হযরত মূসা ও হারূণ (আঃ) – ১৬

মূসা ও খিযিরের কাহিনী :

এ ঘটনাটি বনু ইস্রাঈলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং ঘটনাটি ব্যক্তিগতভাবে মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে জড়িত। পিতা ইবরাহীম (আঃ) সহ বড় বড় নবী-রাসূলগণের জীবনে পদে পদে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। মূসা (আঃ)-এর জীবনে এটাও ছিল অনুরূপ একটি পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ রয়েছে। আনুষঙ্গিক বিবরণ দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, ঘটনাটি তীহ্ প্রান্তরের উন্মুক্ত বন্দীশালায় থাকাকালীন সময়ে ঘটেছিল। ঘটনাটি নিম্নরূপ:

ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে হযরত উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছ হ’তে[54] এবং সূরা কাহফ ৬০ হ’তে ৮২ পর্যন্ত ২৩টি আয়াতে বর্ণিত বিবরণ থেকে যা জানা যায়, তার সংক্ষিপ্ত সার নিম্নে বিবৃত হ’ল।-

ঘটনার প্রেক্ষাপট :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, একদিন হযরত মূসা (আঃ) বনু ইস্রাঈলের এক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকদের মধ্যে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ আছে কি? ঐ সময়ে যেহেতু মূসা ছিলেন শ্রেষ্ঠ নবী এবং তাঁর জানা মতে আর কেউ তাঁর চাইতে অধিক জ্ঞানী ছিলেন না, তাই তিনি সরলভাবে ‘না’ সূচক জবাব দেন। জবাবটি আল্লাহর পসন্দ হয়নি। কেননা এতে কিছুটা অহংকার প্রকাশ পেয়েছিল। ফলে আল্লাহ তাঁকে পরীক্ষায় ফেললেন। তাঁর উচিৎ ছিল একথা বলা যে, ‘আল্লাহই সর্বাধিক অবগত’। আল্লাহ তাঁকে বললেন, ‘হে মূসা! দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী’। একথা শুনে মূসা (আঃ) প্রার্থনা করে বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে ঠিকানা বলে দিন, যাতে আমি সেখানে গিয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারি’। আল্লাহ বললেন, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলের (সম্ভবতঃ লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের মিলনস্থল) দিকে সফরে বেরিয়ে পড়। যেখানে পৌঁছার পর মাছটি জীবিত হয়ে বেরিয়ে যাবে, সেখানেই আমার সেই বান্দার সাক্ষাৎ পাবে’। মূসা (আঃ) স্বীয় ভাগিনা ও শিষ্য (এবং পরবর্তীকালে নবী) ইউশা‘ বিন নূনকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সাগরতীরে পাথরের উপর মাথা রেখে দু’জন ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ সাগরের ঢেউয়ের ছিটা মাছের গায়ে লাগে এবং মাছটি থলের মধ্যে জীবিত হয়ে নড়েচড়ে ওঠে ও থলে থেকে বেরিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। ইউশা‘ ঘুম থেকে উঠে এই বিস্ময়কর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু মূসা (আঃ) ঘুম থেকে উঠলে তাঁকে এই ঘটনা বলতে ভুলে গেলেন। অতঃপর তারা আবার পথ চলতে শুরু করলেন এবং একদিন একরাত চলার পর ক্লান্ত হয়ে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য বসলেন। অতঃপর মূসা (আঃ) নাশতা দিতে বললেন। তখন তার মাছের কথা মনে পড়ল এবং ওযর পেশ করে আনুপূর্বিক সব ঘটনা মূসা (আঃ)-কে বললেন এবং বললেন যে, ‘শয়তানই আমাকে একথা ভুলিয়ে দিয়েছিল’ (কাহফ ১৮/৬৩)। তখন মূসা (আঃ) বললেন, ঐ স্থানটিই তো ছিল আমাদের গন্তব্য স্থল।

ফলে তাঁরা আবার সেপথে ফিরে চললেন। অতঃপর সেখানে পৌঁছে দেখতে পেলেন যে, একজন লোক আপাদ-মস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। মূসা (আঃ) তাকে সালাম করলেন। লোকটি মুখ বের করে বললেন, এদেশে সালাম? কে আপনি? বললেন, আমি বনু ইস্রাঈলের মূসা। আপনার কাছ থেকে ঐ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি, যা আল্লাহ আপনাকে বিশেষভাবে দান করেছেন’।

খিযির বললেন, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না হে মূসা! আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দান করেছেন, তা তিনি আপনাকে দেননি। পক্ষান্তরে আপনাকে তিনি যে জ্ঞান দান করেছেন, তা আমাকে দেননি’। মূসা বললেন, ‘আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না’ (কাহফ ১৮/৬৯)। খিযির বললেন, ‘যদি আপনি আমার অনুসরণ করেনই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলি’।

(১) অতঃপর তাঁরা চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে নদী পার হওয়ার জন্য একটা নৌকা পেলেন। অতঃপর নৌকা থেকে নামার সময় তাতে ছিদ্র করে দিলেন। শারঈ বিধানের অধিকারী নবী মূসা বিষয়টিকে মেনে নিতে পারলেন না। কেননা বিনা দোষে অন্যের নৌকা ছিদ্র করে দেওয়া স্পষ্টভাবেই অন্যায়। তিনি বলেই ফেললেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি একটা গুরুতর মন্দ কাজ করলেন’। তখন খিযির বললেন, আমি কি পূর্বেই বলিনি যে, ‘আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না’। মূসা ক্ষমা চাইলেন। ইতিমধ্যে একটা কালো   চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চঞ্চু পানি তুলে নিল। সে দিকে ইঙ্গিত করে খিযির মূসা (আঃ)-কে বললেন, علمي و علمك و علم الخلائق فى علم الله إلا مقدار ما غمس هذا العصفور منقاره ‘আমার ও আপনার এবং সমস্ত সৃষ্টিজগতের জ্ঞান মিলিতভাবে আল্লাহর জ্ঞানের মুকাবিলায় সমুদ্রের বুক থেকে পাখির চঞ্চুতে উঠানো এক ফোঁটা পানির সমতুল্য’।[55]

(২) তারপর তাঁরা সমুদ্রের তীর বেয়ে চলতে থাকলেন। কিছু দূর গিয়ে তাঁরা সাগরপাড়ে খেলায় রত একদল বালককে দেখলেন। খিযির তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বুদ্ধিমান ছেলেটিকে ধরে এনে নিজ হাতে তাকে হত্যা করলেন। এ দৃশ্য দেখে মূসা আৎকে উঠে বললেন, একি! একটা নিষ্পাপ শিশুকে আপনি হত্যা করলেন? এ যে মস্তবড় গোনাহের কাজ’। খিযির বললেন, আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না’। মূসা আবার ক্ষমা চাইলেন এবং বললেন, ‘এরপর যদি আমি কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আপনি আমাকে আর সাথে রাখবেন না’ (কাহফ ১৮/৭৫)

(৩) ‘অতঃপর তারা চলতে লাগলেন। অবশেষে যখন একটি জনপদে পৌঁছলেন, তখন তাদের কাছে খাবার চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেয়ে সেটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তখন মূসা বললেন, আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন’। খিযির বললেন هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَلَيْهِ صَبْراً ‘এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হ’ল। এখন যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি, আমি সেগুলির তাৎপর্য বলে দিচ্ছি’ (কাহফ ১৮/৭৮)

তাৎপর্য সমূহ :

প্রথমতঃ নৌকা ছিদ্র করার বিষয়। সেটা ছিল কয়েকজন মিসকীন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা এ দিয়ে সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আমি সেটিকে ছিদ্র করে দিলাম এজন্য যে, ঐ অঞ্চলে ছিল এক যালেম বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে লোকদের নৌকা ছিনিয়ে নিত’। নিশ্চয়ই ছিদ্র নৌকা সে নিবে না। ফলে দরিদ্র লোকগুলি নৌকার সামান্য ত্রুটি সেরে নিয়ে পরে তাদের কাজে লাগাতে পারবে।

দ্বিতীয়তঃ বালকটিকে হত্যার ব্যাপার। তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশংকা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্য হবে ও কাফের হবে। যা তার বাপ-মায়ের জন্য ফিৎনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমি চাইলাম যে, দয়ালু আল্লাহ তার পিতা-মাতাকে এর বদলে উত্তম সন্তান দান করুন, যে হবে সৎকর্মশীল ও বিশুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী। যে তার পিতা-মাতাকে শান্তি দান করবে’।

