সাইয়েদ আহমদ শরীফ সানুসী : লিবিয়ার জাতীয় সংগ্রামের প্রথম নেতা

তিনি লিবিয়ার জাতীয় সংগ্রামের প্রথম নেতা। নিজের জীবনকে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে দেয়া প্রবাদপ্রতীম মানুষ। চাদে ফরাসীদের বিরুদ্ধে, মিসরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে, লিবিয়ায় ইতালীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে। ইসলামের ডাক ও আহ্বান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেবার জন্য আফ্রিকার প্রান্তে প্রান্তে ছুটে বেড়ানো এই সংগ্রামীর নাম—সাইয়েদ আহমদ শরীফ ইবনে মুহাম্মদ শরীফ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী সানুসী খাত্তাবী ইদরিসী।

জন্ম ও শিক্ষা

১২৯০ হিজরির ২৭ শাওয়াল, ১৮৭৩ খৃস্টাব্দ; জাগবুব এলাকায় বুধবার রাতে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ শরীফ। বাবা মুহাম্মদ শরীফের কোলে বেশিদিন থাকতে পারেননি। বাবা মারা যাবার পর অর্পিত হন চাচার তত্ত্বাবধানে। চাচা মাহদী সানুসী নিজ হাতে তুলে নেন ভাতিজার লালন-পালন ও পড়ালেখার দায়িত্ব। প্রাথমিক পাঠের সঙ্গে হেফজ করাতে থাকেন পবিত্র  কোরআন শরীফ। ছয় বছর বয়সে যখন হেফজ শেষ হলো, চাচা তাকে বললেন, ‘পুরো কোরআন তুমি আমার কাছেই হেফজ করেছ।’

আহমদ শরীফ অনেকের কাছ থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন—মুহাম্মদ শরীফ সানুসী, মুহাম্মদ মাহদী সানুসী, আহমদ রিফি, মুহাম্মদ মুস্তফা মাদানী, ইমরান ইবনে বারাকাত প্রমূখ।

ঘরের বাইরে

১৩১২ হিজরি (১৮৯৫ খৃ.) জাগবুব থেকে চাচার সঙ্গে চলে আসেন কাফরায়। এখানে এসে তার কাঁধে চাপে অনেক দায়িত্ব। কাফরাগামী ২৬০০ মুসাফিরের একটি দলের দেখাশুনা করেন তিনি। অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন চাচার নির্দেশনা। দিনরাত এক করে লেগে থাকেন মুসাফিরদের সেবায়।

১৩১৭ হিজরিতে (১৯০০খৃ.) কাফরা ছেড়ে চলে আসেন মধ্য সুদানের গারো অঞ্চলে। এখানে আসেন মানুষের মাঝে ইসলামি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে, ইসলামের সুন্দর আহবান তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। এখান থেকেই শুরু হয় সুদান এবং চাদের বিভিন্ন অঞ্চলে ফরাসীদের  বিরুদ্ধে ক্রমাগত যুদ্ধ। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ওয়াদাই, কুলাক, আলালী, ওয়ান, গ্রেটার জানা, লেসার জানা, তিবিস্তি, বারকু, গারো ইত্যাদি। তার চাচা মাহদী সানুসী মারা যাবার আগ পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ।

আহমদ শরীফ তার চাচার সঙ্গে ইসলামি দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার মানসে যত জায়গায় সফর করেছেন, তার বৃত্তান্ত লিখে গেছেন ‘আস সিরাজুল ওহহাজ ফি রিহলাতিস সায়্যিদ মাহদী মিনাল জাগবুব ইলাত তাজ’ গ্রন্থে।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

১৯০২ খৃস্টাব্দ। মাহদী সানুসীর মনে হচ্ছে তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। ছেলে ইদরিসের বয়স মাত্র ১৩ বছর। নেতৃত্ব সঁপবেন কার হাতে? আহমদ শরীফের চেয়ে দক্ষ আর কে হতে পারে? তার অধিনেই তো ফরাসীদের বিরুদ্ধে গারো এবং ওদান অঞ্চলে যুদ্ধ করেছে। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সুতরাং মাহদী ১২২০ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল, ১৯০২ খৃস্টাব্দের ১৯ জুন কাফরায় ভাতিজা আহমদ শরীফের হাতে তুলে দিলেন সানুসী আন্দোলনের নেতৃত্ব। বয়স তত বেশী না হলেও, সবাই মেনে নিলো তাকে। মাহদী ভাতিজাকে ওসিয়ত করলেন, ‘ইদরিস বড় হলে, তার হাতে তুলে দিবে নেতৃত্ব।’

সানুসী আন্দোলনের আগের নেতাদের দেখিয়ে যাওয়া পথেই হাঁটলেন আহমদ শরীফ। অব্যাহত রাখলেন ফরাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আফ্রিকায় এবার সমস্ত শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে প্রচার করতে শুরু করলেন ইসলামের দাওয়াত। কাফরার একটি শহরকে সানুসী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করলেন।

কাফরায় কেন্দ্র নির্ধারণের পর, ফরাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন শুরু করলেন। চাদের পূর্ব এবং উত্তর দিক থেকে সংগ্রহ করতে লাগলেন সেনা সদস্য।

১৯০৩ সালে সুলতান ওয়াদাইকে ডাকলেন আহমদ শরীফ। তিনি তাকে ফরাসীদের সাহায্যের চুক্তি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করলেন। সুলতান অনুরোধ রাখলেন। এক বিবৃতিতে ঘোষণা দিলেন, ‘ফরাসীদের সাহায্য করার চুক্তি আমরা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’

এরপর তিনি ডাকলেন সুলতান আলী দিনারকে৷ ইউরোপীয় ক্রুসেড আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের এক করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এই সুলতান। আহমদ শরীফ তাকেও ফরাসীদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে বললেন। এবং তার সঙ্গে সহমত পোষণ করলেন তার পরিকল্পনায়।

সানুসী আন্দোলনের শুরুর দিকে কোন কেন্দ্রীয় অবকাঠামো ছিলো না। যে কেন্দ্র থেকে নিয়োগ, বরখাস্ত, শাস্তি দেওয়া, ফান্ড তোলার মতো কাজগুলো করা হবে। বরং তখন মূল লক্ষ্য ছিলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। মানুষকে কিতাব সুন্নাহর হুকুম আহকাম জানানো। তারা মানুষকে মসজিদ তৈরী করতে উৎসাহিত করতেন। শুধু মসজিদ তৈরী-ই নয়, এতে কিতাব সুন্নাহর পাঠদান ও প্রতি ওয়াক্তে নামাজের ব্যবস্থাপনাও করে দিতেন। গোত্রে গোত্রে হানাহানি, মারামারির সমাধান করে দিতেন। কিন্তু আহমদ শরীফের হাতে নেতৃত্বের রশি আসার পর, সানুসী আন্দোলন কেন্দ্র পেয়েছে, অববকাঠামো পেয়েছে। ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন করে আহমদ শরীফ শক্তিশালী করে তুলেছেন কেন্দ্রকে।

ইতালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ

লিবিয়ার তীরে ইতালীয় আগ্রাসনের সূত্রপাত হয় ১৯১১ সালে। এই সময় আহমদ শরীফ সানুসী আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তুলেন। এমনিতেই তিনি অন্যান্য ইসলামি আন্দোলনকে সাহায্য ও সমর্থন করতেন সবসময়। তুর্কিস্তানে উসমানি খেলাফতের সঙ্গে ছিলো তার গভীর সম্পর্ক। সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তুর্কি অফিসারদের নেতৃত্বে গড়ে তুলেন সামরিক বাহিনী। সেই বাহিনীকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার জন্য গ্রহণ করেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

আহমদ শরীফ সানুসী নেতৃস্থানীয় লোক, বিভিন্ন গোত্রের নেতা, উলামা-মাশায়েখদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেন। তাদের সামনে ইতালীয় আগ্রাসনের বিষয়টি তুলে ধরে পরামর্শ চান। তারা সবাই একবাক্যে উচ্চারণ করে—’আল্লাহর কসম! এই লাঠি দিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।’

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন আহমদ শরীফ। ফিরিয়ে দিলেন খৃস্টান দখলদারীর কাছে আত্মসমর্পণের আহবান। আহমদ শরীফের ডাক পৌঁছে গেলো ত্রিপোলির নেতা এবং গোত্রপতিদের কাছে। তিনি তাদেরকেও প্রস্তুত হতে বললেন। এই গোত্রপতিদের মধ্যে অন্যতম হলেন—
হোন গোত্রের নেতা মুস্তফা আহমদ হাওনি।
সুকনে গোত্রের নেতা হামিদ বারাকাত শরীফ।
ফেজান গোত্রের নেতা মুহাম্মদ আলী আশহাব।
মাজদাহ গোত্রের নেতা সুন্নি
ত্রিপোলির নেতা আবদুল ওহহাব ঈসায়ী।
সিরত গোত্রের নেতা মুহাম্মদ আলী ইবনে শফী।

