পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র (৫ম পর্ব) – শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

পাহারাদারির মূল্য

আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা আমাদেরকে নামায ও রোযার মত জ্বিহাদের প্রস্তুতি করারও আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন-

وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ

“তোমরা যতটুকু সাধ্য নিক্ষেপণ সামগ্রী ও অশ্বপাল প্রস্তুত করো, যাতে তা দিয়ে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে ভয় দেখাতে পার। ”[আনফালঃ৬০] ।

যুদ্ধের প্রস্তুতি শত্রুদের অন্তরে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে । তারা এ দেখে হীনমন হয়ে যায়। অতঃপর আসে পাহারাদারির ব্যাপার। পাহারাদারির ()অর্থ হচ্ছে তোমরা এমন এক খালি স্থানে দাঁড়াও, যেখানে তুমি আল্লাহর শত্রুদের ভয় করছ এবং আল্লাহর শত্রুরাও তোমাকে ভয় করছে এবং সাথে সাথে আল্লাহর শত্রুদের উপরও হামলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছ। অতএব, যারা এখানে আফগানিস্তানের সীমান্তে ভিতর রয়েছে তারা পাহারাদার() বলে গন্য হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা যেখানে সূর্য উদিত হয় ও যেখানে সূর্য অস্ত গেছে, তা থেকে অনেক উত্তম।”[মুসলিম]।

অর্থাৎ, আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা সানআ ও তাতে যা রয়েছে, তার চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ, আম্মান ও তার ধন সম্পদের চেয়ে উত্তম, কায়রো ও তার ভবন সমূহ থেকে অধিক ভাল এবং রিয়াদ ও তার সম্পদরাজির চেয়ে বেশী দামী। অতএব, ভাই তুমি চার বা পাঁচ হাজার দিরহাম বেতনের যে চাকুরী ছেড়ে এসেছ তার জন্য আক্ষেপ করো না। আল্লাহর কসম ! তা আল্লাহর রাস্তায় এক মুহূর্তেরও সমান হবে না। চাকুরী কী? চাকুরী হচ্ছে কারো কাছে পূর্ণ মাস কাজ করা, যেখানে তুমি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী কর্তৃপক্ষকে অসন্তুষ্ট করে কোন সত্য কথা উচ্চারণ করতে পার না। অতঃপর এক মাস পূর্ণ হলে তোমাকে চার বা পাঁচ হাজার দিরহাম বেতন দিবে এতটুকুই। কিন্তু এখানে-

“আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকাল জ্বিহাদের জন্য গমন করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।”[বুখারী ও মুসলিম]।

আল্লাহর কসম! তার চেয়ে অধিক বঞ্চিত আর কেউ হতে পারে না, যে জ্বিহাদের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ঈমান থেকে বঞ্চিত থাকা। আর ঈমানের পর তার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে জ্বিহাদের স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকা।

মানুষের অন্তরে প্রবিষ্ট ক্ষতিকর রোগ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় রোগ হচ্ছে, তার সম্পদ নষ্ট হতে দেখার পরও তা রক্ষা করতে না যাওয়া। তার সম্পদ, দেশ ও দ্বীন পদদলিত ও অসম্মানিত হতে দেখছে অথচ তার মাঝে কোন ক্রোধ নেই। এ বিপদের চেয়ে ক্ষতিকর বিপদ ভূপৃষ্ঠে আর নেই।

যে মরে শুয়ে আছে সে নয় মৃত

মৃত কেবল সেই যে জীবন থাকতেও মৃত ।

সকল নারীর ইজ্জত আব্রু আমাদেরই ইজ্জত আব্রু। সকল মুসলিম নারীর ইজ্জত-আব্রু এক ও অভিন্ন। কারণ, সকল মুসলিম নারী তোমার বোন, মা অথবা মেয়ে। যদি তোমার চেয়ে বড় হয়, তাহলে তোমার মা, যদি তোমার চেয়ে ছোট হয়, তাহলে তোমার মেয়ে । আর যদি তোমার সমবয়সী হয়, তাহলে তোমার বোন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা-

“সকল মুসলমানের রক্তের মুল্য সমান।”[আবু দাউদ]।

ফিলিস্তিনী বোনের ইজ্জতের মুল্য ইয়ামানী বোনের ইজ্জতের চেয়ে কোন ক্রমেই কম নয় আর সৌদী মুসলিম বোনের ইজ্জত কোন ভাবেই আফগানী মুসলিম বোনের ইজ্জতের চেয়ে অধিক মুল্যবান নয়। যেখানেই হোক না কেন মুসলমানের ইজ্জতের মুল্য সমান। ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেছেন-

কীভাবে স্থির, কীভাবে শান্ত থাকতে পারে মুসলিম-

যখন করে তার বোনকে লাঞ্চিত শত্রু অমুসলিম ।

যারা বলে লাঞ্ছনার ভয়ে ভীত হয়ে এ কঠিন কথা,

‘আক্ষেপ! যদি আমাদের মুখ না দেখত এ ধরা’।

যদি জাহেলী যুগের লোকেরা নিজের প্রতিবেশীর ইজ্জত রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? তারা প্রতিবেশীর ইজ্জত রক্ষার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিত, অথচ তাদের অন্তরে আখিরাতে কিছু পাওয়ার লোভ ছিল না। কেবল আত্মমর্যাদা, নির্ভীকতা ও পৌরুষের কারণেই তারা এসব নির্দ্বিধায় করত। আর তুমিতো আকাশ ও পৃথিবীসম বিশাল জান্নাতের লোভ পোষণ কর। অতএব, তুমি কেন তোমার প্রাণ উৎসর্গ করবে না?

যুদ্ধের আশঙ্কায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার নামই পাহারাদারি। অনেক সময় মানুষ এক বছর পর্যন্ত পাহারাদারি করে অথচ শত্রুরা যুদ্ধ করতে আসে না। পাহারাদারি তথা দীর্ঘ অপেক্ষা সহ্য করা অবশ্যই কঠিন কাজ। ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, অথচ তুমি একটি গুলিও ছোড়ার সুযোগ পাওনি। তবে কখনোই এটা অনর্থক ও মুল্যহীন নয়। তুমি তোমার এ পাহারাদারির সওয়াব কেয়ামতের দিবসে অবশ্যই পাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা ঘরে বসে থাকা সেই হাজার দিনের চেয়ে উত্তম, যেগুলোর দিনে রোযা রাখা হয়েছে ও রাত্রে ইবাদত করা হয়েছে। ”[নাসাঈ ও তিরমি্যী]।

একদিন এক হাজারের সমান। একদিন পাহারাদারি করছ মানে এক হাজার দিন রোযা রাখছ ও এক হাজার রাত ইবাদত করছ। যখন তুমি ময়দানে মালাই ও মোরব্বা দিয়ে সকালের নাস্তা করছ এবং দুপুর ও রাত্রে ভাত, শিম বা অন্য কোন খাবার খাচ্ছ, রোযা রাখনি, খেলা,কৌতুক ও ব্যায়াম বা গুলি ছুড়ে সময় কাটাচ্ছ, তখন তা তোমার মক্কা, জিদ্দা, আম্মান, দেমেশক বা অন্য কোন স্থানে থেকে হাজার দিন রো্যা রাখা ও হাজার রাত ইবাদত করার চেয়ে অনেক উত্তম। এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কী হতে পারে। আর লড়াই-

“লড়াইর কাতারে কিছুক্ষণ দাঁড়ানো ষাট বছর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। ”[হাদিসটি ইমাম হাকিম বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটা ইমাম বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ ]।

আর যদি তুমি পাহারাদারি করা অবস্থায়ও মারা যাও, তাহলে তোমার আমলের সওয়াব বন্ধ হবে না এবং কবরে তোমাকে প্রশ্ন ও আযাব দান করা হবেনা। সহীহ একটি হাদিসে আছে-

“মুহাজিরদের প্রথম দল জান্নাতের দরজায় গিয়ে পৌছাবে। তখন জান্নাত রক্ষীরা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করবে, আপনাদেরকে কি হিসাব নেয়া হয়েছে ? আপনাদের আমল কি পাল্লায় ওজন করা হয়েছে ? আপনারা তো জাহান্নামের উপর দিয়ে সেতু পার হয়ে এসেছেন। তখনকি আপনাদের ভাল ও মন্দ কর্মগুলোর হিসাব দিতে হয়েছে ? তখন তারা বলবে, আমাদের আবার কিসের হিসাব দিতে হবে ? আমরাতো আমাদের কাঁধে তরবারী বহন করেছি এবং লড়াই করেছি এবং এ অবস্থায় আল্লাহর কাছে ফিরে এসেছি। এরপর কি আমাদের আর কিছু অবশিষ্ট আছে, এরপরও কি আমাদের হিসাব নেয়া হবে ? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং অন্যান্য লোকজন জান্নাতে আসার পূর্বে তারা সেখানে চল্লিশ বছর ঘুমাবে।”[তাবরানীঃ হাদিসটি হাসান]।

কাঁধে তরবারী ও ক্লাসিনকভ বহনকারী যেখানে আওয়াজ শুনেছে, সেখানে উড়ে গেছে। হ্যাঁ ! তোমার স্ত্রী ইয়ামানে। কিন্তু জ্বিহাদের ময়দানে তো তার চেয়ে সুন্দর রমনী ()তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। সন্তান, চাকুরী, জমি, দেশ জান্নাতের সামনে এসব কী আবার? আমার তো জান্নাতই বেশী প্রয়োজন। আমি তো জান্নাতেরই খোজ করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, শহীদ কি কবরে জিজ্ঞাসিত হবে? বললেন-“তার মাথার উপর তরবারীর ঝলকানিই তার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।”[আল জামিউসগীরঃহাদীস নং ৪৪৮৩] ।

তোপের মুখোমুখি হওয়ার পরও মুনকার ও নকীরের প্রশ্নোত্তর ? ওটাই যথেষ্ট ! প্রতিটি তোপই মুনকার ও নকীরের প্রশ্নের উত্তর। তার মাথার উপর আসা প্রতিটি তোপ তার কাছে তুচ্ছ প্রমাণিত হয়েছে। লোহার যে গদা দিয়ে মুনকার ও নকীর পিটাবে, সেটাতো তারা দুনিয়াতেই মাথা পেতে নিয়েছে। রণাঙ্গনে একটন ওজনের বোমা তাদের মাথায় পড়েছে। মাথার উপর এসব পড়ার পরও তাদের লোহার গদার মার খেতে হবে?

কোন কোন রণাঙ্গনে আমাদের ভাইয়েরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পর্যন্ত সারতে পারেনি। আকাশ অগ্নিস্ফুলিংগ নিক্ষেপ করছে। যেদিকে সরতে চাচ্ছ সেদিকে মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এসব পাহাড়ের উপর। বোমারু বিমান, তোপ ও বিএম-৪১ প্রভৃতি পতিত হচ্ছে। চতুষ্পার্শের দুনিয়া ও বরফে ঢাকা এ উঁচু পাহাড়্গুলো আমাদের নিয়ে কম্পিত হচ্ছে, রাত-দিন বিকট শব্দ হচ্ছে ও বোমার আওয়াজে উপত্যকা ও তার অলি-গলি কেঁপে উঠছে। এ সবই কবরের প্রশ্নোত্তরের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদার ছাড়া সকল মৃত্যুবরণকারীর কর্ম মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পাহারাদানকারীর কাজ বন্ধ হবে না, কেয়ামত পর্যন্ত তা বর্ধিত হতে থাকবে। আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে পাহারাদারি ও আপনার পথে শহীদ করে মৃত্যু দান করুন।

দুর্ভাগ্যের নিদর্শন

তৃষ্ণার্ত হয়ে নদীতে পৌছে পিপাসিত অবস্থায় ফিরে আসার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর হতে পারেনা। আর এটা অবশ্যই তোমার প্রতি আল্লাহর সুনজর না থাকার প্রমাণ। তোমার দুর্ভাগ্যের নিদর্শন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন কুপমন্ডুক বা নির্বোধ তোমার মাঝে সংশয় ছড়ানোর জন্য নিয়োজিত হওয়া। অনেক সময় সে সরলও হতে পারে বা সরল না হয়ে ইসলাম ও জ্বিহাদ বিদ্বেষীও হতে পারে। তুমি কয়েক বছর চেষ্টার পর কল্যাণ ও সওয়াবের এ জায়গায় এসে তিন বছর কাটানোর পর এ রকম এক জনের কবলে পড়েছ। সে তোমাকে তিন ঘন্টা বুঝিয়ে তোমার বোধ শক্তি নষ্ট করে দেয়। ফলে তুমি তোমার ইচ্ছা ও সংকল্প পাল্টিয়ে দেশে ফিরে গেলে। ভাই এটা দুর্ভাগ্যের নিদর্শন, তোমার প্রতি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অসন্তুষ্টির প্রমাণ।

আল্লাহর কসম ! জ্বিহাদের স্বাদ ও সওয়াব না নিয়ে এবং পাহারাদারি, গুলি ও তীর নিক্ষেপ না করে ফিরে যাওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

“কেউ যদি আল্লাহর রাস্তায় কোন তীর নিক্ষেপ করে, সেটি লক্ষ্যে পৌছুক বা না পৌছুক, বিনিময়ে একটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে”।

জ্বিহাদের প্রস্তুতি, জিহাদের ময়দান ও পাহারাদারির সময় তোমার একটি গুলি ছোঁড়া নামে একটি গোলাম আযাদ করা। এ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। আগের যুগের মুসলমানরা ছেলের মৃত্যু ও জামাআত ছুটে যাওয়ার ব্যাপারে বলত-

শোক প্রকাশ তার তরে নয় যে হারাল প্রিয়জন

শোক প্রকাশ তার জন্যেই যে হারাল প্রতিদান।

হযরত মায়মূন বিন মাহরান বলেন, এক সময় আমার আসরের নামাযের জামাআত ছুটে গিয়েছিল। তখন আমি অপেক্ষা করলাম, যাতে মানুষ আমার জন্য শোক প্রকাশ করে। কিন্তু একজন দু’জন ছাড়া কেউ আমার জন্য শোক প্রকাশ করেনি। কারন, মানুষের কাছে দ্বীনের ক্ষতি দুনিয়ার ক্ষতির চেয়ে হাল্কা। তিনি বলেন, যদি আমার ছেলে মারা যেত, তাহলে হাজার হাজার মানুষ আমার কাছে এসে শোক প্রকাশ করতো। কেননা মানুষের কাছে দুনিয়াবী বিপদ দীনি বিপদের চেয়ে বড়।

হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন কোন বিপদে পড়তেন, তখন বলতেন-

‘বিপদ যদি মহা না হয়, তাহলে এর জন্য আলহামদুলিল্লাহ, বিপদ যদি দ্বীনের ব্যাপারে না হয় তাহলেও আলহামদুলিল্লাহ। আর এ জন্যেও আলহামদুলিল্লাহ যে এর কারণে সওয়াব লেখা হবে।’

অতএব, জিহাদের এ নেয়ামতের জন্য আল্লাহর শোকর আদায় কর। আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ হযরত দাউদ আলাইহিসসালাম-এর বংশধরকে বলেছেন-

اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا

“হে দাউদের বংশধরেরা তোমরা(আল্লাহর)শোকর আদায় কর।”[সূরা সাবা”১৩]।

যখন আল্লাহ্ তোমাকে কোন নেয়ামত দান করবেন, তখন এর জন্য তার একটি ইবাদত বৃদ্ধি কর। কারণ, ইবাদত নেয়ামতকে সংরক্ষন করে। আর আল্লাহর কাছে এ পথে দৃঢ়তা কামনা কর।

