যারা পুনরূজ্জীবিত করেছেন এই বাণীকে – ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি (রহঃ)

দুটি গল্পের সাথে মুসলিমরা বেশ পরিচিত, যাদের মূল বিষয় একই। এর প্রতি আমাদের গভীর মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।

প্রথম গল্পঃ

মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মায়ের গল্প।

প্রথম উদাহরণঃ

আমরা জানি যে ফিরআউন একটি স্বপ্ন দেখেছিল; স্বপ্নের ব্যাখ্যা ছিল এই যে সে বনী ইসরাঈলের মাঝে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর হাতে তার রাজত্ব হারাতে চলছে। বনী ইসরাঈলরা ছিল ইসরাঈলের অধিবাসীদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী যারা ফিরআউনের জুলুমের শিকার ছিল। এই স্বপ্ন দেখার পর ফিরআউন চিন্তা করলো যে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সে বনী ইসরাঈলের সকল ছেলে শিশুকে জন্মের পরপরই হত্যা করবে এবং মেয়ে শিশুদের দাসী বানাবে। সে একটা আইন জারী করলো যে সেই বছর বনী ইসরাঈলের মাঝে জন্ম নেওয়া সকল ছেলে শিশুকে হত্যা করা হবে এবং মেয়ে শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হবে দাসী বানানোর জন্য।

মুসা আলাইহিস সালামের মা সেই বছর গর্ভবতী হয়েছিলেন। তিনি আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার ইচ্ছায় গর্ভাবস্থার কথা গোপন রাখতে পেরেছিলেন১। গর্ভাবস্থা গোপন রাখা উনার জন্য সহজ ছিল কিন্তু যখন তিনি মুসা (আলাইহিস সালাম) কে জন্ম দিলেন, এটা গোপন রাখা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তিনি সদ্যোজাত শিশুকে লুকিয়ে রাখতে পারছিলেন না। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে একটি সমাধান দেখালেন। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা তাকে বললেন,

“আর মুসা-জননীর প্রতি আমরা নির্দেশ দিলাম, ‘তাকে দুধ পান করাও। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং ভয় করো না, পেরেশানও হয়ো না। আমরা অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের একজন করবো।’ ”

[সূরা কাসাস – ৭]

আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর সুরক্ষার জন্য মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে বললেন সদ্যোজাত শিশুকে নীল নদে ভাসিয়ে দিতে। যদি কেউ নীল নদ না দেখে থাকেন, তবে জেনে রাখুন যে অবশ্যই নীল নদ এরকম নদী না যাতে সদ্যোজাত শিশুদের ভাসিয়ে দেওয়া যায়! নীল নদ একটি অত্যন্ত উত্তাল ও স্রোতস্বিনী নদী; এমনকি শক্তিশালী পুরুষেরাও তাতে সাঁতার কাটতে পারে না, সদ্যোজাত শিশুদের কথা তো বাদই দিলাম যারা নিজেরা কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না যদিওবা তাদেরকে সুরক্ষিত বাক্সে আবদ্ধ করা হয়।

কেন মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা তার সদ্যোজাত শিশুকে নদীতে ভাসিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিলেন? এর উত্তর হলো যেহেতু আল্লাহ তাআলা তাকে দুটি ওয়াদা দিয়েছিলেনঃ

১। মুসা (আলাইহিস সালাম) কে তার কাছে ফেরত দেওয়া হবে, এবং

২। তিনি পরবর্তীতে নবী হবেন।

আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে এই ওয়াদা দিয়েছিলেন। এটা এমনই ওয়াদা যাতে কোন চুক্তি অথবা সাক্ষরের প্রয়োজন ছিল না। এটা ছিল মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা’র অন্তরে প্রদত্ত ভাবনা যাতে তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের আরো অনেক ওয়াদা দিয়েছেন, সেভাবে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন। কিভাবে একজন মা তার বাচ্চাকে নদীতে ভাসিয়ে দিতে পারে যখন সে তার বাচ্চাকে ভীষণ ভালোবাসে এবং নিজের চোখে নদীর অবস্থা দেখেছে? এই ঘটনা আমাদের কাছে কী প্রমাণ করে? এটা প্রমাণ করে আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার প্রতি উনার কী পরিমাণ দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। এটা হলো ঈমান (বিশ্বাস) ও ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস, প্রত্যয়) এর প্রমাণ। তা না হলে তিনি তার বাচ্চাকে ভাসিয়ে দিতে পারতেন না। তিনি তার মাতৃত্বের আবেগকে দমন করলেন এবং তার বাচ্চাকে নীল নদের প্রবল স্রোতে ভেসে যেতে দেখলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবল আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার প্রতি তার অবিচল আস্থা ও নির্ভরতার কারনে।

মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বোনকে বললেন বাক্সকে অনুসরণ করতে (যেটিতে তাঁকে রাখা হয়েছিল) যেটি নীল নদে ভেসে যাচ্ছিল যাতে সেটি কোথায় যায় তা জানা যেতে পারে। সে আশ্চর্য হয়ে দেখলো বাক্সটি ফিরআউনের প্রাসাদের কাছে গিয়ে থামলো। এই ঘটনায় কিছু শিক্ষা আছে যার প্রতি আমাদের গভীর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা মুসাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন যাতে সে ফিরআউন থেকে বেঁচে যেতে পারে অথচ এখন তিনি (আলাইহিস সালাম) ফিরআউনের প্রাসাদের সামনে গিয়েই থামলেন! আল্লাহ তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন যে তিনি (সুবহানাহ ওয়া তাআলা) মুসাকে ফিরআউন হতে রক্ষা করবেন। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি কী ধারণা করা শুরু করবেন? তিনি হয়ত আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ করা শুরু করবেন। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা তার বাচ্চাকে ফিরআউনের এলাকার প্রাণকেন্দ্রে থামিয়েছেন, তিনি হয়ত আল্লাহর পরিবর্তে নিজেই চেষ্টা করবেন তার বাচ্চাকে অত্যাচারী ফিরআউন ও তার বাহিনী থেকে রক্ষা করার। এই পরিস্থিতি ছিল মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মায়ের জন্য একটি পরীক্ষা মাত্র। এটি ছিল একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা যাতে তিনি প্রায় ব্যর্থ হতে যাচ্ছিলেন। তিনি ঈমানের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে যাচ্ছিলেন তা নয়, কিন্তু তিনি তার কাহিনী প্রকাশ করতে যাচ্ছিলেন এবং ফিরআউনকে বলতে চাচ্ছিলেন তার বাচ্চাকে ফিরিয়ে দিতে। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা বলেন যে তিনি সুবহানাহ ওয়া তাআলা তার অন্তরকে দৃঢ় করলেন যাতে তিনি বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। কেন আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এই পরিস্থিতিতে মুসার মা এর হৃদয় মজবুত করলেন? কারন তিনি প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর ওয়াদায় আস্থা রেখেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা বহু পদক্ষেপ নিলেন এবং তাকে দৃঢ়পদ হতে সাহায্য করলেন।

একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেনঃ “যদি তুমি আমার দিকে হেঁটে আসো, আমি তোমার দিকে দৌড়ে যাবো ………”

আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা বলেছেন যে যদি আমরা তাঁর (সুবহানাহ ওয়া তাআলা) দিকে হেঁটে যাই, তিনি আমাদের দিকে দৌড়ে আসবেন। আল্লাহ আমাদের বলছেন শুধু প্রথম পদক্ষেপ নিতে এবং তিনি (সুবহানাহ ওয়া তাআলা) বাকি সব ব্যবস্থা করবেন। যে পথনির্দেশ চায়, আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা তাকে তা দিবেন – কিন্তু প্রথমে ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে পথ খুঁজতে, এরপর আল্লাহর সাহায্য আসবে তা অর্জনে এবং এর উপর অবিচল থাকতে।

যখন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর মা (মারইয়াম) ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে প্রসব করেছিলেন, আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা তাকে কী বলেছিলেন? আল্লাহ তাঁকে বলেছিলেন খেজুর গাছের কান্ড ধরে নাড়া দিতে এবং তাজা খেজুর তার উপর এসে পড়বে। এক মুহূর্তের জন্য আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কী অবস্থায় ছিলেন? তিনি মাত্র প্রসব করেছেন, তাঁর সকল শক্তি হারিয়েছেন, অত্যন্ত পরিশ্রান্ত ছিলেন আর তাঁকে কিনা বলা হচ্ছে একটা বড় খেজুর গাছ ধরে নাড়া দিতে২। একদল পালোয়ানের পক্ষেও পাকা খেজুর পূর্ণ খেজুর গাছকে নাড়ানো কঠিন, আর আল্লাহর সুবহানাহ ওয়া তাআলা মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কে তা করতে বলছেন তিনি প্রসব করার পরপরই। এখান মূলবিষয়টা কী? আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা তাঁকে গাছ নাড়ানোর জন্য খেজুর দিবেন না বরং কারামতের মাধ্যমে দিবেন। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা চেয়েছিলেন মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) তাঁর কাজটি করুন – এমনকি যদি তা হয় ক্ষুদ্র কিছু যেমন খেজুর গাছের কান্ডে হাত রাখা। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা চাননি যে তিনি তাঁর এক ধাপ এগিয়ে আসার কাজটি না করা পর্যন্ত কারামত প্রদর্শন করবেন।

একই বিষয় মুসা (আলাইহিস সালাম) এর ক্ষেত্রেও বলা যায় যখন তিনি সাগর দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা বলেন,

“অতঃপর আমরা মুসার প্রতি ওহী করলাম যে, আপনার লাঠি দ্বারা সাগরে আঘাত করুন। ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মত হয়ে গেলো”

[সূরা শুরাঃ ৬৩]

আপনি একটি লাঠি নিয়ে সাগরে আঘাত করলেন। কী হবে? সাগরের পানি নড়ে উঠবে, দু’ভাগ হয়ে যাবে না। প্রকৃতপক্ষে লাঠি কারামত দেখায় নি বরং দেখিয়েছিলেন আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা চেয়েছিলেন মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর অংশটি করুক – যদিও তা সাগরে লাঠি দিয়ে আঘাত দেওয়াই হোক না কেন।

মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা এর ক্ষেত্রে, তিনি তার অংশটি করেছিলেন। তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন যখন তাকে বলা হলো নদীতে বাচ্চাকে ভাসিয়ে দাও। সেটা ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ, আল্লাহ তাআলা বাকিটুকু সমাধা করেছেন। আল্লাহর সৈন্যরা সর্বত্র।

সেই সময় পৃথিবীর সকল শয়তানির কেন্দ্রে আল্লাহর একজন সৈন্য উপস্থিত ছিল। এই সৈন্য হলেন ফিরআউনের স্ত্রী – আসিয়া (আলাইহিস সালাম)। বাচ্চাকে দেখামাত্র আসিয়া (আলাইহিস সালাম) এর অন্তরে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিল। তিনি বাচ্চাটাকে দত্তক নিতে চাইলেন কারন তাঁর কোন সন্তান ছিল না। তিনি ফিরআউনের কাছে গেলেন এবং তাকে রাজি করালেন যাতে তিনি বাচ্চাটিকে রাখতে পারেন। সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলো, সে জানতো না যে এই বাচ্চাই তার ও তার স্বৈরাচারের অবসান ঘটাবে। মুসা (আলাইহিস সালাম) বুকের দুধ খাচ্ছিলেন না, তিনি ক্ষুধায় মারা যাওয়ার অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বোন যে সবকিছুর খবর রাখছিল, ফিরআউনের প্রাসাদে এলো এবং বললো যে সে এমন একজন মহিলার সন্ধান দিতে পারে যে তাঁকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে। তারা রাজি হলো। মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বোন তাদেরকে তার মায়ের কাছে নিয়ে এলো। যখন মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা তাঁকে কোলে নিলেন, তিনি দুধপান শুরু করলেন। এটা ছিল আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর আরেকটি কারামত।

আসিয়া (আলাইহিস সালাম) মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মাকে কর্মী হিসেবে রাখতে চাচ্ছিলেন। আসিয়া (আলাইহিস সালাম) দেখেছিলেন কিভাবে মুসা (আলাইহিস সালাম) কেবল তার কাছ থেকেই দুধপান করছে এবং তাই মুসা (আলাইহিস সালাম) কে জীবিত রাখার জন্য তাকে রেখে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা বুঝতে পেরেছিলেন এ পরিস্থিতিতে তিনি সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তিনি আসিয়া (আলাইহিস সালাম) কে বললেন যদি তারা চায় যে তিনি তাঁকে দুধপান করাবেন, তাহলে তাকে বাচ্চাটিকে নিজের বাসায় রাখতে দিতে হবে। তিনি এখন শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।

সুবহানাল্লাহ, কিছুক্ষণ আগে যে শিশুকে গোপনে নীলনদে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এখন তাকেই কিনা রাজকীয় প্রহরী পরিবেষ্টিত হয়ে নিজের বাড়ীতে নেওয়া হচ্ছে যাতে তিনি নিজের মা এর কাছ থেকে দুধ পান করতে পারেন! যখন তাঁকে তাঁর বাড়ীতে দুধপান করানো হচ্ছিল, সকল প্রহরীরা চারপাশে অবস্থান করছিল রাজকীয় শিশুকে পাহারা দিতে! ঘটনাটা অন্যভাবে চিন্তা করা যাক, যদি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা আল্লাহর আদেশ সত্ত্বেও মুসা (আলাইহিস সালাম) কে নদীতে ভাসিয়ে না দিতেন, খুব সম্ভবতঃ ফিরআউনের বাহিনী তাঁকে খুঁজে পেত এবং হত্যা করতো। কী মুসা (আলাইহিস সালাম) কে রক্ষা করলো? তাঁর মায়ের ঈমান। এটা ঈমানের মূল্য এবং কিভাবে তা একজন ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে। ঈমান হলো এমন শক্তি যার দ্বারা লোকেরা এমন কাজ করে যা তারা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনই করতো না। লোকেরা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনই তাদের বাচ্চাদের নীল নদে ভাসিয়ে দিত না কিন্তু ঈমানের আলোতে পথ আলোকিত হলো যাতে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা কেবল নিজেকেই রক্ষা করলেন তা নয়, বরং নিজের ছেলেরও জীবন রক্ষা করলেন।

