নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী – শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ) – ৩য় পর্ব

দ্বিতীয় অধ্যায়
তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলী;  তিনি ছিলেন সামগ্রিকভাবে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ; দলিল হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁকে দেয়া এই সার্টিফিকেটই (চারিত্রিক সনদই) আপনার জন্য যথেষ্ট হবে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]
“আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।” — (সূরা আল-ক্বলম: ৪)

বদান্যতা ও দানশীলতার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক উদার দানশীল মানুষ, তিনি এত বেশি পরিমাণে দান করতেন, সে পর্যায়ে কোনো রাজা-বাদশা পৌঁছতে পারে না; হাদিসের ভাষায়:
« فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ , فَرَجَعَ إِلَى قَوْمِهِ , فَقَالَ: يَا قَوْمِ ! أَسْلِمُوا فَإِنَّ مُحَمَّدًا يُعْطِى عَطَاءً لاَ يَخْشَى الْفَاقَةَ » .  ( رواه مسلم ) .                    
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো; তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদের বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর; কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যে, তিনি অভাবের ভয় করেন না।”(২২)

জাবির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
« مَا سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ: لاَ » .  ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কেউ কিছু চাইলে কোন দিন তিনি ‘না’ বলেন নি।”(২৩)

আর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়েনের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন, তখন আরব বেদুইনগণ তাঁর পিছু নিতে লাগল তার কাছে চাওয়া আরম্ভ করল, এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের নিকট আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; তারপর তিনি তাঁর বাহনের উপর থাকা অবস্থায়ই তারা তাঁর চাদরটি ছিনিয়ে নিল, তখন তিনি বললেন:
« ردوا عليّ ردائي ، أتخشون عليّ البخل ؟ فقال : فوالله لو كان لي عدد هذه العضاة نعماً , لقسمته بينكم ، ثم لا تجدوني بخيلاً ولا جباناً ولا كذاباً » .  ( رواه البغوي ) .
“তোমরা আমাকে আমার চাদরটি ফেরত দাও; তোমরা কি আমার ব্যাপারে কৃপণতার আশঙ্কা কর? তারপর তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ! যদি আমার নিকট এই গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উটও থাকে, তবে তা আমি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিব; অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদী হিসেবে পাবে না।”(২৪)

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দিতেন; ফলে তিনি দান করে দিতেন, অথচ তাঁর উপর একমাস বা দুইমাস অতিবাহিত হয়ে যেত, তাঁর ঘরে আগুন জ্বলত না(২৫)।

জনৈক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে একটি ঝালরসহ বোনা চাদর হাদিয়া (উপহার) স্বরূপ দান করলেন এবং বললেন:
« يا رسول الله أكسوك هذه , فأخذها النبي صلى الله عليه و سلم محتاجا إليها , فلبسها , فرآها عليه رجل من الصحابة , فقال : يا رسول الله ! ما أحسن هذه فاكسنيها , فقال : نعم , . فلما قام النبي صلى الله عليه و سلم لامه أصحابه , قالوا : ما أحسنت حين رأيت النبي صلى الله عليه و سلم أخذها محتاجا إليها ثم سألته إياها , وقد عرفت أنه لا يسأل شيئا فيمنعه , فقال : رجوت بركتها حين لبسها النبي صلى الله عليه و سلم لعلي أكفن فيها » .  ( رواه البخاري ) .
“হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি আপনাকে পরিধানের জন্য দিলাম; আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরিধান করলেন। তারপর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন সেটি তাঁর দেহে দেখে আবেদন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ (দিয়ে দেব)। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে চলে গেলেন, তখন অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁকে দোষারোপ করে বললেন: তুমি ভাল কাজ কর নি। যখন তুমি দেখলে যে, তিনি চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করেছেন, যেন এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল; এরপরও তুমি সেটা চেয়ে বসলে; অথচ তুমি অবশ্যই জান যে, তাঁর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়, তখন তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। তখন সেই ব্যক্তি বলল: যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করেছেন, তখন তাঁর বরকত হাসিল করার আশায়ই আমি এই কাজ করেছি, যেন আমি এ চাদরটাকে আমার কাফন বানাতে পারি।”(২৬)

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদান্যতা বা দানশীলতা ছিল তার যথাযথ স্থানে; তিনি দান করতেন আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহর নামে; হয় তিনি ফকীর-মিসকীনকে দান করতেন অথবা অভাবীকে; অথবা আল্লাহর পথে; অথবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য; অথবা উম্মতের জন্য শরী‘য়তের বিধিবিধান প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে।

আর বীরত্বের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন খুব সাহসী মানুষ এবং সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে ছিলেন তাদের মধ্যে অধিকতর তীক্ষ্ন ও মজবুত; জনগণ পালিয়ে যেত, অথচ তিনি সুদৃঢ়ভাবে অটল থাকতেন। আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ ( يعني في حنين ) وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ , فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ , قَالَ عَبَّاسٌ : وَ أَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَنْ لاَ تُسْرِعَ , و كان يقول حينئذ : « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب » .  (رواه مسلم ) .
“যখন (হুনায়েনের যুদ্ধে) মুসলিম ও কাফিরগণ পরস্পর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হল, তখন মুসলিমগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পিছনের দিকে পলায়ন করতে লাগলেন; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দ্বারা নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আমি তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরে রেখেছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যাতে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে; আর তখন তিনি বলছিলেন:

“আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা,
আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।”
(২৭)

আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«كنا اذا احمر البأس , ولقى القوم القوم , اتقينا برسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم فما يكون احد اقرب الى العدو منه» .  (رواه البغوي ) .
“যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত এবং এক দল আরেক দলের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতো, তখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম; কারণ, কোনো ব্যক্তিই তাঁর চেয়ে শত্রুর অধিক নিকটবর্তী হত না।”(২৮)

অনুরূপভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَحْسَنَ النَّاسِ , وَكَانَ أَجْوَدَ النَّاسِ , وَكَانَ أَشْجَعَ النَّاسِ , وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ ذَاتَ لَيْلَةٍ , فَانْطَلَقَ نَاسٌ قِبَلَ الصَّوْتِ , فَتَلَقَّاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَاجِعًا وَقَدْ سَبَقَهُمْ إِلَى الصَّوْتِ وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لأَبِى طَلْحَةَ عُرْىٍ , فِى عُنُقِهِ السَّيْفُ وَهُوَ يَقُولُ : « لَمْ تُرَاعُوا لَمْ تُرَاعُوا » . قَالَ : « وَجَدْنَاهُ بَحْرًا أَوْ إِنَّهُ لَبَحْرٌ » . قَالَ : وَكَانَ فَرَسًا يُبَطَّأُ » .  ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে অতি সুন্দর, অতি দানশীল এবং শ্রষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাতে মদীনাবাসীগণ ঘাবড়িয়ে গিয়েছিল; যে দিক থেকে শব্দ আসছিল, লোকেরা সেই দিকে ছুটে চলল; এক পর্যায়ে পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের সাক্ষাত হয় এমতাবস্থায় যে, তখন তিনি ফিরে আসছিলেন; কারণ, শব্দের দিকে প্রথম তিনিই ছুটে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আবূ তালহা (রা.) এর জিন বা গদিবিহীন ঘোড়ায় আরোহিত হয়েছিলেন; তাঁর কাঁধে তরবারি ছিল; আর তিনি বলেন: তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা ভীত হয়ো না। বর্ণনাকারী (আনাস) আরও বললেন: আমি এই ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মত, অথবা তিনি বললেন: এ তো সমুদ্র। অথচ ইতঃপূর্বে এই ঘোড়ার গতি ছিল ধীর।”(২৯)

আর এই ধরনের মহাবীরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কোমল নম্র ভদ্র দয়াবান এক ব্যক্তি; আর তিনি অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বানিয়েও বলতে পারতেন না(৩০); আর তিনি ছিলেন না বাজারের মধ্যে হৈ-চৈকারী; আর তিনি মন্দের জবাব মন্দের মাধ্যমে দিতেন না, বরং তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন; আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

« خَدَمْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِينَ , وَاللَّهِ مَا قَالَ لِى : أُفًّا قَطُّ وَلاَ قَالَ لِى لِشَىْءٍ : لِمَ فَعَلْتَ كَذَا ؟ وَهَلاَّ فَعَلْتَ كَذَا ؟ » (رواه مسلم) .

“আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমত করেছি, আল্লাহর কসম! তিনি কখনও আমাকে ‘উহ্’ শব্দও বলেন নি এবং কখনও কোনো বিষয়ে আমাকে বলেন নি: তুমি কেন এটা করলে? কেন ওটা করলে না?”(৩১)

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সাথে কৌতুক করতেন(৩২); তাঁদের সাথে মিশতেন, আলাপ আলোচনা করতেন, তাঁদের শিশুদের সাথে খেলাধুলা ও রসিকতা করতেন(৩৩) এবং তাদেরকে কোলে নিতেন; আর কখনও কখনও শিশুরা তাঁর কোলের মধ্যে প্রশ্রাব করে দিত, কিন্তু তিনি তাকে তিরস্কার করতেন না।