বর্তমানে তোমরা যে পথে (জিহাদে) আছ, তার চেয়ে মহান ও কল্যাণকর কোন পথের সন্ধান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আর কাউকে দেননি। আমার কসম করে বলতে ইচ্ছা করে, তবে কসম করছি না যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার চালু করা জ্বিহাদ ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের এ ব্যাবসাভূমিই হচ্ছে সে ভূমি, যেখানে আল্লাহর আউলিয়া পৃথিবীর সকল জায়গা থেকে বেশী এবং পৃথিবীতে যদি আল্লাহর আউলিয়া বলতে কিছু থাকে, তাহলে জ্বিহাদের ময়দানে অবস্থানকারীরাই আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম আউলিয়া। আল্লাহ বলেছেন-

“যে আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দাঁড়িয়ে যাই।”[সহীহুল বুখারীতে বর্ণীত হাদীসে কুদসীর একটি অংশ ]।

এখানে বলা হয়েছে একজন ওলীর সাথে শত্রুতা করার শাস্তি। অতএব, যারা আল্লাহর অনেক ওলীর সাথে শত্রুতা করে, তারা কেমন তা সহজে অনুমেয়। হে আল্লাহ ! আপনিই আমাদেরকে হেফাযত করুন। তার কী অবস্থা হবে, যে এ মহান ও পবিত্র জিহাদে সংশয়ের বীজ বপনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে ? এর চেয়ে বড় বিপদ আর হতে পারে না। ভাইয়েরা ! আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কুফরী ও তার পথ থেকে বিরত রাখার কথা এক সাথে উল্লেখ করেছেন। ‘ফী-সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে) ’ শব্দটি যখন সাধারণ ভাবে আসে, তখন এর অর্থ হয় জ্বিহাদ।আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-

الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ [٤٧:١]

“যারা কুফরী করে ও আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখে, তিনি তাদের কর্মসমূহ নষ্ট করে দেন।”[মুহাম্মদঃ ১]।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মানুষ যুদ্ধে যাবার জন্য তার নিকট হাতিয়ার চাওয়ার জন্য আসত। যখন তিনি বলতেন, তোমাদেরকে দেয়ার জন্য আমার কাছে হাতিয়ার নেই, তখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে না পারার দুঃখে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিতে যেত। তাদেরকে শান্তনা দিয়ে বলা হয়-

لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٩:٩١]

وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ [٩:٩٢]

إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاءُ ۚ رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ [٩:٩٣]

“দুর্বল, রোগী ও সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে অসমর্থ লোকরা যদি আল্লাহ্ ও রাসূলের মঙ্গলকামী হয়, তাহলে তাদের কোন দোষ নেই। এ রকম ভাল লোকদের বিরুদ্ধে যাওয়ারও কোন পথ নেই। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও দয়াময়। আর তাদেরও কোন দোষ নেই, যারা আপনার কাছে যুদ্ধ সামগ্রী চেয়েছে, কিন্তু আপনি তাদের বলেছেন, আমার কাছেতো তোমাদেরকে দেয়ার মত কিছু নেই। ফলে তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য কিছু না পাওয়ার দুঃখে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তবে কেবল তাদেরই বিরুদ্ধে যাওয়ার পথ রয়েছে, যারা সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও আপনার কাছে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি কামনা করে। এরা পশ্চাৎবর্তীদের সাথে থেকে যাওয়াকেই পছন্দ করেছে। আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা (ভাল-মন্দ) আর জানতে পারছে না।”[ সূরা তাওবাহঃ ৯১-৯৩]।

তারা মহিলা ও শিশুদের সাথে থেকে যায়। এটা কত লজ্জার বিষয় !

আমাদের উপরে ফরয করা হয়েছে যুদ্ধ ও লড়া

আর গায়িকাদের কাজ আচল ধরে বসে থাকা।

মাথায় চকচকে ওয়েস্টাল ক্যাপ, গায়ে দামী জ্যাকেট ও পায়ে ঝলমলে জুতা পড়ে গাড়ী নিয়ে প্রতিদিন এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করাই কি তোমার কাজ ? মহিলাদের কাজ করাই কি তোমার মত লোকের কাজ ? এসবের ব্যাপারে অবতীর্ণ অন্য আয়াতগুলো হচ্ছে-

رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ [٩:٨٧]

“তারা পশ্চাদবর্তীদের সাথে বসে থাকাকেই পছন্দ করেছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তাই তারা (ভাল-মন্দ কিছুই) বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। ”[তাওবাহঃ ৮৭]।

وَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِينَ [٩:٨٦]

“যখন এ মর্মে কোন সূরা অবতীর্ণ করা হয় যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন এবং তার রাসূলের সাথে গিয়ে জ্বিহাদ কর, তখন তাদের সম্পদশালীরা আপনার কাছে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি কামনা করে আর বলে আমাদেরকে বাদ দিন, আমরা যারা বসে আছে, তাদের সাথে থেকে যাব।”[তাওবাহঃ৮৬]।

