া আর কিছু হালাল হবে না যে, তাঁরা সেই সকল বিরুদ্ধচারী মুমিনদের বিরুদ্ধাচরণ করবেন।
১৫. কোনো মুমিনের জন্য এটা সঙ্গত হবে না যে, যারা গণ্ডগোল সৃষ্টি করে (বেদাতি),তাদের কার্যকলাপে সাহায্য করা অথবা তাদের আশ্রয় দেওয়া, কিংবা যে তাদের সাহায্য করে, তাকে আশ্রয় দেওয়া। যে এরূপ করবে,কেয়ামতের দিন সে অভিশাপ এবং গজবে নিপতিত হবে এবং তার ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই কবুল হবে না।
১৬. তোমাদের মধ্যে যখনই যে কোনো মতভেদ পরিলক্ষিত হবে, তখনই তা আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধি-বিধান মতো ফয়সালার ব্যবস্থা করবে।


তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি।