কলবী নামায, রূহানী নামায – মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

১৪৩৩ হিজরী ৯ সফর আদীব হুজুর দামাত বারাকাতুহুম মাদরাসাতুল মদীনার তালিবানে ইলমকে খেতাব করেন।


তোমরা নামাযের ইহতিমাম কর। নামায হল আল্লাহর সাথে মিলনের মাধ্যম। নামাযে দাঁড়ালে যদি কলবের মধ্যে কাইফিয়ত পয়দা না হয় তাহলে নামায আর নামায হল না। দেখ, একটা হল, আইনের নামায। আরেকটা হল কলবী নামায। আরেকটা হল রূহানী নামায। প্রথম নামায আমরা সবাই পড়ছি। আইনের ভাষায় এই নামায সম্পর্কে বলা হবে-জাযাত ছালাতুহু, কিন্তু ফেরেশতা বলবে, তোর নামায তোর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলাম। (কারো কারো তো এই দায়সারা নামাযও হয় না। তাড়াহুড়ো করে অযু করে। অযুর অঙ্গগুলি পুরোপুরি ধোয়া হয় না। এই নামায সম্পর্কে আইনও বলবে-মা জাযাত ছালাতুহু।) কলবী নামায হলে ফেরেশতারা এই কথা বলে না। বরং নামায মুসল্লীকে দুআ দিয়ে ফেরেশতাদের সাথে আসমানে চলে যায়।

প্রথম প্রকারের নামায দ্বারা মানুষ শুধু ফরযের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়। কিন্তু খুশু-খুযুবিহীন এই নামায কঙ্কালসার দেহের মতো। যা বিছানায় পড়ে থাকে। নিজে নড়তে পারে না। পাশ ফিরিয়ে দিতে হয়। মেডিক্যালের ভাষায় সে যিন্দা। কিন্তু জীবনের ভাষায় সে যিন্দা নয়। বরং মৃতের চেয়েও অধম। যদি কলবকে হাযির রেখে, আল্লাহ তাআলাকে চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছি এই অনুভূতি নিয়ে নামায পড়তে পারি তাহলে কলবী নামায হবে।

এই নামায মুসল্লীকে দুআ দিয়ে আসমানের দিকে যাবে। কিন্তু এই নামাযের চেয়ে উঁচু স্তরের নামায হল রূহানী নামায। এটা মূলত কলবী নামাযেরই উঁচু স্তর। এই নামাযে নামাযের কিয়াম, কিরাত, রুকু-সিজদা, দুআ ও তাসবীহতে এক কথায় নামাযের সকল রোকন ও সকল কাজে নামাযীর আত্মা-রূহ শান্তি লাভ করে। তার ভিতরে ঝিরঝির বাতাস বইতে থাকে। সে মেরাজের স্বাদ পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মেরাজ থেকে নামায নিয়ে এসেছেন, সেই মেরাজের স্বাদ পায়। এটা এক মহাসম্পদ। এটা হাসিল হবে আল্লাহর রাসূলের অনুসরণের মাধ্যমে।

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করে এরপর দুই রাকাত নামায পড়ে, যাতে সে অমনোযোগী হয় না, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯০৫

হযরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে কেউ উত্তমভাবে অযু করে এরপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামায পড়ে। যাতে তার চেহারা ও হৃদয় নামাযের প্রতি নিবিষ্ট থাকে তাহলে সে নিজের জন্য (জান্নাতকে) অবধারিত করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৩৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬৯

পক্ষান্তরে হযরত মুত্তালিব ইবনে আবু ওদাআহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামায হল দুই দুই রাকাত করে। প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ পড়বে, বিনয় ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে এবং নতশিরে বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। যে এরূপ করে না তার নামায অসম্পূর্ণ।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১২৬৯

দেখ, একদল মানুষ আছে, যারা রূহানী শব্দ যোগ করে শরীয়ত থেকেই বের হয়ে যায়। নতুন শরীয়ত আবিষ্কার করে। কলবী নামায, রূহানী নামাযের পরিভাষা ব্যবহার করে মুতাওয়ারাছ নামাযের অস্বীকার করে। ঐটা আসলে রূহানী নয়। ঐটা হচ্ছে নফসানী।  আমরা যা বলছি তা হল, মুতাওয়ারাছ নামাযেরই মানবী এবং বাতেনী দিক, যা কুরআন-সুন্নাহরই শিক্ষা। আর এর মাধ্যমেই তোমার নামায রূহানী নামাযে উন্নীত হতে পারে।

নামায যারা পড়ছে না তাদের থেকে আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো। ভালো মানে আমদের গুণ নয়। আল্লাহর দয়া। এটারও শোকর আদায় করি। এতটুকু নামায যদি পড়তে না পারতাম! কিন্তু দুনিয়ার বিষয়ে মানুষ সন্তুষ্ট হয় না। দুনিয়ার বিষয়ে মানুষ শুধু উপরের দিকে তাকায়। তাহলে আখিরাতের বিষয়ে কেন আমরা উপরের দিকে তাকাব না। কেন আমরা আমাদের নামাযকে কলবের নামাযে এবং কলবের নামায থেকে রূহের নামাযে উন্নীত করার চেষ্টা করব না। কেন আমরা মেরাজওয়ালা নামায পড়ার চেষ্টা করব না। চেষ্টা করলে আল্লাহ তাআলা কখনো বঞ্চিত করবেন না। আল্লাহর রাসূলের সুন্নত মোতাবেক চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশ্যই দান করবেন।

রবিউস সানী-১৪৩৩ – মার্চ-২০১২
মাসিক আলকাউসার