আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা)

আবদুল্লাহ নাম, কুনিয়াত আবু আবদির রহমান। পিতা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব, মাতা যায়নাব। সঠিক বর্ণনা মতে হিজরী তৃতীয় সনে উহুদ যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। এই হিসাবে নবওয়াতের দ্বিতীয় বছরে তার জম্ম। নবওয়াতের ষষ্ঠ বছরে হযরত্ন উমার যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন আবদুল্লাহর বয়স প্রায় পাঁচ।

বুদ্ধি হওয়ার পব থেকেই আবদুল্লাহ নিজের বাড়ীটি ইসলামের আলোকে আলোকিত দেখতে পান। ইসলামী পরিবেশেই তিনি বেড়ে ওঠেন। অবশ্য কোন কোন বর্ণনা মতে, পিতার পূর্বেই তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। তবে সঠিক মত এই যে, পিতার ইসলাম গ্রহণের সময় তিনি অল্প বয়স্ক। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান হিসাবে তিনিও পিতার ধর্মানুসারী হয়ে যান।

হযরত উমার (রা) কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পরিবার-পরিজনসহ মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। পিতার সাথে আবদুল্লাহও মদীনায় চলে যান। হিজরাতের পর সত্য-মিথ্যার প্রথম সংঘর্ষ হয় বদর প্রান্তরে। ইবন উমর তখন তের বছরের কিশোর। জিহাদে যোগদানের আবেদন জানালেন। জিহাদের বয়স না হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন। এক বছর পর আবার সামনে এলো উহুদের যুদ্ধ। এবার তিনি নাম লেখালেন। একই কারণে এবারও রাসূলুল্লাহর (সা) অনুমতি লাভে ব্যর্থ হলেন। এর দুই বছর পর হিঃ পঞ্চম সনে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আবদুল্লাহর বয়স পনেরো। এই প্রথম তিনি জিহাদে গমনের জন্য রাসূলুল্লাহর অনুমতি লাভ করেন।

ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সফর সংঙ্গী ছিলেন এবং বাইয়াতে রিদওয়ানের সৌভাগ্য অর্জন করেন। ঘটনাক্রমে পিতা হযরত উমারের (রা) পুর্বেই তিনি এ গৌরব লাভ করেন। এদিন হযরত উমার (রা) এক আনসারীর নিকট থেকে একটি ঘোড়া আনার জন্য তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি পথে বের হতেই শুনতে পেলেন রাসূলুল্লাহ (সা) সাহাবীদের নিকট থেকে বাইয়াত গ্রহণ করছেন। তিনি দৌড়ে গিয়ে প্রথম রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াত করেন।

খাইবার অভিযানেও তিনি শরীক ছিলেন। এই সফরে রাসূল (সা) হালাল-হারামের যে বিধান ঘোষণা করেন, তিনি তার একজন বর্ণনাকারী। (বুখারী)

মক্কা বিজয়ের সময় ইবন উমার বিশ বছরের নওজোয়ান। এ অভিযানের তিনি অন্য মুজাহিদদের পাশাপাশি ছিলেন। তাঁর হাতিয়ার ছিল একটি দ্রুতগামী ঘোড়া ও একটি ভারি নিযা। গায়ে ছিল এক প্রস্থ চাদর। এ সময় একদিন তিনি নিজ হাতে ঘোড়ার ঘাস কাটছিলেন, এ অবস্থায় রাসূল (সা) তাঁকে দেখে বলে ওঠেন- ‘আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ।’ মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহর পেছনে পেছনে খানায়ে কাবায় প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে সর্বপ্রথম উসামা বিন যায়িদ, উসমান বিন তালহা ও বিলাল ইবন রিবাহ প্রবেশ করেন। তারপর আমিই প্রথম কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করি।

মক্কা বিজয়ের পর হুনাইন অভিযান এবং তায়িফ অবরোধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। অসংখ্য মুসলমানের সাথে ইবন উমারও রাসূলুল্লাহর (সা) বিদায় হজ্জে সংগী হয়ে এ হজ্জ আদায় করেন।

নবম হিজরীতে পরিচালিত হয় তাবুক অভিযান। তিরিশ হাজার মুজাহিদসহ রাসূল (সা) তাবুক যাত্রা করেন। ইবন উমারও ছিলেন এ বাহিনীর অন্যতম সদস্য। মোটকথা খন্দক থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহর (সা) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সকল গুরুত্বপুর্ণ অভিযান ও ঘটনায় তিনি শরীক ছিলেন।

প্রথম খলীফার সময়কালে ইবন উমারকে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখা যায় না। অথবা জড়িত থাকলেও ইতিহাসে সে সম্পর্কে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।

তবে দ্বিতীয় খলীফার যুগে কোন কোন অভিযানে সাধারণ সৈনিক হিসাবে তাঁর উপস্থিতি ইতিহাসে দেখা যায়। নিহাওয়ান্দের যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিরিয়া ও মিসর অভিযানে তাঁর অংশগ্রহণ করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিরিয়া ও মিসর অভিযানে তাঁর অংশগ্রহণের কথা ইতিহাসে জানা যায়। তবে এসব অভিযানে তাঁর উল্লেখযোগ্য কোন অবদানের কথা জানা যায় না। এ সময় রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও তাঁকে অনুপস্থিত দেখ যায়। এর কারণ সম্ভবতঃ এই যে, খলীফা উমার (রা) তাঁর নিকট আত্মীয়দের খিলাফতের বিশষ কোন কাজে জড়িত হওয়া পছন্দ করতেন না। এতদসত্তেও মুসলিম উম্মাহর লাভ-ক্ষতির কোন প্রশ্ন দেখা দিলে তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পিতার সকল কঠোরতা মাথা পেতে নিতেন। দৃষ্টান্তস্বরুপ বলা যায়, খলীফা উমার (রা) যখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ইবন উমার তাঁর বোন উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসার (রা) মুখে শুনতে পেলেন, উমার (রা) কাউকে তাঁর স্থলাভিষক্ত করে যেতে চান না। ইবন উমার পিতার অবর্তমানে উম্মাতেরন ভবিষ্যত সমস্যার কথা চিন্তা করলেন। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পিতার সামনে উপস্থিত হয়ে সাহসের সাথে আরজ করলেন, “মানুষের নানা কথা আমার কানে আসছে, আপনাকে তা জানাতে এসেছি। তাদের ধারণা আপনি কাউকে স্থলাভিষিক্ত করে যেতে চান না। তিনি আরো বলেন, ধরে নিন কোন রাখাল আপনার উট-বকরী চরায়। সে যদি উট-বকরীর পাল মাঠে ছেড়ে দিয়ে আপনার কাছে চলে আসে, তাহলে তার পরিণতি কেমন হয়? মানুষের রাখালী তো আরো কঠিন কাজ।” এ যুক্তিপুর্ণ কথা খলীফা উমারের মনোঃপুত হল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে তিনি বললেন, আল্লাহ নিজেই তার পশু পালের তত্বাবধায়ক।শেষ পর্যন্ত তিনি পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের দায়িত্ব একদল উঁচু পর্যায়ের সাহাবীদের ওপর ন্যস্ত করে যান।

