নবীজির পিতা ও তাঁর ইন্তেকাল

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ। তাঁর (আব্দুল্লাহর) মাতার নাম ফাতিমা। তিনি ছিলেন আমর বিন আয়েয বিন ইমরান মাখযুম বিন ইয়াকযাহ বিন মুররাহর কন্যা। আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি ছিলেন পিতার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। তাঁর লকব বা উপাধি ছিল যবিহ।

তাঁকে যবিহ বলার পেছনে আছে একটি সুন্দর ও আশ্চর্য ঘটনা। এককালে তাঁর পিতা আব্দুল মুত্তালিবকে স্বপ্নে জমজমের সন্ধান দিয়ে তা খুঁড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন কুরাইশদের তিনি এ কথা জানান এবং তাদের সাহায্য চান; কিন্তু কুরাইশরা তাঁকে কূপ-খননে সঙ্গ দেয়নি এবং তখন শুধুমাত্র পুত্র হারিসকে নিয়ে সেই কাজ তাঁকে করতে হয়েছিলো। তখনই তিনি মানত করেছিলেন, কখনো আল্লাহ যদি তাঁকে অনেকগুলো পুত্রসন্তান দান করেন আর তারা সুস্থ-সবল যুবকে পরিণত হয়, তাহলে তাদের ভেতর থেকে একজনকে তিনি আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করবেন।

আব্দুল মুত্তালিবের প্রার্থিত পুত্রসংখ্যা যখন দশজন হলো এবং তাঁরা সকলেই সুস্থ-সবল যুবকে পরিণত হয়ে আত্মরক্ষা করার যোগ্যতা অর্জন করলেন, তখন আব্দুল মুত্তালিব তাঁদেরকে তাঁর সেই মানত সম্পর্কে অবহিত করেন। তাঁরা সকলেই এ প্রস্তাবে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

কথিত আছে, আব্দুল মুত্তালিব ছেলেদের মধ্যে কাকে কোরবানি করা যায়, এ ব্যাপারে লটারি করলেন। লটারিতে আব্দুল্লাহর নাম উঠলো, অথচ তিনি ছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ মুত্তালিব বললেন, হে আল্লাহ, সে-ই, নাকি একশত উট? অতঃপর আবার আবদুল্লাহ ও একশত উটের মধ্যে লটারি করলে একশত উটের নাম ওঠে। তিনি একশত উট জবাই করেন। এর আগে আরবে একজন ব্যক্তির রক্তের পণ ছিলো দশ উট; এই ঘটনার পর তা একশত সংখ্যায় উন্নীত হয়।

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন যে, আমি দুই যবিহের সন্তান : একজন নবী ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এবং অন্যজন আমার পিতা আব্দুল্লাহ।

আব্দুল মুত্তালিব স্বীয় সন্তান আব্দুল্লাহর বিবাহের জন্য আমিনাকে মনোনীত করেন। তিনি ছিলেন ওয়াহাব বিন আবদে মানাফ বিন যোহরা বিন কিলাবের কন্যা। বংশ-পরম্পরা এবং মর্যাদার দিক দিয়ে তাঁকে কুরাইশ-গোত্রের মধ্যে উন্নত মর্যাদার মহিলা ধরা হতো। তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত বনু যোহরা গোত্রের দলপতি।

আব্দুল্লাহ এবং আমিনার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর আমিনা মক্কায় স্বামীগৃহে আগমন করেন এবং স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু অল্প দিন পরেই আব্দুল মুত্তালিব ব্যবসা উপলক্ষ্যে খেজুর আনয়নের উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহকে মদিনা প্রেরণ করেন।

কোনো কোনো চরিতবিদ বলেন যে, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহ শাম দেশে গমন করেছিলেন। এক কুরাইশ-কাফেলার সঙ্গে মক্কা প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও মদিনায় অবতরণ করেন। সেই অসুস্থতার মধ্যেই সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নাবেগা জাদির বাড়িতে তাঁর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল পঁচিশ।

মৃত্যুকালে তিনি যে সব সহায়-সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন, তা ছিলো : পাঁচটি উট, এক পাল ছাগল এবং একটি হাবশি দাসী, যার নাম ছিলো বরকত ও উপনাম উম্মে আয়মান।


নবীজি