জিহাদে অংশগ্রহণ না করার কারণে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে এ থেকে রক্ষা কামনা করছি। কী অবস্থা ভাই তোমার ? তুমি যে বলছ আমি কোম্পানির ডিরেক্টর, আমি কীভাবে এ সব ছাড়ব, আমি কোথায় যাব ? আমি ছোট ছোট ছেলেদের সাথে ছাদায়* বা আফগানদের সাথে পাহাড়ে গুহায় গিয়ে বসে থাকতে পারব ? ওরাতো কুরআন হাদীস বুঝে না। আমি তো সব কিছু বুঝি। কিন্তু এ বুঝের লোকেরা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজ ছেড়ে দিয়ে বসে আছে, সেটা তাদের খবর নেই। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কেবল এ ফরয কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণেই অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার কথা বলেছেন।

গুহাবাসীরাই সবচেয়ে বড় ফকীহ

এসব লোকদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া মানে আল্লাহ্ এ কথা বলছেন যে, তারা বুঝেও না, জানেও না। অথচ এরপরও কিভাবে তুমি এমন লোকের নিকট জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া তলব করতে যাচ্ছ, যে জ্বিহাদ পরিত্যাগকারী? যখন এসব লোকেরা জ্বিহাদের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণকারী কোন ফতওয়া দেখতে পায়, তখন তারা এ ফতওয়াকে কাটানোর জন্য নিজেদেরকে মুফতী হিসেবে পেশ করে এবং এখান থেকে একটি, ওখান থেকে একটি দলীল এসে প্রচার করে যে, তাদেরই রয়েছে আসল ইলম। আর বলে, অমুক আলিম নয়, অমুক এমন, অমুক তেমন, ওদের কথা শোনা যাবে না ইত্যাদি।

কিন্তু এ ধরণের আলিমরা যখন বাগদাদ বা দেমশকে কোন জটিল ফিকহী বিষয়ের সমাধান দিতে পারত না, তখন তারা বৈঠক করে বলত, বিষয়টি গুহাবাসীর নিকট পাঠিয়ে দাও। কারণ, তারা জানত যে, গুহাবাসী আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী। তাই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁদেরকে সমাধান দেয়ার তাওফীক দিবেন। ফলে গুহাবাসীরা প্রাসাদবাসীদের নিকট সমাধান পাঠাতেন। ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন-

“জ্বিহাদের ব্যাপারে কেবল সেসব সত্যিকারের আলিমদের কাছেই ফতওয়া তলব করতে হবে, যারা দুনিয়াবাসী কী অবস্থায় আছে, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন।”

অর্থাৎ,জিহাদের ব্যাপারে সেই সত্যিকারের আলিমের কাছেই ফতওয়া তলব করবে, যিনি রণাঙ্গনের প্রকৃতি ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। সে সব লোকদের ফতওয়া গ্রহণ করা যাবে না, যারা কেবল কুরআন হাদীসের ইবারত মুখস্ত করেন। আর সে সব আমলদার আলিমদের ফতওয়াও গ্রহণ করা যাবে না, যারা দুনিয়াবাসী কোন অবস্থায় আছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখেন না। জিহাদের ময়দানে অবস্থানকারী সত্যিকারের আলিমের কাছেই জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া তলব করতে হবে। কারণ, যে আলিম জ্বিহাদের ময়দান থেকে দূরে তিনি কীভাবে রণাঙ্গনের গতি-প্রকৃতি বুঝবেন। আম্মানে বসে তুমি একজন আলিমের কাছে জিজ্ঞেস করছ যে,জিহাদ ফরযে আইন নাকি ফরযে কিফায়াহ ? তিনি বলছেন যে, জিহাদ ফরযে কিফায়াহ। কারন, জ্বিহাদের জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন নেই। তিনি হয়তো বলছেন যে, আমি ১৯৮১ সালে হজের সময় মিনায় সাইয়াফকে বলতে শুনেছি, ‘আমাদের অর্থের প্রয়োজন, মানুষের প্রয়োজন নেই।’ ঠিক আছে, কিন্তু দুনিয়াতো আর এক অবস্থায় রয়ে যায়নি। রাত-দিনের পরিবর্তনের সাথে সাথে অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে। তুমি এসে আমরা যারা জ্বিহাদের ময়দানে আছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর জ্বিহাদের ব্যাপারে। রণাঙ্গনের অবস্থা প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় পরিবর্তন হচ্ছে। তুমি ফতওয়া দানকারী যে ভাইয়ের কাছে জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছ, তিনি অবশ্যই বড় মুফতী। তবে বিভ্রান্ত ! আল্লাহ তোমাকে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত না করুন। জিহাদের আজ দশ বছর চলছে। কিন্তু তোমার এ মুফতী সাহেব তার বাৎসারিক ছুটির তিন/চার মাস কাটাতে চলে যায় মিশর কিংবা সুইজারল্যান্ডে। আমেরিকা, ব্রিটেন, সৌদিআরব, কুয়েত ও আবুধাবী-আবু-গাযালে* অনুষ্ঠিত হওয়া কোন সম্মেলনে ও সেমিনারে উপস্থিত না হয়ে তিনি থাকেননি। কিন্তু তিনি একবারের জন্যেও জ্বিহাদ দেখার জন্য তশরিফ আনেননি। আহ ! ভাই তুমি কীভাবে জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া দেয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছ ?