পিতার ওফাতের পর সর্বপ্রথম ইবন উমারকে খলীফা নির্বাচনের মজলিসে দেখা যায়। হযরত উমার অসীয়াত করে যান যে, পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে আবদুল্লাহ শুধুমাত্র পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করবে। তাকে খলীফা বানানো চলবে না।

খলীফা উসমানের যুগে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের সুযোগ লাভ করেন। তবে অবৈধ কোন ফায়দা লাভের চেষ্টা কখনো করেননি। খলীফা উসমান (রা) তাঁকে কাজীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, আমি দুই ব্যক্তির মাঝে না ফয়সালা করে থাকি, না দুই ব্যক্তির ইমামতি করে থাকি। কারণ, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘কাজী তিন শ্রেণীর। এক, জাহিল। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। দুই, দুনিয়াদার আলিম, তারাও জাহান্নমী। তিন, যারা ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। তাদের জন্য না শাস্তি না পুরস্কার।’ খলীফা বললেন, ‘তোমার পিতাও তো ফয়সালা করতেন’। বললেনঃ হাঁ, একথা সত্য। তবে কোন সমস্যায় পড়লে রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে যেতেন। রাসূলও (সা) যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারাগ হতেন তখন জিবরাঈলের শরণাপন্ন হতেন। কিন্তু আমি এখন কার কাছে যাব? আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে অব্যাহতি দিন। খলীফা তাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। তবে তার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, একথা তিনি অন্য কারো নিকট প্রকাশ করবেন না। কারণ, খলীফা জানতেন, লোকেরা যদি জানতে পারে ইবন উমার কাজীর পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়াছে, তাহিলে এ পদের জন্য আর কোন সত্যনিষ্ঠ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সকলে ইবন উমারের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।

খিলাফতের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে দূরে থাকলেও জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ থেকে কখনো দূরে থাকেননি। জিহাদের ডাক যখনই এসেছে, সাড়া দিয়েছেন। হিজরী ২৭ সনে আফ্রিকা (তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও মরক্কো) অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। হিজরি ৩০ সনে সাঈদ ইবন আসের সাথে খুরাসান ও তিবরিস্তান অভিযানে শরীক হন। কিন্তু আভ্যন্তরীণ হাঙ্গামা ও ফিত্না-ফাসাদ শুরু হওয়ার পর সম্পূর্ণ নির্জনতা অবলম্বলন করেন। কিলাফতের কোন কর্মকান্ডে আর অংশগ্রহণ করেননি। হযরত উসমানের (রা) শাহাদাতের পর লোকেরা তাঁকে খলীফার পদটি গ্রহণের অনুরোধ জানায়। তিনি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। লোকেরা তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে স্বীয় সিদ্বান্তে অটল থাকেন।

আলী ও মুয়াবিয়া (রা) – এ দু’জনের মধ্যে কার কিলাফত তিনি মেনে নিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। ইবন হাজার বলেন, ‘ইবন উমার মনে করতেন যতক্ষণ পযর্ন্ত কোন লোকের ব্যাপারে জনগণের ইজমা বা ঐক্যমত না হয় ততক্ষণ তার হাতে বাইয়াত করা উচিত নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি আলীর (রা) হাতে বাইয়াত করেননি। কিন্তু মুসতাদরিকের একটি বর্ণনামতে এই শর্তে আলীর (রা) হাতে বাইয়াত করেছিলেন যে, তিনি আলীর সাথে গৃহযুদ্ধে জড়িত হবেন না। আলী তাঁর এই শর্ত অনুমোদনও করেছিলেন। তাঁর হাতে কোন মুসলমানের এক বিন্দু রক্তও ঝরেনি। তবে তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলীর (রা) পক্ষে যোগদান না করায় একটা তীব্র অপরাধ বোধ করেছেন।

সিফফীনের যুদ্ধের পর আবু মুসা আশয়ারী ও আমার ইবনুল আস উভয়পক্ষের বিচারক নিযুক্ত হন। আবু মুসা তাঁর প্রতিপক্ষের নিকট খলীফা হিসাবে আবদুল্লাহ ইবন উমারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু আমর ইবনুল আস এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিচারকদ্বয়ের সিদ্বান্ত শোনার জন্য অন্যান্য মুসলমানের সাথে ইবন উমারও দু’মাতুল জান্দালে উপস্থিত হয়েছিলেন।

হযরত আলীর শাহাদাতের পর তিনি আমীর মুয়াবিয়ার খিলাফত মেনে নেন। তাঁর যুগের বিভিন্ন অভিযানে তিনি শরীক হন। কমস্টান্টিনোপল অভিযানে তিনি যোগদান করেছিলেন।