এবার আমাদের পরিস্থিতির সাথে এর তুলনা করি। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের সন্তানদের নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন নি। আল্লাহ আমাদের যা বলেছেন তা আরো অনেক সহজ, তবুও আমরা তা করি না। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের কতগুলো ওয়াদা করেছেন আর আমরা তার কতগুলো পূর্ণ করি? আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা যখন আমাদের জন্য ঈমান আনা ও সৎকর্মের বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন – তখন কিভাবে আমাদের দ্বারা এত গুনাহ সংঘটিত হতে পারে? যখন আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের জন্য চক্ষু অবনমিত রাখার জন্য পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন, তখন কিভাবে আমরা এই ওয়াদায় বিশ্বাস করি না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের চক্ষু অবনমিত রাখার জন্য ঈমানের মিষ্টতার ওয়াদা করেছেন, তাহলে কেন আমরা তাতে বিশ্বাস করি না৩? যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ওয়াদা করেছেন যে সত্য আমাদের শ্রেষ্ঠ গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাবে, কিভাবে আমরা মিথ্যা ও প্রতারণার দ্বারা আমাদের পথকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করি? যখন আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা ওয়াদা করেছেন যে যদি আমরা তাকওয়া অবলম্বন করি, তিনি আমাদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করবেন৪, কিভাবে আমরা অবৈধ পথে রিজিক অন্বেষণের চেষ্টা করি? আমাদের কী হলো, আমরা কি আল্লাহর ওয়াদার প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না? যখন আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে ইসলাম আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নতির পথে পরিচালিত করবে, কিভাবে আমরা আত্মবিশ্বাসী হই না? আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের খুব সামান্যের বিনিময়ে এত কিছুর ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা আমাদের থেকে খুব অল্প চান এবং তিনি আমাদের অনেক দিবেন।

মুসা (আলাইহিস সালাম) এর মা অনেক কিছু দিয়েছিলেন – তিনি জানতেন আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আমাদের আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর উপর তাকওয়া থাকতে হবে – এটাই হলো বাণীর পুনর্জাগরণ।

দ্বিতীয় গল্পঃ

জাদুকরদের কাহিনীঃ

দ্বিতীয় উদাহরণঃ

যখন মুসা (আলাইহিস সালাম) ফিরআউনকে দাওয়াত পৌঁছে দিল, ফিরআউন তাঁকে আহবান জানালো, “তুমি একজন জাদুকর, তুমি একজন গুণীন এবং এটাই চূড়ান্ত। আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জাদুকরেরা আছে যারা তোমাকে আহবান জানাতে পারে।” মুসা (আলাইহিস সালাম) রাজি হলেন এবং বললেন, “মিশরের শ্রেষ্ঠ জাদুকরদের নিয়ে এসো।” তারা ইওয়ামুয-যিনাতে (একটি অনুষ্ঠান যেটিতে মিশরের সমস্ত মানুষ একত্রিত হতো) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সম্মত হলো যাতে এটি দাওয়াহ এর একটি সুবর্ণ সুযোগ হয় কারন সেদিন মিশরের সমস্ত মানুষ সমবেত হবে। মুসা (আলাইহিস সালাম) দিবস নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর বাণীতে দৃঢ়বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি চাচ্ছিলেন যথাসম্ভব সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকের সামনে দাওয়াহ পৌঁছে দিতে। ফিরআউন তার উপদেষ্টাদের পাঠালো মিশরের শ্রেষ্ঠ জাদুকরদের উপস্থিত করতে যারা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বিপক্ষে ইয়াওমুয-যিনাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

ইয়াওমুয-যিনাতে একপক্ষে শ্রেষ্ঠ জাদুকরেরা উপস্থিত হলো এবং অপর পক্ষে মুসা (আলাইহিস সালাম) হারুন (আলাইহিস সালাম) কে নিয়ে উপস্থিত হলেন। তাফসীরে বর্ণিত আছে যে জাদুকরেরা মুসা ও হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এলো, তাদের সংখ্যা ৮০,০০০ – ৭০,০০০ এর মধ্যে। যদি আমরা ৭০,০০০ ধরে নিই, কল্পনা করুন সমগ্র জাতির সম্মুখে ৭০,০০০ জাদুকর সারিবদ্ধভাবে সমবেত হয়েছে এবং তাদের বিপক্ষে কেবল মুসা ও হারুন (আলাইহিমুস সালাম)। এই জাদুকরেরা কেবল জাদুর জন্যই সুপরিচিত ছিল। তারা জাদুবিদ্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল। তারা ফিরআউনের নামে কসম খেয়েছিল এবং তার নাম নিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিল। অপরদিকে, মুসা ও হারুন (আলাইহিমুস সালাম) আল্লাহর নামে কৌশল প্রদর্শন করছিলেন।

যখন বলা হলো কে শুরু করবে, মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন তোমরাই শুরু করো। সুতরাং জাদুকরেরা তাদের দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করলো এবং এরকম মনে হচ্ছিল যে সেগুলো জীবন্ত। কল্পনা করুন, ৭০,০০০ লাঠি নিক্ষেপ করা হয়েছে – সেগুলো এঁকেবেঁকে নড়াচড়া করছে। যদি আল্লাহ তাঁকে অবিচল না রাখতেন, তাহলে ৭০,০০০ দড়ি ও লাঠির নড়াচড়া এবং সমগ্র জাতির দৃষ্টি তাঁকে পিছু হঠতে বাধ্য করতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুসা (আলাইহিস সালাম) এর অন্তরে ভয় ছিল; এর কারন তিনি মানুষ ছাড়া আর কিছু নন, আর এরকম পরিস্থিতিতে ভীত হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। যাই হোক, ভয় ছিল তাঁর অন্তরে এবং তা তাঁর উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। এটা ছিল এক মুহূর্তের ভয় যা তিনি (আলাইহিস সালাম) জয় করতে পেরেছিলেন।