আওলাদে সুলায়মান, ওয়ারফালাহ এবং অন্যান্য প্রজাতির নেতা শায়খ সাইফুন নসরের কাছে চিঠি লিখে সব জানালেন। ফেজান, তুওয়ারিক৷ এবং রিয়াহ গোত্রগুলো থেকে লোক সংগ্রহ করে সেনাবাহিনী গঠন শুরু করলেন শায়খ মুহাম্মদ আশহাব। তুয়ারেগ নেতাদের মধ্য থেকে আমওয়াদ এবং কাউসা যোগ দিলেন মুহাম্মদ আশহাবের শিবিরে। মরক্কোনরা আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরিসের নেতৃত্বে নওফলিয়ায় গড়ে তুললো সৈন্য শিবির। এই শিবিরের পাশে দাঁড়ালো আওলাদে সুলায়মান, ওয়ারফালাহ, কাজাজাফাহ। শুরুতে এসবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাইফুন নসর। তারপর তার ছেলে আহমদ বেক। আবু সাইফ উপজাতির শিবিরের দায়িত্ব নিলেন শায়খ সুন্নী এবং আবু বকর কিরজা।

পশ্চিমাঞ্চলের চারটি সৈন্য শিবির সানুসীদের আনুগত্য প্রকাশ করে বললো, ইতালির বিরুদ্ধে আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো। লিবিয়ানরা এইসব সৈন্য শিবিরগুলোর ত্রিপোলি, ঘারিয়ান, আল খুমস এবং মিস্রিতে থাকার বন্দোবস্ত করে। সানুসী আন্দোলনের ডাক আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।

ত্রিপোলির যুদ্ধের ময়দানে ঝড়ের মতো আসে সানুসী আন্দোলনের সৈন্যরা। ১৯১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আহমদ শরীফের একটি ঘোষণা সেই ঝড় আরও তীব্র, আরও বিধ্বংসী করে তোলে। তিনি সেদিন ঘোষণা করেন—এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবো আমি। এই ঘোষণা সব সৈন্য শিবিরে দেশলাইয়ের মতো কাজ করে। আগুন জ্বলে উঠে মুহূর্তে। টগবগ করে ফুটতে থাকে যুদ্ধ করার জন্য।

ত্রিপোলিতে যখন পৌঁছেন, ১৯১২ সালের মার্চ মাসে, উসমানি খেলাফত তার প্রতি সরাসরি সমর্থন ঘোষণা করে।

আহমদ শরীফ তার সৈন্য বহরকে এমনভাবে সেট করেন, ইতালীয় সৈন্যরা অভ্যন্তরে ঢুকবে তে দূরের কথা, বরং তারা নতুন করে ভাবতে শুরু করলো। এই জ্বলন্ত সৈন্যদের সঙ্গে তো পেরে ওঠা যাবে না। হেরে যেতে হবে। কিন্তু ইউরোপীয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর আগে ইতালিকে হার মানা যাবে না। আবার সমুখযুদ্ধেও তো পেরে ওঠা যাবে না। তাই কৌশল করে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ যুদ্ধে না এসে ঘোষণা জারি করে—লিবিয়া ত্রিপোলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলো। সুতরাং নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
১. ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে বুঝাতে হবে, লিবিয়া ত্রিপোলির নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিয়েছে।
২. উসমানি খেলফতকে বাধ্য করতে হবে লিবিয়ার উপর ইতালির নেতৃত্বের ঘোষণা দিতে।
৩. যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। কারণ নতুন সার্বভৌম ইতালীয় রাষ্ট্র এই যুদ্ধকে চাইলে বৈধ কিংবা অবৈধ বলতে পারে।

ইতালির এই ঘোষণার পর উসমানি খেলাফত সরাসরি প্রতিবাদ জানায়। এবং এটা অন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মতামত ব্যক্ত করে। ১৯০২ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের রাজা, জার্মানির সম্রাট, ইউরোপের সরকারবৃন্দ, ফরাসী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্যদেরকে এই সমস্যার সমাধান করতে বলেন। কিন্তু এরা সবাই হস্তক্ষেপ করতে অসম্মতি জানায়। ব্যর্থ হয়ে যায় উসমানি সালতানাতের কূটনৈতিক প্রচার।