তৃতীয়তঃ পতনোন্মুখ প্রাচীর সোজা করে দেওয়ার ব্যাপার। উক্ত প্রাচীরের মালিক ছিল নগরীর দু’জন পিতৃহীন বালক। ঐ প্রাচীরের নীচে তাদের নেককার পিতার রক্ষিত গুপ্তধন ছিল। আল্লাহ চাইলেন যে, বালক দু’টি যুবক হওয়া পর্যন্ত প্রাচীরটি খাড়া থাক এবং তারা তাদের প্রাপ্য গুপ্তধন হস্তগত করুক। (খিযির বলেন,) وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِىْ ‘বস্ত্ততঃ আমি নিজ ইচ্ছায় এ সবের কিছুই করিনি’ (কাহফ ১৮/৮২)

শিক্ষণীয় বিষয় :

(১) বড় যুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য কারু উপরে ছোট-খাট যুলুম করা যায়। যেমন নৌকা ছিদ্র করা থেকে এবং বালকটিকে হত্যা করা থেকে প্রমাণিত হয়। তবে শরী‘আতে মুহাম্মাদীতে এগুলি সবই সামাজিক বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশেষ করে হত্যাকান্ডের মত বিষয় একমাত্র রাষ্ট্রানুমোদিত বিচার কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কারু জন্য অনুমোদিত নয়।  (২) পিতা-মাতার  সৎকর্মের  ফল সন্তানরাও পেয়ে থাকে। যেমন সৎকর্মশীল পিতার রেখে যাওয়া গুপ্তধন তার সন্তানরা যাতে পায়, সেজন্য খিযির সাহায্য করলেন। তাছাড়া এ বিষয়েও ইঙ্গিত রয়েছে যে, আলেম ও সৎকর্মশীলগণের সন্তানদের প্রতি সকলেরই স্নেহ পরায়ণ হওয়া কর্তব্য। (৩) মানুষ অনেক সময় অনেক বিষয়কে ভাল মনে করে। কিন্তু সেটি তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,

عَسَى أَن تَكْرَهُوْا شَيْئاً وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّوْا شَيْئاً وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُون- (البقرة ২১৬)-

‘তোমরা অনেক বিষয়কে অপসন্দ কর। অথচ সেটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার অনেক বিষয় তোমরা ভাল মনে কর, কিন্তু সেটি তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। বস্ত্ততঃ আল্লাহই প্রকৃত অবস্থা জানেন, তোমরা জানো না’ (বাক্বারাহ ২/২১৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لايَقْضِى اللهُ للمؤمن من قضاءٍ الا كان خيرًا له ‘আল্লাহ তার মুমিন বান্দার জন্য যা ফায়ছালা করেন, তা কেবল তার মঙ্গলের জন্যই হয়ে থাকে’।[56]

(৪) অতঃপর আরেকটি মৌলিক বিষয় এখানে রয়েছে যে, মূসা ও খিযিরের এ শিহরণমূলক কাহিনীটি ছিল ‘আগাগোড়া একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের বহিঃপ্রকাশ’। থলের মধ্যেকার মরা মাছ জীবিত হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে সাগরে চলে যাওয়া যেমন সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত বিষয়, তেমনি আল্লাহ পাক কোন ফেরেশতাকে খিযিরের রূপ ধারণ করে মূসাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যও পাঠিয়ে থাকতে পারেন। যাকে তিনি সাময়িকভাবে শরী‘আতী ইলমের বাইরে অলৌকিক ও অতীন্দ্রিয় জ্ঞান দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, যা মূসার জ্ঞানের বাইরে ছিল। এর দ্বারা আল্লাহ মূসা সহ সকল মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

(৫) বান্দার জন্য যে অহংকার নিষিদ্ধ, অত্র ঘটনায় সেটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয়।

খিযির কে ছিলেন?