আমীর মুয়াবিয়ার (রা) পর ইয়াযিদ খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক বিভেদজনিত ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য তাঁর হাতে বাইয়াত করেন। এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যঃ ‘যদি তা ভালো হয়, আমরা খুশী থাকবো, আর যদি তা মন্দ হয়, আমরা ধৈর্য ধারণ করবো।’ কিছুদিন পর মদীনাবাসীরা ইয়াযিদের প্রতি কৃত তাদের বাইয়াত প্রত্যাহার করলে তিনি তাঁর পরিবারের লোকদের ডেকে বলেন, আমি ইয়াযিদের হাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের বাইয়াত করেছি। ……তোমাদের কেউ যেন এ বাইয়াত ভঙ্গ না করে। যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে তরবারিই আমার ও তার মধ্যে ফায়সালা করবে।’ তার মতে এ বাইয়াত ফাসখ বা প্রত্যাহারের অর্থ হল এক ধরনের ধোঁকাবাজী। আর শরীয়াতে ধোঁকাবাজীর কঠোর শাস্তি নির্ধারিত আছে। কোন লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত করেননি।

ইয়াযিদের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় মুয়াবিয়া খলীফা হলেন। মাত্র তিন মাসের জন্য তিনি খিলাফতের দায়িত্ব পরিচালনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর একদিকে মক্কায় আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা) নিজেকে খলীফা বলে ঘোষণা করেন। ইরাক, হিজায ও ইয়ামনের জনগণ তাঁর হাতে বাইয়াত করে। অন্যদিকে মারওয়ান নিজেকে খলীফা দাবী করে সিরিয়াবাসীর বাইয়াত আদায় করেন। তৎকালীন ইসলামী খিলাফতের অধিকাংশ অঞ্চল যদিও আবদুল্লাহ ইবন যুবাইরের সমর্থক ছিল, তবুও আবদুল্লাহ ইবন উমার তার দাবীর প্রতি বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেননি। খিলাফতের দাবী নিয়ে যখন দুই বিবদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, তখন এক ব্যক্তি ইবন উমারকে বললো, আল্লাহ ফিতনা প্রতিরোধের জন্য জিহাদ করতে বলেছে। জবাবে তিনি বলেন, যখন ফিতনা ছিল, আমরা জিহাদ করেছি। কাফিররা মুসলমানদের আল্লাহর ইবাদতের অনুমতি দিত না এই ছিল সে দিনের ফিতনা। আজকের এ গৃহযুদ্ধ জিহাদ নয়, বরং বাদশাহীর জন্য আত্মঘাতী লড়াই। তবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন মক্কায় আবদুল্লাহ ইবন যুবাইরের ওপর আক্রমণ চালায় এবং কা’বার একাংশ ধ্বংস করে ফেলে তখন তিনি ভীষণ বিরক্তি ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

আবদুল মালিকের হাতে যখন খিলাফতের বাইয়াত হলো, ইবন উমারও একটা লিখিত বাইয়াত পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর বাইয়াতের বিষয়বস্তু ছিল এমনঃ ‘আল্লাহ ও রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমি ও আমার পুত্র আমীরুল মুমিনীন আবদুল মালিকের যথাসাধ্য আনুগত্যের অঙ্গীকার করছি।’ আবদুল মালিক ইবন উমারকে খুবই সম্মান করতেন এবং শরীয়াতের নির্দেশ পালনে তাঁকেই অনুসরণ করতেন। হজ্জের সময় আরকানে হজ্জ পালনের ব্যাপারে ইবন উমারকে অনুসরণের নির্দেশ জারি করতেন।

হিজরী ৭৪ সনে ৮৩ অথবা ৮৪ বছর বয়সে তিনি ইনতিকাল করেন। হজ্জের সময় এক ব্যক্তির বিষাক্ত বর্শার ফলা তাঁর পায়ে বিঁধে যায়। এই বিষই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হয়। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, শুধুমাত্র ঘটনাক্রমে এমনটি হয়নি, বরং এর পেছনে হাজ্জাজের ইঙ্গিত ছিল। কারণ, কা’বায় আবদুল্লাহ ইবন যুবাইরের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য ইবন উমার হাজ্জাজের ভীষণ তিরস্কার করেন। এতে হাজ্জাজ ক্ষুব্ধ হন। অতঃপর তাঁরই ইঙ্গিতে একজন শামী সৈনিক তাঁকে এভাবে আহত করে। অবশ্য ইবন হাজার বলেছেন, আবদুলন মালিক হাজ্জাজকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ইবন উমারের সাথে সংঘাতে না যাওয়ার জন্য। হাজ্জাজের কাছে এ নির্দেশ ছিল অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তাই তিনি এই বিকল্প পথে ইবন উমারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেন।

ইবন সা’দ বর্ণনা করেন, একবার হাজ্জাজ খুতবার মধ্যে ইবন যুবাইরের প্রতি দোষারোপ করেন যে, তিনি কালামুল্লাহর বিকৃতি সাধন করেছেন। ইবন উমার সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলে ওঠেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। ইবন যুবাইরের এমন ক্ষমতা নেই এবং এমন অভিযোগ উত্থাপনের তোমারও কোন সুযোগ নেই।’ সাধারণ সমাবেশে এমন কঠোর প্রতিবাদ হাজ্জাজ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু প্রকাশ্যে ইবন উমারের সাথে কোন রকম অসৌজন্যমূ্লক আচরণের সাহসও তাঁর ছিল না। তাই তিনি এমন গোপন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন।

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, একদিন হাজ্জাজ এত দীর্ঘ খুতবা দিলেন যে, আসর নামাযের সময় সংকীর্ণ হয়ে পড়লো। ইবন উমার বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন- ‘সূর্য তোমার প্রতীক্ষা করতে পারে না।’ যাইহোক, বিভিন্ন কারণে স্বৈরাচারী হাজ্জাজ সত্যের সৈনিক ইবন উমারকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই এভাবে তাঁকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