৭০,০০০ লোকের সামনে মুসা (আলাইহিস সালাম) ভীতি দূর করেছিলেন; এর সাথে তুলনা করুন যখন মুসা (আলাইহিস সালাম) আগুনের কাছে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে লাঠি নিক্ষেপ করতে বলেছিলেন। যখন তিনি লাঠি নিক্ষেপ করেছিলেন, সেটি সাপে পরিণত হয়েছিল। এ সময় মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতিক্রিয়া কী ছিল? তিনি পিছনে ফিরে দৌড়াতে শুরু করলেন। কেবল একটি লাঠিতেই তিনি দৌড়াতে শুরু করলেন এবং পিছনে ফিরেন নি – এর সাথে ইয়াওমুয-যিনার ঘটনার তুলনা করুন। এটা ছিল আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর প্রতি ঈমান যা তাঁর (আলাইহিস সালাম) মধ্যে অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছিল।

তৃতীয় উদাহরণঃ

জাদুকরদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল যখন তারা দেখলো মুসা (আলাইহিস সালাম) এর লাঠি তাদের নিক্ষেপ করা সব কিছুকে খেয়ে ফেলছে? তারা সিজদা করেছিল; ফিরআউনের প্রতি না, আল্লাহর প্রতি। যখন ফিরআউন এটা দেখলো, সে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করলো এবং বললো যদি তারা তাদের দ্বীন পরিত্যাগ না করে তবে সে তাদের হত্যা করবে ও ক্রুশবিদ্ধ করবে। সে তাদেরকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল যাতে তারা তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, যাতে তারা ইসলামকে পরিত্যাগ করে। সে বলেছিলঃ

“ফিরআউন বললো, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা মুসার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে! সে তো তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে। কাজেই আমি তো তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটবই এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কান্ডে শূলিবিদ্ধ করবই আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’”

[সূরা ত্বাহাঃ আয়াত ৭১]

কিন্তু যখন জাদুকরেরা এটি ফিরআউনের কাছ থেকে শুনেছিল, এটা তো কেবল তাদের ঈমানই বৃদ্ধি করেছিল। তারা বলেছিল,

“তারা বললো, ‘আমরা ঈমান আনলাম সৃষ্টিকুলের রবের প্রতি।’ ‘মুসা ও হারূনের রব।’”

[সূরা আরাফঃ আয়াত ১২১-১২২]

যখন মুসা (আলাইহিস সালাম) জাদুকরদের আহবান করেছিল, তারা ফিরআউনকে বলেছিল, “যদি আমরা জিতে যাই তবে আপনি আমাদের কী দিবেন? আপনি কি আমাদের টাকা দিবেন?” ফিরআউন বলেছিল, “হ্যাঁ, আমি তোমাদের টাকা দিবো এবং তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবো যাতে তোমরা আমার ঘনিষ্ঠ পরামর্শক হও।” সুতরাং ফিরআউন তাদের সম্পদ ও মর্যাদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যখন জাদুকরেরা ঈমান আনলো, ফিরআউন যে শুধু তাদের বেতন কেটে নেবার হুমকি দিয়েছিল তা নয়, বরং তাদের সব কিছু ছিনিয়ে নেবার হুমকিও দিয়েছিল। অথচ জাদুকরদের উত্তর ছিল, “আমরা পরোয়া করি না, আমাদের সব কিছু নিয়ে নাও। আমাদের প্রার্থনা শুধু এই যে আল্লাহ প্রথম মুমিন হিসেবে আমাদের ক্ষমা করুন।” কী তাদেরকে মন্দ জাদুকর থেকে, যারা অর্থ ও দুনিয়াবী সমৃদ্ধি কামনা করতো, হঠাৎ করে ঈমানদারে রূপান্তরিত করলো যারা আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে রাজি? কী এই পরিবর্তন ঘটালো? এটা হলো ঈমান।

উপরের তিনটি উদাহরণ আপনাদের দেখায় কিভাবে ঈমান লোকদেরকে অত্যন্ত দুর্বল থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে পরিবর্তিত করে, যাতে তারা আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে এবং এটাই সর্বোচ্চ পর্যায় যেখানে একজন মানুষ পৌঁছাতে পারে। তারা এসব ঈমানের শক্তিতে করেছিল। সুতরাং আমি মনে করি সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ যে বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন তা হলো আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর প্রতি আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করা। কিভাবে আমরা তা করবো তা একটি ভিন্ন বিষয়।

ঈমানের মূল বিষয় হলো উদ্যম, একটি বাস্তবমুখী আন্দোলনের চালিকাশক্তি যাতে জমীনে আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর দ্বীনের পুনর্জাগরণ সম্ভব হয়।

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণের জন্য আমাদের সাথে সম্পর্কীয় কিছু বিষয়ঃ

