হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে – ফাতাওয়া বিভাগ, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া – ঢাকা (৫ম পর্ব)

দ্বিতীয় দিন ৯ যিলহজ্ব

কূফে আরাফা

আজ হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন আদায়ের দিন। ৯ যিলহজ্ব সূর্য ঢলার পর থেকে পরবর্তী রাতের সুবহে সাদিকের মধ্যে কিছু সময় আরাফার ময়দানে উপসি’ত থাকলে এই ফরয আদায় হয়ে যায়।

হযরত আবদুর রহমান ইবনে ইয়া’মার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হজ্ব হল (উকূফে) আরাফা। যে ব্যক্তি আরাফার রাত (অর্থাৎ ৯ তারিখ দিবাগত রাত) পেল তার হজ্ব পূর্ণ হল।’-সুনানে নাসাঈ ২/৩৭ অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আরাফায় রাতের কিছু অংশ অবস’ান করেছে তার হজ্ব পূর্ণ হয়েছে আর যে তা করল না তার হজ্ব হয়নি। অতএব সে উমরা করে ইহরাম থেকে মুক্ত হবে এবং পরবর্তী বছর পুনরায় হজ্ব করবে।-সুনানে দারাকুতনী ২/২৪১

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর আরাফার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৬৫ তবে এ দিন সূর্যাসে-র আগে আরাফায় পৌঁছলে সূর্যাস- পর্যন্ত- আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।-গুনইয়াতুন নাসিক ১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯; আহকামে হজ্ব ৬৩

হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর ক্বসওয়া নামক উটনীতে আরোহণ করে রওনা হয়েছেন এবং বাতনে ওয়াদি অর্থাৎ আরাফায় এসে খুতবা দিয়েছেন। অতঃপর সেখানে সূর্যাস- পর্যন- অবস্থান করেছেন।-সহীহ মুসলিম ১/৩৯৭ আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা

মাসআলা : ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া উত্তম।-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩; গুনইয়াতু নাসিক ১৪৬-১৪৭ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় ফজর নামায আদায় করলেন অতঃপর কিছুক্ষণ অবস’ান করলেন। ইতিমধ্যে সূর্যোদয় হল এবং তিনি আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৭৬৬

উল্লেখ্য, ভিড়ের কারণে বহু লোক ৮ তারিখ রাতেই আরাফায় চলে যায়। মুআল্লিমের গাড়িগুলোও রাত থেকেই হাজী সাহেবদেরকে আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করে। অথচ রাতে চলে গেলে একাধিক সুন্নাতের খেলাফ হয়। যথা : এক. রাতে মিনায় থাকা সুন্নত। তা আদায় হয় না। দুই. ৯ তারিখ ফজর নামায মিনায় পড়া সুন্নত। এটিও ছুটে যায়। তিন. সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া মুস্তাহাব। সেটিও আদায় হয় না। তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করা চাই যেন বাসগুলো অন-ত ফজরের পর ছাড়ে। যদি মানানো সম্ভব না হয় তাহলে বৃদ্ধ ও মহিলারা মাহরামসহ আগে চলে যাবেন। আর সুস’ সবল হাজীগণ মিনায় ফজরের নামায পড়ে আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। মিনায় ফজর পড়ে হেঁটে গেলেও সুন্দরভাবে দুপুরের আগেই আরাফায় পৌঁছানো যায়। গাড়িতে গেলে যানজটের কারণে একটু বিলম্ব হলেও সময়ের ভেতরই আরাফায় পৌঁছানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় একেবারে তাঁবুর নিকটে পৌঁছানো যায় না। কিছুটা আগে নেমে যেতে হয়। তাই মাযূর হাজীগণ রাতেও যেতে পারেন। আর যারা সুস’ সবল পায়ে হেঁটে যেতে অসুবিধা নেই তাদের সূর্যোদয়ের পর রওয়ানা হওয়া উচিত।-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩

হযরত আ’লা ইবনুল মুসাইয়িব রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, মিনায় ফজর নামায পড়ার আগে আরাফার উদ্দেশে রওনা হবে না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৭৭০

আরাফায় পূর্ণ নামায পড়বে

মাসআলা : আরাফায় কসর করবে না, পূর্ণ নামায পড়বে। অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের মতে আরাফার ময়দানে মুকীম হাজীগণ যোহর-আসর পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান-ও তাই। তাই নিজ নিজ তাবুতে পড়লে মুকীম হাজীগণ পূর্ণ নামায পড়বেন, কসর করবেন না।-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৫ গুনইয়াতুন নাসিক ১৫১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/২২৮, ২/৫০৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতহে মক্কার সময় চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাযগুলো দুই রাকাত পড়তেন এবং নামায শেষে শহরবাসীদের উদ্দেশে বলতেন, হে শহরবাসী, তোমরা চার রাকাত পূর্ণ কর, আমরা মুসাফির।-সুনানে আবু দাউদ ১৭৩