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্ কবূল করুন। আমি আজ সাত বছর ধরে জিহাদের ময়দানে। ছোট বড় অনেক নেতা কর্মী ছাড়াও আফগানিস্তানের অনেক লোকের সাথে এখানে ও দেশের বাইরেও আমি উঠা-বসা করেছি, তাদের সাথে কথা বলেছি। প্রতিদিন তারা এখানে ভিতর থেকে আমাদের নিকট জ্বিহাদের খবর নিয়ে আসে। প্রতিদিন আমরা নতুন নতুন বিজয়ের সংবাদ পাচ্ছি। তুমি কীভাবে এ জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া দিতে স্পর্ধা দেখাচ্ছ। তুমি কোন এতীম ও কোন আহতকে দেখতে আসনি। নিক্সন ও জিমি কার্টার সীমান্ত দেখতে এলেও তোমার পক্ষে এখনো আফগান সীমান্ত দেখার সুযোগ হয়নি।

আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের খৃষ্টান মিশনারী নারী পুরুষকে আফগানিস্তানের অনেক ভিতরে দেখতে পাওয়া যায়। তুমি যদি ঐ সেবাদানকারীদের সম্পর্কে বল যে, আমি আফগানিস্তানে ফ্রান্সের মহিলাদের দেখেছি, তখন তারা বলবে যে, ‘ওরা মিশনারী।’  ভাই ! তুমি তোমার দ্বীনের মিশনারী হতে পার না ? সে তো খৃষ্টান, সেতো কুফর প্রচারের মিশন নিয়ে এতো সব কষ্ট স্বীকার করে এসেছে, এতোসব ভোগান্তি সন্তুষ্টচিত্তে হজম করে নিচ্ছে। জনাব ! আপনি আল্লাহর পথে পেপসি কোলা ব্যাতীত আর কী হজম করেছেন ?

তুমি যদি বল যে, পেশোয়ারে ২২ টি খৃষ্টান সংস্থার অফিস রয়েছে, যারা আফগানিস্তানে কাজ করছে। পেশোয়ার শহরে গিয়ে যদি অবস্থা যাচাই কর, তাহলে বাইরের মুসলিম দেশ সমূহ থেকে আসা লোকদের চেয়ে আমেরিকানদের বেশী দেখা যাবে। তিনি বলবেন, ‘ওরা তো সিআইএ।’  ভাই ! সিআইএ যদি তাদের স্বার্থের জন্য এখানে এসে উপস্থিত হতে পারে, তাহলে তুমি মুসলমান হয়েও কেন ইসলামের সাহায্যের জন্য আসতে পারবে না ?

শয়তানের গোলামরা তাদের পরিকল্পনা নিয়ে এ জ্বিহাদের ফল চুরি করার জন্য আগমন করেছে। তুমি কেন এ পবিত্র জ্বিহাদের সাহায্যের জন্য আসতে পারবে না ? এদেরকে যখন তুমি বলবে যে, পেশোয়ার ও ইসলামাবাদের আমেরিকানরা বিপুল ভাবে গমনাগমন করছে, এমন কোন বিমানের আগমন ঘটে না, যেখানে কোন না কোন আমেরিকান নেই, তখন ভদ্র লোক তোমাকে বলবে, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, এসব সিআইএ ও কেজিবির খেলা ?ভদ্র লোক ঘরে বসে ভাত খেতে খাতে পেটকে অর্ধমিটার উঁচু করে সব বুঝে ফেলেছেন !! এ ভদ্র লোকের পকেট টাকায় ভর্তি আর ভদ্র লোক সব সময় শুধু বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, গাড়ী, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ফুলের বাগান ইত্যাদি নিয়ে চিন্তামগ্ন। এসব নিয়ে তার চিন্তা চেতনা ও কাজ কর্ম সীমাবদ্ধ। এরপরও ভদ্রলোক রাজনৈতিক সমাধান পেশ করে বলে যে, এসব সিআইএ ও কেজিবির স্বার্থের খেলা। আর যদি তুমি ফিলিস্তিনী হও তাহলে বলবে, এসব ফিলিস্তিন সমস্যাকে চাপা দিয়ে রাখার কৌশল। এদের পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে আল্লাহর বানী-

فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ [٢٢:٤٦]

“কেননা চক্ষুসমূহ অন্ধ হয়না, বক্ষের ভিতরের অন্তরগুলোই অন্ধ হয় ।”[হজঃ ৪৬]।

মুজাহিদের যে সব গুন থাকা প্রয়োজন

ভাইয়েরা ! জিহাদ কতিপয় গুণের প্রতি মুখাপেক্ষী। আর তা হচ্ছে, (১) এমন সত্যিকারের সংকল্প, যা মানুষের সমালোচনা, তিরস্কার ও ভৎর্সনা পরোয়া করে না, (২) মুমিনদেরকে ভালবাসা ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া (৩) কাফিরদের প্রতি কঠোর হওয়া এবং (৪) অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ

“হে মুমিনগণ ! তোমাদের যারা স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, তাদের পরিবর্তে আল্লাহ্ এমন এক দলকে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি দয়াপরায়ণ হবে ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদ করবে। আর এ ক্ষেত্রে তারা কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করবে না।”[আল মায়েদাঃ ৫৪]।

কার তিরস্কারের ভয়? আত্মীয়? বন্ধু? পরিবার? পাশের সৎলোক?এদের তিরস্কারের পরোয়া না করা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ। তাই তিনি এরপর বলছেন-

ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]

“ওটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন। আর আল্লাহ্ সবকিছুকে বেষ্টনকারী ও সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।”