যদি আমরা সাহাবা (রা) দের দিকে তাকাই, যারা ইসলামের পুনর্জাগরণের জন্য আদর্শ প্রজন্ম, আমরা তাদের মাঝে একটা বৈশিষ্ট্য দেখবো যা আজকে অনুপস্থিত – আর তা হলো তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতেন। অনেক লোকেরা বলে সমাধান হলো ঈমান এবং এরপর চুপচাপ বসে থাকে। এর কিছু পূর্বশর্ত বিদ্যমানঃ

১। যদি আমরা একটি পরিকল্পনার অধীনে কাজ না করি, তাহলে আমাদের ঈমান থাকলেও আমাদের কাজ হবে খাপছাড়া। সুতরাং আমাদের প্রয়োজন সুশৃঙ্খল প্রচেষ্টা। একটি পরিকল্পনা থাকতেই হবে। যদি আমরা সাহাবা (রা) দের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখি যে তারা একটি পরিকল্পনার অধীনে কাজ করছিলেন যেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল। তার কিছু উদাহরণঃ

(ক) খাব্বাব বিন আরত (রা) মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসেছিলেন। এটা ছিল এমন সময় যখন মুসলিমরা অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। খাব্বাব বিন আরত (এমন সাহাবী যিনি নির্মম অত্যাচার ভোগ করেছিলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আল্লাহর কাছে আমাদের বিজয়ের জন্য দুআ করবেন না?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোজা হয়ে বসলেন (আপনি উনার চেহারায় রাগ দেখতে পাবেন)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খন্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান’আ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছো।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাব্বাব (রা) কে বলছেন, “আমরা একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করছি এবং আমাদের তদানুযায়ী যেতে হবে। তাড়াহুড়ো করো না; নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কোন পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করো না।”

মাঝে মাঝে আমরা মনে করি যে আমরা কালকের মধ্যে ইসলামিক খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো কিন্তু বাস্তবে ঠিক এরূপ হয় না। এজন্য অনেক আত্মত্যাগের প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাব্বাব (রা) কে শিক্ষা দিচ্ছেন যে পূর্বের জাতিসমূহকে ভয়াবহ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল (যেটি প্রত্যাশিত)। আল্লাহ তাআলাই তাঁর দ্বীনকে বিজয় দান করবেন, তাই আমাদের ইসলামকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই বরং আমাদের নিজেদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। বিভিন্ন কুরআনের আয়াত ও হাদীস রয়েছে যা আমাদের বলে শেষ ফলাফল অবশ্যই আল্লাহর দ্বীনের অনুকূলে হবে। এই বাণীর পুনর্জাগরণে আমাদের ভূমিকা কী, তা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আমরা জানি যে এই বাণী পুনর্জাগরিত হবে এবং আমরা জানি যে যারা এ লক্ষ্যে কাজ করবে তাদেরকে অনেক পুরস্কৃত করা হবে। প্রশ্ন হলো আমরা কি এই পুরস্কার থেকে কোন অংশ লাভ করবো? নাকি আমরা পাশে বসে থাকবো যেমনটি প্রবাদে বর্ণিত আছে, “আমাদের বাবাদের কারনে আজকের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেগুলোকে আমাদের সন্তানরা সমাধান করবে।” ঠিক আব্দুল মুত্তালিবের ঘটনার মতো, যখন আবরাহার বাহিনী কাবা ধ্বংসের জন্য আসছিল, সে আবরাহার সাথে দেখা করতে গেল। আব্দুল মুত্তালিব আবরাহাকে বললো, “আমি চাই যে তুমি আমার উট ফিরিয়ে দিবে।” আবরাহা বললো, “তুমি আমার কাছে তোমার উট চাইতে এসেছো যখন আমি তোমাদের সম্মানের ঘরকে (কাবা) ধ্বংস করতে এসেছি।” আব্দুল মুত্তালিব বললো, “আমি উটের মালিক এবং আমি আমার উটের জিম্মাদার। এটা আল্লাহর ঘর এবং তিনি একে রক্ষা করবেন।”

(খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুজাইফাহ (রা) কে খন্দক যুদ্ধের সময় শত্রুদের মাঝে যেয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, “যাও এবং তথ্য নিয়ে এসো। এর বাইরে আর কিছু করো না। আমি চাই যে তুমি শত্রুদের তথ্য এনে আমাকে অবহিত করবে।” আবু হুজাইফাহ আল ইয়ামান শত্রু ক্যাম্পের মাঝে ঢুকে পড়তে সমর্থ হয়েছিলেন। সেটি ছিলো অন্ধকার ঝড়ো রাত্রি। সেখানে ধুলার ঝড় ছিল তাই লোকেরা একে অন্যকে চিনতে পারছিল না।