বিষের ক্রিয়ায় ইবন উমার যখন শয্যাশায়ী, তখন হাজ্জাজ তাঁকে দেখতে গেলেন। কুশল বিনিময়ের পর হাজ্জাজ বললেন, অপরাধীকে আমি চিনতে পেলে তার গর্দান নিতাম। ইবন উমার বললেন, সবকিছু তো তুমি করেছো। তারপর বললছো, অপরাধীকে পেলে হত্যা করতে। মুখের ওপর এমন অপ্রিয় সত্য কথা শোনার পর হাজ্জাজ চুপ হয়ে যান।

মদীনা মুনাওয়ারায় জীবনের শেষ নিশ্বাসটি ত্যাগ করার একান্ত ইচ্ছা ছিল হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমারের। তাঁর অবস্থা যখন অবনতির দিকে যেতে লাগলো, তিনি দুআ করতে লাগলেন; হে আল্লাহ, আমাকে মক্কায় মৃত্যুদান করো না। ‘পুত্র সালেমকে অসীয়াত করেন, ‘মক্কায় আমার মৃত্যু হলে মক্কার হারামের বাইরে কোন এক স্থানে আমাকে দাফন করবে। যে যমীন থেকে আমি হিজরত করেছি, সেখানে সমাহিত হওয়া ভালো মনে হচ্ছে না। ‘পুত্র সালেমকে অসীয়াতের অল্প কিছু দিন পর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

মৃত্যুর পর লোকেরা তাঁর অসীয়াত অনুযায়ী হারামের বাইরে লাশ দাফন করতে চায়। কিন্তু হাজ্জাজ তাতে বাধা দেন। তিনি নিজেই জানাযার নামায পড়ান এবং ‘ফাখ’ নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন।

সফর ও ইকামাত বা বাড়ী এবং বাড়ীর বাইরে ভ্রমণে থাকা- সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহর (সা) সাহচর্য, হযরত ফারুক আজমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, আর্বোপরি তাঁর নিজের অনুসন্দিৎসা তাঁকে ইসলামী জ্ঞানের সমুদ্রে পরিণত করেছিল। কুরআন, হাদীস, ফিকাহ ইত্যাদি শাস্ত্রে তিনি ছিলেন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। সেকালে মদীনায় যে সকল মনিষীকে বলা হতো ইলম ও আমলের ‘মাজমাউল বাহারাইন’ বা দুই সমুদ্রের সঙ্গম স্থল, ইবন উমার ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি তাঁর দারুণ আকর্ষণ ছিল। কুরআনের সূরা ও আয়াত সমূহের ওপর গবেষণা করে জীবনের বিরাট এক অংশ ব্যয় করেন। কেবল সূরা বাকারার ওপর গবেষণায় চৌদ্দটি বছর অতিবাহিত হয়। এতে অনুমান করা যায় কুরআন বুঝার জন্য তিনি কি পরিমাণ শ্রম ও সময় ব্যয় করেছেন। কুরআনের প্রতি এই ব্যতিক্রমধর্মী আকর্ষণই তাঁর মধ্যে কুরআনের তাফসীর ও তাবীলের এক অনন্য যোগ্যতা সৃষ্টি করে। কুরআন বুঝার ক্ষমতা যৌবনের সূচনা লগ্নেই তাঁর মধ্যে জম্ম নেয়। এ কারণে বড় বড় সাহাবীদের সাথে রাসূলুল্লাহর (সা) মজলিসে তাঁকে শরীক দেখা যায়।

কুরআনের পর হাদীসের স্থান। ইবন উমার ছিনলেন প্রথম কাতারের হাফেজে হাদীস। তাঁর বর্ণিত হদীসের সংখ্যা ১৬৩০ (এক হাজার ছ’শ তিরিশ)। এর মধ্যে ১৭০ টি মুত্তাফাক আলাইহি অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করেছেন। ৮১টি বুখারী ও ৩১টি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহর (সা) প্রতিটি কথাও কাজ জানার প্রবল আকাংখা তাঁর মধ্যে ছিল।” রাসূলুল্লাহর (সা) সান্নিধ্য থেকে যে সময়টুকু তিনি দূরে থাকতেন তখন যাঁরা তাঁর খিদমতে উপস্থিত থাকতেন তাঁদের কাছ থেকে রাসূলুল্লাহর (সা) সেই সময়ের কথা ও কাজ জেনে নিতেন এবং তা স্মৃতিতে ধরে রাখতেন। তাঁর অজানা নতুন কোন কথা জানতে পেলে সংগে সংগে রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে অথবা প্রথম রাবীর কাছে উপস্থিত হয়ে তার সত্যতা যাচাই করে নিতেন। এই অনুসন্ধিৎসু মন ইবন উমারকে হাদীস শাস্ত্রের এক বিশাল সমুদ্রে পরিণত করে। রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ নিঃসৃত বাণীর প্রতিটি অক্ষর স্মরণ না থাকলে তিনি তা বর্ণনা করতেন না। তাঁর সমসায়িক লোকেরা বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহর (সা) হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কমবেশী হওয়া সম্পর্কে ইবন উমার অপেক্ষা অধিক সতর্ক ব্যক্তি সাহাবীদের মধ্যে আর কেউ নেই।’

হযরত ইবন উমারের মাধ্যমে ইলমে হাদীসের বিস্তর অংশ প্রচারিত হয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর ষাট (৬০) বছরের বেশী সময় জীবিত ছিলেন। এ দীর্ঘ সময় তিনি একাগ্রচিত্তে ইলমে দ্বীনের চর্চা করেছেন। ইবন শিহাব যুহরী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহর (সা) ও তাঁর সাহাবীদের কোন বিষয় ইবন উমারের অজানা ছিল না।’ জ্ঞানের ঐ চর্চা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কোন সরকারী দায়িত্ব তিনি তখনও গ্রহণ করেননি। তাঁর স্থায়ী ‘হালকায়ে দরস’ ছিল মদীনায়। হজ্জের মওসুমে তিনি ফাতওয়া দিতেন। মানুষের বাড়ীতে গিয়েও তিনি হাদীস শুনাতেন।বর্ণিত আছে, একদিন তিনি আবদুল্লাহ ইবন মুতী’র বাড়ীতে যান। আবদুল্লাহ তাঁকে বসতে দিলেন। বসার পর ইবন ‘উমার বললেন, তোমাকে একটি হাদীস শোনানোর জন্য আমি এ সময় তোমার এখানে এসেছি। রাসূল (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে দূরে থাকবে কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় উঠবে যে তাঁর কাছে কোন প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে পৃথক হয়ে মৃত্যুবরণ করলো সে যেন জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো।’

