ইসলাম-প্রচারে মুহাম্মদ (সাঃ)

“১. ওহে বস্ত্র-আবৃত (ব্যক্তি)। ২. ওঠো, সতর্ক করো। ৩. আর তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। ৪. তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। ৫. (যাবতীয়) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। ৬. (কারো প্রতি) অনুগ্রহ কোরো না অধিক পাওয়ার উদ্দেশ্যে। ৭. তোমার প্রতিপালকের (সস্তুষ্টির) জন্য ধৈর্য ধরো।” (আল-মুদ্দাসসির : ১–৭)

‏সূরা মুদ্দাসসিরের উপর্যুক্ত আয়াতসমূহ নাজিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথহারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার কাজ শুরু করলেন; আর তা এমন অবস্থায় যে, তাঁর জাতি—কুরাইশদের মূর্তি ও প্রতিমার পূজা-অর্চনা ব্যতীত কোনো দ্বীন ছিলো না, তাদের সঠিক কোনো হজ ছিলো না; তবে তারা হজ করতো, যেভাবে তাদের পিতৃপুরুষদেরকে দেখেছে; আত্মমর্যাদা ও বংশগৌরব ব্যতীত তাদের কোনো সৎ চরিত্র ছিলো না; তাদের কোনো সমস্যা তলোয়ার ব্যতীত সমাধান হতো না; তা সত্ত্বেও মক্কা ছিলো আরববাসীগণের ধর্মীয় চেতনার কেন্দ্রস্থল, এ মক্কাবাসীই ছিলেন কাবার তত্ত্বাবধায়ক ও খাদেম। এজন্যই দূরবর্তী স্থানের তুলনায় মক্কায় সংস্কারমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ব্যাপারটি ছিলো অনেক বেশি কঠিন ও কষ্টকর। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় প্রচার ও তাবলিগের কাজকর্ম সন্তর্পণে ও সঙ্গোপনে করার প্রয়োজন ছিলো, যাতে মক্কাবাসীগণের সামনে আকস্মিকভাবে বৈপ্লবিক কিংবা উত্তেজনামূলক কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়ে যায়।

এটা খুবই স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কথা যে, যাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিলেন, সর্বপ্রথম তিনি তাঁদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছিলেন। এ দলের মধ্যে ছিলেন পরিবারের লোকজন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব। অধিকন্তু, প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ওই সকল লোককে সত্যের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন, যাঁদের মুখমণ্ডলে কল্যাণ এবং সত্য-প্রীতির আভাস ছিলো সুস্পষ্ট। তাছাড়া যাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততা, সত্যবাদিতা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সুবিদিত ছিলেন এবং এ কারণে তাঁর প্রতি এত বেশি অনুরক্ত এবং শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যে, প্রথম আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা ইসলাম কবুল করেন এবং শুরুর দিকে মুসলিম হওয়ার এক দুর্লভ গৌরব অর্জন করেন। এঁদের তালিকার শীর্ষে উম্মুল মুমিনিন নবি-পত্নী খাদিজাতুল কোবরা বিনতে খুওয়াইলিদ, তাঁর স্বাধীন ক্রীতদাস যায়েদ বিন হারিসা বিন শোরাহবিল কালবি, তাঁর চাচাতো ভাই আলি বিন আবু তালিব—যিনি তখনো তাঁর লালন-পালনাধীন শিশু ছিলেন এবং তাঁর গুহাসঙ্গী আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ);—এরা সকলে প্রথম দিকেই মুসলিম হয়েছিলেন।

প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণের গুণে গুণান্বিতদের সংখ্যা পুরুষ-মহিলা মিলে ৩৩০ জন। তবে এটা অকাট্যভাবে জানা যায়নি যে, তারা সকলেই প্রকাশ্যে দাওয়াত চালু হওয়ার পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, নাকি ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যভাবে চালু হওয়া পর্যন্ত তাদের কেই কেউ ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব করেছিলেন।

যা-ই হোক, নবী মুহাম্মদ (সাঃ)  এভাবেই সর্বপ্রথম নিজ গণ্ডি থেকে তাঁর বিশ্বব্যাপৃত দাওয়াতের কাজ শুরু করেন…