শুরুতেই নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে সরে দাঁড়ায় ফ্রান্স। একই দোহাই দেয় রাশিয়া। নিরপেক্ষতার চাদর আবৃত হয়ে সাধু সাজতে চায় বৃটেন। কিন্তু মূলত এটা নিরপেক্ষতা ছিলো না কোনক্রমেই। বরং বৃটেন মিসরকে নিরপেক্ষ থাকতে প্ররোচিত করেছিলো। আর এতে লাভ হয়েছিলো ইতালির।

আহমদ শরীফের সৈন্যব্যূহ ভেদ করে লিবিয়ার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দাম দিতে হয় ইতালীয়দের। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় তারা। অনেক সৈন্যের প্রাণের বিনিময়ে তারা শেষ পর্যন্ত ভেতরের কিছু জায়গা দখল করতে পারে। যেমন—আল খুমস, মিস্রি, জলিটেন, ওয়ারফেলা, তারহুনা এবং জুয়ারা। তারপর তারা পৌঁছে যায় হোন এবং ফেজানে। সেখানের দুর্বল পুরুষ, নারী এবং শিশুরা প্রতিরোধ করতে পারে না, মারা পড়ে যায়। বাকী সৈন্যরা অন্যান্য স্থানে চলে যায় যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য। ইতালীয়রা যে সমস্ত অঞ্চল দখল করেছে, বিশেষ করে ত্রিপোলিতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

১৯০২ থেকে ১৯১৬; এই সময়টুকু সানুসী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন  আহমদ শরীফ। ১৯১৬ সালে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তার চাচাত ভাই ইদরীস।

১৯২৪ থেকে ১৯৩৩; আহমদ শরীফের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক সময়। হিজাযে বসবাসকালে এই সময়ে গাঢ় একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আবদুল আজীজ আল সৌদের সাথে। তিনি লিবিয়ার আভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ এবং সংগ্রাম আবার শুরু করেন। লিবিয়ার সংগ্রামীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে একপ্রকার রাজি করিয়ে ফেলেছিলেন উসমানি খেলাফতের প্রধানমন্ত্রী ইযযত পাশাকে। সময়টা তখন ১৯১৮ এর অক্টোবর। ইযযত পাশা তাকে অস্ত্র, সম্পদ ইত্যাদি দিয়ে গোপনে ত্রিপোলি যাবার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এসে সব উলট পালট করে দেয়। কোনকিছুই আর ঠিক জায়গায় থাকে না।

ইনতেকাল

মুহাম্মদ ইদরীস সানুসীর হাতে সানুসী আন্দোলনের দায়িত্ব অর্পণ করে তিনি চলে এসেছিলেন। কিন্তু যতদিন দায়িত্বে ছিলেন, ততদিন পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিজের সবটুকু দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। তাহির যাবি খুব সুন্দর করে বলেছেন, ‘ইলম সাইয়েদ আহমদ শরীফকে তীক্ষ্ণ করেছে, মহান করেছে। ইবাদাত তাকে সৌন্দর্য দিয়েছে, ঔজ্জ্বল্য দিয়েছে। নিজেকে ছোট ভাবতেন ঠিক, কিন্তু নিজের সাহসকে উঁচু, বড় রাখতেন সবসময়। প্রতিটি কাজ করতেন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। এজন্যই আল্লাহ তাকে এত বড় বড় কাজ করার তৌফিক দিয়েছেন। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার যশ, তার নাম।’

হিজাযের মাটি হয়েছিলো তার শেষ ঠিকানা। ষাট বছরের এক সাহসী জীবন কাটিয়ে ১৯৩৩ সালের ১০ রবিউল আউয়ালে, মদীনা মুনাওয়ারায়, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সৌভাগ্য যেন শেষ মুহূর্তে ছুঁয়ে গেলো কপাল। জান্নাতুল বাকিতে হলো তার দাফন, প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন। এপারে সংগ্রাম, ওপারে দিদার। মুমিনের এই তো জীবন।

আল জাজিরা অবলম্বনে


রাকিবুল হাসান
সূত্রঃ fateh24