(২২) মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১২, ৪ / ১৮০৬
(২৩) মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১১, ৪ / ১৮০৫
(২৪) বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা(جوده صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৮৯, ১৩ / ২৫২, আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি সহীহ; আর ইমাম নাসায়ী র. তাঁর ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন: হিবা / ১, ৬ / ২৬৩ – ২৬৪।
 العضاه: ছোট কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ বিশেষ, যা শক্ত এবং যমীনের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। – [আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর ( عضض ), পৃ. ৮৩৫; আর ইমাম নাসায়ী র. এর বর্ণনার মধ্যে এসেছে: « لو أن لكم شجر تهامة نعما …» .   [যদি তোমাদের জন্য মক্কা নগরীর গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উট অর্জিত হত …]।
(২৫) ‘উরওয়া র. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলতেন: «وَاللَّهِ يَا ابْنَ أُخْتِى , إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إِلَى الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ , ثَلاَثَةَ أَهِلَّةٍ فِى شَهْرَيْنِ وَمَا أُوقِدَ فِى أَبْيَاتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَارٌ , قَالَ : قُلْتُ : يَا خَالَةُ فَمَا كَانَ يُعَيِّشُكُمْ ؟ قَالَتِ : الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالْمَاءُ , إِلاَّ أَنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ , وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ , فَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَلْبَانِهَا فَيَسْقِينَاهُ » .  ( رواه مسلم ) .
“আল্লাহর কসম! হে আমার বোনের ছেলে! আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, অতঃপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম; অর্থাৎ দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ঘরেই আগুন জ্বালানো হতো না। তিনি (‘উরওয়া র.) বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে খালা! আপনারা তা হলে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বললেন: দু’টি কালো জিনিস: খেজুর ও পানি; তবে কয়েক ঘর আনসার পরিবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী ছিল; তাঁদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা হাদিয়া হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠাতেন; আর তিনি আমাদেরকে তা পান করতে দিতেন। – [মুসলিম, আস-সহীহ: যুহুদ, হাদিস নং- ২৯৭২, ৪ / ২২৮৩ ]
(২৬) বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৩৯, ৭ / ৮২
(২৭) মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৫, ৩ / ১৩৯৮ এবং তাতে আছে:
« فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَىْ عَبَّاسُ نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ » .
[তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আব্বাস! আসহাবে সমুরাকে (গাছের নিছে বাই‘আতকারি সাহাবীদের) আহ্বান কর]। আর তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথাটি বর্ণিত নেই:  « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب »
[আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা, আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।]। আর বারা রা. এর বর্ণনার মধ্যে তা বর্ণিত হয়েছে; তাতে আছে:
« …  فَأَقْبَلُوا هُنَاكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَقُودُ بِهِ فَنَزَلَ فَاسْتَنْصَرَ وَقَالَ : « أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ » . ( رواه مسلم ) .
“… তখন তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এগিয়ে এলেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় তাঁর সাদা খচ্চরের উপর ছিলেন; আর আবূ সুফিয়ান ইবন আবদিল মুত্তালিব রা. একে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আর তিনি বললেন: “আমি অবশ্যই নবী, এ কথা মিথ্যা নয়; আমি ইবন আবদিল মুত্তালিব।” – [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০০]।
(২৮) বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বীরত্ব (شجاعته صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৯৮, ১৩ / ২৫৭ -২৫৮।
ইমাম মুসলিম র. বর্ণনা করেছেন, বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« كُنَّا وَاللَّهِ إِذَا احْمَرَّ الْبَأْسُ نَتَّقِى بِهِ , وَإِنَّ الشُّجَاعَ مِنَّا لَلَّذِى يُحَاذِى بِهِ. يَعْنِى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) .
“আল্লাহর কসম! যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত, তখন আমরা তাঁর মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে বীরপুরুষ তিনিই, যে যুদ্ধে তাঁর বরাবর থাকে, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (রাসূলের বরাবর কেউ দাঁড়ালে সে সাহসী হতো ও তার বীরত্ব প্রকাশ পেত)।” [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০১]।
(২৯) মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১১, হাদিস নং- ২৩০৭, ৪ / ১৮০২ – ১৮০৩; আর এটা হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহা বীরত্ব ও আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসার চূড়ান্ত প্রমাণ।
(৩০) আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم فاحشا ولا متفحشا , وكان يقول : « إن من خياركم أحسنكم أخلاقا » . ( رواه البخاري ) .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা কষ্ট করেও বলতে পারতেন না; তিনি বলতেন: “তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যার চরিত্র ভাল।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানকিব / ২৩, ৪ / ১৬৬]।
(৩১) মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১৩, হাদিস নং- ২৩০৯, ৪ / ১৮০৪.
(৩২) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« قالوا يا رسول الله إنك تداعبنا , قال : إني لا أقول إلا حقا » . ( رواه الترمذي ) .
“তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে রসিকতা করেন! তিনি বললেন: নিশ্চয়ই আমি সত্য কথাই বলি।” – [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯০, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি হাসান, সহীহ]।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« إن رجلا استحمل رسول الله صلى الله عليه و سلم , فقال : إني حاملك على ولد الناقة , فقال : يا رسول الله ! ما أصنع بولد الناقة ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : وهل تلد الإبل إلا النوق ؟ » .  ( رواه الترمذي ) .
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাহন চাইলে তিনি তাকে বললেন: আমি তোমাকে বাহন হিসেবে একটি উটনীর বাচ্চা দিব; এ কথা শুনে সে বলল: আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: উটগুলো কি বাচ্চাই প্রসব করে না?” – [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯১, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি সহীহ, গরীব]।
(৩৩) আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليخالطنا حتى  إن  كان ليقول لأخ لي صغير : يا أبا عمير ما فعل النغير ؟ » .  ( رواه الترمذي ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে মিশতেন, এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে বলতেন: হে আবূ ‘উমাইর! তোমার ‘নুগাইর’ (ছোট পাখি) কী করে?” – [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৮৯, ৪ / ৩৫৭]।


তাখরীজ ও বর্ধিত কলেবর করেছেন, ড. আহমাদ মু‘আয হাক্কী
অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া