তারা সবাই আগুনের পাশে বসেছিল। শত্রুপক্ষের প্রধাণ আবু সুফিয়ান বললো, “সম্ভাবনা আছে যে শত্রুরা আমাদের মাঝে ঢুকে পড়তে পারে। তাই আমি চাই আপনারা সবাই নিশ্চিত করবেন যে আপনারা আপনার পাশের লোকটিকে চিনেন যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে আমাদের মাঝে কোন বহিরাগত নেই।” এটা শোনামাত্রই আবু হুজাইফাহ তাঁর পাশের লোককে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?” (তিনি চাননি যে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হোক, তিনি প্রথমে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন।) আবু হুজাইফাহ বলেন (এই ঘটনার ব্যাপারে), “আমার ও আবু সুফিয়ানের মাঝে কয়েক কদম দূরত্ব ছিল। যদি আমি আমার তলোয়ার হাতে নিতাম, আমি তাকে হত্যা করতে পারতাম। কিন্তু তখন আমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ মনে পড়লো যে খবর সংগ্রহ ছাড়া কিছু না করতে এবং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করলাম।”৮

২। যখন আপনি আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলা এর উপর বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করবেন, একটা আশঙ্কা রয়েছে যে (যদি আপনার সঠিক বুঝ না থাকে): আপনার দৃঢ় বিশ্বাস আপনাকে চরমপন্থার দিকে ধাবিত করবে। এটা সঠিক পথনির্দেশ ছাড়া প্রচুর ঈমান থাকার একটি স্বাভাবিক ফলাফল। এমনকি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ও ছিল কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপঃ

(ক) আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিতঃ

তিন ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসলো। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করলো এবং বললো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকবো। অপর একজন বললো, আমি সব সময় সওম পালন করবো এবং কক্ষনো বাদ দিবো না। অপরজন বললো, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করবো, কখনও বিয়ে করবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।

আলী ইবনে আবী তালিব ও উসমান (রাঃ) মক্কার প্রথমদিকে চিরকুমার থেকে জীবন অতিবাহিত করার অনুমতি চেয়েছিলেন কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে এর অনুমতি দেননি।

আবূ জুহাইফা (রাঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান ও আবূ দারদা এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন স্থাপন করেন। এরপর একদিন সালমান আবূ দারদা এর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তখন তিনি উম্মু দারদা কে নিম্নমানের পোশাকে দেখতে পেলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেনঃ তোমার ভাই আবূ দারদা এর দুনিয়াতে কিছুর দরকার নেই। তিনি বললেনঃ তোমার ভাই আবূ দারদা এর দুনিয়াতে কিছুর দরকার নেই। ইতোমধ্যে আবূ দারদা এলেন। অতঃপর তার জন্য খাবার তৈরি করে তাঁকে বললেন, ‘আপনি খেয়ে নিন, আমি তো সিয়াম পালন করছি।’ তিনি বললেনঃ আপনি যতক্ষণ না খাবেন ততক্ষণ আমিও খাব না। তখন তিনিও খেলেন। তারপর যখন রাত হলো, তখন আবূ দারদা সালাতে দাঁড়ালেন। তখন সালমান তাঁকে বললেনঃ আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার উঠে দাঁড়ালে, তিনি বললেনঃ আরও ঘুমান। অবশেষে যখন রাত শেষ হয়ে এল, তখন সালমান বললেনঃ এখন উঠুন এবং তারা উভয়েই সালাত আদায় করলেন। তারপর সালমান বললেনঃ তোমার উপর তোমার রবের হক আছে, তেমনি তোমার উপর তোমার হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার উপর হক আছে। সুতরাং তুমি প্রত্যেক হকদারের দাবী আদায় করবে। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে, তাঁর কাছে তার কথা উল্লেখ করলেনঃ তিনি বললেন, ‘সালমান ঠিকই বলেছে।’

অপরদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল্লাহ সম্পর্কে বললেন, “সে একজন অসাধারণ বান্দা। যদি সে রাতে আরো সালাত আদায় করতো (তবে আরো ভালো হতো)।” কারন আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) কিয়ামুল লাইল আদায় করছিলেন না। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচ্ছিলেন তাঁকে মধ্যপন্থায় আনতে। আর যারা সালাত আদায়ে চরমপন্থা অবলম্বন করে, তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হয় মধ্যপন্থায় ফিরে আসতে।

ইসলাম হলো তাই আ’মল করা যা তুমি দাওয়াত দাও। একটি হার্ড ড্রাইভ ভর্তি তথ্য কোন কাজে আসবে না যদি না সে তথ্যকে ব্যবহার করা হয়। যদি আমরা সাহাবাদের জীবনীর দিকে তাকাই, আমরা দেখি যে তারা কুরআনের দশটি আয়াত শিখতেন, তা থেকে ঈমান ও ইলম অর্জন করতেন এবং তাঁরা যে দশটি আয়াত মুখস্থ করেছেন তা কাজে না লাগানোর পূর্বে আর সামনে অগ্রসর হতেন না। ইসলামের শিক্ষা অত্যন্ত সহজ। ইসলামের পুনর্জাগরণের জন্য আমাদের খুব জটিল কোন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এটা খুব সহজ শিক্ষা। একটি অশিক্ষিত জাতি ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিল। ইসলামের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া খুবই সহজ ও সাধারণ। যদি আমরা যা জানি তাই আ’মল করতাম তবে তাই যথেষ্ট হতো যেমনটি ইমাম আশ শাফেয়ী (রহ.) বলেন, “যদি লোকেরা সূরাহ আসরের অর্থ বুঝতো এবং তা কাজে লাগাতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো।”

