শরয়ী জিহাদ ও অন্যদের লড়াইয়ের মধ্যে পার্থক্য
উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকেই শরয়ী জিহাদ ও অন্যদের যুদ্ধের মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। কেননাঃ
১. অন্যান্য যুদ্ধ তাগুতের পথে পক্ষান্তরে জিহাদ হয় আল্লাহর পথে। আল্লাহর পথে হওয়ার অর্থ কী তা নিম্নোক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে—
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর পথে লড়াইয়ের পরিচয় কী? আমরা তো কেউ ক্রোধান্বিত হয়ে লড়াই করি, কেউ জাত্যাভিমানের বশবর্তী হয়ে লড়াই করি।”
রাসূলুল্লাহ ﷺ তার প্রতি মুখ তুলে তাকালেন অতঃপর বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে সে আল্লাহর পথে।”
[সহীহুল বুখারী ১/২৩, সহীহুল মুসলিম ১/১৪০]
অন্য বর্ণনায় এসেছে—
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ’র ﷺ নিকটে এসে জিজ্ঞেস করল, “এক ব্যক্তি গনীমতের
সম্পদের জন্য লড়াই করে, এক ব্যক্তি খ্যাতির জন্য লড়াই করে এবং এক ব্যক্তি
বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে? রাসূলুল্লাহ ﷺ
বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ
করার জন্য যুদ্ধ করে সে আল্লাহর পথে।”
[সহীহ বুখারী ১/৩৯৪, সহীহ মুসলিম ১/১৩৯]
২. অন্যান্য যুদ্ধ হয় মানুষের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানোর জন্য এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য। পূর্বের ইতিহাস ও আজকের বাস্তবতা এর জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। অপরদিকে জিহাদ হয়ে থাকে ন্যায় ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য। জিহাদ ও মুজাহিদগণের সোনালী ইতিহাস এরই সাক্ষ্য দেয়।
৩. জিহাদের উদ্দেশ্য-যা ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে তা হল—
মানুষকে মুক্ত করা মানুষের দাসত্ব থেকে আল্লাহর দাসত্বের প্রতি, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে এর প্রশস্ততার প্রতি, অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর প্রতি এবং সকল মত ও ধর্মের নিপীড়ন থেকে ইসলামের ইনসাফের প্রতি।
অথচ অন্যান্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যই হল, মানুষের উপর মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, অত্যাচার ও অনাচারের পুঞ্জীভূত অন্ধকারে পৃথিবীকে নিমজ্জিত করা৷
৪. অন্যান্য যুদ্ধের উদ্দেশ্য হল, সাম্রাজ্য বিস্তার করা অপরদিকে জিহাদের উদ্দেশ্য হল, ভূমিকে তার হক্বদারের নিকট প্রত্যার্পণ করা। ভূমির মালিক আল্লাহ তা’আলা। তিনি নেককার মুমিনগণকেই এর হক্বদার সাব্যস্ত করেছেন৷ যারা এতে আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে ইরশাদ হয়েছে—
এবং আমি ‘উপদেশের’ পর যাবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্ম পরায়ণ বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।
এতে ইবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্য পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু রয়েছে।
আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।
[সূরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৫-১০৭]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে—
ফিরআউন সম্প্রদায়ের প্রধাণ বলল, আপনি কি মুসাকে ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাগণকে বর্জন করতে দিবেন? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখবো আর আমরা তো তাদের উপর প্রবল৷
মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বলল, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্যধারণ করো; যমীন তো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী করেন এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বিদের জন্য৷
[সূরা আ’রাফ : আয়াত ১২৭-১২৮]
আরো ইরশাদ হয়েছে—
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব
(খেলাফত) দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব (খেলাফত) দান করেছিলেন তার
পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে
প্রতিষ্ঠিত করবেন যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির
পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন৷ তারা আমার ইবাদত করবে, আমার
কোন শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী।
[সূরা নূর : আয়াত ৫৫]
৫. অন্যান্য যুদ্ধ হল, বিনা উদ্দেশ্যে বা হীন উদ্দেশ্যে নিরপরাধ মানুষের জান-মাল ইজ্জত-আব্রুর উপর আঘাত হানার নাম। পক্ষান্তরে জিহাদে ইসলামী শুধু তাদের সাথেই হয়ে থাকে যারা নিজেদের অপরাধের কারণে হত্যাযোগ্য হয়ে গিয়েছে৷
৬. অন্যান্য যুদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মৃত্যু বিভীষিকার নামান্তর পক্ষান্তরে জিহাদে ইসলামী সমাজকে দান করে নবজীবন, কিসাসযোগ্য ব্যক্তির উপর কিসাস কার্যকর করা সমাজকে নবজীবন দানেরই নামান্তর।
হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ! তোমাদের জন্য কিসাসের মধ্যে রয়েছে জীবন। (সূরা বাক্বারা)
৭. অন্যান্য যুদ্ধ লাগামহীন হত্যাযজ্ঞের নাম, অপরদিকে জিহাদে ইসলামীর জন্য রয়েছে বহু শর্ত, বহু বিধি-নিষেধ এবং নির্ধারিত সীমারেখা। এজন্য জিহাদে ইসলামী কর্মপন্থার দিক দিয়েও অন্যান্য যুদ্ধের চেয়ে ভিন্নতর। কেননা জিহাদে ইসলামীর উদ্দেশ্যই হল পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করা এবং অত্যাচার ও অনাচারের মূলোৎপাটন করা।
মোট কথা শুধু এবং শুধু ইসলামী যুদ্ধকেই ‘জিহাদ’ বলা হয়, যা উদ্দেশ্য ও কর্মপন্থা উভয় দিক দিয়ে অন্যান্য যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি ভিন্নতর। এবং শুধু মুত্তাকী মুমিনই একাজের উপযুক্ত কেননা ইনসাফ ও ইসলাহের ঝান্ডা বহনের অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে এবং একমাত্র তারাই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী। মানব সমাজের নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা এবং মানবতার শিক্ষক হবার গৌরবও শুধু তাঁদেরই প্রাপ্য।
এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় জিহাদের গুরুত্ব, ফাযাইল, তাৎপর্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়৷ আমি এখানে শুধু কয়েকটি ভুল ধারণার অপনোদন করতে চাই, আমাদের অনেক বন্ধুই যার শিকার হয়ে থাকেন।
১. দ্বীন প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই কি ‘জিহাদ’?
কোন কোন বন্ধুকে বলতে শোনা যায় যে, ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা দ্বীনের প্রচার প্রসারের নিমিত্ত যে কোনো কর্ম-প্রচেষ্টাই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। বলা বাহুল্য ‘জিহাদ’ আভিধানিক অর্থে শরীয়ত সম্মত সকল দ্বীনি প্রচেষ্টাকেই বুঝায় এবং শরয়ী নুসূসসমূহের (কুরআন হাদীসের ভাষা) কোথাও কোথাও এই শব্দটি জিহাদ ছাড়া অন্যান্য দ্বীনি মিহনতের ব্যপারেও ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু জিহাদ যা শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা এবং যার অপর নাম ‘ক্বিতাল ফি সাবীলিল্লাহ’ তা কখনো এই সাধারণ কর্ম প্রচেষ্টার নাম নয় বরং এই অর্থে ‘জিহাদ’ হল, “আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য, ইসলামের হিফাজত ও এর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, কুফরের শক্তিকে চুরমার করার জন্য এবং এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে বিলুপ্ত করার জন্য কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা।”
ফিক্বহের কিতাবসমূহে এই জিহাদের বিধি-বিধানই উল্লেখিত হয়েছে। সীরাত গ্রন্থসমূহে এই জিহাদেরই নববী যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে, কুরআন হাদীসে জিহাদের ব্যপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা বলা হয়েছে তা এই জিহাদের ব্যপারেই বলা হয়েছে এবং এই জিহাদে শাহাদাতের মর্যাদায় বিভূষিত ব্যক্তিই হলেন প্রকৃত ‘শহীদ’।