রাসূলুল্লাহর (সা) হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কমবেশী হওয়াকে ভীষণ ভয় পেতেন। এ কারণে খুব কম হাদীস বর্ণনা করতেন। ইমাম শা’বী বলেন, আমি এক বছর যাবত আবদুল্লাহ ইবন ‘উমারের কাছে বসেছি। এর মধ্যে কোন হাদীসই তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেননি। হাদীস বর্ণনা তিনি খারাপ মনে করতেন বা কম বর্ণনা করতেন এমন নয়, বরং জরুরী বলে তিনি মনে করতেন। শব্দের হেরফের পছন্দ করতেন না।

হাদীস বর্ণনায় তাঁর অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের কারণে মুহাদ্দিসদের নিকট তাঁর বর্ণিত হাদীস সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য হয়। ইবন শিহাব যুহরী তো কোন বিষয় ইবন উমারের হাদীস পেলে আর কারো হাদীসের প্রয়োজন মনে করতেন না। হাদীস বর্ণনার সনদের ক্ষেত্রে ‘মালিক ‘আন নাফে’ ‘আন ইবন ‘উমার’- এই সনদটিকে মুহাদ্দিসরা ‘সিলসিলাতুজ জাহাব’ বা সোনালী চেইন নামে অভিহিত করে থাকেন। কারণ, ইবন ‘উমার প্রায় পনেরটি বছর রাসূলুল্লাহর (সা) সুহবতে কাটিয়াছেন। আবু বকর ও উমারের পুরো সময়টা প্রত্যক্ষ করেছেন। উমারের সাহচর্যে প্রায় তিরিশটি বছর অতিবাহিত করেছেন। এই সনদের দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘নাফে’ ইবন উমারের গোলাম। প্রায় তিরিশটি বছর তিনি মনিবের খিদমতে খাটিয়েছেন। সনদের তৃতীয় ব্যক্তি ইমাম মালিক। তিনি তাঁর উস্তাদ না’ফের হালাকায়ে দরসে দশ বারো বছর বসার সুযোগ লাভ করেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়াও ইবন উমার, আবু বকর, ‘উসমান’, আলী, যায়িদ বিন সাবিত, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, বিলাল, সুহাইব, রাফে, আয়িশা ও হাফসার (রা) মত শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের নিকট থেকেও জ্ঞান অর্জন করেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমারের জীবনটি ছিল রাসূলুল্লাহর (সা) জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। হযরত আবু হুজায়ফা বলতেনঃ রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়, কিন্তু ‘উমার ও তাঁর পুত্র আবদুল্লাহর কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ইবন উমারের একান্ত খাদেম নাফে’ তাঁর তাবেঈ ছাত্রদের বলতেন, এ যুগে যদি ইবন উমার বেঁচে থাকতেন, তাহলে রাসূলুল্লাহর (সা) সুন্নাত অনুসরণের ক্ষেত্রে তাঁর কঠোরতা দেখে তোমরা বলতে, লোকটি পাগল’ তিনি প্রায় পঁচাশি বছর জীবিত ছিলেন এবং শৈশবেই রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াত করেছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি বলেছেনঃ ‘রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াতের পর থেকে আমার আজকের এ দিনটি পর্যন্ত তা ভঙ্গ করিনি বা তাতে কোন পরিবর্তন করিনি।’ শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়, রাসূলুল্লাহর (সা) মানবসুলভ কাজ ও অভ্যাসসহ প্রতিটি আচরণের তিনি অনুসরণ করতেন। যেমন, হজ্জের সফরে রাসূল (সা) যেখানে যেখানে রাত্রি যাপন করতেন, পরবর্তীকালে তিনিও একই স্থানে রাত্রি যাপন করতেন। রাসূল (সা) যে সকল স্থানে নামায আদায় করতেন, তিনি সেখানে নামায আদায় করতেন। যে রাস্তা দিয়ে রাসূল (সা) চলতেন তিনিও সেই রাস্তা দিয়ে চলতেন। এমন কি যে সকল স্থানে রাসূল (সা) অজু-গোসল করেছেন তিনিও সেখানে একই কর্ম সম্পাদন করতেন। মোটকথা, রাসূলুল্লাহর (সা) প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি হুবহু অনুসরণ করতেন। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজকে লোকেরা মনে করতো প্রকৃতপক্ষে তা রাসূলুল্লাহর (সা) কথা ও কাজ। যেহেতু লোকে তাঁকে অনুসরণ করতো, তাই ব্যক্তিগত কারণে কোন ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ করতে না পারলে স্পষ্ট করে বলে দিতেন, এটা রাসূলুল্লাহর (সা) কাজ বা আমল নয়। বিশেষ ওজর বশতঃ আমি এমন করেছি। তাতে মানুষের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যেত। হযরত আয়িশা (রা) তাঁর ইত্তেবায়ে সুন্নাত সম্পর্কে বলেছেনঃ ‘ইবন ‘উমারের মত আর কেউ রাসূলুল্লাহর (সা) পদাংক অনুসরণ করেন না।’

