হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে – ফাতাওয়া বিভাগ, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া – ঢাকা (৩য় পর্ব)

উমরার পদ্ধতি

উমরার ফরয দুটি

১। উমরার ইহরাম গ্রহণ। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।
২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।

উমরার ওয়াজিব দুটি

১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।
২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা।

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আমর বলেন, আমরা হযরত উসমান রা.-এর সঙ্গে মক্কায় এসেছি। তাঁকে দেখেছি, তিনি মক্কা থেকে বের হওয়ার আগে ইহরাম খুলতেন না। তিনি শুধু বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করতেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৭৮৬

তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম রাহ. বলেন, যখন কেউ শুধু উমরা করবে তখন সে চাইলে মাথার চুল ছাঁটতেও পারে আবার মুণ্ডাতেও পারে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৭৮৮

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জিঈররানা নামক স্থান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উমরা করেছেন। তাঁরা তাওয়াফকালে ‘রমল’ করেছেন এবং পরিধেয় চাদর (ডান কাঁধ খালি রেখে) বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৭

মাসআলা : উমরার তাওয়াফ ও যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ দুলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রূপ পুরো তাওয়াফে ইজতিবা করা (পরিধেয় চাদর ডান বগলের নিচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা) সুন্নত। তবে এ দু’টি বিষয়-রমল ও ইজতিবা শুধু পুরুষের জন্য সুন্নত।-মানাসিক ১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, হজ্ব ও উমরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাওয়াফ করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন। বাকি চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেন। এরপর দু’ রাকাত নামায পড়তেন। এরপর সাফা-মারওয়া মাঝে সায়ী করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/৪১০

হযরত সফওয়ান তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফকালে ‘ইজতিবা’ করতেন।-মুসনাদে দারেমী হাদীস : ১৯৭৪; জামে তিরমিযী ১/১৭৪

মাসআলা : মহিলাদের জন্য রমল নেই। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাদের জন্য ‘রমল’ করার বিধান নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩১১১ তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম বলেন, মহিলারা মাথার চুল খাটো করবে। তাদের জন্য মাথা মুণ্ডানো ও রমলের বিধান নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩১১৪

মাসআলা : তাওয়াফকালে সীনা বাইতুল্লাহর দিকে করে তাওয়াফ করা যাবে না। এমনকি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সময় কিংবা হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার সময় সীনা বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলে যেখান থেকে ঘুরেছে সেখান থেকেই সীনা ঠিক করে আবার তাওয়াফ শুরু করা জরুরি।-মানাসিক ১৫৩, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৩, রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৪

হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং ডান দিকে চলতে আরম্ভ করলেন। প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করলেন। অবশিষ্ট চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাঁটলেন।-সহীহ মুসলিম ১/৪০০ মাসআলা : সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইব্রাহীমীর পিছনে পড়া ভালো।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন বাইতুল্লাহর চারপাশে সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। এরপর সাফা-মারওয়ার দিকে গেলেন। … -সহীহ বুখারী ১/২২০

মাসআলা : মাকামে ইবরাহীমীর পিছনে পড়া সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে এই দুই রাকাত নামায পড়া যাবে। ইবনে আবী আম্মার বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা.কে তাওয়াফ করতে দেখেছি। তিনি তাওয়াফ শেষে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। তখন তাঁর ও কিবলার মাঝে তাওয়াফকারীরা তাওয়াফরত ছিল।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৬৮

মাসআলা : দু’ রাকাত নামায হেরেমের সীমানার ভিতরে পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তাকে বলেছেন, যখন ফজরের নামায শুরু হবে এবং লোকেরা নামাযরত অবস্থায় থাকবে তখন তুমি উটে আরোহণ করে তাওয়াফ করে নিবে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাই করলেন এবং (দু’ রাকাত) নামায না পড়ে বের হয়ে এলেন।-সহীহ বুখারী ১/২২০

মাসআলা : দু’ রাকাত নামায হরমের বাইরে পড়া মাকরূহ। তবে পড়লে আদায় হয়ে যাবে। দম ওয়াজিব হবে না।-মানাসিক ১৫৫, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ. বলেছেন, তাওয়াফের দু’ রাকাত নামায, ইচ্ছে হলে নিজ ঘরেও আদায় করতে পার।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৬৭

মাসআলা : তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯, মানাসিক ১৫৫, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬

মাসআলা : একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ। নাফে’ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. একত্রে একাধিক তাওয়াফ করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সাত চক্করে (অর্থাৎ এক তাওয়াফের পর) দুই রাকাত নামায পড়া জরুরি। তিনি একত্রে দুই তাওয়াফ করতেন না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ৯০১২ বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ, ছালিম ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, তাঁরা প্রত্যেক তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায আদায় করতেন এবং একাধিক তাওয়াফ একত্রে করতেন না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০২৯

মাসআলা : তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর একাধিক তাওয়াফের নামায একত্রে আদায় করা যাবে।-গুনইয়াতুন নাসিক ১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭হযরত মিছওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ফজরের পর একত্রে তিন তাওয়াফ করতেন এবং সূর্যোদয়ের পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। তিনি আসরের পরও অনুরূপ করতেন। অতঃপর সূর্যাসে-র পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৪২২