কুরআনে তাঁকে عَبْداً مِّنْ عِبَادِنَا ‘আমাদের বান্দাদের একজন’ (কাহফ ১৮/৬৫) বলা হয়েছে। বুখারী শরীফে তাঁর নাম খিযির (خضر) বলে উল্লেখ করা হয়েছে’। সেখানে তাঁকে নবী বলা হয়নি। জনশ্রুতি মতে তিনি একজন ওলী ছিলেন এবং মৃত্যু হয়ে গেলেও এখনও মানুষের বেশ ধরে যেকোন সময় যেকোন মানুষের উপকার করেন। ফলে জঙ্গলে ও সাগর বক্ষে বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য আজও অনেকে খিযিরের অসীলা পাবার জন্য তার উদ্দেশ্যে মানত করে থাকে। এসব ধারণার প্রসার ঘটেছে মূলতঃ বড় বড় প্রাচীন মনীষীদের নামে বিভিন্ন তাফসীরের কেতাবে উল্লেখিত কিছু কিছু ভিত্তিহীন কল্পকথার উপরে ভিত্তি করে।

যারা তাকে নবী বলেন, তাদের দাবীর ভিত্তি হ’ল, খিযিরের বক্তব্য وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِيْ   ‘আমি এসব নিজের মতে করিনি’ (কাহফ ১৮/৮২)। অর্থাৎ সবকিছু আল্লাহর নির্দেশে করেছি। অলীগণের কাশ্ফ-ইলহাম শরী‘আতের দলীল নয়। কিন্তু নবীগণের স্বপ্নও আল্লাহর অহী হয়ে থাকে। যেজন্য ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পুত্রকে যবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। অতএব বালক হত্যার মত ঘটনা কেবলমাত্র নবীর পক্ষেই সম্ভব, কোন অলীর পক্ষে আদৌ নয়। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, নবী কখনো শরী‘আত বিরোধী কাজ করতে পারেন না। ঐ সময় শরী‘আতধারী নবী ও রাসূল ছিলেন হযরত মূসা (আঃ)। আর সে কারণেই খিযিরের শরী‘আত বিরোধী কাজ দেখে তিনি বারবার প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিলেন। এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, খিযির কোন কেতাবধারী রাসূল ছিলেন না, বা তাঁর কোন উম্মত ছিল না।

এখানে আমরা যদি বিষয়টিকে কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের উপরে ছেড়ে দিই এবং তাঁকে ‘আল্লাহর একজন বান্দা’ হিসাবে গণ্য করি, যাঁকে আল্লাহর ভাষায় آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْماً ‘আমরা আমাদের পক্ষ হ’তে বিশেষ রহমত দান করেছিলাম এবং আমাদের পক্ষ হ’তে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান’ (কাহফ ১৮/৬৫)। তাহ’লে তিনি নবী ছিলেন কি অলী ছিলেন, তিনি এখনো বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন, এসব বিতর্কের আর কোন অবকাশ থাকে না। যেভাবে মূসার মায়ের নিকটে আল্লাহ অহী (অর্থাৎ ইলহাম) করেছিলেন এবং যার ফলে তিনি তার সদ্য প্রসূত সন্তান মূসাকে বাক্সে ভরে সাগরে নিক্ষেপ করতে সাহসী হয়েছিলেন (ত্বোয়াহা ২০/৩৮-৩৯) এবং যেভাবে জিব্রীল মানুষের রূপ ধরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ছাহাবীগণকে দ্বীনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন[57] একই ধরনের ঘটনা মূসা ও খিযিরের ক্ষেত্রে হওয়াটাও বিস্ময়কর কিছু নয়।

মনে রাখা আবশ্যক যে, লোকমান অত্যন্ত উঁচুদরের একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তাঁর জ্ঞানপূর্ণ উপদেশসমূহ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং তার নামে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না। লোকমানকে আল্লাহ যেমন  বিশেষ ‘হিকমত’ দান করেছিলেন (লোকমান ৩১/১২)। খিযিরকেও তেমনি বিশেষ ‘ইল্ম’ দান করেছিলেন (কাহফ ১৮/৬৫)। এটা বিচিত্র কিছু নয়।


[54]. বুখারী হা/৪৭২৫-২৭ প্রভৃতি; ‘তাফসীর’ অধ্যায় ও অন্যান্য; মুসলিম, হা/৬১৬৫ ‘ফাযায়েল’ অধ্যায় ৪৬ অনুচ্ছেদ।
[55]. বুখারী হা/৪৭২৭।
[56]. আহমাদ হা/১২৯২৯ ‘সনদ ছহীহ, -আরনাঊত্ব।
[57]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২।