তাফাককুহ ফিদ-দ্বীন বা দ্বীন সম্পর্কিত চিন্তা-গবেষণা তাঁর মধ্যে পরিপূর্ণতা দান করেছিল। সারাটি জীবন তাঁর জ্ঞানচর্চা ও ফাতওয়া দিয়েই কাটে। মদীনার প্রখ্যাত মুফতী সাহাবীদের মধ্যে তিনিও একজন। তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিশেষজ্ঞরাও তাঁর কাছে বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান চাইতেন। সাঈদ ইবন জুবাইরের মত শ্রেষ্ঠ তাবেঈও তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান নিতেন। পরবর্তীকালে মালেকী মাজহাব মূলতঃ ইবন উমারের এসব ফাতওয়ার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ইমাম মালিক বলতেন, ইবন উমার দ্বীনের অন্যতম ইমাম। তাঁর ফাতওয়া সংগৃহীত হলে তা বৃহদাকার গ্রন্থে পরিণত হত। ফাতওয়া দেওয়ার ব্যাপারে ভীষণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। হাফেজ ইবন আবদিল বার বলেনঃ ‘ইবন উমার তাঁর ফাতওয়া ও আমল উভয় ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। খুব ভাবনা-চিন্তা করে যেমন কথা বলতেন তেমনি কাজও করতেন ভেবে-চিন্তে।

দ্বীন ইলম ছাড়া তৎকালীন আরবের প্রচলিত জ্ঞান যেমনঃ কবিতা, কুষ্ঠিবিদ্যা, বাগ্মীতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইবন উমারের বিশেষ আগ্রহ ছিল বলে মনে হয় না। এর সাম্ভাব্য কারণ এই যে দ্বীনী ইলম ছাড়া অন্য কোন জ্ঞানের চর্চায় সময় ব্যয় সমীচীন মনে করতেন না।

একথা সত্য যে, সকল সাহাবীর ওপর সার্বিকভাবে রাসূলুল্লাহর (সা) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ছাপ পড়েছিল, তবে ইবন উমারের ওপর পড়েছিল একটু গভীরভাবে। তার প্রতিটি কথা ও আচরণে রাসূলুল্লাহর (সা) স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠতো।

আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের সাহাবীদের প্রশংসায় বলেছেন, ‘ইজা জুকেরাল্লাহু ওয়াজিলাত কুলুবুহুম-তাদের কাছে যখন আল্লাহর কথা বলা হয় তখন তাদের হৃদয় ভয়ে কেঁপে ওঠে। ইবন উমারের মধ্যে এ অবস্থার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল। একবার তাঁর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলো- ফাকায়ফা ইজা জি’না মিন কুল্লি উম্মাতিন শাহীদা-তখন কেমন হবে যখন আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে সাক্ষী উপস্থিত করবো। ইবন উমার এ আয়াতটি শুনে এত কাঁদলেন যে চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে গেল এবং তাঁর আশেপেশে লোকেরাও তাতে প্রভাবিত হলো।

ইবন উমার ছিলেন একজন বড় ধরনের আবেদ ও শবগুজার ব্যক্তি। রাতের সিংহভাগ ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। তাঁর খাদেম নাফে বলেন, তিনি সারা রাত নামায আদায় করতেন। সুবেহ সাদিকের সময় আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, সকাল কি হলো? আমি যদি হাঁ বলতাম, তাহলে আর একটু ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ইসতিগফারে কাটাতেন। আর ‘না’ বললে আবার নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। কুরাআন তিলওয়াতে তিনি এক অপার্থিব স্বাদ অনুভব করতেন। ছোট ছোট ইবাদাতও তিনি ছাড়তেন না। প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন ভাবে অজু করতেন। মসজিদে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে পা ফেলতেন যাতে কদম সংখ্যা বেড়ে যায় এবং সওয়াবও বেশী অর্জিত হয়।

ইবন উমার ছিলেন যুহদ ও তাকওয়ার বাস্তব নমুনা। তিনি ছিলেন তাঁর যুগের অতুলনীয় যাহিদ ও মুত্তাকী। হযরত জাবির (রা) বলতেন, আমাদের মধ্যে ইবন উমার ছাড়া এমন আর কেউ ছিল না যাকে দুনিয়ার চাকচিক্য আকৃষ্ট করেনি। বাল্যকাল থেকেই তাঁর মধ্যে তাকওয়ার ভাবটি গালিব ছিল। রাসুল (সা) তাঁর এই তাকওয়া স্বভাব দেখে বলেছিলেন, ‘রাজুলুস সালেহ- নেককার বান্দা।’

তিনি ছিলেন খুবই দানশীল। সবসময় প্রিয়তম জিনিসটি আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। যে দাস বা দাসীটি তাঁর কাছে ভালো মনে হতো,তাকে আযাদ করে দিতেন। এক বৈঠকে তিনি হাজার দিরহাম বিলিয়ে দিতেন। তিনি এত বেশী দাস-দাসী আযাদ করতেন যে, তাঁর আযাদকৃত দাস-দাসীর সংখ্যা এক হাজারের উর্ধ্বে। একবার খুব সুন্দর একটি উট তার ওপর সোয়ার হয়ে হজ্জে রওয়ানা হলেন। উটটির চলন তাঁর খুবই ভালো লাগলো। হঠাৎ তিনি নেমে পড়লেন এবং পিঠ থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে ফেলে তাকে কুরবানীর পশুর সাথে মিলিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আইউব ইবন ওয়ায়িল আর- রাসিবী বলেন, একদিন ইবন উমারের হাতে চার হাজার দিরহাম ও একটি মখমলের চাদর এলো।পরদিন তিনি ইবন উমারকে দেখলেন বাজার থেকে তাঁর সোয়ারী পশুর জন্য বাকীতে খাদ্য কিনছেন, ইবন ওয়ায়িল তখনই ইবন উমারের বাড়ীতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, গতকালই কি ইবন উমারের হাতে চারহাজার দিরহাম ও একটি মখমলের চাদর আসেনি? তারা বললো, ‘হাঁ’। ইবন ওয়ায়িল বললেন, আজ আমি তাঁকে বাজার থেকে বাকীতে পশুর খাদ্য কিনতে দেখলাম। তারা বললো, সেগুলিতো তিনি রাত পোহানোর আগেই বিলিয়ে দিয়েছেন। তারপর সেই চাদরটি কাঁধে করে বাইরে গেলেন, যখন বাড়ী ফিরলেন, দেখলাম সেটিও নেই। জিজ্ঞেস করলে বললেন, ফকীরকে দান করেছি। একথা শুনে ইবন ওয়ায়িল হাতে তালি দিতে দিতে বাজারের দিকে ছুটলেন এবং একটি উচু স্থানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সম্বোধন করলেনঃ ওহে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! তোমরা দুনিয়া দিয়ে কী করবে? এই যে ইবন উমার, তাঁর হাতে চার হাজার দিরহাম আসলো, আর তিনি সেগুলি বিলিয়ে দিলেন। তারপর সকাল বেলায় ধারে পশু খাদ্য কিনলেন।’