শরয়ী নুসূস এবং শরয়ী পরিভাষাসমূহের উপর নেহায়েত যুল্ম করা হবে যদি আভিধানিক অর্থের অন্যায় সুযোগ নিয়ে পারিভাষিক জিহাদের আহকাম ও ফাযাইল দ্বীনের অন্যান্য মেহনত ও কর্ম প্রচেষ্টার ব্যপারে ব্যপারে আরোপ করা হয়। এটা এক ধরণের অর্থগত বিকৃতি সাধন, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরয। তা’লীম, তাযকিয়া, দাওয়াত ও তাবলীগ, ওয়ায-নসীহত বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে কোন কর্ম প্রচেষ্টা (যদি শরয়ী নীতিমালা ও ইসলামী নির্দেশনা মোতাবেক হয় তবে তা আমর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকারের একটি নতুন পদ্ধতি) এসবই স্ব স্ব স্থানে কাম্য বরং এসব কর্মপ্রচেষ্টার প্রত্যেকটাই খিদমতে দ্বীনের এক একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এসবের ভিন্ন ফাযাইল, ভিন্ন আহকাম এবং ভিন্ন মাসাইল রয়েছে এবং কোনোটিকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই কিন্তু এসবের কোনোটাই এমন নয় যাকে পারিভাষিক জিহাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং যার ব্যপারে জিহাদের ফাযাইল ও আহকাম আরোপ করা যায়। এই বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করা ও মনে রাখা নেহায়েত জরুরি, কেননা আজকাল জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইসলামের বহু পরিভাষার মধ্যে পূর্ণ বা আংশিক তাহরীফের (বিকৃতি সাধন) প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কেউ তাবলীগের কাজকে ‘জিহাদ’ বলে দিচ্ছেন, কেউ তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির কাজকে, আবার কেউ রাজনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা বরং ইলেকশনে অংশগ্রহণ করাকেও জিহাদ বলে দিচ্ছেন। কারো কারো কথা থেকে তো এও বোঝা যায় যে, পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্ধ অনুসরণও জিহাদের শামিল। আল্লাহর পানাহ!
২. জিহাদে আকবর কীসের নাম?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই ঐসব লোকের ভ্রান্তি স্পষ্ট হয়ে গেছে যারা ‘জিহাদ মা’আল কুফফার’ ও ‘ক্বিতাল ফি সাবীলিল্লাহ’র গুরুত্বকে খাটো করার জন্য জিহাদে আকবর (বড় জিহাদ) ও জিহাদে আসগর (ছোট জিহাদ) দর্শন ব্যবহার করেন। তাদের বক্তব্য হল, নফসের (প্রবৃত্তি) বিরুদ্ধে জিহাদই বড় জিহাদ এবং ক্বিতাল ফি সাবীলিল্লাহ হল ছোট জিহাদ!
এই ভুল ধারণার ভ্রান্তি প্রমাণের জন্য আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলার পরিবর্তে হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ ‘আলী থানবী (রহঃ)-এর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা উদ্ধৃত করে দিচ্ছি। হযরত বলেন—
“আজকাল সাধারণভাবে মানুষের ধারণা এই যে, কাফেরদের সাথে লড়াই করা জিহাদে আসগর (ছোট জিহাদ) এবং নফসের মুজাহাদা (কুপ্রবৃত্তির দমন ও আত্মশুদ্ধি) জিহাদে আকবর (বড় জিহাদ)। যেন তারা নিভৃতে নিফসের মুজাহাদায় নিমগ্ন হওয়া থেকে কাফেরদের সাথে লড়াই করাকে সকল ক্ষেত্রেই নিম্নমানের মনে করে।
এই ধারণা ঠিক নয় বরং বাস্তব কথা হল, কাফেরদের সাথে লড়াই করা ইখলাস শূন্য হলে বাস্তবিকপক্ষেই তা নফসের মুজাহাদা থেকে নিম্নস্তরের কাজ৷ এ ধরণের লড়াইকেই জিহাদে আসগর এবং এর বিপরীতে নফসের মুজাহাদাকে জিহাদে আকবর বলা হয়।
কিন্তু কাফেরদের সাথে লড়াই যদি ইখলাসপূর্ণ হয় তবে এই লড়াইকে
জিহাদে আসগর বলা গাইরে মুহাকক্বিক (অগভীর জ্ঞানের অধিকারী) সূফীদের
বাড়াবাড়ি বরং এই লড়াই অবশ্যই জিহাদে আকবর এবং তা নিভৃতে নফসের মুজাহাদায়
নিমগ্ন হওয়া থেকে উত্তম। কেননা যে লড়াই ইখলাসপূর্ণ হবে
তাতে নফসের মুজাহাদাও বিদ্যমান থাকবে। সুতরাং এতে উভয় জিহাদের ফযীলতই
একত্রিত হচ্ছে।
[আল-ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ, খঃ ৪, হিস্সা ৫, পৃঃ ৮২, মালফূয ১০৪১]
৩. জিহাদ কি ইক্বদামী (আক্রমণমূলক) না শুধুই দিফায়ী (প্রতিরোধমূলক)?