(৩) ইসলামের সামগ্রিক রূপ উপলব্ধি করা – আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে সঠিক বুঝ অর্জনের দিকে।

তিন অন্ধ ব্যক্তির কাহিনী যারা হাতি দেখতে চেয়েছিলোঃ

তিনজন অন্ধ ব্যক্তি ছিল যারা জানতে চেয়েছিলো হাতি দেখতে কিরকম। একজন তাদেরকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে গেলো এবং তারা সবাই খাঁচার কাছে গেলো। যেহেতু তারা দেখতে পেতো না, প্রত্যেকে ঠিক করলো একটি ভিন্ন অংশ স্পর্শ করে হাতি সম্পর্কে ধারনা নিবে। প্রথম অন্ধ হাতির কান ধরলো, দ্বিতীয়জন হাতির পা ধরলো এবং তৃতীয়জন লেজ ধরলো। যখন তারা ফিরে গেলো, লোকেরা জিজ্ঞেস করলো তারা হাতি সম্পর্কে কী জেনেছে? প্রথমজন বললো (যে হাতির কান ধরেছে), “হাতি বড় এবং মসৃন।” বাকি দুজন দ্বিমত পোষণ করলো, “না, এটা ঠিক নয়।” দ্বিতীয়জন বললো, “না, হাতি গাছের কান্ডের মত।” তৃতীয়জন বললো, “তোমরা দুইজনই জানো না যে তোমরা কী নিয়ে কথা বলছো। হাতি একটি লম্বা লেজের মত।”

কেন তাদের তিনজন হাতি সম্পর্কে পৃথক ধারণা অর্জন করেছে? এর কারন তাদের সবাই হাতির বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করেছে। তাদের সবাই সত্য বলছিল, তবুও তারা অন্যকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করছিল কারন তাদের অন্য দিকটা জানা ছিল না। মাঝে মাঝে আমরা মুসলিমরা এটা করে থাকি। আমাদের ইসলাম সম্পর্কে অল্প জ্ঞান থাকে কিন্তু আমরা মনে করি যে আমরা সব জেনে ফেলেছি, “এটাই ইসলাম এবং অন্য সব বাতিল।” আমরা অন্য আরো মতামত জানার চেষ্টা করি না। যখন ইসলামের বিভিন্ন অংশ রয়েছে, তাই আমাদের এই দ্বীনের সবকিছু সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

আমরা মাঝে মাঝে আলোচনা করি কিভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন ধরনের ইবাদাতে (কুরআন অধ্যয়ন, রাতভর সলাত আদায়, নফল সিয়াম ইত্যাদি) লিপ্ত থাকতেন। কিন্তু আমরা কি এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে সাহাবাদের জীবনের একটি পর্যায়ে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই হয় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, অথবা আর্মি জেনারেল অথবা তাদের সম্মুখ সারিতে লড়াইয়ের অভিজ্ঞ ছিলেন? সাহাবাদের যে ছবি আমাদের সামনে রয়েছে যে তারা খানকায় সন্ন্যাসীর ন্যায় জীবন যাপন করতেন, তা সত্য নয়। তারা দুনিয়াতে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিল ইসলামের মূল লক্ষ্য কীঃ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা এবং এর উপর জীবনযাপন করা।

আবদুল্লাহ ইবন উথাইর বলেন, “তাঁরা অতিমানব ছিলেন না, তাঁরা অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতেন এবং তাদের বুঝ ছিল সাধারণ (তবুও তাঁরা যা জানতো তা আ’মল করতো, তাঁরা এর উপরেই জীবন যাপন করেছিল)। এজন্যই তাঁদেরকে নবীদের পর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।”

আমরা প্রার্থনা করি যাতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদের পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করেন।


ফিরআউনের বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার সিদ্ধান্তের বিপরীতে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আল্লাহ যা গোপন রাখতে চান, তা গোপন থাকে এবং আল্লাহ যা প্রকাশ করতে চান তা প্রকাশ পেয়ে যায়।

২   যে খেজুর গাছ ফল দেয় তা অত্যন্ত শক্ত গাছ

আত তাবারানী ও হাকিম আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “দৃষ্টি হলো শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর। যে আল্লাহর জন্য তার দৃষ্টিকে অবনত রাখে, তিনি তাকে এমন মিষ্টতা প্রদান করবেন, যা সে তার হৃদয়ে অনুভব করবে যেদিন সে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে।”

…… আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক……।

সূরা তালাকঃ আয়াত ২-৩

অন্য কথায়, “আমাদের জন্য অনেক হয়েছে। এখন আমরা আল্লাহর কাছ থেকে বিজয় চাই।”

চুলার চিরুনী নয় বরং লোহার চিরুনী যা দিয়ে হাড্ডি থেকে মাংস তুলে নেওয়া হতো।

একজন লোককে দ্বিখন্ডিত করা হতো আর তারা তাদের দ্বীনকে ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানাতো, সুবহানাল্লাহ।

আজকাল আমরা সবাই নিজে যা বুঝি তাই করি