এভাবে তিনি ছিলেন-‘লান তানালুল বিররা হাত্তা তুনফিকু মিম্মা তুহিব্বূন’- তোমরা কখনও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমারা তোমাদের প্রিয় জিনিস ব্যয় করবে –এ আয়াতের বাস্তব তাফসীর। ‘প্রতিবেলা দু’একজন গরীব-মিসকীন সংগে না নিয়ে তিনি আহার করতেন না। প্রায়ই তিনি তাঁর ছেলেদের তিরস্কার করতেন যখন তারা খাবারের জন্য ধনীদের আমন্ত্রণ জানাতো এবং তাদের সাথে ফকীর-মিসকীনকে ডাকতো না। তিনি বলতেন, ‘তোমরা ভরাপেট লোকদের ডেকে আন এবং ক্ষুধার্তদের ছেড়ে আস।’

তিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। কৃষিযোগ্য ভূমিও ছিল। বাইতুল মাল থেকে ভাতাও পেতেন। তবে নিজে খুব অল্পই ভোগ করতেন। সব বিলিয়ে দিতেন। একবার তাঁর এক বন্ধু তাঁকে একটি ভরা পাত্র উপহার দিল। জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? বন্ধুটি বললেন, একটা ওষুধ। ইরাক থেকে আমি আপনার জন্য এনেছি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এর গুণাগুণ কি? বন্ধুটি বললেন, ‘হজম শক্তি বৃদ্ধি করে! অথচ আজ চল্লিশ বছর যাবত আমি পেট ভরে আহারই করিনে।’ তিনি কি কৃপন বা অভাবী ছিলেন? না, ইতিহাস তা বিলে না। রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর পিতা উমার ইবনুল খাত্তাবের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশের জনই এমনটি করেছেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা। প্রিয় নবীব ইনতিকালে তাঁর অন্তরটি ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহর (সা) কথা স্মরণ হলেই ডুকরে কেঁদে উঠতেন। সফর থেকে যখনই মদীনায় ফিরতেন ‘রওজা পাকে’ গিয়ে সালাম পেশ করতেন। রাসূলুল্লাহর (সা) প্রতি ভালোবাসার কারণে তাঁর পরিবার-পরিজনদেরও গভীর ভাবে ভালো বাসতেন। একবার এক ইরাকী বেদুঈন তাঁর কাছে মশা হত্যার কাফফারা জিজ্ঞেস করে। তিনি সাথীদের বললেন, এই লোকটিকে দেখে নাও। সে মশার রক্তের কাফফারা জিজ্ঞেস করছে, অথচ তারাই প্রিয় নবীর কলিজার টুকরো হুসাইনকে শহীদ করেছে। রাসূলের (সা) প্রতি ভালোবাসার কারণে মদীনা শহরকেও তিনি দারুন ভালোবাসতেন। শত দুঃখ-কষ্টেও মদীনা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা কখনও করেননি।

হযরত ইবন উমার (রা) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে এমন সব কাজ থেকে সব সময় বিরত থাকতেন। তিনি ছিলেন সত্য ভাষী। তবে মাঝে মাঝে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতির সম্ভাবনা দেখলে চুপ থাকতেন। একবার হযরত আমীর মুয়াবিয়া (রা) দাবী করলেন খিলাফত লাভের অধিকার আমার থেকে বেশী আর কার কাছে? ইবন উমার একথার জবাব দিত গিয়েও ফিত্না-ফাসাদের ভয়ে দেননি। তিনি চুপ থাকেন। এমনি ভাবে মিনায় খলিফা উসমানের পেছনে চার রাকায়াত নামায আদায় করেন। অথচ তিনি মনে করতেন রাসূলুল্লাহ (সা), আবু বকর ও উমারের সুন্নাত অনূযায়ী সেখানে কসর হওয়া উচিত। আবার একাকী পড়লে দু’রাকায়াতই পড়লেন। বিভেদ সৃষ্টির আশংকায় উসমানের পেছনে চার রাকায়াত পড়েছিলেন। তিনি বলতেন, ‘বিভেদ সৃষ্টি করা খারাপ কাজ।’ তিনি আরো বলতেন, সমগ্র উম্মাতে মুহাম্মদী যদি আমাকে খলীফা বলে মেনে নায় এবং মাত্র দু’ব্যক্তি মানতে অস্বীকার করে তবুও আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো না।

বিভেদ সৃষ্টির ভয়েই তিনি সকল খলীফার হাতে বাইয়াত করেছিলেন। সেই ফিতনা-ফাসাদের যুগে তিনি সব আমীরের পেছনে নামায আদায় করতেন এবং তাদের হাতে যাকাত তুলে দিতেন। তবে এ আনুগত্য দ্বীনের সীমার মধ্যে সীমিত থাকতো। এ কারণে প্রথমে হাজ্জাজের পেছনে নামায আদায় করলেও পরে হাজ্জাজ নামাযে বিলম্ব করতে শুরু করলে তিনি তার পেছনে নামায আদায় ছেড়ে দেন। এমন কি মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে যান।