তাই আমি সব সময় বলি, বেনজিন গাড়ীতে উঠে ১৫০কি.মি. গতি বেগে গাড়ী চালু করে এদিক-সেদিক না তাকিয়ে চলে এসো। তোমার কোন চিন্তা নেই। কারণ, “তারা কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করে না।”[আল-মায়েদাঃ৫৪]।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরদারি

আমি তোমাদেরকে কসম করে বলতে ইচ্ছা করি এবং এ কথা কসম করে বললে আমার কাফফারা দিতে হবে না যে, আল্লাহর শত্রুরা পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলকে আফগানিস্তানের মত ভয় পায় এবং তারা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের লোককেও আফগান ও তাদের দেশে জ্বিহাদ করতে আসা লোকদের মত আশঙ্কার দৃষ্টিতে দেখে না। তোমরা মনে করছ যে, তোমরা এখানে বসে আছ এবং পৃথিবীর লোকেরা তোমাদের ব্যাপারে বেখবর। কতিপয় বাদে পৃথিবীর সকল মিডিয়া পরিকল্পনা এঁটেছে কীভাবে জ্বিহাদ নির্মূল করা যায়, কীভাবে রণাঙ্গনে এ সকল যুবকদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা যায়? এসব মিডিয়াগুলো রাত-দিন চিন্তায় মশগুল থাকে কীভাবে এ জ্বিহাদ ও তার ধারক-বাহকদের কলুষিত করা যায়? কীভাবে জ্বিহাদ করতে এগিয়ে আসা যুবকদের এ ফরয কাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা যায়? তাই মার্কিনীরা শুরুতে এ ভেবে আনন্দিত ছিল যে, রাশিয়া আফগানিস্তানে পরাভূত হয়ে গেছে। আর পরাভূত হওয়ার এ আঘাত রাশিয়াকে রক্তশূন্য করে ছাড়বে। যেমন গর্বাচেভ সম্প্রতি স্বীকার করেছে যে, আফগানিস্তান রাশিয়ার দেহে প্রবেশ করা সেই ক্যান্সার, যা তাঁকে খেয়ে নিঃশেষ করবে।

ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আমেরিকা এ ভেবে আনন্দিত যে, তারা এ যুদ্ধের মাধ্যমে আফগানদের নিঃশেষ করে দিতে পারবে। আফগানরা পৃথিবীর সবচেয়ে মজবুত মুসলিম জনগোষ্ঠী, তারা কষ্ট ও কঠিনতা সবচেয়ে বেশী সহ্য করতে পারে এবং তারা যুদ্ধে তাদের কঠোরতা ও দৃঢ়তার জন্য খ্যাত। আর ওরা মনে করছে আফগানদের নিঃশেষ করে দেয়ার সাথে সাথে রাশিয়াকেও নিঃশেষ করে দেয়া যাবে। কিন্তু তারা দেখতে পেল যে, এ জ্বিহাদ পুরো মুসলিম উম্মাহকে প্রভাবিত করেছে।

জ্বিহাদ থেকে দুটি বস্তু বিচ্ছুরিত হয়। এক. আগুন । দুই. আলো । আগুন জালিমদেরকে ধবংস করে আর আলো মুমিনদের অন্তরকে আলোকিত করে। তাই আলো ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছে আর আগুন তাদের ঘরের কাছে পৌছে যাচ্ছে। ফলে তারা চিৎকার করে বলছে, প্রতিদিন রাশিয়ার দু’টি করে বিমান ভূপাতিত হচ্ছে, দশটি করে ট্যাংক ধবংস হচ্ছে, পঞ্চাশজন করে সৈন্য নিহত হচ্ছে ইত্যাদি । রুশ ও আফগান কম্যুনিস্টরা নিহত হচ্ছে, পুড়ে মরছে, আহত হচ্ছে ও বন্দী হচ্ছে-আমেরিকার জন্য এটা ভাল। কারন, এতে রাশিয়ার দৈনিক প্রায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার ব্যায় হওয়ার কারণে রাশিয়া গরীব হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার জন্য এটা বিরাট সাফল্য।

আমেরিকা থেকে আমদানি করা গমের টাকা রাশিয়া এখন গাদ্দাফীকে প্রদান করার জন্য বলছে। হ্যা ! গাদ্দাফী আমেরিকাকে গমের মূল্য পরিশোধ করবে। বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র পাবে। দেখুন আমেরিকাকে পর্যন্ত রাশিয়ার নিকট গম বিক্রি করতে হচ্ছে। রাশিয়ার কাছে এখন গম কেনার অর্থও নেই।

রাশিয়া নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এ প্রকট সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমেরিকা দেখতে পেল যে, এ জ্বিহাদ মুমিনদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভরসাকে দৃঢ় করেছে, মুসলিম উম্মাহর অন্তরে নব জীবনের সঞ্চার করেছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে ফিরিয়ে এনেছে। এ জ্বিহাদের ময়দানে তোমাদের আগমন তাদের ভীতি আরো বৃদ্ধি করেছে। আর তারা যে (আরব) জনগোষ্ঠী সমূহকে ভোগ বিলাস ও অর্থ সম্পদে ডুবিয়ে রেখেছে বলে মনে করছে, তাদের একটি বড় অংশ জিহাদ ও ত্যাগের এ ভূমিতে চলে এসেছে। এর ফলে তাদের ভীতি আরো অনেক বেড়ে গেছে।

বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা

আমেরিকা মনে করছিল যে, সে আলজেরিয়া, সৌদিআরব প্রভৃতি দেশগুলোর যুবকদের মৃত বানিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তারা মজাদার খাবার, নারী ও গাড়ী নিয়ে ব্যস্ত। মনে করেছিল তাঁদেরকে সে ধবংস করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ যখন দেখল, ঐ যুবকরাই আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে জান-মাল উৎসর্গ করতে চলে এসেছে, তখন সে নতুনভাবে হিসাব কষতে শুরু করল। চিন্তিত হল, পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে গেল নাকি!! মার্কিনীরা বলল , আমরা তাদের জন্য ব্যংকক খুলে দিয়েছি। কিন্তু আরবরা সেখানে যাচ্ছে না, কারন কি? ব্যাংকককে মার্কিন সৈন্যরা পৃথিবীর যেনার আড্ডা খানা বানিয়েছে । ব্যাংককে তারা মেয়েদের নিয়ে যেনার আড্ডা খানা না খুললে ভিয়েতনামে তাদের এ অবস্থা হতো না। এরা অপরাধী, এরা রক্তপিপাসু। এরা ব্যাংকক, ম্যানিলা প্রভৃতি জায়গায় অপরাধের আড্ডা খানা খুলেছে এবং ওখানে যাওয়ার পথ সহজ করে প্রতিদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ‘ব্যাংকক সফরের জন্য বুকিং করুন’। এরা ভাবল, তারা ব্যাংককে কেন যায় না, কীভাবে তারা দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও মজা ছেড়ে দিয়ে গুহা ও চূড়ার কঠিন জীবন যাপনকে বেছে নিচ্ছে? এর মানে পরিকল্পনায় কোন ভুল রয়ে গেছে। তাই তারা নতুন ভাবে উপলব্ধি করল যে, এ জ্বিহাদের ব্যাপারে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিকল্প নেই। তাই মার্কিন টিভি প্রতিদিন প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, জিহাদের জন্য আমেরিকার বার্ষিক সহায়তা ছয়শ মিলিয়ন ডলার। তাদের দেয়া ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্র বিমান ভূপাতিত করছে। অতএব, ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রই এখন জ্বিহাদের সবকিছু।

এরপর তারা আফগানিস্তানে গিয়ে কতিপয় মাদকসেবীদের একত্রিত করছে। তাঁদেরকে বলছে তোমরা মাদক মুখে দিয়ে যাও এবং রাশিয়ানদের উপর হামলা কর। তারা একে ভিডিও রেকর্ড করে মার্কিন টিভিতে প্রচার করছে এটাই আফগান জিহাদ। দেখাচ্ছে কতিপয় মাদকসেবী ডাকাত তাদের মাদক ক্ষেতকে রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। ঠিক মুজাহিদদের হাতে ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রই একমাত্র মার্কিন অস্ত্র। কিন্তু আমেরিকা এ অস্ত্রের কথা ফলাও করে প্রচার করলেও এ কথা বলতে ভুলে গেছে যে, আমরা প্রতিটি ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রের বিনিময়ে মুসলমানদের কাছ থেকে ৭০ হাজার ডলার আদায় করছি। এ কথা তাদের প্রচার পত্রের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় খুব ছোট করেই টিকা আকারে লেখা হয়েছে।

মার্কিনীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন, যদি তোমাদের কথা মত আফগান জ্বিহাদ কতিপয় মাদকসেবীদের তৎপরতা হত, তাহলে তোমরা তিন বছর ধরে জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার যে প্রস্তাব দিচ্ছ, তারা সেটা কেন মেনে নিচ্ছে না ? এতে করে তো তাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তারা কেন জহির শাহদেরকে প্রত্যাখ্যান করছে ? মুজাহিদ নেতারা তোমাদের আমন্ত্রন সত্ত্বেও কেন তোমাদের সাথে দেখা করছে না ? মুজাহিদ নেতা সাইয়াফ মার্কিনীদের বলেছেন, আমরা জানি তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর শত্রু, মানবতার শত্রু এবং সর্ব নিকৃষ্ট জনগোষ্ঠী। তোমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে পছন্দ কর না। তোমাদের অপছন্দ সত্ত্বেও আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। মার্কিন মুখপাত্র বলল, আমরা ইসলামী রাষ্ট্রকে ভালবাসি তবে ভয় করি। সাইয়াফ তাঁকে বললেন, আমরা আমাদের এক জন প্রভু আছেন, যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীর তাগুত বলেন এবং তিনি তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও অনেক বড়। আমরা তার উপরই ভরসা করি। দেখুন সাইয়াফের আকীদা কী রকম ? এটা কি আশআরীদের আকীদা যে, ‘আকাশে আমাদের একজন প্রভু আছেন ?’

কিছু লোক আছে যারা প্রচার করে যে, সাইয়াফ শিয়া। তার নামা আবদুর রাসূল। টাকার জন্য সৌদিদের সাথে সম্পর্ক করার পর নিজে নাম পরিবর্তন করে আবদুরাব্বির রাসূল রেখেছেন। অসহায় সাইয়াফ !! পশ্চিমারা পর্যন্ত আফফগানদের তার বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার জন্য বলে বেড়াচ্ছে যে সাইয়াফ ওয়াহাবী !!