যোহর ও আসর একত্রে পড়া

মাসআলা : মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে যোহর ও আসর একত্রে ইমামের পিছনে আদায় করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন সকালে ফজর নামায পড়লেন এবং মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন। আরাফায় পৌঁছে নামিরাতে অবস্থান করলেন। নামিরা হল আরাফার ঐ স্থান যেখানে ইমাম অবস্থান করেন। অতঃপর যখন যোহরের সময় হল তখন দ্রূত নামায আদায় করলেন এবং যোহর ও আসর একত্রে পড়লেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে আরাফার মাওক্বিফের দিকে রওনা হলেন এবং সেখানে উকূফ (অবস্থান) করলেন।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৬৫

মাসআলা : মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হলে জোহরের সময় জোহর এবং আসরের সময় আসরের নামায আদায় করবে। এ অবস্থায় একত্রে পড়লে সময়ের আগে পড়া নামায আদায় হবে না।

বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম রাহ. বলেন, আরাফায় যখন নিজ তাঁবুতে নামায আদায় করবে তখন প্রত্যেক নামায ওয়াক্ত মতো পড়বে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আযান-ইকামত দিবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪২৩৫

উকূফে আরাফার করণীয়

উত্তম হল, কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত- পর্যন্ত- দুআ করা। সহীহ মুসলিম ১/৩৯৮

এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে না পারলে অল্প সময় বসবে। পুনরায় দাঁড়িয়ে দুআ ও মুনাজাতে মগ্ন থাকবে।-আহকামে হজ্ব ৬৫ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে আরোহণ করে মাওক্বিফে এলেন। … অতঃপর সূর্যাস- পর্যন- কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৬২২

সূর্যাস্তে-র পূর্বে আরাফা থেকে বেরিয়ে যাওয়া

অনেকে সূর্যাসে-র আগেই মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। এরূপ হয়ে গেলে কর্তব্য হল পুনরায় আরাফায় ফিরে আসা। অন্যথায় দম দিতে হবে।-মানাসিক ২১০; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬০; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫২

বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাছান রাহ. বলেন, ইমামের পূর্বে যে মুযদালিফায় পৌঁছবে তার উপর দম আসবে। অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বলেন, ইমাম সূর্যাস্তে-র পর আরাফা থেকে রওনা হবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৪১৭ ৯ তারিখ সূর্যাসে-র আগে আরাফায় পৌঁছতে না পারলে কেউ যদি ৯ তারিখ সূর্যাসে-র আগে আরাফার ময়দানে কোনো কারণে পৌঁছতে না পারে তবে সুবহে সাদেক হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য আরাফায় অবস্থান করলেও ফরয আদায় হবে। আর এ কারণে দম বা অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না। তবে যথাসময় আরাফায় পৌছার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।-মানাসিক ২০৫-২০৬; গুনইয়াতুন নাসিক ১৫৯

হযরত আবদুর রহমান ইবনে ইয়া’মার রা. থেকে বর্ণিত, নজদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল। তখন তিনি আরাফায় অবস্থান করছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে এই মর্মে ঘোষণা করতে বললেন যে, হজ্ব হল আরাফা। যে ৮ তারিখ দিবাগত রাতে ফজরের পূর্বে আরাফায় পৌঁছল সে হজ্ব পেল।-জামে তিরমিযী ১/১৭৮

আরাফায় জুমআ

মাসআলা : আরাফার ময়দানে জুমআ পড়া জায়েয নয়। তাই এদিন শুক্রবার হলে হাজীগণ যোহর পড়বেন। কেননা আরাফার দিন শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর নামায পড়েছেন।-মানাসিক ১৯৬ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন যোহরের সময় যোহর-আসর একত্রে পড়েছেন।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৬৫

অন্য হাদীসে আছে, এক ইয়াহুদী হযরত ওমর রা.কে বলল, আমীরুল মু’মিনীন, কুরআনের এমন একটি আয়াত আপনারা তেলাওয়াত করেন, যা আমাদের উপর অবতীর্ণ হলে আমরা সেই দিন ঈদ পালন করতাম। ওমর রা. বললেন, কোন আয়াতটি? সে বলল, ওমর রা. বললেন, আমি জানি, আয়াতটি কোথায় এবং কোন দিন অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর জুমআর দিন আরাফার ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে।-সহীহ মুসলিম ২/৪২০

মাসআলা : আরাফার ময়দানে ‘বাতনে উরানা’ নামক একটি স্থান রয়েছে। মসজিদে নামিরার পশ্চিমের কিছু অংশ এর অন-র্ভুক্ত। এখানে উকূফ গ্রহণযোগ্য নয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পূর্ণ আরাফা উকূফের স্থান তবে তোমরা ‘বতনে উরানা’ থেকে উপরে চলে আসবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪০৬৩ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘বতনে উরানা ব্যতীত পূর্ণ আরাফাই উকূফের স’ান।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪০৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৪

মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা

মাসআলা : আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তে-র পর মাগরিবের নামায না পড়ে মুযদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে। সূর্যাসে-র পর বিলম্ব না করাই শ্রেয়।-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন। পথিমধ্যে এক উপত্যকায় নেমে ইসি-ঞ্জা সারলেন এবং অযু করলেন। আমি বললাম, নামায! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই নামায সামনে রয়েছে। এরপর মুযদালিফায় এসে পূর্ণ অযু করলেন এবং ইকামত দিয়ে মাগরিব নামায আদায় করলেন।-সহীহ বুখারী ১/২২৭

৯ তারিখ দিবাগত রাত্রির মাগরিব ও ইশা

মাসআলা : আজ মাগরিব ও ইশা ইশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় গিয়ে পড়তে হবে। কেউ যদি মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই রাস-ায় মাগরিব-ইশা পড়ে নেয় কিংবা মুযদালিফায় পৌঁছার আগে শুধু মাগরিব পড়ে তবে উভয় ক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছে পুনরায় মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া জরুরি।-মানাসিক ২১৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০, গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৪

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা থেকে রওনা হয়ে মুযদালিফায় পৌঁছলেন। অতঃপর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন।-সহীহ মুসলিম ১/৪১৬

বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ‘মুযদালিফার রাতে নামায শুধু মুযদালিফাতেই।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪২২৪ মাসআলা : মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা এক আযান ও এক ইকামতে পড়া উত্তম। পৃথক পৃথক ইকামতও জায়েয।-মানাসিক ২১৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮

হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর সঙ্গে মুযদালিফায় পৌঁছলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে মাগরিব-ইশা এক ইকামতে আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় আমাদেরকে এভাবে নামায পড়িয়েছেন।’-সহীহ মুসলিম ১

হযরত আবু জা’ফর আল বাক্বির রাহ. বলেন, হযরত আলী রা. ও আবদুল্লাহ রা. প্রত্যেক যে নামায একত্রে পড়া হয় তা ভিন্ন আযান ও ইকামত দ্বারা পড়ার বিষয়ে একমত ছিলেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪২৫১

মাসআলা : ইশার ওয়াক্তের মধ্যে (সুবহে সাদিকের পূর্বে) মুযদালিফায় পৌঁছা সম্ভব না হলে পথিমধ্যে মাগরিব-ইশা পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছার পর ইশার ওয়াক্ত বাকী থাকলে এ দুই নামায পুনরায় পড়তে হবে।-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৮, আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪২, আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০৪, তাতারখানিয়া ২/৪৫৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৪

বিখ্যাত তাবেয়ী তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি মুযদালিফা ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে নামায পড়া মাকরূহ মনে করতেন। তবে প্রয়োজন বশত হলে মাকরূহ মনে করতেন না।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪২৩১

ইশার ওয়াক্তের পূর্বেই মুযদালিফা পৌঁছে গেলে

মাসআলা : যদি কেউ ইশার ওয়াক্তের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছে যায় তবে সে তখন মাগরিব পড়বে না; বরং ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর মাগরিব-ইশা একত্রে আদায় করবে।-মানাসিক ২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৯; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ১৬৪ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামায ইশার ওয়াক্তে আদায় করেছেন।-সহীহ মুসলিম ১/৪১৬; গুনইয়াতন নাসিক ১৬৭; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৮

মাসআলা : মুযদালিফায় দুই নামায একত্রে পড়ার জন্য জামাত শর্ত নয়। একা পড়লেও দুই নামায একত্রে ইশার সময় পড়বে। তবে নিজেরা জামাত করে পড়া ভালো।-মানাসিক ২১৪, গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৩-১৬৪

মাসআলা : কেউ যদি দুই নামাযের মাঝে নফল বা সুন্নত নামায পড়ে কিংবা অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করে যেমন খানা-খাওয়া ইত্যাদি তবে ইশার জন্য ভিন্ন ইকামত দেওয়া উচিত।-মানাসিক ২১৯

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন। পথিমধ্যে এক উপত্যকায় নেমে ইসি-ঞ্জা সারলেন এবং হালকা অযু করলেন। উসামা রা. বলেন, আমি তাঁকে মাগরিব নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এই নামায সামনে। এরপর মুযদালিফায় এসে পূর্ণ অযু করলেন এবং ইকামত দিয়ে মাগরিব নামায আদায় করলেন। অতঃপর প্রত্যেকে নিজ নিজ উট স্বস্থানে বসাল। এরপর ইকামত দিয়ে ইশার নামায আদায় করলেন। এ দুই নামাযের মাঝে অন্য কোনো নামায পড়েননি।-সহীহ বুখারী ১/২২৭ মাসআলা : মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এসে মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করলেন। এরপর সুবহে সাদিক পর্যন- শয্যাগ্রহণ করলেন।-সহীহ মুসলিম ১/৩৯৮