সত্য কথা বলতে ইবন উমার কখনও ভয় পেতেন না। উমাইয়্যা বংশীয় শাসকদের সামনাসামনি সমালোচনা করতেন। একবার হাজ্জাজ খুতবা দিচ্ছিলেন। ইবন উমার তাঁকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ‘এই লোকটি আল্লাহর দুশমন। সে মক্কার হারামের অবমাননা করেছে, বাইতুল্লাহ ধ্বংস করেছে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হত্যা করেছে।’

আরেকবার হাজ্জাজ খুতবা এত দীর্ঘ করলেন যে, আসর নাময দেরী হয়ে গেল। ইবন উমার চেঁচিয়ে বললেন, নামাযের সময় চলে যাচ্ছে, কথা শেষ কর। এভাবে তিনবার ‘উমার উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, আমি উঠে গেলে, তোমরা কি আমার সাথে যাবে? লোকেরা বললো, ‘হ্যা’। ইবন ‘উমার উঠে গেলেন। হাজ্জাজ তড়িঘড়ি মিম্বর থেকে নেমে নামায পড়ালেন। পরে হাজ্জাজ ইবন উমারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এমনটি করলেন কেন? তিনি জবাব দিলেন, আমরা মসজিদে আসি নামাযের জন্য। নামাযের সময় হয়ে গেলে সাথে সাথে পড়িয়ে দেওয়া উচিত। তারপর যতক্ষণ ইচ্ছা তুমি বকবক করতে পার। তাঁর এই স্পষ্টবাদিতার কারণেই বনী উমাইয়্যার স্বৈরাচারী শাসকরা তাঁকে ভীষণ ভয় পেত।

কোন মানুষের অসম্মান এবং অহেতুক সম্মান হয়, ইসলাম এমন সব কাজ ও বৈশিষ্ট্যকে খতম করে দিয়েছে। ইবন ‘উমার ছিলেন এই ইসলামী সাম্যের বাস্তব দৃষ্টান্ত। এই সাম্যের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে এমন সব আচরণ তিনি মোটেই পসন্দ করতেন না। এ কারণে যেখানে লোকেরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়াত সেখানে তিনি বসতেন না। তিনি তাঁর চাকর-বাকর ও দাস-দাসীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে এই সাম্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাদের আত্মসম্মান বোধ শিক্ষাদিতেন। নিজের সাথে বসিয়ে তাদের আহার করাতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, দাস-দাসীদের আহার ও পোষাকের প্রতি যত্ন না নেওয়া বড় ধরনের পাপ। সালেম বলেন, ইবন উমার জীবনে একবার ছাড়া আর কখনও কোন দাস-দাসীকে বকাঝকা করেননি। একবার তিনি একটি দাসকে কোন কারণে মেরে বসেন। মারার পর এত অনুতপ্ত হন যে, তাকে আযাদ করে দেন।

বিনয় ও নম্রতা তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। নিজের প্রশংসা শুনতে তিনি ভীষণ অপছন্দ করতেন। এক ব্যক্তি তাঁর মুখে মাটি ছুঁড়ে মারলেন। অতঃপর তাঁকে রাসূলুল্লাহর (সা) এ হাদীস- প্রশংসাকারীর মুখে মাটি ছুঁড়ে মারো- শুনিয়ে দিলেন। কোন বাছ-বিচার না করে ছোট বড় সকলকে সালাম করতেন। পথ চলতে কোন ব্যক্তিকে সালাম করতে ভুলে গেলে ফিরে এসে তাকে সালাম করে যেতেন। অত্যন্ত কটু কথা শুনেও হজম করে যেতেন, কোন জবাব দিতেন না। এক ব্যক্তি কটু ভাষায় তাকে গালি দিল। জবাবে তিনি শুধু বললেন, আমি ও আমার ভাই অত্যন্ত উচু বংশের। এতটুকু বলে চুপ থাকলেন।

ইবন উমারের জীবনীতে আমরা দেখতে পাই, তাঁর আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত স্বচ্ছল ছিল। হাজার হাজার দিরহাম একই বৈঠকে ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। কিন্তু তার নিজের ঘরের আসবাবপত্রের মোট মূল্য এক শো দিরহামের বেশী ছিল না। মায়মূন ইবন মাহরান বলছেন, ‘আমি ইবন উমারের ঘরে প্রবেশ করে লেপ, তোষক, বিছানাপত্র ইত্যাদির দাম হিসাব করলাম। সব মিলিয়ে একশো দিরহামের বেশী হলো না।’ তিনি এমনই সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। নিজের কাজ তিনি নিজ হাতে করতেন। নিজের কাজে অন্য কারো সাহায্য গ্রহণ তাঁর মনোপুতঃ ছিল না।

হযরত উমারের যুগে যখন সকল সাহাবীরা ভাতা নির্ধারিত হয়, তখন ইবন উমারের ভাতা নির্ধারিত হয় আড়াই হাজার দিরহাম। পক্ষান্তরে উসামা ইবন যায়িদের ভাতা নির্ধারিত হয় তিন হাজার দিরহাম। ইবন উমার পিতা উমারের (রা) নিকট এ বৈষম্যের প্রতিবাদ করে বলেন, কোন ক্ষেত্রেই যখন আমি তাঁর থেকে এবং আপনি তাঁর পিতা থেকে পেছনে নেই, তখন এই বৈষম্যের কারণ কি? উমার (রা) বলেন, সত্যই বলেছো। তবে রাসূল (সা) তাঁর পিতাকে তোমার পিতা থেকে এবং তাঁকে তোমার থেকে বেশী ভালোবাসতেন। জবাব শুনে ইবন উমার (রা) চুপ হয়ে যান।

তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এ সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে লিখে প্রকাশ করা যাবে না। জনৈক তাবেঈ তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, “আমি যদি কোন ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিতাম যে সে জান্নাতের অধিবাসী, তাহলে অবশ্যই ইবন উমারের জন্য দিতাম।”