এই শেষ যমানার কোন কোন লেখকের রচনা থেকে—যা তারা জিহাদ বিধিবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং জিহাদের তাৎপর্য, উপকারিতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করার জন্য লিখেছেন—এই ধারণা জন্মায় যে, ইসলামে শুধু দিফায়ী (প্রতিরোধমূলক জিহাদ) অনুমোদিত, ইক্বদামী জিহাদের (আক্রমণমূলক জিহাদ)অনুমোদন ইসলামে নেই। তাদের এ জাতীয় কথাবার্তার কারণ হয়তো জিহাদ সম্পর্কীয় কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও খোলাফায়ে রাশিদীনের বরকতময় জীবনচরিত সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা পাশ্চাত্যের অন্যায় আপত্তিসমূহের কারণে ভীত কম্পিত মানসিকতা।
বাস্তবতা হল, জিহাদের মূল উদ্দেশ্য ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ বা ইসলামের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং কুফরের প্রভাব প্রতিপত্তি চুরমার করা। এতদুদ্দেশ্যে ইক্বদামী বা আক্রমণমূলক জিহাদ অনুমোদিতই নয় বরং কখনো কখনো তা ফরয ও প্রভূত সওয়াবের কারণও বটে। কুরআন সুন্নাহর দলীলসমূহের পাশাপাশি পুরো ইসলামী ইতিহাস (রাসূলুল্লাহ ﷺ ও খোলাফায়ে রাশিদীনের যুগ থেকে) এ ধরণের জিহাদের ঘটনায় পরিপূর্ণ। হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তক্বী উসমানী (দাঃবাঃ) এর ভাষায়—
“অমুসলিমদের আপত্তিতে ভীত হয়ে এসব বাস্তব বিষয়কে অস্বীকার করা বা এতে ওযরখাহীমূলক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা একটি অর্থহীন কাজ। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, একজন ব্যক্তিকেও জবরদস্তি করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হয় নাই এবং এর অনুমোদনও শরীয়তে নেই, অন্যথায় জিযইয়ার পুরো ব্যবস্থাপনাই অর্থহীন হয়ে যাবে। হ্যাঁ ইসলামের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই তরবারী ওঠানো হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কুফরের অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতে চায় থাকুক কিন্তু আল্লাহর বানানো এই পৃথিবীতে বিধান আল্লাহরই চলা উচিৎ এবং মুসলমান আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য এবং আল্লাহদ্রোহীদের প্রভাব প্রতিপত্তিকে চুরমার করার জন্যই জিহাদ করে। আমরা এই বাস্তব সত্য প্রকাশ করতে ঐসব লোকের সামনে কেন লজ্জাবনত হব যাদের পুরো ইতিহাস সাম্রাজ্য বিস্তারের উন্মত্ত নেশায় হত্যাযজ্ঞ সংঘটনের ইতিহাস এবং যারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির জাহান্নাম পূর্ণ করার জন্য কোটি কোটি মানুষের প্রাণ সংহার করেছে! যাদের নিক্ষিপ্ত গোলামীর জিঞ্জিরে এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ জাতির দেহ আজও রক্তাক্ত!
[জিহাদ ইক্বদামী ইয়া দিফায়ী? ফিকহী মাকালাত খঃ ৩ পৃঃ ২৮৮-২৮৯, ৩০৩]